বিয়ে একটি পবিত্র বন্ধন ও একটি ইবাদত যা কখনোই ব্যবসায়িক মাধ্যম বা অর্থ উপার্জনের মাধ্যম হতে পারে না। তাই যৌতুককে না বলি।
লিখেছেন লিখেছেন েনেসাঁ ২৬ এপ্রিল, ২০১৪, ০১:১১:৪৮ দুপুর
যৌতুককে কেন্দ্র করে সংসার ভাঙার খবর তো নিয়মিতই আছে আমাদের আশপাশে। অথচ একটা মুসলিম সমাজের খবরগুলো এমন হওয়ার কথা ছিল না। যৌতুক নামক পরিভাষাটিরই অস্তিত্ব থাকার কথা নয় কোনো মুসলমানের অভিধানে। যৌতুক নামক এ বিষাক্ত প্রথাটি এসেছে উপমহাদেশীয় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের জীবন ব্যবস্থা থেকে। তাদের ধর্মমতে, মেয়ে সন্তান পিতার সম্পদের উত্তরাধিকার হয় না। তাই বিয়ের সময় মেয়ে যত বেশি নিতে পারে ততই তার লাভ। কিন্তু মুসলিম সমাজের বিধান তো স্পষ্ট। পিতার সম্পদের উত্তরাধিকার হয় কন্যা। তবে কেন যৌতুক নামক অশান্তির এ নীলবিষের অস্তিত্ব আমাদের সমাজে?
একজন পিতা একটি মেয়েকে জন্মের পর ১৮ থেকে ৩০ বছর পর্যন্তু হৃদয়ের সব অনুরাগ আর জীবনের অর্জিত সম্পদ খরচ করে প্রতিপালন করেন। কন্যার সব স্বাদ-আহ্লাদ পূরণ করেন। এরপর সেই পিতা তার আদরের কনেকে, মাতা তার নাড়ি ছেঁড়া ধনকে তুলে দেন একজন পুরুষের হাতে। মাঝের সময়টিতে তার শিক্ষা ও চিকিৎসাসহ সব ধরনের ব্যয় নির্বাহ করেন পিতামাতা। একজন কন্যাসন্তানকে লালনপালন করে কী এমন অপরাধ করেন সেই পিতামাতা? যে নিজের আদরের কন্যাটিকে তো দিয়েই দেন সব স্বত্ব ত্যাগ করে। সেই সঙ্গে দিয়ে দিতে হয় মোটা অঙ্কের উৎকোচ! কেন আমরা এতটা অমানবিক? কেন আমরা এতটা স্বার্থপর? লোভ কেন আমাদের মানবিক বোধের বাইরে নিয়ে যায়?
অনেকেই বলেন, ছেলেকে লেখাপড়া করিয়ে শিক্ষিত করেছেন। ছেলেও প্রতিষ্ঠিত। এখন মেয়ের বাবা কিছু দিয়ে দিতে হবে। এমন ছেলে পাওয়া তো ভাগ্যের। কনের বাবার সেই ভাগ্যের কারণে মূল্য নির্ধারণ করা হয় বরের শিক্ষার আর অবস্থানের। এটাকে কোনোভাবেই তারা হারাম মনে করতে নারাজ। ইসলামের শিক্ষা হলো বিয়ের সময় বর কনেকে মোহর দিয়ে দেবে। মোহর দ্রুত আদায় করবে। কোনোভাবেই মোহর ক্ষমারযোগ্য নয়। মোহর আদায় করা ফরজ। অথচ সেই মোহর আদায়ে আমাদের কালক্ষেপণ আর গড়িমসি দুঃখজনক পর্যায়ের। অপরদিকে যেখানে যৌতুক সুস্পষ্ট হারাম সেটা পাওয়ার জন্য নানা বাহানা আর নানা যুক্তির অবতারণা করি। এরশাদ হচ্ছে, 'আর তোমরা তোমাদের স্ত্রীদের মোহরানা মনের সন্তোষ সহকারেই আদায় করো।'... (সূরা নিসা : ৪)।
যৌতুক সবসময় একটি ঘৃণ্য অপরাধ। বাংলাদেশের আইনেও এটা অপরাধ। শাস্তিযোগ্য অপরাধ। যে নেয় এবং যে দেয় সবাই জানে এটা অন্যায় কিন্তু সামাজিকতা ও কন্যার সুখের কথা চিন্তা করে অনেক পরিবারই বরপক্ষের অন্যায় আবদার মেনে নেয়। ইসলামের দৃষ্টিতেও এটা হারাম। রাষ্ট্রের দৃষ্টিতেও এটা অবৈধ। এমন অবৈধ সম্পদের মধ্যে কোনো রকম সুখ থাকতে পারে না। কোনো মর্যাদাও থাকতে পারে না যৌতুক লোভীর। না সামাজিক মর্যাদা, না ধর্মীয় মর্যাদা। যদিও অনেক সময় সামাজিক প্রতিপত্তির কারণে অনেকেই যৌতুক গ্রহীতার প্রতি প্রকাশ্য ঘৃণাটা প্রকাশ করতে পারে না। হজরত ওমর (রা.) বলেন, 'হে মুসলমান সমপ্রদায়! তোমরা বিয়েতে মোটা অংকের মোহর, আড়ম্বরতা এবং যৌতুক দাবি করো না, কেননা আল্লাহর কাছে এটার কোনো মর্যাদা বা মূল্য নেই। যদি থাকত তাহলে রাসূল (সা.) তাঁর কন্যা ফাতেমার (রা.) বিয়েতে করতেন।' (তিরমিজি)।
একটি পরিবার মেয়েকে পাত্রস্থ করতে একসময় বাধ্য হয়ে যৌতুক দেয়। যদিও স্বীয় কন্যাটিকে লালন-পালন করার সময় একবারও ভাবেনি যৌতুক দিয়ে তাকে পাত্রস্থ করবে। কোনো পিতামাতাই সন্তুষ্ট চিত্তে যৌতুক দেন না। তবে কেউ কেউ নিজ সন্তানের সুখের চিন্তা করে স্বপ্রণোদিত হয়েই কিছু উপহার দেন। সে বিষয়ে কোনো সমস্যা ইসলামে নেই। কিন্তু যে কোনোভাবেই যদি বাধ্য করা হয় তখন তা আর হালাল থাকে না। সে জন্য বিয়েতে যৌতুক দাবি করে আদায় করা সম্পূর্ণভাবে অবৈধ। বিদায় হজের ভাষণে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্পষ্ট ঘোষণা দিয়েছেন, 'নিঃসন্দেহে তোমাদের জান মাল ইজ্জত আব্রু তোমাদের পরস্পরের জন্য এমনভাবে সংরক্ষিত, যেমনভাবে হজের দিবসটি ও হজের মাস মক্কায় সংরক্ষিত। সুতরাং জান মাল ইজ্জত আব্রুতে হস্তক্ষেপ করা হজের সম্মানিত মাসে, হজের সম্মানিত দিবসে হারাম শরিফের ওপর হামলার মতো অপরাধ।' (সহিহ বোখারি : ১৭৩৯; সহিহ মুসলিম : ১৬৭৯)।
নিঃসন্দেহে বিয়ে একটি পবিত্র বন্ধন। কখনোই এটি ব্যবসায়িক মাধ্যম বা অর্থ উপার্জনের মাধ্যম হতে পারে না। এটি একটি ইবাদত। আর কোনো ইবাদত কারও অর্থ উপার্জনের মাধ্যম হলে সেটা হবে স্পষ্ট বিদাত। আল্লাহ আমাদের যৌতুকের মতো সামাজিক এ ব্যাধি থেকে বেঁচে থাকার তৌফিক দান করুন।
বিষয়: বিবিধ
২৭৫৯ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ভিক্ষুক ভিক্ষা চাইলে, আমনে দেতেও পারেন না দেতেও পারেন।
বর যৌতুক চাইলে, আমনেরে তা দেতেই হইব, তা না দেলে তার মাইয়ারে মাইরা হাড্ডি গুড্ডি ভাইঙ্গা বাড়িতে পাঠাই দেবে।
এডাই হইল আসল তফাৎ
মন্তব্য করতে লগইন করুন