ধর্মের ব্যাপারে বাড়াবাড়ির পরিণতি
লিখেছেন লিখেছেন েনেসাঁ ২৪ এপ্রিল, ২০১৪, ০৬:৫৪:৫৯ সন্ধ্যা
ইসলাম হচ্ছে শান্তি ও মানবতার ধর্ম। জোর করে ধর্মের নিয়মনীতি কারও ওপর চাপিয়ে দেয়া ইসলাম সমর্থন করে না। সততা, উদারতা, মহানুভবতা, ক্ষমতা ইত্যাদির মাধ্যমে ইসলাম যুগ যুগ ধরে মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। তাইতো, প্রাচীন আফ্রো-ইউরেশিয়ার বেশিরভাগ অঞ্চল থেকে শুরু করে আটলান্টিক থেকে প্রশান্ত মহাসাগর পর্যন্ত এ ধর্মের বিস্তার ঘটেছে। এখনো ইসলামের বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার ও ষড়যন্ত্র সত্ত্বেও এই ধর্মের অগ্রগতি দিন দিন বাড়ছে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহপাক বলেছেন, "তারা তাদের মুখের ফুৎকারে আল্লাহর নূরকে নিভিয়ে দিতে চায়। কিন্তু আল্লাহ অবশ্যই তাঁর নূরের পূর্ণতা বিধান করবেন, যদিও কাফেররা তা অপছন্দ করে।"
কুরআনের এই ঘোষণার বাস্তব রূপ বর্তমান বিশ্বে দেখা যাচ্ছে। ইউরোপসহ পশ্চিমা বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্ম এখন ইসলাম। ইসলামের শিক্ষাগুলোই পাশ্চাত্যের মানুষকে এ ধর্মের দিকে আকৃষ্ট করছে। যেমন, মুসলমানদের উন্নত সামাজিক জীবন, ভ্রাতৃত্ব ও সব ধরনের বৈষম্য বা অন্যায় বিরোধী অবস্থান পশ্চিমাদেরকে এ ধর্মের দিকে আকৃষ্ট করছে। নারীর প্রতি ইসলামের সম্মানজনক স্বীকৃতি পাশ্চাত্যের শিক্ষিত নারী সমাজকেও আকৃষ্ট করছে এই মহান ধর্মের দিকে। কিন্তু অনেক সময় দেখা যায়, অজ্ঞতার কারণে কোনো কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী ধর্মের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করেন যা এই পবিত্র ধর্মের প্রতি মানুষের আগ্রহ কমিয়ে দেয়। এ কারণে পবিত্র কুরআনের সূরার বাকারার ২৫৬ নম্বর আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেছেন, "ধর্ম গ্রহণের ক্ষেত্রে কোন জোর জবরদস্তি নেই। কারণ, বিভ্রান্তির পথ থেকে সত্য পথকে সুস্পষ্ট করা হয়েছে। যে তাগুতকে অস্বীকার করেছে এবং আল্লাহর ওপর বিশ্বাস স্থাপন করেছে, সে এমন সুদৃঢ় রজ্জু ধরে আছে যা কখনও ছিন্ন হওয়ার নয়। আর আল্লাহ শ্রবণকারী, মহাজ্ঞানী।”
ধর্মের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি বা চরমপন্থার পরিণতি সম্পর্কে কাহিনীটি নিচে দেয়া হলো-
দুই প্রতিবেশির একজন ছিল মুসলমান আর অন্যজন খ্রিস্টান। তারা মাঝেমধ্যেই ইসলাম ধর্ম নিয়ে একজন আরেকজনের সঙ্গে আলাপ- আলোচনা করত। মুসলমান লোকটি সব সময় ইবাদত-বন্দেগী করত। আলাপ-আলোচনার সময় সে ইসলাম ধর্মের বিভিন্ন দিক এত সুন্দরভাবে তুলে ধরত যে, খ্রিস্টান লোকটি কিছু দিনের মধ্যেই ইসলাম গ্রহণ করল। এরপর রাত হয়ে যাওয়ায় দুই বন্ধু যার যার ঘরে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ল। ঘুমের এক পর্যায়ে নওমুসলিম লোকটি বুঝতে পারল যে, কেউ তার ঘরের দরজায় কড়া নাড়ছে। সে দ্রুত বিছানা থেকে দরজার কাছে এসে জিজ্ঞেস করল- এত রাতে দরজা ধাক্কাচ্ছে কে?
দরজার বাইরে থেকে জবাব এল- আমি তোমার বন্ধু। যার কাছে তুমি ইসলাম গ্রহণ করেছ। তুমি কি আমাকে চিনতে পারছ না?
নওমুসলিম লোকটি বলল: হ্যাঁ, চিনতে পেরেছি। কিন্তু এত রাতে তুমি কেন এসেছ?
মুসলমান লোকটি বলল: আমি এসেছি তোমাকে ফজরের নামায পড়ার জন্য ডাকতে। তাড়াতাড়ি ওঠে ওজু করে নাও। দু'বন্ধু মিলে মসজিদে নামায পড়ব।
নও মুসলিম লোকটি আর কোনো কথা বলে ওজু করে মসজিদের দিকে রওনা হলো। মসজিদে এসে দু'বন্ধু আর কাউকে দেখতে পেল না। কারণ ফজরের নামাযে সময় তখনও হয়নি। অগত্যা দুই বন্ধু বেশ কিছুক্ষণ নফল নামায আদায় করল। এরপর নামাযের ওয়াক্ত হলে অন্য মুসল্লিদের সঙ্গে তারা ফজরের নামায পড়ল। নামায শেষে তারা দোয়া-দরুদ পড়া শুরু করল। এভাবে এক সময় সকাল হয়ে গেলে। এবার নওমুসলিম লোকটা মসজিদ থেকে বাড়ি যাওয়ার জন্য উঠে দাঁড়াল। এ সময় বন্ধুটি জিজ্ঞেস করল- কোথায় যাচ্ছ তুমি?
জবাবে নওমুসলিম বলল- কেন, বাড়ি যাচ্ছি! ফজরের নামায তো পড়লাম। এখন আর এখানে থাকার দরকার কি?
মুসলমান বন্ধুটি বলল: আর একটু দেরি কর। বেশি করে দোয়া-কালাম পড়- এতে আল্লাহপাক খুব খুশি হবে।
নওমুসলিম লোকটি বলল- ঠিক আছে, তাই হোক।
এরপর আরো কিছুক্ষণ কেটে গেল। এক সময় সূর্য উঠল। নওমুসলিম লোকটি আবারো বাড়ি যাওয়ার জন্য উঠে দাঁড়াল। এ সময় মুসলমান লোকটি একটা কুরআন শরীফ নিয়ে এসে বলল: আপাতত কিছুক্ষণ কুরআন তেলাওয়াত কর। এতে করে সূর্যটাও পুরোপুরি উঠে যাবে। আর আমি তোমাকে একটা উপদেশ দিতে চাই। উপদেশটি হ'ল আজ তুমি রোযার নিয়ত করে নাও। তুমি নিশ্চয়ই জেনেছ যে, রোযা অনেক সওয়াবের কাজ!
এভাবে ধীরে ধীরে যোহরের নামাযের সময় হয়ে গেল। দু'বন্ধু একসাথে যোহরের নামায পড়ে নিল। এরপর নওমুসলিম বন্ধুটি আবারো বাড়িতে যেতে চাইল। কিন্তু মুসলমান লোকটা বলল: আর অল্প কিছূক্ষণ দেরি কর। আসরের নামাযে সময় প্রায় হয়ে আসছে। এ নামাযটাও জামায়াতের সাথে মসজিদে পড়ে নেয়াই ভালো হবে।
আসরের নামায শেষ হবার পর সে তার নওমুসলিম বন্ধুকে বলল: আর একটু পরেই সুর্য ডুবে যাবে।তখন মাগরিবের নামায জামায়াতে পড়ার সওয়াবটাও পাওয়া যাবে।
মাগরিবের নামাযের পর নতুন মুসলমান লোকটি বাড়ি যেতে চাইল। সারা দিন রোযা রাখার করে সে বাড়িতে গিয়েই ইফতার করবে। এ সময় মুসলমান লোকটি বাধা দিয়ে বলল: এখন আর এশার নামাযই বাকি আছে। আর খানিকটা অপেক্ষা কর। এশার নামাযটা পড়ে একসাথে বাড়ি যাব।অগত্যা নওমুসলিম লোকটি এক গ্লাস পানি দিয়ে ইফতার সারল।ঘণ্টাখানেক পর এশার নামাযও মসজিদে আদায় করল তারা। এরপর তারা নিজ নিজ বাড়ি ফিরে গেল।বাড়ি গিয়ে নওমুসলিম লোকটি একরাশ বিরক্তি নিয়ে শুয়ে পড়ল।
দ্বিতীয় রাতেও নওমুসলিম লোকটির কানে দরজা খট্খটানির শব্দ এল। সে ঘুম থেকে জেগে জিজ্ঞেস করল- কে ওখানে?
দরজার বাইরে থেকে জবাব এল- আমি তোমার প্রতিবেশি বন্ধু? ওজু করে কাপড়-চোপড় পরে তাড়াতাড়ি বেরিয়ে এস। একসাথে মসজিদে গিয়ে ফজরের নামায আদায় করব।
এ কথা শুনে নওমুসলিম উত্তেজিত হয়ে বলল: "আমি গতকাল মসজিদ থেকে ফিরে আসার সাথে সাথে ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করেছি। তুমি চলে যাও। আর আমার চেয়ে কোনো বেকার লোকের কাছে যাও-যার কাছে নামায, রোজা ও আল্লাহর ইবাদত ছাড়া দুনিয়ার কোনো কাজ নেই।"
এরপর একটু দম নিয়ে সে আবার বলল- "আমি দরিদ্র ও অভাবি একজন মানুষ। তাছাড়া, আমার ওপর আমার পরিবারের ভরণপোষণের দায়িত্ব রয়েছে। কিন্তু তোমার মত ধর্মকর্ম করতে গেলে আমাদের না খেয়ে থাকতে হবে। তাই আমি ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করেছি।"
এসব কথার কোনো জবাবই দিতে পারল না দরজার বাইরে দাঁড়ানো লোকটি বরং নিজের বাড়াবাড়ির কথা চিন্তা করে অনুতপ্ত হতে লাগল।
এভাবে কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে যে লোকটি একজন খ্রিস্টানকে মুসলমান বানাল, তার কট্টর মনোভাবের কারণেই আবার নওমুসলিম লোকটা ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করল। তাই আমাদেরকেও সব সময় এটা মনে রাখতে হবে যে, আমাদের কঠোর মনোভাব ও কট্টরপন্থার কারণে কেউ যেন বিরক্ত না হয়। সব সময় অন্যের সমস্যা, ক্ষমতা ও সামর্থ্যের প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে। ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করতে আগ্রহীরা যে, ইসলামের সৌন্দর্যের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে নিজ থেকেই ইসলামকে ভালোবাসে।"
তোমাদের কি এ কথা জানা নেই যে, কঠোরতা ও বলপ্রয়োগ ছিল বেঈমানদের নীতি। আর আমাদের নীতি হচ্ছে- উত্তম চরিত্র, নম্র আচরণ, ভালোবাসা ও আন্তরিকতা। এগুলোর মাধ্যমেই আমরা মানুষের মন জয় করে থাকি।"
বিষয়: বিবিধ
১০৫৫ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
এই গল্পটি দিয়ে আমি একবার সোনারবাংলাদেশ ব্লগে এ্কই প্রসঙ্গে একটি পোষ্ট দিয়েছিলাম।
ইসলামের নামে যারা বাড়াবাড়ি করছে তারা প্রকৃতপক্ষে ক্ষতি করছে।
মন্তব্য করতে লগইন করুন