বাংলা নববর্ষ: উৎপত্তি থেকে শুরু করে বর্তমান অবস্থা
লিখেছেন লিখেছেন েনেসাঁ ১৫ এপ্রিল, ২০১৪, ১১:০৩:১৮ সকাল
ঋতুনির্ভর চাষাবাদ ব্যবস্থা,ফসল ফলানো, ফসলের উপর নির্ভর করে খাজনা আদায়- এসব বিবেচনা থেকেই মোগল সম্রাট আকবর ১৫৮৪ খ্রিস্টাব্দের ১০ বা ১১ মার্চ থেকে বাংলা সন গণনা প্রচলন করেন।
প্রথমদিকে এই সালের নাম ছিল ‘তারিখ-ই-এলাহি’। পরে তা পরিচিতি পায় ‘ফসলি সাল’, ‘বঙ্গাব্দ’ বা ‘বাংলা বর্ষ’ নামে।
সম্রাট আকবরের সময়কাল থেকেই পহেলা বৈশাখ উদযাপন শুরু হয়। তখন প্রত্যেককে চৈত্র মাসের শেষ দিনের মধ্যে সকল খাজনা, মাশুল ও শুল্ক পরিশোধ করতে হত। এর পরদিন অর্থাৎ পহেলা বৈশাখে ভূমির মালিকরা নিজ নিজ অঞ্চলের অধিবাসীদের মিষ্টি দিয়ে আপ্যায়ন করতেন। এ উপলক্ষে বিভিন্ন উৎসবের আয়োজন করা হতো; যা পরে সামাজিক অনুষ্ঠানে পরিণত হয়।
কালের পরিক্রমায় এসব অনুষ্ঠানের উদযাপনে পরিবর্তন হতে হতে আজকের আবস্থায় এসে দাড়িয়েছে।
আমাদের নববর্ষের সঙ্গে জড়িয়ে আছে ‘হালখাতা’। বাংলা সালের প্রথম দিনে নতুন হিসাবের খাতায় দোকানপাটের হিসাব আনুষ্ঠানিকভাবে হালনাগাদ করা হয়।
গ্রাম-বাংলায় পহেলা বৈশাখ মানেই মেলা। গ্রামের এই মেলাগুলো বসে সাধারণত বড় গাছতলায়, গ্রামের একপ্রান্তে, নদীর ধারে। এইসব মেলায় থাকে বিভিন্ন ধরনের আকর্ষণীয় জিনিস আর নানা রকমের খাবার। এ ছাড়াও থাকে হরেক রকমের খেলার আয়োজন। গ্রাম ছাড়িয়ে সেই মেলা এখন চলে এসেছে শহরে, নগরে।
নাগরিক জীবনে ঘটা করে পহেলা বৈশাখ উদযাপনের শুরুটা হয় গত শতকের ৬০-এর দশক থেকে। এ সময়ে এসে বাংলা নববর্ষ উদযাপনে এক নতুন রাজনৈতিক মাত্রা লাভ করে।
রাজধানীত রমনা বটমূলে ছায়ানটের অনুষ্ঠানের মতো পহেলা বৈশাখ উদযাপনের আবশ্য অনুষঙ্গ হয়ে দাড়িয়েছে ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইন্সটিটিউটের উদ্যোগে ১৯৮৯ সালে শুরু হয়েছিল ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’। ১৯৯৬ সাল থেকে এটি ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।
বৈশাখের প্রথম দিনের সকাল বেলায় এতে অংশগ্রহণ করে চারুকলার শিক্ষক-শিক্ষার্থী ছাড়াও বিভিন্ন স্তরের, বিভিন্ন বয়সের মানুষ। এই শোভাযাত্রায় থাকে বিভিন্ন ধরনের প্রতিকী শিল্পকর্ম। থাকে বাংলার লোকজ সংস্কৃতির পরিচয় বহনকারী নানা উপকরণ, রং-বেরংয়ের মুখোশ ও বিভিন্ন প্রাণীর প্রতিকৃতি।
এ প্রসঙ্গে বিশিষ্ট কবি ও সাংবাদিক আল মুজাহিদী রেডিও তেহরানকে বলেন, পহেলা বৈশাখ কোন ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়। একটি সাংস্কৃতিক আনুষ্ঠান। তাই এ দুইয়ের মধ্যে যাতে কোন রকম সংঘাত সৃষ্টি না হয় এটাই তিনি কামনা করেন।
নাগরিক পরিবেশে পহেলা বৈশাখের উৎসবের বিস্তৃতি দেখে বরং খুশী হয়েছেন কবি আসাদ চৌধুরী। উৎসবের বর্তমান যে চেহারা তা তিনি ২০ বছর আগেও দেখেননি। তিনি মনে করেন, এটা হতে পারে মানুষ রাজনৈতিক বিভক্তি থেকে নিজেদের বাঁচিয়ে একটা সাংস্কৃতিক মেলবন্ধন গড়তে চায়। এই পহেলা বৈশাখে আসাদ চৌধুরীর মত আমরাও বাংলাদেশের সব মানুষের জন্য আজ, আগামীকাল ও প্রতিটি দিনের জন্য মঙ্গল কামনা করি।
বিষয়: বিবিধ
১০২৭ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
সুস্থ সংস্কৃতি চর্চা এবং জঙ্গল যাত্রার মত অপসংস্কৃতিকে কঠোর হাতে প্রতিরোধ করতে হবে।
মন্তব্য করতে লগইন করুন