অদৃশ্য সুতার টানই ভালোবাসা

লিখেছেন লিখেছেন েনেসাঁ ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪, ০২:২৮:৫৬ দুপুর



ভালোবাসা একটি আপেক্ষিক বিষয়। সমাজ বিজ্ঞানীরা তাই একেকজন একেকভাবে এটা উপস্থাপন করেছেন। কারও মতে, ভালোবাসার সুনির্দিষ্ট কোন সংজ্ঞা নেই, ভালো কামনা করা, মনের বিনিময়, ভাবের আদান প্রদান_ এসবই ভালোবাসার অন্তর্ভুক্ত। কেউ বলেন, অদৃশ্য সুতার টানই ভালোবাসা। প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সা.) এর ভালোবাসার ছোঁয়ায় মরুভূমিতে ফুটেছিল ফুল। অন্ধকারাচ্ছন্ন পৃথিবী পরিণত হয়েছিল সোনালি পৃথিবীতে। জাহেলি যুগের যেই মানুষ ছিল দয়া-মায়া, ভালোবাসাহীন, পরস্পর শত্রুতা ও সন্ত্রাসী আচরণেই অভ্যস্ত, তারা পরিচিত হলো একে অপরের নিরাপত্তারক্ষী হিসেবে। পাষাণ হৃদয়ের মানুষগুলো রাসূল মুহাম্মদ (সা.) কে ভালোবেসে তার প্রদর্শিত বিধান জীবনে ধারণ করে এমন হলো যে, নিজেরা অভুক্ত থেকে রাসূল (সা.) এর মেহমানকে পেটপুরে খাবার ব্যবস্থা করেছিল। যুবক বয়সে আরবের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ধনবতী-রূপসী, জ্ঞানী ও মহৎ চরিত্রের অধিকারিণী বিখ্যাত খাদিজার ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা করে যোগ্যতা-দক্ষতা ও সততার পরিচয় প্রদান করেন। এতে মুগ্ধ হন স্বয়ং ধনবতী ও মহামতী খাদিজা (রা.)। চলি্লশ বছর বয়সী এ ভাগ্যবতী নারী দু'দুবার স্বামী হারিয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন জীবনে আর বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হবেন না। কিন্তু আল আমিনের মতো মহৎ গুণাবলিসম্পন্ন যুবক ও অসাধারণ ব্যক্তিত্বের প্রতি ভালোবাসা এবং তাকেই জীবনসঙ্গী হিসেবে পেতে অধীর আগ্রহী হয়ে পড়েন তিনি। আল্লাহর কৃপায় অবশেষে ধন্য হন তিনি। বিশ্বের সেরা বর-কনে আবদ্ধ হলেন বিবাহ বন্ধনে। তাদের দাম্পত্য জীবন চলতে লাগল মধুর থেকে মধুর করে। পৃথিবীর ইতিহাসে অনুসরণীয় দাম্পত্য জীবন স্থাপন করেছিলেন তারা, এটা সম্ভব হয়েছিল পরস্পরের প্রতি আস্থা-বিশ্বাস ও অকৃত্রিম ভালোবাসার জন্য। আল্লাহ তায়ালার ভালোবাসা লাভের উপায় হলো তাঁর সৃষ্টির সব মাখলুকাত (সৃষ্টি) কে ভালোবাসা। রাসূল (সা.) এরশাদ করেছেন, তোমরা আল্লাহর ভালোবাসা প্রত্যাশা করলে মানুষকে ভালোবাস। এমনকি হাসরের দিন আল্লাহ বলবেন, আমি ক্ষুধার্ত ছিলাম, পিপাসার্ত ছিলাম, অসুস্থ ছিলাম কিন্তু তোমরা আমায় খানা-পিনা করাওনি ও সেবা-শুশ্রূষা করোনি। বান্দা বলবে ওগো প্রভু! তুমি নিরাকার, পৃথিবীতে তোমায় আমরা খুঁজে পাইনি, কীভাবে আমরা তোমায় সেবা করব? আল্লাহ বলবেন, পৃথিবীতে আমার সেরা জীব মানুষ ক্ষুধার্ত ও পিপাসার্ত ছিল। কেউ বা রোগাক্রান্ত ও অভাবী ছিল। যদি তোমরা সেদিন মানুষের ভালোবাসায় উদ্বুদ্ধ হয়ে তাদের অভাব মেটাতে, খাদ্য ও পানীয় সরবরাহ করতে বা রোগীর সেবা করতে তাহলে আমার সন্তুষ্টি লাভ করতে সক্ষম হতে। রাসূল (সা.) বলেছেন, 'তোমরা জগৎবাসীর ওপর ভালোবাসায় উদ্বুদ্ধ হয়ে দয়া কর, আসমানের মালিক তোমাদের ওপর করুণা-দয়া করবেন।' মানুষের প্রতি মানুষের ভালোবাসার গুরুত্ব কত বেশি তা অনুধাবন করা যায় রাসূল (স.) এর এ বাণী থেকে। তিনি এরশাদ করেন, 'তোমরা ততক্ষণ জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না যতক্ষণ না মোমিন হবে, আর ততক্ষণ মোমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না পরস্পরকে ভালোবাস। আমি কি তোমাদের এমন একটি বিষয়ে বলে দেব! যা তোমাদের মধ্যে ভালোবাসা বৃদ্ধি করবে? তা হচ্ছে তোমরা তোমাদের মধ্যে সালামের ব্যাপক প্রচলন কর।' (মুসলিম)। ভালোবাসাকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। মহান আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালার সৃষ্টির অন্যতম নিদর্শন হচ্ছে স্বামী-স্ত্রীর ভালোবাসা। হাদিস শরিফে আছে, স্বামী-স্ত্রী মহবক্ষতের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করা কথা-বার্তা বলা নফল ইবাদতের চেয়ে উত্তম। অন্যথায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যে মহিলা (স্ত্রী) তার স্বামীকে সন্তুষ্ট রেখে দুনিয়া থেকে বিদায় নেয় সে অবশ্যই বেহেশতে প্রবেশ করবে। এ প্রসঙ্গে এরশাদ হচ্ছে, 'তাঁর নিদর্শনগুলোর মধ্যে একটা হলো, তিনি তোমাদের মধ্য থেকেই তোমাদের সঙ্গী সঙ্গিনীদের সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে সুখ-শান্তি লাভ করতে পার। আর তিনি তোমাদের মধ্যে বন্ধুত্ব-ভালোবাসা ও দয়া-মায়া সৃষ্টি করেছেন, নিশ্চয়ই যারা চিন্তা-ভাবনা করে তাদের জন্য এসবের মধ্যে বহু নিদর্শন রয়েছে।' (সূরা রূম : ২১)। নারী-পুরুষের ভালোবাসা তাই চিরন্তন। একে অপরের পরিপূরক। নারীবিহীন পৃথিবী অপূর্ণাঙ্গ। একটি শুভক্ষণের জন্য দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর দুজন বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলে সৃষ্টি হয় একটি চেতনা, আবেগ, পবিত্র ভালোবাসা। একে অপরের নিরাপত্তাদানকারী। গড়ে ওঠে প্রেমের এক নতুন ভুবন। তারা গায় ভালোবাসার জয়গান। এই অকৃত্রিম প্রেম, মধুর ভালোবাসা, দয়া ও মায়া নিঃসন্দেহে সৃষ্টিকর্তার নিদর্শন। তবে নারী পুরুষের ভালোবাসা হতে হবে বৈধ ও দাম্পত্য জীবনের আওতায়। বর্তমান সময়ে অবৈধ প্রেম-ভালোবাসায় জড়িত হয়ে অনেক তরুণ-তরুণীর জীবন অকালে ঝরে পড়ছে। তাদের লেখা-পড়ার ক্ষতি হচ্ছে, সময়ের অপচয় হচ্ছে। স্বাস্থ্য নষ্ট হচ্ছে, সাজানো সংসার ভেঙে চুরমার হচ্ছে, সবচেয়ে বড় কথা হলো, ঈমানের জ্যোতি নিভে যাচ্ছে। যারা অবৈধ প্রেমের জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করে তাদের বলছি এ হারাম পথে কেন নিজের জীবন উৎসর্গ করতে চান? খোদার পথে জীবন পরিচালিত করে নিজের জীবন উৎসর্গ করুন। যেখানে থাকবে না কোনো অশান্তি, কোনো কষ্ট, শুধু থাকবে সুখ আর শান্তি।

বিষয়: বিবিধ

১৩৪৬ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

177810
১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ দুপুর ০২:৫৬
পবিত্র লিখেছেন : খোদার পথে জীবন পরিচালিত করে নিজের জীবন উৎসর্গ করুন। যেখানে থাকবে না কোনো অশান্তি, কোনো কষ্ট, শুধু থাকবে সুখ আর শান্তি। Thumbs Up Day Dreaming


177884
১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ বিকাল ০৫:২০
আবু সাইফ লিখেছেন : স্মরণ করিয়ে দিলেন,
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ, জাযাকিল্লাহ . .


লেখাটি কয়াকটি প্যারায় ভেঙে দিলে পাঠকের জন্য সুবিধাজনক হতো
177943
১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:৩০
ইশরাত জাহান রুবাইয়া লিখেছেন : ভালো লাগলো। তবে কয়েক প্যারায় দিলে পড়তে সুবিধা হত। Good Luck Good Luck

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File