দুনিয়া ছেড়ে দ্বীনদার নয়
লিখেছেন লিখেছেন েনেসাঁ ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪, ০৭:০১:১০ সন্ধ্যা
দাওয়াতে তাবলিগ একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও ফজিলতপূর্ণ আমল। দাওয়াত অর্থ হলো, আল্লাহ তায়ালার পথে মানুষকে ডাকা, আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টির পথে মানুষকে আহক্ষান করা। মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে এরশাদ করেন, 'ওই ব্যক্তির চেয়ে উত্তম কথা আর কার হতে পারে? (এর চেয়ে উত্তম কথা বলার আর কোনো লোক নেই), যে মানুষকে আল্লাহ তায়ালার দিকে ডাকে (যে পথে চললে মাওলা খুশি হবে সে পথে মানুষকে পরিচালিত করে), সে নিজেও নেক আমল করে আর বলে আমি আল্লাহ তায়ালার বিধি-বিধানের সামনে নিজের মাথা নত করে দিলাম।'
তবে ঈমানের পেছনে মেহনত করা, ঈমানের হাকিকত বোঝা, সেই অনুযায়ী আমল করা আমাদের প্রত্যেকের পক্ষে অনেক সময় সম্ভব হয় না। কারণ আমরা মনে করি, দ্বীনদার হতে গেলে দুনিয়া ছাড়তে হবে। দুনিয়াদারির সঙ্গে দ্বীনদার হওয়া যায় না। এটা আমাদের ভুল বোঝাবুঝি। আমি দুনিয়াদার হয়েও দ্বীনদার হতে পারি। দ্বীনদার হতে হলে দুনিয়া ছাড়তে হবে_ এই শিক্ষা দ্বীনের কোথাও নেই। সূরা জুমার দিকে লক্ষ্য করুন, সেখানে বলা হয়েছে, 'হে লোক সকল! জুমার দিন যখন আজান হয়ে যায়, তোমরা বেচাকেনা ছেড়ে মসজিদে চলে যাও।' (সূরা জুমা : ৯)। তাহলে দেখা যাচ্ছে, এই আয়াতে মহান আল্লাহ তায়ালা মানুষকে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে উঠিয়ে মসজিদের দিকে নিচ্ছেন। এই কথা বলেননি যে, তুমি ঘর থেকে বেরিয়ে মসজিদের দিকে চলে এসো। বোঝা গেল ঘরে অলস বা বেকার সময় কাটানো ইসলামের কাছে পছন্দনীয় নয়। অথবা সারাক্ষণ মসজিদে বসে থাকাও ইসলামের দাবি নয়। বরং ছেলে-সন্তান, স্ত্রী-পরিজন, বাবা-মা প্রমুখ যাদের ভরণ-পোষণের দায়িত্ব তার ওপর বর্তায়, তাদের জন্য রিজিকের সন্ধান করতে হবে। আজানের আগ পর্যন্ত সময়টা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বা কর্মক্ষেত্রে কাটানোই ঈমানের দাবি। তাই বলা হয়েছে, 'যখন নামাজ শেষ হয়ে যায় তখন ভূমিতে ছড়িয়ে পড় এবং আল্লাহ তায়ালার দেয়া ফজল তথা রিজিকের সন্ধান কর।' (সূরা জুমা : ১০)।
এই নয় যে, এক ওয়াক্তের নামাজ পড়েছি আরেক ওয়াক্তের নামাজের অপেক্ষায় আমাকে মসজিদে বসে থাকতে বলা হয়েছে। তবে হ্যাঁ, দুনিয়ার কাজে গিয়ে যেন আল্লাহ তায়ালাকে ভুলে না যাই; বরং আল্লাহ তায়ালাকে বেশি বেশি স্মরণ করি। আবার যখন মসজিদে আজান হয়ে যাবে তখন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে মসজিদে আল্লাহ তায়ালার দরবারে হাজিরা দিতে হবে। এর নামই হলো দ্বীন। সুতরাং দুনিয়ার সব কাজকর্ম বাদ দিয়ে সারা দিন দ্বীনের নামে ঘুরে বেড়ানোকে দ্বীন মনে করা হলেও তা আসলে দ্বীন নয়। বরং এর দ্বারা স্ত্রী-পরিজন, ছেলে-মেয়ে, বাবা-মার হক নষ্ট করা হয়। যাদের ভরণ-পোষণের দায়িত্ব আল্লাহ তায়ালা আমার ওপর ন্যস্ত করেছেন, তাদের হকের প্রতি অবহেলা করা কবিরা গুনাহ। মনে রাখতে হবে, তাদের হক আদায় করাও দ্বীনের একটি ফরজ বিধান। সুতরাং ফরজকে উপেক্ষা করার কোনো অবকাশ নেই। আয়াতের শেষে গিয়ে আল্লাহ তায়ালা বলেন, 'লাআল্লাকুম তুফলিহুন', যেন তোমরা সফলকাম হতে পার। এই কথা দ্বারা এই দিকেই ইঙ্গিত করেছেন অর্থাৎ এটাই হচ্ছে সফলতার একমাত্র রাস্তা।
বিষয়: বিবিধ
১৪৮৭ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
অর্থাৎ হে আল্লাহ আমাদের দুনিয়া এবং আখিরত উভয়টা দান করুন। অর্থাৎ আখিরাত চাইতে হলে দুনিয়া চাইতে পারবে না এমন কিছু নয় তবে খিয়াল রাখতে হবে যেন দুনিয়া চাইতে বা কামাইতে গিয়ে আখিরাতের ক্ষতি না হোক, অথবা এমনভাবে দুনিয়া কামাবো না যাতে আল্লাহ ও তার রাসুলের নিষেধ আছে।((( আর দাওয়াতুত তাবলীগ বা বর্তমান তাবলীগ জামাতে এমন কোন শর্ত নেই যে আপনি আপনার পরিবার বর্গ ও ব্যাবসা বাণিজ্য ছেড়ে দিয়ে জামাতে জামাতে ঘুরেন, বরং তাদেরও যুক্তি পরামর্ষ এমন যে আপনি সবগুলোর আঞ্জাম বা ব্যাবস্থা করে তারপরি আল্লাহ্র রাস্তায় সময় দিন যদ্দারা আপনি নিজেও দীন সম্পর্কে জানতে ও আমল করতে পারবেন এবং অন্যকেও জানাতে শিখাতে পারবেন। সাধারন মানুষের পাশাপাশি তাবলীগে আলেমদেরও সময় দেওয়া খুব গুরুত্বপূর্ণ, কারন সাধারন মানুষ তো আলেমদের কাছ থেকেও শিখবে))))
মন্তব্য করতে লগইন করুন