সময় ও পরিবেশের সাথে প্রায় সব কিছু পরিবর্তনশীল, তাই চিকিৎসা পদ্ধতির সেকাল ও একাল নিয়ে কিছু আলোচনাঃ
লিখেছেন লিখেছেন েনেসাঁ ২৫ জানুয়ারি, ২০১৪, ০৬:৩১:০৩ সন্ধ্যা
চিকিৎসকদের কাজ হলো আপনাকে সুস্থ রাখা। তবে মনে রাখবেন, তারাও মানুষ। ফলে তাদের পক্ষে অনেক সময়ই সর্বশেষ চিকিৎসা-গবেষণা সম্পর্কে জানা সম্ভব হয় না। ফলে তিনি যে জ্ঞানের বলে আপনার চিকিৎসা করছেন, সেটা হয়ে যেতে পারে সেকেলে, অসহায়ক এবং এমনকি ক্ষতিকর। আপনিই জেনে নিন না, এ ধরনের কিছু বিষয়। অনেক উপকার হতে পারে এসব জেনে।
পুরনো নিয়ম : খাওয়ার ঠিক পরপরই দাঁত মাজুন।
অনেক দন্তচিকিৎসক দাঁতে গর্ত সৃষ্টিকারী প্লাগ সরিয়ে ফেলার জন্য তাদের রোগীদের যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ব্রাশ করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। আমেরিকান ডেন্টাল এসোসিয়েশনের হিসাবমতে, প্রতি ১০ আমেরিকানের নয়জনই বিশ্বাস করে যে প্রতিবার খাওয়ার পরপর ব্রাশ করা জরুরি।
নতুন ব্যবস্থাপত্র : খাওয়ার সাথে সাথেই পানি দিয়ে কুলি করবেন, তবে ব্রাশ করবেন আরো অন্তত আধা ঘণ্টা পর। খাবার পরপর ব্রাশ করতে ছুটলে বিশেষ করে লেবুজাতীয় ফল, ভিনেগার ও সোডার মতো খাবার ও কোমল পানীয়ের মধ্যে থাকা অ্যাসিড আপনার দাঁতের ক্ষতি করতে পারে। কিছুক্ষণ পর অ্যাসিড দূর হয়ে যাবে। তখন ভালোভাবে ব্রাশ করুন।
পুরনো নিয়ম : আপনার শ্লেষ্মা সবুজ হলে বুঝতে হবে ব্যাকটেরিয়ার ইনফেকশন হয়েছে, সেরে ওঠার জন্য অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োজন।
অনেক চিকিৎসকের এখনো এটা মনে করার কারণ বোধগম্য। হলুদ বা সবুজাভ সর্দি বা কফ থাকা মানে ধরে নেয়া হয়, এখনো ব্যাকটেরিয়া উপস্থিত রয়েছে এবং পুঁজ তৈরি করছে। তবে আধুনিক বিজ্ঞান বলছে, এই ধরে নেয়াটা সবসময় সত্য না-ও হতে পারে।
নতুন ব্যবস্থাপত্র : চিকিৎসককে কখনো অ্যান্টিবায়োটিক দেয়ার জন্য চাপ দেবেন না। হলুদ বা সবুজাভ সর্দি বা কফ সাধারণত সুস্থ হওয়ার প্রক্রিয়ার উপজাত। সংক্রমণ প্রতিরোধের জন্য রক্তের শ্বেত কণিকা হানাদারদের হত্যা করার জন্য এনজাইম নিঃসরণ করে। কোনো কোনো এনজাইমে লৌহ থাকে, যার রং সবুজাভ। অ-সাদা কফ বা সর্দির উপস্থিতি মানেই ব্যাকটেরিয়া ইনফেকশনের ইঙ্গিতবহ নয়। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অ্যারন ক্যারলের মতে, ভাইরাসের সাথে যুদ্ধ করার কারণেই কফের রং পাল্টে যেতে পারে। দেহের মধ্যে থাকা প্রতিরোধ-ব্যবস্থা নিজস্ব পন্থায় কাজ করে। তাকে তার মতো করে কাজ করতে দিন।
এখন প্রশ্ন হলো, এমনই যদি হবে, তবে চিকিৎসকেরা কেন অ্যান্টিবায়োটিক লিখে লিখে ব্যবস্থাপত্র ভরে ফেলেন? এর কারণ হলো, অনেক সময় চিকিৎসকেরা মনে করেন, রোগী নিজেই অ্যান্টিবায়োটিক কামনা করছেন, অনেক সময় রোগী নিজে তা বলেও থাকেন। বাংলাদেশের মতো দেশগুলোকে ওধুধ কোম্পানিগুলোর অনুরোধেও অনেক চিকিৎসক অ্যান্টিবায়োটিকের পরামর্শ লিখেন। মনে রাখতে হবে, অতিরিক্ত ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. ক্যারল বলেন, ‘অ্যান্টিবায়োটি বেশি বেশি দেয়া হলে রোগ প্রতিরোধ মতা কমে যেতে পারে। চিকিৎসক যখন অ্যান্টিবায়োটিক দেবেন, তখন সংশয় হলে আপনি নিজেই তাকে জিজ্ঞেস করে জেনে নিতে পারেন, এটা আসলেই প্রয়োজনীয় কি না?’
পুরনো নিয়ম : কাটা বা ছেঁড়া স্থান পরিষ্কার ও ইনফেকশনমুক্ত রাখার জন্য হাইড্রোজেন পার অক্সাইড ব্যবহার করুন কিংবা অ্যালকোহল দিয়ে ধুয়ে নিন।
এই দুটি পরিষ্কারক উপাদান ইনফেকশন সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া ধবংস করে ফেলে। অনেক মেডিক্যাল সেন্টার, এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউটস অব হেলথ পর্যন্ত ক্ষত স্থান পরিষ্কার করতে ফার্স্ট অ্যাইড বাক্সে এক বোতল অ্যালকোহল বা হাইড্রোজেন পার অক্সাইড রাখার পরামর্শ দিয়ে থাকে।
নতুন ব্যবস্থাপত্র : এগুলোর বদলে কাটা বা ছেঁড়া স্থান সাবান ও পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। হাইড্রোজেন পার অক্সাইড ও অ্যালকোহল কিছু ব্যাকটেরিয়া ধবংস করে ঠিকই, কিন্তু সেইসাথে তারা টিস্যু মেরামতের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় কোষও নষ্ট করে ফেলে। ফলে কাটা বা ছেঁড়া জায়গা স্বাভাবিক হতে বরং বেশি সময় লাগে। আগের চেয়ে ভালো ও স্বাস্থ্যকর প্রাথমিক চিকিৎসা-ব্যবস্থা হলো : ক্ষত স্থানটি কোমল সাবান ও প্রবাহিত পানি দিয়ে তিন থেকে পাঁচ মিনিট ধুয়ে নিন। এরপর ইনফেকশন বা সংক্রমণ প্রতিরোধের জন্য অ্যান্টিবায়োটিক মলমের পাতলা একটি প্রলেপ দিন। গত জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের জার্নাল অব ফ্যামিলি প্রাকটিসে প্রকাশিত অত্যন্ত মানসম্পন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, এই পদ্ধতিতে অ্যালকোহল বা হাইড্রোজেন পার অক্সাইড থেকেও কার্যকরভাবে আক্রান্ত এলাকা নিরাময় করা যায়। সবশেষে আক্রান্ত স্থানটি পরিষ্কার ও আর্দ্র রাখার জন্য ব্যান্ডেজ করে নিতে পারেন। ডা. ক্যারলের মতে, ক্ষত স্থান ঢেকে না রাখাটা আরেকটি সাধারণ ভুল। তার মতে, স্থানটি খোলা রাখা হলে সংশ্লিষ্ট কোষের মৃত্যু ঘটে। ফলে ঘা আরো বড় হয়। তাই দ্রুততর গতিতে নিরাময়ের জন্য স্থানটি ঢেকে রাখাই ভালো।
পুরনো নিয়ম : জ্বরের লক্ষণ দেখা মাত্র ওষুধ গ্রহণ করুন।
তাপমাত্রা বাড়তে থাকলে কেবল শীত বা অস্বস্তিই লাগে না, সেইসঙ্গে আরো নানা সমস্যা দেখা দেয়। শিশুদের জন্য বিশেষ করে জ্বর বেশি হয়ে গেলে মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। এ কারণে জ্বর হওয়ামাত্র তা কমানোর জন্য ওষুধ ব্যবহার করা জরুরি।
নতুন ব্যবস্থাপত্র : জ্বর খুব বেশি হলেই কেবল ওষুধ সেবন করবেন। স্বল্প জ্বর কেবল যে নিরাপদই নয়, এটা আপনার দেহকে ইনফেকশন মোকাবিলায় সাহায্যও করে। ফলে আপনি আগের চেয়ে দ্রুত গতিতে সুস্থ হতে পারেন। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডেভিড কাটজের মতে, তাপমাত্রা বাড়ার সাথে সাথে দেহের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাও সক্রিয় হয়ে ওঠে। জ্বর আক্রমণকারী জীবাণুগুলোকেও দুর্বল করে দেয়, ফলে তাদের মোকাবিলা করার আরো সহজ হয়ে যায়। সাধারণভাবে ১০১ ডিগ্রি ফারেনহাইট (তিন মাসের বেশি বয়সী শিশুদের ক্ষেত্রে ১০২ ডিগ্রি ফারেনহাইট) পর্যন্ত জ্বরে কোনো ওষুধের দরকার নেই। অবশ্য, যদি খুব বেশি অস্বস্তি অনুভব করেন, তবে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হবেন।
পুরনো নিয়ম : হৃদপিণ্ড সুস্থ রাখার জন্য খুব বেশি ডিম খাবেন না।
সেই ১৯৭০-এর দশক থেকে হৃদরোগ বিশেষজ্ঞরা বলে আসছেন, ডিমের কুসুমে উচ্চ মাত্রায় কলেস্টেরল রয়েছে। তারা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলছেন, কলেস্টেরল বেড়ে গেলে রক্ত প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয় এবং পরিণতিতে হৃদরোগ হয়ে থাকে। এই গত গ্রীস্মে হৃদরোগ-সংক্রান্ত একটি জার্নালে বলা হয়, আপনার হৃদযন্ত্রের জন্য ডিম সিগারেটের মতোই ক্ষতিকর।
নতুন ব্যবস্থাপত্র : ডিম খুব একটা সমস্যা করে না। আমেরিকান জার্নাল অব ক্লিনিক্যাল নিউট্রেশনের এক সমীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সুস্থ লোকেরা ডিম খেলে তাদের হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে না। আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে, উচ্চ কলেস্টেরলে আক্রান্ত লোকেরাও দিনে একটি ডিম নিশ্চিন্তে খেতে পারেন। কারণ : ডিম ও চিংড়ির মতো খাবারে প্রাপ্ত কলেস্টেরল আপনার রক্তধারায় থাকা কলেস্টেরলে তেমন কোনো প্রভাব বিস্তার করে না। কলেস্টেরল বৃদ্ধিকারী প্রকৃত অপরাধী হলো আপনার জীবনযাপন প্রণালী, খাদ্যাভ্যাস এবং ব্যায়াম না করা। একটি মাঝারি আকারের ডিমে কলেস্টেরল থাকে ১৬৪ মিলিগ্রাম। আমেরিকান হার্ট এসোসিয়েশন দিনে ৩০০ মিলিগ্রাম (যাদের হৃদরোগ আছে, তাদের জন্য ২০০ মিলিগ্রাম) পর্যন্ত কলেস্টেরলের সুপারিশ করে থাকে। ডিমের কুসুম পুষ্টি উপাদানে ভর্তি থাকে। এতে মস্তিষ্ককে সুরক্ষিত রাখার উপাদান এবং চোখ সুস্থ রাখার জন্য প্রয়োজনীয় অ্যান্টিঅক্সিজেন লুটিয়েনও থাকে।
পুরনো নিয়ম : আপনার যদি ডাইভারটিকিউলোসিস (মলাশয়ের ছোট আকারের থলি সৃষ্টির ফলে হজমের সমস্যাজনিত রোগ) হয়ে থাকে তবে বাদাম, বিচি ও ভুট্টা খাবেন না।
দশকের পর দশক ধরে চিকিৎসকেরা এই রোগে আক্রান্তদের ছোট, শক্ত খাবার এড়িয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে আসছেন। তাদের মতে, এসব খাবার এসব থলিতে জমা হয়ে ব্যথা ও রক্তপাতের কারণ হয়ে থাকে। প্রখ্যাত চিকিৎসক অ্যানিশ শেথ বলেন, ‘এমনকি এখনো আমি এমন রোগীও পেয়ে থাকি, যারা ১৫ বছর ধরে পপকর্ন খান না।’
নতুন ব্যবস্থাপত্র : নিশ্চিন্ত মনে বাদাম, বিচি, ভুট্টা খেতে পারেন। আমেরিকান মেডিক্যাল এসোসিয়েশন জার্নালে প্রায় ৫০ হাজার লোকের ওপর সমীক্ষা চালিয়ে দেখেছে, এসব খাবারে তাদের কোনো ধরনের সমস্যা হয় না। এমনকি বাদাম বা পপকর্ন এসব রোগীদের কিছু কিছু জটিলতা হ্রাস করতে সহায়তা করে। ডা. শেথ বলেন, এসব খাবারে প্রচুর আঁশ থাকায় এগুলো কোষ্ঠকাঠিন্য কমাতে সহায়তা করে থাকে।
পুরনো নিয়ম : ওজন কমানোর জন্য দিনে পাঁচ থেকে ছয়বার খাবার গ্রহণ করুন।
নিউ ইংল্যান্ড অব মেডিসিন এবং আমেরিকান জার্নাল অব কিনিক্যাল নিউট্রিশনের মতো মর্যাদাসম্পন্ন জার্নালে যখন বলা হয় একটু পর পর কম কম খাবার গ্রহণ করা হলে রক্তের সুগার কমে যায়, এতে কলেস্টেরলও হ্রাস পায়, তখন এ নিয়ে সন্দেহের অবকাশ খুব কমই থাকে। কোনো কোনো বিশেষজ্ঞ এমন দাবিও করেন, এভাবে খাবার গ্রহণ করা হলে হজমের ক্ষমতা বাড়ে, ওজন কমাতে সহায়ক হয়।
নতুন ব্যবস্থাপত্র : খাবার গ্রহণের ধরণটির মধ্যেই অতিরিক্ত খাবার গ্রহণের সমস্যাটি নিহিত থাকে। পারডিউ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা কয়েকজনকে নিম্ন ক্যালরি ও উচ্চ প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খাইয়ে দেখতে পান যে যারা তিনবার বেশি বেশি খাবার গ্রহণ করেন তাদের তুলনায় যারা ছয়বার অল্প অল্প করে খাবার গ্রহণ করেন তারা ক্ষুধা অনুভব করেন (তাদের ওজনও হ্রাস পায় না)। এর কারণ হলো, অল্প অল্প করে খেলে তৃপ্তি আসে না। ফলে তার মধ্যে আরো কিছু খাওয়ার প্রবণতার সৃষ্টি হয়। এ কারণে সবচেয়ে ভালো হয়, আপনি তিন বেলা তৃপ্তি নিয়ে পর্যাপ্ত খাবার খাবেন। তিন বেলার মাঝে কিংবা কেবল বিকেলে সামান্য কিছু খাবার খেতে পারেন।
পুরনো নিয়ম : সোজা হয়ে বসবেন।
বসার সময় আপনার মেরুদণ্ডটি একেবারে সোজা রাখবেন। এতে করে আপনার মেরুদণ্ড ব্যথা করবে না বা ভবিষ্যতে বেঁকে যাওয়ার আশঙ্কা থাকবে না।
নতুন ব্যবস্থাপত্র : সম্ভবত স্থিতিস্থাপক পিঠই সর্বোত্তম কৌশল। আলবার্টা বিশ্ববিদ্যালয়ের কানাডীয় গবেষকেরা যখন স্বেচ্ছাসেবকদের এমআরআই স্ক্যান করলেন, তখন তারা দেখলেন যে ৯০ ডিগ্রি কোণে বসার চেয়ে ১৩৫ ডিগ্রি কোণে বসলে মেরুদণ্ডের ডিস্কে চাপ পড়ে কম। নিউ ইয়র্কের স্পাইন সেন্টারের ফিজিক্যাল থেরাপির পরিচালক ইভান জনসন বলেন, সময়ের পরিক্রমায় অতিরিক্ত চাপের ফলে আপনার ডিস্ক ফুলে গিয়ে ক্ষতের সৃষ্টি করতে পারে। আপনি যখন বসেন, তখন ডিস্কটি আপনার মাথাকে আপনার কাঁধ ও নিতম্বের লাইনে ধরে রাখে। আপনি বসার সময় আপনার পিঠকে সামান্য বাঁকা হতে দিন। চেয়ারটি প্রয়োজনমতো সরিয়ে নিন, যাতে সেটি আপনার পিঠকে সহায়তা করতে পারে।
পুরনো নিয়ম : ওজন কমানোর জন্য হৃদযন্ত্রের ব্যায়াম করুন।
প্রখ্যাত মার্কিন চিকিৎসক কেনেথ কুপার ১৯৬৮ সালে তার গ্রন্থ অ্যারোবিকস লেখার পর থেকেই ওজন কমানোর সর্বোত্তম আদর্শ হিসেবে হৃদযন্ত্রের ব্যায়াম সমাদৃত হয়ে আসছে। ফিটনেস ধরে রাখার লক্ষ্যে স্বাস্থ্য সুরক্ষা এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে হৃদযন্ত্রের ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে। এই লক্ষ্যেই আমরা এখন নিয়মিত জগিং করছি, দৌড়াচ্ছি, সাইকেল চালাচ্ছি, সাঁতার কাটছি, জিমে যাচ্ছি।
নতুন ব্যবস্থাপত্র : আধুনিক বিজ্ঞান বলছে, পরিমাণের (কোয়ানটিটি) চেয়ে কোয়ালিটি (গুণগত মান) কাঙ্খিত। ওজন কমানোর সর্বোত্তম কৌশল হলো মাঝে মাঝে সামান্য সময়ের জন্য কঠোর শারীরিক পরিশ্রম করা। অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলস বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, চর্বি ঝরাতে যেসব নারী সপ্তাহে তিনবার স্টেশনারি বাইক (৮ সেকেন্ড সর্বোচ্চ গতিতে চালানোর পর ১২ সেকেন্ড ধীরে ধীরে থামেন) ব্যবহার করেন, তারা যেসব নারী ৪০ মিনিট মাঝারি গতিতে সাইকিং করেন তাদের চেয়ে তিনগুণ বেশি সাফল্য পেয়েছেন। অর্থাৎ সামান্য সময়ের তীব্র গতি অনেক বেশি ফলপ্রসূ।
এক্ষেত্রে আরেকটি বিষয়ও মাথায় রাখা দরকার। সামান্য সময় জিম করার পর অতিরিক্ত খাবার গ্রহণের প্রবণতা থাকে না। সম্প্রতি আমেরিকান জার্নাল অব সাইকোলজিতে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, যারা দিনে এক ঘণ্টা ব্যায়াম করেন, আর যারা আধা ঘণ্টা করেন, উভয় গ্রুপই সমান ওজন কমাতে পেরেছেন। এর কারণ সম্ভবত, যারা বেশি সময় নিয়ে ব্যায়াম করেন, তারা বেশি বেশি খাবার খান এবং বিশ্রাম করেন।
পুরনো নিয়ম : ছুটির দিনে সারা সপ্তাহের ঘুম পুষিয়ে নিন।
ঘুম কম হওয়া মানে নানা ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যায় ভোগা। স্থূলতা, হৃদরোগ, ডায়াবেটিসসহ নানা রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। ঘুম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ছুটির দিনে বা অন্য কোনো দিনে সারা সপ্তাহের কম ঘুম পুষিয়ে নিন।
নতুন ব্যবস্থাপত্র : প্রতিদিন স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে এক ঘণ্টা করে কম ঘুমানোর পর সাপ্তাহিক ছুটির দিনে দুপুর পর্যন্ত বিছানায় গড়াগড়ি যাওয়াটা কোনো কাজেই লাগে না। অনেক বিশেষজ্ঞের মতে, এতে বরং ক্ষতিই হয়। এক দিনের ভালো ঘুম বাকি দিনগুলোর নিদ্রাহীনতা কাটাতে পারে না।
এক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, আপনার ঝামেলা দেখা দিলে আপনি বরং ঘুমের সময় কিছুটা পরিবর্তন করুন। যাদের এখন তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে জাগতে হয়, তারা আগের চেয়ে আগেভাগে ঘুমাতে যেতে পারেন। কয়েকদিন চেষ্টা করলেই আপনি নতুন সময়সূচির সাথে মানিয়ে নিতে পারবেন, আর সমস্যা হবে না।
পুরনো নিয়ম : সকালের নাস্তায় ওটমিল (জইয়ে তৈরি খাবার) খান।
ওটমিলে চর্বি থাকে কম, এটা আঁশে ভর্তি। একটি আদর্শ স্বাস্থ্যকর শস্যের সব গুণাবলী এতে আছে।
নতুন ব্যবস্থাপত্র : সকালে প্রয়োজনের চেয়ে কম নাস্তা করা মানে সারা দিন কম খাওয়া। ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব ওবেসিটির এক সমীায় বলা হয়েছে, যারা তৃপ্তিসহকারে ভরপেট নাস্তা করেন, তারা দুপুরের খাবারে ২৬ শতাংশ কম ক্যালরি গ্রহণ করেন। সকালে কম খাওয়া মানে বাকি সময়ে দেহ আরো খাবার গ্রহণের চাপ দিয়ে থাকে। ফলে সকালে কম খাওয়ার আসল উদ্দেশ্য পূরণ হয় না।
(রিডার্স ডাইজেস্ট অবলম্বনে)
বিষয়: বিবিধ
১৩১৯ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
সেই সাথে অনেকগুলি ধন্যবাদ জানালাম।
মন্তব্য করতে লগইন করুন