জাতিসংঘের মতো আইসিসিতেও “জোড় যার মুল্লুক তার”। ভারতের স্বার্থরক্ষায় দেশের স্বার্থ বিসর্জন দিতেও সামান্য কাঁপছেন না বিসিবি।

লিখেছেন লিখেছেন েনেসাঁ ২৫ জানুয়ারি, ২০১৪, ০১:১২:৩০ দুপুর



২০০০ সালের আগে টেস্ট ক্রিকেটের স্ট্যাটাস অর্জনের জন্য বাংলাদেশের ক্রিকেটার ও তৎকালীন সংগঠকেরা তিলে তিলে যে ত্যাগ-তিতিক্ষা করেছেন, যার ফসল আজকের এ টেস্ট খেলতে পারা। তৎকালীন বিসিবি সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী, সৈয়দ আশরাফুল হকদের অনেক চেষ্টায় ক্রিকেটের সর্বোচ্চ শ্রেণীর ক্রিকেট টেস্ট খেলছে বাংলাদেশ ২০০০ সাল থেকে। পেছনের এ কথাগুলো বলার অর্থ আজ আবার সেই বিসিবিতে থাকা কিছু বোর্ড পরিচালক টেস্ট ক্রিকেট বিসর্জন দেয়ার নগ্ন পাঁয়তারা করছেন, যারা দেশের ক্রিকেট সম্পর্কে সামান্য জ্ঞান রাখেন, তারাও সমর্থন করবেন না। অথচ বাংলাদেশ ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিসিবির বর্তমান কমিটি সে কাজই করতে যাচ্ছে। উদ্দেশ্য পরিষ্কার। ভারতীয়দের শতভাগ স্বার্থ পূরণ এক কথায়। ভারত কী চাচ্ছে, কেন? তাও যে অজানা তা নয়। ভারত, অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডের আইসিসিকে পাশকাটিয়ে ‘মোড়ল’ হওয়ার যে নগ্ন প্রস্তাব। বিসিবি তাকেই সমর্থন দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে। এ নিয়ে ক্রিকেট বিশ্ব তোলপাড়। পাকিস্তান, ওয়েস্টইন্ডিজ, শ্রীলঙ্কা, দক্ষিণ আফ্রিকা কিন্তু বাংলাদেশের মতে ভোগান্তিতে পড়বে না। তবুও এ নিয়ে ব্যাপক হইচই করছে তারা। মানতে রাজি না ওই ত্রয়ীর কূটকৌশলী প্রস্তাব। ওই তিন বাকিদের নিয়েই চলবে, তবে মাতুব্বরি থাকবে তাদের হাতে। আর বাংলাদেশ, জিম্বাবুয়ে তো তাদের হিসেবের মধ্যেই নেই। অবুঝ শিশুকে এটা সেটা দিয়ে বুঝানোর মতো করে নামিয়ে দিচ্ছে তারা আইসিসির সহযোগী সদস্যদের কাতারে। টেস্ট ক্রিকেটের পরিবর্তে যেখানে পরিষ্কারভাবে বলা আছে বাংলাদেশকে খেলতে হবে চার দিনের ম্যাচ। তাও আইসিসির সহযোগী সদস্যদের সঙ্গে। এ ছাড়া ওখান থেকে উত্তরণের যে পথ তা-ও ক্ষীণ, ১০০ : ১। এক কথায় অসম্ভব। যার অর্থ টেস্ট স্ট্যাটাস থাকবে। র‌্যাংকিংয়েও থাকবে। কিন্তু খেলার সুযোগ থাকবে না। এভাবেই এগোবে বাংলাদেশের ক্রিকেট। আর ওই আইসিসি সহযোগীদের নিয়ে যতই ভালো খেলুক তা তো ফার্স্টকাসের মর্যাদা। টেস্ট ম্যাচ না। বিসিবি কিভাবে অমন আত্মঘাতী প্রস্তাবে রাজি হয়? কী স্বার্থ এমন টেস্ট ক্রিকেট খেলার বিসর্জন দেয়ার? আর্থিক অনেক হিসাব-নিকাশ আছে। ওই তিন মোড়ল বা জমিদার ৭৫% নেয়ার পর বাকিটা পাবে অন্যদলগুলো। তাও নাকি বর্তমানের চেয়ে বেশি হবে সে স্বপ্নে বিভোর বিসিবির বর্তমান সভাপতি। কিন্তু অর্থের জন্যই কী সব। অর্থের জন্য যদি ক্রিকেটের অতবড় অর্জন বিসর্জনও দিতে কুণ্ঠাবোধ না করে বিসিবি। তাহলে ক্রিকেটার ম্যাচ ফিক্সিং কেন অবৈধ? গত পরশু বোর্ডসভায় এ নগ্নতার সাপোর্ট দেয়ার জন্য ২০-৩ ভোটে জয়ী হয়েছে নাজমুল হাসান। কারণ তো আর কিছু না। যারা ক্রিকেট বোর্ডে এসেছেন বাণিজ্য করতে তাদের কাছে ক্রিকেটের স্বার্থের চেয়ে তো বাণিজ্যই বড়। বিসিবি সভাপতি বলেছেন, যদি এর বিপক্ষে যাই আমরা, তাহলে বড় দেশগুলো আমাদের সঙ্গে ওয়ানডে, টি-২০ খেলতেও আসবে না। কত নির্বোধের মতো কথা। বর্তমান সব কিছু বহাল থাকলে তো সবই হবে। হয়তো কমবেশি। আসতে বাধ্য অন্যরাও এফটিপি (আইসিসির ফিউচার ট্যুর প্লান) অনুসারে। কিন্তু সেই বাধ্যবাধকতা হচ্ছে না অযোগ্য ক্রিকেট বোর্ড কর্তাদের জন্যই। ক্রিকেট সম্পর্কে যাদের ধারণা নেহায়েত কম। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট পরিমণ্ডলে যাদের বিচরণ নেই বললেই চলে, সেসব লোকের তো যোগ্যতাই নেই অস্ট্রেলিয়া বা ইংল্যান্ড, ভারতকে খেলতে আসার অনুরোধ করার। তাদের মুখেই তো শোভা পায় এমন কথা। নতুবা অস্ট্রেলিয়ায় অনেক আগের পাওনা সিরিজ কেন খেলতে যেতে পারছে না বাংলাদেশ। কেন ইংল্যান্ড খেলতে গড়িমসি করে। কেন ভারত স্ট্যাটাস অর্জনের পর আজো বাংলাদেশকে পূর্ণাঙ্গ সিরিজ খেলার আমন্ত্রণই জানাল না। যেখানে কমবেশি সব দেশেই করল। যে ভারতকে খুশি করতে বাংলাদেশের বহু রাজনীতিবিদ, বুদ্ধিজীবী পর্যন্ত সারাক্ষণ তটস্থ। যাদের দিকনির্দেশনা আশীর্বাদতুল্য মনে করে এগোচ্ছেন তারা। তারাও তো এ ব্যাপারে অনুরোধ করতে পারতেন দেশের স্বার্থের কথা দেশের ক্রিকেটের প্রেস্টিজের কথা চিন্তা করে। অথচ এ ব্যাপারটি যেন তারা বোঝেনই না! অথচ স্ট্যাটাস পাওয়ার ১৪ বছরেও বাংলাদেশকে সম্পূর্ণ অনৈতিকভাবে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে চলছে ভারত। ক্রিকেট বোর্ডের বিগত ছয়-সাত বছরে যারা রয়েছেন; তাদেরও দহরম-মহরম ভারতের সঙ্গে। কিন্তু দেশের ক্রিকেটের স্বার্থে তারা সবসময় নীরব। অথচ তারাই বড় বড় গলাবাজি করেই বাংলাদেশের ক্রিকেট চালাচ্ছেন। আজ সেই ভারতের স্বার্থরক্ষায় দেশের বিশাল স্বার্থ বিসর্জন দিতেও সামান্য কাঁপছেন না তারা। অবাক করার মতো বিষয় হলো এ বোর্ডেই রয়েছেন তিনজন সাবেক টেস্ট ম্যাচ খেলা জাতীয় দলের অধিনায়ক আকরাম খান, নাঈমুর রহমান দুর্জয় ও খালেদ মাহমুদ সুজন। তারাও এমন গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে দেশের স্বার্থের বিরুদ্ধেই দাঁড়িয়েছেন।

বিসিবিতে অযোগ্যদের বিচরণ, অর্থের ঝনঝনানির কাছে যোগ্যরা বারবারই সিটকে যাচ্ছেন। এটা নতুন কিছু নয়। হাইকোর্ট বিসিবির বর্তমান গঠনতন্ত্রকে অবৈধ ঘোষণা করেন। তবে শুধু দেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের আবেগের (টি-২০ বিশ্বকাপ হতে হলে কালক্ষেপণ না করে বোর্ডে এক্ষুণি নির্বাচন প্রয়োজন) কথা বলে আদালতের বিশেষ অনুমতি নিয়ে নির্বাচন করে যারা আজ ক্রিকেট প্রশাসন চালাচ্ছেন, তাদের থেকে ভালো কিছু আশা করা সম্ভব কিভাবে? আইসিসিতে উত্থাপিত ওই ‘তিন মোড়ল’ খসড়া প্রস্তাবে রয়েছে এফটিপি বাতিল হয়ে ২০১৫ সাল থেকেই দ্বিপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমে টেস্ট ম্যাচ হবে। আর বাংলাদেশ ও জিম্বাবুয়ে তো টেস্টই খেলবে না। খেলবে চার দিনের ম্যাচ, আফগানিস্তান, আয়ারল্যান্ড, কানাডা, আরব আমিরাতের মতো আইসিসির সহযোগী দেশের সঙ্গে। তা কোনো বাংলাদেশী সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ মেনে নেন কিভাবে। বাংলাদেশের তো সেই ৯ জানুয়ারির সভায়ই প্রতিবাদ করা উচিত ছিল। নাজমুল হাসান সেখানে থাকলেও বরং এটাকে নীরব সমর্থন দিয়ে এসেছেন ভারতীয় বোর্ডের কাছে। যেখানে ক্রিকেট বিশ্বের বেশির ভাগ স্থানে এ নিয়ে তোলপাড়। সেখানে বিসিবি সভাপতি বলছেন, কে কি বলল তাতে কান দেয়া ঠিক হবে না। আরো দেখে, বুঝে তবেই অবস্থান নেবো পক্ষে না বিপক্ষে। অবশ্য বিসিবির বর্তমান কমিটির একটা ভয় এখানে খুব কাজ করছে। বিপক্ষে গেলে যদি ভারত টি-২০ বিশ্বকাপ নিয়ে সমস্যা করে। কিন্তু এমন এক টি-২০ বিশ্বকাপ না হলেই বা কী। তার চেয়ে কোটি কোটি গুণ গুরুত্ব রাখে টেস্ট খেলা ধরে রাখা। দেশের ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রণ যাদের হাতে তাদের টেস্ট ক্রিকেটের এমন মর্যাদার কথা বোঝাবে কে?

বিষয়: বিবিধ

১২৩১ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

167219
২৫ জানুয়ারি ২০১৪ দুপুর ০১:৩৯
প্রিন্সিপাল লিখেছেন : হে আল্লাহ! তুমি আমাদের জাতি, দেশ, সাংস্কৃতি, সম্মান, খ্যাতি, ....কে রক্ষা কর। আমীন
167293
২৫ জানুয়ারি ২০১৪ দুপুর ০৩:৩৫
বাকপ্রবাস লিখেছেন : বর্তমনা অবৈধ আর অপদার্থ সরকার এর কার্যকলাপ টু মাচ পেইনফুল

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File