আকিকা কেন করব ?
লিখেছেন লিখেছেন েনেসাঁ ১২ আগস্ট, ২০১৪, ০৫:০৫:২৯ বিকাল
আকিকার রয়েছে নানা তাৎপর্য ও কল্যাণময় দিক। সংক্ষেপে তার কয়েকটি এমন
এক. অলীউল্লাহ দেহলভী (রহ.) বলেন, ‘এতে আছে ধর্মীয়, নাগরিক ও আত্মিক অনেক উপকারী দিক। এজন্যই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা বহাল রাখেন, এর আমল করেন এবং মানুষকে এতে উদ্বুদ্ধ করেন।’ এসব কল্যাণময় দিকের মধ্যে রয়েছে, যেমনঃ
ক. উত্তম পন্থায় সন্তানের বংশ পরিচয় প্রকাশ করা। কারণ বংশ পরিচয় প্রকাশ না করলেই নয়। যাতে অনভিপ্রেত কথা না শুনতে হয়। আর এমনটি কখনও সুন্দর দেখায় না যে, কেউ পথে পথে ঘুরে মানুষকে বলে বেড়াবেন যে এ আমার সন্তান।
খ. খ্রিস্টানদের যখন কোনো সন্তান হতো, তারা তাকে হলুদ পানি দিয়ে হরিদ্রা বানিয়ে দিত। তারা এর নাম দিয়েছিল ‘মামুদিয়া’। তারা বলত, এর মধ্য দিয়ে শিশুটি খ্রিস্টান হয়ে যাবে। এ নামের সঙ্গে সাদৃশ্য রেখেই নাজিল হয়েছিল, ‘(বল,) আমরা আল্লাহর রঙ গ্রহণ করলাম। আর রঙের দিক দিয়ে আল্লাহর চেয়ে কে অধিক সুন্দর? আর আমরা তারই ইবাদতকারী।’ (সূরা আল-বাকারা : ১৩৮)।
অতএব তাদের ওই রীতির বিপরীতে হানিফিদেরও কোনো কাজ থাকা বাঞ্ছনীয়, যা থেকে বোঝা যাবে শিশুটি হানিফি তথা ইসমাঈল ও ইবরাহিম আলাইহিস সালামের অনুসারী। আর তাদের সন্তানদের মধ্যে বংশানুক্রমে আগত কাজগুলোর মধ্যে সবচেয়ে প্রসিদ্ধ পুত্র কোরবানির বিষয়টি। ইবরাহিম আলাইহিস সালাম আপন পুত্র ইসমাঈলকে কোরবানি করেন। আর আল্লাহ তায়ালাও তাকে নেয়ামতে ভূষিত করেন। তার সন্তানকে মহান জবাইর মাধ্যমে মুক্ত করেন এবং তাদের বিধান হজকে দেন কেয়ামতাবধির জন্য স্থায়িত্ব, যার মধ্যে রয়েছে মাথা নেড়া করা এবং পশু জবাই করা। ফলে এই আকিকা ও মাথা মু-নের মধ্য দিয়ে তাদের সঙ্গে সাদৃশ্য গ্রহণ হবে। হানিফি মিল্লাতের প্রতি ইঙ্গিতও হবে আবার ঘোষণাও হবে যে, সন্তানটির সঙ্গে এ উম্মতের কাজই করা হয়েছে।
গ. এ কাজ তাকে শিশুটির জন্মের পর মুহূর্তেই তাকে এ কল্পনায় নিয়ে যাবে যে, সে তার সন্তানকে আল্লাহর পথে উৎসর্গ করে দিল, যেমন ইবরাহিম আলাইহিস সালাম করেছিলেন তার পুত্র ইসমাঈলকে।
দুই. সন্তান দেয়ার জন্য আল্লাহ তায়ালার শুকরিয়া জ্ঞাপন করা। কেননা, সন্তানই অন্যতম সেরা নেয়ামত। আর এ সন্তান হলো পার্থিব জীবনের সৌন্দর্য। আল্লাহ বলেন, ‘সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি দুনিয়ার জীবনের শোভা...।’ (সূরা আল-কাহফ : ৪৬)।
আল্লাহ মানুষকে এ প্রকৃতি দিয়ে সৃষ্টি করেছেন যে, সে সন্তান ভূমিষ্ঠ হলে আনন্দিত হয়। তাই মানুষের কাছে তার ¯্রষ্টা ও দাতার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশই কাম্য। এজন্যই হোসাইন (রা.) থেকে সদ্য সন্তানের পিতা হওয়া ব্যক্তিকে অভিবাদন জানিয়ে এমন বলার কথা বর্ণিত হয়েছে, (উচ্চারণ) বারাকাল্লাহু লাকা ফিলমাওহুবি লাকা ওয়া শাকারতার ওয়াহিবা ওয়া বাল্লাগা আশুদ্দাহু ওয়া রুজিকতা বিররাহু। অর্থ : ‘তোমাকে যা দান করা হয়েছে আল্লাহ তাতে বরকত দিন। তুমি দানকারীর শুকরিয়া আদায় করো, সে তার বয়স পুরো করুক এবং তোমাকে তার পুণ্য প্রদান করা হোক।’ (মুসনাদ ইবনুল জাদ : ১৪৪৮)।
অতএব বোঝা গেল, আকিকা হলো আল্লাহর শুকরিয়া আদায় ও তার নৈকট্য লাভের একটি উত্তম উপায়।
তিন. এতে আছে সন্তানের মুক্তি এবং তার বিনিময় প্রদান। যেমন আল্লাহ তায়ালা ইসমাঈলের বিনিময়ে ভেড়া কোরবানি দিয়ে দেন। জাহেলি যুগের লোকেরাও এটা করত এবং তারা এটাকে আকিকা বলত। আর শিশুর মাথায় তারা রক্ত লাগিয়ে দিত। ইসলাম সেই নিয়মটিকে সমর্থন এবং নবজাতকের মাথায় রক্ত লাগানো নিষিদ্ধ করে দেয়।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের জানিয়ে দেন যে, নবজাতকের জন্য যা-ই জবেহ করা হবে, তা হতে হবে কোরবানি ও হজের হাদির মতো ইবাদত হিসেবে। তিনি বলেন, ‘যে তার সন্তানের জন্য কোনো কোরবানি দিতে চায়, তবে যেন পুত্র হলে দুটি সমবয়সী ছাগল এবং কন্যা হলে একটি ছাগল দিয়ে ইবাদত (তথা আকিকা) করে।’ (নাসায়ি : ৪২২৯)।
অর্থাৎ তিনি এটাকে কোরবানি হিসেবে করতে বললেন, আল্লাহ তায়ালা যেটাকে ইসমাঈল আলাইহিস সালামের জন্য কোরবানি ও বিনিময় হিসেবে দিয়েছিলেন। আর আল্লাহ তায়ালার পক্ষে অসম্ভব নয় যে, তিনি সন্তানের জন্য, তার সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা ও দীর্ঘায়ুর জন্য এ বিধান দিয়েছেন। যাতে ওই জবেহকৃত পশুর প্রতিটি অঙ্গ এ শিশুর বিনিময় হয়।
চতুর্থ. এ কথার সংবাদ ও ঘোষণা দেয়া যে, এ ব্যক্তি সন্তানের পিতা হয়েছে এবং সন্তানের নাম অমুক রেখেছে। ফলে তার পরিজন, প্রতিবেশী ও বন্ধু-বান্ধব এ সংবাদ জানবে এবং তাকে মোবারকবাদ দিতে আকিকায় উপস্থিত হবে। এতে করে মুসলিম ভাইদের মাঝে সৌহার্দ ও ভালোবাসার বন্ধন সুদৃঢ় হবে।
পঞ্চম. এতে ইসলামের সামাজিক দায়িত্বগুলোর মধ্যে একটি দায়িত্বের চর্চা হয়। কেননা, যিনি তার সন্তানের জন্য আকিকা হিসেবে পশু জবাই করেন এবং তা বন্ধু-বান্ধব, প্রতিবেশী ও গরিব-মিসকিনদের জন্য পাঠিয়ে দেন বা তাদের দাওয়াত করেন। আর এটি গরিবদের অভাবমোচন ও দারিদ্র্য হ্রাসে কিছুটা হলেও ভূমিকা রাখে।
(সংগৃহীত)
বিষয়: বিবিধ
১৪১৮ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন