একটি ঘটনা বদলে দিতে পারে জীবন

লিখেছেন লিখেছেন েনেসাঁ ১৩ জানুয়ারি, ২০১৪, ০৩:২১:৪২ দুপুর



আজ থেকে প্রায় একশ বছর পূর্বের কাহিনী । জামেআ আল-আযহারের এক শায়খ ছিলেন । যিনি আযহার আর বাড়ির রাস্তা ছাড়া অন্য কোনো রাস্তা জানতেন না, সর্বদা অধ্যয়ন-অধ্যাপনায় ব্যস্ত থাকতেন ।

একবার তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লেন । ডাক্তার তাঁকে বলল, বাহিরের কিছু মুক্তহাওয়া সেবন করুন ।

তিনি এ উদ্দেশ্যে ঘোড়ার গাড়িতে উঠলেন এবং চালককে বললেন, নিয়ে চলো ,

সে বললো, কোথায় ?

তিনি জবাব দিলেন, যেথায় মুক্ত বাতাস পাওয়া যায় সেথায় ।

চালক প্রথম নজরেই এই শায়খের সরলতা আঁচ করতে পারল । তাই সে একটি কুমতলব আটল এবং তাঁকে নিষিদ্ধ পল্লীতে নিয়ে চলল ।

এভাবে সালাতে মাগরিবের সময় হয়ে গেলো । তিনি চালককে বললেন, কোনো মসজিদের সামনে গাড়িটা থামাও ।

তখন এই কুলাঙ্গারটা করল কি, একটি বেশ্যাঘরের সামনে গাড়িটা থামাল এবং তাঁকে ঘরের দিকে ইশারা করে বলল, এটাই মসজিদ !

তিনি দেখে ভাবলেন, মনে হয় পাঞ্জেগানা মসজিদ । তাই সরল মনে এই ঘরে ঢুকলেন ।

ঢুকেই দেখলেন, দেহপসারীনিরা যেভাবে খদ্দেরের অপেক্ষায় থাকে সেভাবে একটি মেয়ে আবেদনময়ী অবস্থায় ছোট্ট পোশাকে দাড়িয়ে আছে !

তিনি প্রথমে হচকিয়ে গেলেন !

পরক্ষণে ভাবলেন, হয়ত এই মসজিদের মুআজ্জিনের মেয়ে ! তাই তাকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমার আব্বা কোথায় ? তাঁকে বলো, এসে আযান দিতে , নামাযের ওয়াক্ত চলে যাচ্ছে । এবং নিজে ঘরের কোনায় স্থাপন করা একটি চেয়ারে বসে পড়লেন ।

কিন্তু মেয়েটি অবাকদৃষ্টে তাঁর দিকে তাকিয়ে আছে, কিছু বলছে না, আবার জায়গা থেকেও নড়ছে না।

তিনি আবার বললেন, কী হলো ? তাড়াতাড়ি তোমার বাবাকে নিয়ে এসো, ওয়াক্ত যে চলে যাচ্ছে ।

মেয়েটির নির্বাক অবস্থা দেখে চেয়ার থেকে ওঠে তিনি নিজে আযান দিলেন !

তারপর মেয়েটিকে বললেন । আযানতো দিয়ে ফেললাম, যাও, তাড়াতাড়ি কাপড় পরিবর্তন করে ওযু করে এসো, আমার পিছে দাড়িয়ে নামায পড়বে, ওয়াক্ত যে চলে যাচ্ছে !

মেয়েটি তখনো মূক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে । আর এই শায়খের কথা তার অন্তরে তীরের মতো বিঁধছে, আর পাপের পথে পা বাড়াবার পূর্বে নিজ অতীতের নিষ্কলুষ জীবনের কথা স্মরণ হচ্ছে । হৃদয় কাননে একধরনের ধুনন প্রলয় তুলছে !!

শায়খ যখন কয়েকবার মেয়েটিকে নামাযের কথা বললেন, তখন মেয়েটি নিজের বিবেকের কাছে আত্মসমর্পন করলো, আর নিজেকে দমিয়ে রাখতে পারল না, সাথে সাথে শায়খের পায়ে পড়ল, অঝোর কান্নায় ভেঙ্গে পড়ল এবং নিজের নোংড়া জীবনের স্বীকারোক্তি দিল ।

শায়খ তখন অবাক । কিন্তু নিজেকে সামলেই তাকে সান্ত্বনার বাণী শোনালেন, বললেন, আল্লাহতো রাহমান ! রহীম !! গাফ্ফার !!! যাও, তুমি তাড়াতাড়ি গোসল করে ভালো কাপড় পরে এসো ।

মেয়েটি যখন আসল তখন নামায আদায় করে অঝোর অশ্রুপূর্ণ নয়নে তার জন্যে মাগফিরাত কামনা করে কায়মন্যে দুআ করলেন । তারপর মেয়েটিকে নিজের সাথে করে নিয়ে আসলেন এবং কয়েকদিন পর উত্তম শিক্ষা দিয়ে একটি ভালো পাত্রের সাথে বিয়ে দিলেন ।

দেখলেনতো, কীভাবে একটি ঘটনা জীবন বদলে দিলো ?

এই ঘটনাটি আমার প্রিয় লেখক সিরিয়ার বিশিষ্ট আলেম, যাঁকে বলা হয় আদীবুল ফুকাহা ফকীহুল উদাবা (সাহিত্যিকদের ফকীহ ফকীহদের সাহিত্যিক) অন্যতম ইসলামি চিন্তক, আধুনিক আরবিসাহিত্যের প্রাণভোমরা শায়খ আলী তানতাবি রাহ. তাঁর আত্মজীবনী 'যিকরায়াতে' শায়খ আহমদ হাসান যাইয়াতের সুত্রে বর্ণনা করেছেন । (সংগৃহীত)

বিষয়: বিবিধ

১৭৯০ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

162088
১৩ জানুয়ারি ২০১৪ দুপুর ০৩:৪৬
নকীব কম্পিউটার লিখেছেন : ভালো লাগলো
162170
১৩ জানুয়ারি ২০১৪ রাত ০৮:৪৪
শেখের পোলা লিখেছেন : আল্লাহর দুনিয়ায় কতই না বিষ্ময় লুকিয়ে আছে৷ একেই হয়ত বলে রাতকে দিন আর দিনকে রাত বানানো৷ ধন্যবাদ৷

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File