মৃত্যুর সময়ে বান্দার অবস্থা
লিখেছেন লিখেছেন েনেসাঁ ০৮ জানুয়ারি, ২০১৪, ০৬:৩৭:২৫ সন্ধ্যা
মরণের সময় মুমিনের অবস্থাঃ
বারা’ বিন আ’যিব (রাঃ)এর হাদীছে মানুষের মৃত্যুকালীন অবস্থার পূর্ণ বিবরণ এসেছে। এতে মুমিন, কাফের এবং পাপী সকল মানুষের অবস্থাই বর্ণিত হয়েছে। পাঠক ভাই-বোনদের কাছে হাদীছের ভাষ্যটি তুলে ধরছি।
বারা’ বিন আযিব (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমরা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর সাথে জনৈক আনসারী সাহাবীর জানাযায় শরীক হওয়ার জন্যে বের হলাম। তখনও কবরের খনন কাজ শেষ হয়নি। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কিবলামুখী হয়ে বসে পড়লেন। আমরাও তাঁর চারপাশে বসে গেলাম। তাঁর হাতে ছিল একটি কাঠি। তা দিয়ে তিনি মাটিতে খুঁচাতে ছিলেন এবং একবার আকাশের দিকে তাকাচ্ছিলেন আর একবার যমিনের দিকে মাথা অবনত করছিলেন। তিনবার তিনি দৃষ্টি উঁচু করলেন এবং নীচু করলেন। অতঃপর বললেনঃ “তোমরা আল্লাহর কাছে কবরের আযাব থেকে আশ্রয় চাও। কথাটি তিনি দু’বার অথবা তিনবার বললেন। অতঃপর তিনি এই দু’আ করলেনঃ
أَللَّهُمَّ إِنِّى أَعُوْذُبِكَ مِنْ عَذاَبِ الْقَبْرِ
অর্থঃ “হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে কবরের আযাব থেকে আশ্রয় চাই।
তারপর তিনি বললেনঃ মুমিন বান্দার নিকট যখন দুনিয়ার শেষ দিন এবং আখেরাতের প্রথম দিন উপস্থিত হয় তখন আকাশ থেকে উজ্জ্বল চেহারা বিশিষ্ট একদল ফেরেশতা উপস্থিত হন। তাদের সাথে থাকে জান্নাতের পোষাক এবং জান্নাতের সুঘ্রাণ। মুমিন ব্যক্তির চোখের দৃষ্টি যতদূর যায় তারা ততদূরে বসে থাকেন। এমন সময় মালাকুল মাউত উপস্থিত হন এবং তার মাথার পাশে বসে বলতে থাকেনঃ হে পবিত্র আত্মা! তুমি আপন প্রভুর ক্ষমা ও সন্তুষ্টির দিকে বের হয়ে আস। একথা শুনার পর মুমিন ব্যক্তির রূহ্ অতি সহজেই বের হয়ে আসে। যেমনভাবে কলসীর মুখ দিয়ে পানি বের হয়ে থাকে। রূহ বের হওয়ার সাথে সাথে ফেরশতাগণ তাঁকে জান্নাতী পোষাক পরিয়ে দেন এবং জান্নাতী সুঘ্রাণে তাকে সুরভিত করেন। তার দেহ থেকে এমন সুঘ্রাণ বের হতে থাকে যার চেয়ে উত্তম সুঘ্রাণ আর হতে পারেনা। তাকে নিয়ে ফেরেশতাগণ আকাশের দিকে উঠে যান। যেখান দিয়েই তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় সেখানেই ফেরেশতাগণ জিজ্ঞেস করেনঃ এটা কার পবিত্র আত্মা? উত্তরে অতি উত্তম নাম উচ্চারণ করে বলা হয় অমুকের পুত্র অমুকের। আকাশে পৌঁছে গিয়ে দরজা খুলতে বলা হলে তা খুলে দেয়া হয়। তাঁর সাথে প্রথম আকাশের ফেরেশতাগণ দ্বিতীয় আকাশ পর্যন্ত গমণ করেন। এভাবেই এক এক করে সপ্তম আকাশ পর্যন্ত পৌঁছে যান। তখন আল্লাহ তাআলা বলেনঃ আমার বান্দার নামটি ইল্লিয়ীনের তালিকায় লিপিবদ্ধ করে দাও। অতঃপর তাকে নিয়ে যমিনে ফিরে যাও। কেননা আমি তাকে মাটি দ্বারা সৃষ্টি করেছি। মাটির মধ্যেই তাকে ফিরিয়ে দিব এবং সেখান থেকেই তাকে পুনরায় জীবিত করব।
তখন কবরে তার আত্মা ফেরত দেয়া হয়। ওখানে দু’জন ফেরেশতা আগমণ করেন এবং তাকে জিজ্ঞেস করেনঃ তোমার প্রতিপালক কে? তিনি উত্তরে বলেনঃ আমার প্রতিপালক হচ্ছেন আল্লাহ। আবার জিজ্ঞেস করেনঃ দুনিয়াতে তোমার দ্বীন কি ছিল? তিনি উত্তর দেনঃ আমার দ্বীন হচ্ছে ইসলাম। পুনরায় তাকে প্রশ্ন করেনঃ তোমাদের কাছে যে লোকটিকে পাঠানো হয়েছিল তিনি কে? জবাবে তিনি বলেনঃ তিনি হলেন আমাদের নবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)।. তখন আকাশ থেকে মহান আল্লাহ ঘোষণা করতে থাকেনঃ আমার বান্দা সত্য বলেছে। তাঁর জন্যে জান্নাতের বিছানা বিছিয়ে দাও এবং তাকে জান্নাতের পোষাক পরিয়ে দাও। আর তাঁর জন্যে জান্নাতের একটি দরজা খুলে দাও, যেন সে জান্নাতের বাতাস ও সুঘ্রাণ পেতে পারে। তার কবরটি দৃষ্টিসীমা পর্যন্ত প্রশস্ত করে দেয়া হয়। একজন সুন্দর আকৃতি ও উজ্জ্বল চেহারা বিশিষ্ট লোক উত্তম পোষাক পরিহিত হয়ে এবং সুঘ্রাণে সুরভিত অবস্থায় তার কাছে আগমণ করেন এবং বলেনঃ তুমি খুশী হয়ে যাও। তোমার সাথে যে ওয়াদা করা হয়েছিল তা আজ পূর্ণ করা হবে। মুমিন ব্যক্তি লোকটিকে জিজ্ঞেস করেনঃ আপনি কে? তিনি বলেন, আমি তোমার সৎ আমল। তখন মুমিন ব্যক্তি বলেনঃ হে আল্লাহ! আপনি এখনই কিয়ামত সংঘটিত করুন। আমি আমার পরিবারের সাথে মিলিত হবো। তখন তাকে বলা হয় তুমি এখানে আরামে ও স্বাচ্ছন্দে বসবাস করতে থাক। তোমার কোন চিন্তা ও ভয় নেই।
মৃত্যুর সময় কাফেরদের করুণ অবস্থাঃ
অপর পক্ষে কাফের ব্যক্তির যখন দুনিয়া হতে বিদায় গ্রহণের সময় হয় তখন কালো বর্ণের একদল ফেরেশতা এসে উপস্থিত হন। তাদের সাথে থাকে দুর্গন্ধযুক্ত কাপড়। চোখের দৃষ্টি যতদূর যায় তথায় তারা বসে থাকেন। তারপর মৃত্যুর ফেরেশতা এসে তাকে বলেনঃ ওহে অপবিত্র আত্মা! বেরিয়ে আয় আল্লাহর ক্রোধ ও অসন্তুষ্টির দিকে। কাফের বা পাপীর আত্মা তখন দেহের মাঝে পালাতে চেষ্টা করে। কিন্তু ফেরেশতা তাকে এমনভাবে টেনে বের করেন যেমনভাবে লোহার পেরেককে ভিজা পশমের মধ্য থেকে টেনে বের করা হয়। তার রূহ্ বের হওয়ার সময় শরীরের রগসমূহ ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তার উপর আকাশ ও যমিনের মধ্যকার সকল ফেরেশতা লা’নত করতে থাকেন। আকাশের দরজাগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়। প্রত্যেক দরজার ফেরেশতাগণ আল্লাহর কাছে দু’আ করেন যাতে ঐ ব্যক্তির রূহ তাদের দরজা দিয়ে না উঠানো হয়। তার রূহকে দুর্গন্ধযুক্ত কাপড়ে রাখা হয়। তা থেকে মরা-পঁচা মৃত দেহের দুর্গন্ধের ন্যায় দুর্গন্ধ বের হতে থাকে। ফেরেশতাগণ তাকে আকাশের দিকে উঠাতে থাকেন। যেখান দিয়েই গমণ করেন সেখানের ফেরেশতাগণ জিজ্ঞেস করেনঃ এই অপবিত্র আত্মা কার? উত্তরে ফেরেশতাগণ অতি মন্দ নাম উচ্চারণ করে বলতে থাকেনঃ অমুকের পুত্র অমুকের। আকাশে পৌঁছে তার জন্যে আকাশের দরজা খুলতে বলা হলে আকাশের দরজা খোলা হয় না। অতঃপর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কুরআনের এই আয়াতটি পাঠ করলেনঃ
لَا تُفَتَّحُ لَهُمْ أَبْوَابُ السَّمَاءِ وَلَا يَدْخُلُونَ الْجَنَّةَ حَتَّى يَلِجَ الْجَمَلُ فِي سَمِّ الْخِيَاطِ
অর্র্থঃ “তাদের জন্য আকাশের দরজাসমূহ খোলা হবে না এবং তারা জান্নাতে প্রবেশ করতে পরবেনা যে পর্যন্ত না সূচের ছিদ্র দিয়ে উট প্রবেশ করে। (সূরা আ’রাফঃ ৪০) তারপর বলা হয় সাত যমিনের নীচে সিজ্জীনে তার নাম লিখে দাও এবং তার রূহ যমিনের যেখানে দাফন করা হয়েছে সেখানে ফেরত দাও। কেননা আমি যমিন থেকে মানুষকে সৃষ্টি করেছি, যমিনেই ফিরিয়ে দিব এবং কিয়ামতের দিন যমিন থেকেই আবার বের করবো। তারপর তার রূহকে যমিনের দিকে নিক্ষেপ করা হয়। অতঃপর কাফেরের দেহ যেখানে দাফন করা হয়েছে রূহটি সেখানে গিয়ে পতিত হয়। এরপর নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কুরআনের এই আয়াতটি পাঠ করলেনঃ
وَمَنْ يُشْرِكْ بِاللَّهِ فَكَأَنَّمَا خَرَّ مِنْ السَّمَاءِ فَتَخْطَفُهُ الطَّيْرُ أَوْ تَهْوِي بِهِ الرِّيحُ فِي مَكَانٍ سَحِيقٍ
অর্থঃ “যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে শরীক করল সে যেন আকাশ থেকে ছিটকে পড়ল। অতঃপর মৃতভোজী পাখী তাকে ছোঁ মেরে নিয়ে গেল অথবা বাতাস তাকে উড়িয়ে নিয়ে কোন দূরবর্তী স্থানে নিক্ষেপ করল। (সূরা হজ্জঃ ৩১)
বিষয়: বিবিধ
১৯১৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন