‘মদিনা সনদ’ এ জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সবার অধিকার ও মর্যাদার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। তবে কেন “ গোপালী সনদ ” ?

লিখেছেন লিখেছেন েনেসাঁ ০৪ জানুয়ারি, ২০১৪, ০২:১০:২১ দুপুর

ইসলাম শুধু মুসলমান নাগরিকদের জানমাল ও সম্মানের অধিকার প্রদান করে না বরং ভিন্ন ধর্মাবলম্বী তথা হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান প্রভৃতি সব অমুসলিম নাগরিকের নিরাপত্তা বিধান করে থাকে। একই সঙ্গে অমুসলিম নাগরিকদের ধর্মীয় স্বাধীনতা, শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের অধিকারও প্রদান করে। রাসূলুল্লাহ (সা.) অন্য ধর্মাবলম্বীদের প্রতি ছিলেন অত্যন্ত সহনশীল। যেমনিভাবে পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে ‘ধর্মের ব্যাপারে কোনো জবরদস্তি নেই।’ (সূরা বাকারা : ২৫৬)।

ইসলাম আরবভূমির বাইরে ও বিজিত ভূমিতে একমাত্র শান্তিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা, যে ধর্মে তার শাসকদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে, যেন কোনো অবস্থাতেই রাষ্ট্রের সংখ্যালঘু অমুসলিমদের জীবন ও সম্পত্তির নিরাপত্তা বিঘিœত না হয়। তাদের ধর্মীয় বিশ্বাস অপরিবর্তিত থাকবে। নবী করিম (সা.) যুদ্ধের তীব্রতার মধ্যেও মুসলমানদের মানসিকতা কী হবে তা সুস্পষ্ট করে বলে দিয়েছেন, ‘শিশুদের হত্যা করবে না। গির্জায় যারা ধর্মীয় উপাসনায় জীবন উৎসর্গ করেছে তাদের ক্ষতি করবে না, কখনও নারী ও বৃদ্ধদের হত্যা করবে না, গাছপালায় আগুন লাগাবে না বা গাছ কেটে ফেলবে না, ঘরবাড়ি কখনও ধ্বংস করবে না।’

ইসলাম বিজিত দেশগুলোর সংখ্যালঘু অধিবাসীদের সর্বদা ধর্মীয় স্বাধীনতা প্রদান করেছে, যার ফলে তারা তাদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদি পালনে কখনও মুসলমান ও হুকুমতের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের বাধার সম্মুখীন হয়নি। ইসলাম সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ধর্মযাজক বা পুরোহিতদের নিরাপত্তার সার্বিক দায়িত্ব এমনভাবে পালন করেছে, যার নজির বর্তমান আধুনিক বিশ্বের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ইতিহাস খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হজরত ওমর ফারুক (রা.) তার শাসনামলে অমুসলিম নাগরিকদের অধিকার আদায়ের ব্যাপারে সিরিয়ার গভর্নর আবু উবায়দাকে এ নির্দেশ দিয়েছিলেন, ‘তুমি মুসলমানদের অমুসলমান নাগরিকদের ওপর কোনো ধরনের অত্যাচার, প্রহার এবং তাদের ধন-সম্পদ অবৈধভাবে ভোগদখল করতে নিষেধ করবে।’

মহানবী (সা.) রাষ্ট্রে স্থিতিশীলতা, সামাজিক শান্তি, নিরাপত্তা ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে তদানীন্তনকালে মদিনায় বসবাসরত বনু নাজির, বনু কুরাইজা ও বনু কাইনুকা গোত্রের পৌত্তলিক ও ইহুদি নেতাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে কতগুলো নীতিমালার ভিত্তিতে চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলেন। ইসলামের ইতিহাসে এটি ‘মদিনা সনদ’ নামে খ্যাত। এ সনদে জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সবার অধিকার ও মর্যাদার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। খ্রিস্টান, ইহুদি, পৌত্তলিক ও মুসলিম সমভিব্যাহারে গঠিত মদিনার বহু ধর্মভিত্তিক সমাজে প্রণীত ওই সনদে উল্লেখ ছিল ‘মদিনায় ইহুদি, নাসারা (খ্রিস্টান), পৌত্তলিক এবং মুসলিম সবাই এক দেশ-জাতিভুক্ত, সবারই নাগরিক অধিকার সমান।’ সমানাধিকারের ভিত্তিতে বিভিন্ন জাতি, ধর্ম ও বর্ণের মানুষের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের এমন উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত পৃথিবীর বুকে এটিই ছিল প্রথম। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে মদিনার এ সনদ সমানাধিকার দান করে এবং এটা মদিনার মুসলমান ও অমুসলমানদের মধ্যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি গড়ে তোলে। এভাবে রাসূলুল্লাহ (সা.) আরবের শতধাবিভক্ত বিবদমান অমুসলিম গোত্রগুলোকে সামাজিক শান্তি-শৃঙ্খলা, ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ করে তাদের জানমাল এবং সম্মানের নিরাপত্তা বিধান করেছিলেন। তিনি চাইলেই মক্কার অমুসলিম পৌত্তলিকদের বিরুদ্ধে নির্মম নিষ্ঠুর প্রতিশোধ গ্রহণ করতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা না করে তার চরম শত্রু ইসলামবিরোধী নেতাদের মক্কা বিজয়ের পর সর্বজনীন ক্ষমা প্রদর্শন করলেন।

ইসলামের ন্যায়বিচার দেশ, কাল বা মানুষ তথা মুসলিম-অমুসলিম ভেদে পক্ষপাতিত্ব করে না। ইসলাম গোত্রে গোত্রে বিভেদ ও মানুষে মানুষে বর্ণবৈষম্যের প্রাচীর ভেঙে চুরমার করে দিয়েছে। বর্তমানে পৃথিবীর প্রায় সব জায়গাতেই অসংখ্য মানুষ বর্ণবাদ বা জাতিগত সমস্যায় অবিচার ও নিষ্ঠুরতার শিকার হচ্ছে। অথচ বিভিন্ন বর্ণ ও জাতি সৃষ্টির পেছনে উদ্দেশ্য হলো যেন মানুষ একে অপরকে জানতে পারে। তাই সামাজিক শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষায় এবং দেশের অগ্রগতি ও উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে জাতি-ধর্ম-বর্ণ দলমত নির্বিশেষে সবাইকে মানবতার কল্যাণে অমুসলিমদের অধিকার রক্ষা ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান সুনিশ্চিত করতে হবে।

বিষয়: বিবিধ

১৪৬৭ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

158901
০৪ জানুয়ারি ২০১৪ দুপুর ০২:৫০
বুড়া মিয়া লিখেছেন : ভালো লাগলো

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File