বছরের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের জীবন নামক প্রাসাদ থেকে ৩৬৫ দিনে একটি করে পাথর খসে পড়ে।
লিখেছেন লিখেছেন েনেসাঁ ০১ জানুয়ারি, ২০১৪, ০৫:৩৫:৫৩ বিকাল
একটি বছরের বিদায় কেবল আনন্দের বিষয় হতে পারে না। বরং এটি আমাদের চিন্তাভাবনা ও পর্যালোচনার মোক্ষম উপলক্ষ বৈকি। বছরের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের জীবন নামক প্রাসাদ থেকে ৩৬৫ দিনে একটি করে পাথর খসে পড়ে। ছোট হয়ে আসে আমাদের নাতিদীর্ঘ জীবন। আমরা বিগত বছরটি কীভাবে কাটিয়েছি, আগামী বছর কীভাবে কাটাব এবং এ বছরে আমার অর্জন কী কী? ইত্যকার আরও নানা প্রশ্ন ঘিরে ধরা উচিত আমাদের চেতনা জগৎকে। এখন আমাদের আনন্দ-উল্লাসের এতটুকু ফুরসত থাকার কথা নয়। এখন শুধু হিসাব-নিকাশ মেলানোর সময়। ওমর (রা.) বলেনÑ ‘তোমাদের কাছে হিসাব চাওয়ার আগে নিজেরাই নিজেদের হিসাব সম্পন্ন করে নাও, তোমাদের আমল ওজন করার আগে নিজেরাই নিজেদের আমল ওজন করে নাও, কেয়ামত দিবসে পেশ হওয়ার জন্য নিজেদের প্রস্তুত করো। সুসজ্জিত হও সেদিনের জন্য, যেদিন তোমাদের সামনে কোনো কিছু অস্পষ্ট থাকবে না।’
আমাদের প্রতিটি পদক্ষেপে ভেবে দেখা দরকার, আমরা কী করছি? এর পরিমাণ কী? হাছান বসরি (রহ.) বলেন ‘আল্লাহ ওই বান্দার ওপর রহম করেন, যে তার পদক্ষেপে থামে। (এবং চিন্তা করে) যদি তা আল্লাহর জন্য হয় তা সম্পন্ন করে; আর যদি তা হয় অন্য কারও জন্য; তবে তা বিলম্বিত করে।’
আমরা তো কিঞ্চিৎ নেক আমল করেই তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলি। ইবনে আবি মুলাইকাহ (রহ.) বলেন ‘আমি মহানবী (সা.) এর ৩০ জন সাহাবিকে পেয়েছি, তাঁরা প্রত্যেকেই নিজের নিফাক সম্পর্কে সন্ত্রস্ত ছিলেন। তাঁদের কেউ এমন ছিলেন না, যিনি বলতেন যে, তিনি জিবরাঈল এবং মিকাঈলের মতো ঈমানের ওপর আছেন।’
বিশ্বের অন্যতম সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম নাগরিকের দেশ বাংলাদেশে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক স্পটগুলোতে থার্টি ফার্স্ট নাইটে নববর্ষ উদযাপনের নামে যেভাবে বেহায়া ও বেলেল্লাপনা, অবাধ যৌনাচার এবং অপ্রীতিকর ঘটনার অবতারণা হয়, তা একেবারেই অনভিপ্রেত। বাধ্য হয়ে সরকারকে ব্যবস্থা নিতে হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কড়া নিরাপত্তা গ্রহণ করতে হয়। ২০০০ সালে থার্টি ফার্স্ট নাইটে একটি মেয়ে লাঞ্ছিত ও অপমানিত হয়েছিলÑ যা বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষকে আহত ও অপমানিত করেছিল।
২০১১ সালে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে থার্টি ফার্স্ট নাইট পালন করতে গিয়ে কয়েকজন প্রাণ হারিয়েছিলেন। এর বছর দুয়েক আগে ব্যাংককের একটি নাইটক্লাবে থার্টি ফার্স্ট নাইটে প্রাণ দিতে হয়েছে কমপক্ষে ৬০ জনকে। আহত হয়েছেন আরও অনেকে। থাইল্যান্ডের ওই ক্লাবে তারা যখন আনন্দে আত্মহারা ঠিক তখনই বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিটের মাধ্যমে আগুনের লেলিহান শিখা তাদের বেষ্টন করে নেয়। নিমিষেই সমাপ্তি ঘটে সব আনন্দ-উল্লাসের। এরপরও কি কেউ শিক্ষা গ্রহণ করেছে? তওবা করে ফিরে এসেছে চিরশান্তির পথে? অথচ আল্লাহ তায়ালা বলেনÑ ‘আর অবশ্যই আমি তাদের গুরুতর আজাবের আগে লঘু আজাব আস্বাদন করাব, যাতে তারা ফিরে আসে। (আলিফ-লাম-মিম আস সাজদাহ : ২১)।
অন্য এক আয়াতে আল্লাহ বলেন ‘হে ঈমানদাররা, তোমরা আল্লাহকে ভয় করো; আর প্রত্যেকের উচিত চিন্তা করে দেখা সে আগামীকালের জন্য কী প্রেরণ করেছে; তোমরা আল্লাহকে ভয় করো। তোমরা যা কর নিশ্চয় আল্লাহ সে বিষয়ে সম্যক অবহিত। তোমরা তাদের মতো হইও না, যারা আল্লাহকে ভুলে গিয়েছিল, ফলে আল্লাহও তাদের আত্মবিস্মৃত করে দিয়েছিলেন; আর তারাই হলো ফাসিক।’ (আল হাশর : ১৮, ১৯)।
আমরা সব অভিভাবকই চাই, আমাদের কোমলমতি সন্তানদের জীবন হোক নিরোগ, নিটোল ও অনাবিল সুন্দর। কিন্তু আমরা কী ভেবে দেখেছি, নববর্ষের মতো এরূপ নানা উপলক্ষে যখন নিজেদের শাসনের বাঁধন একটু শিথিল করি, একটু সুযোগ দিই গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসানোর তখনই তাদের বন্ধু-সতীর্থরা নিয়ে যায় লক্ষহীন সাময়িক সুখের জীবনেÑ মাদক আর নেশার ভুবনে। যে ভুবন একটি শান্ত পুষ্পিত জীবনকে করে অশান্ত পুঁতিগন্ধময়। যে জগৎ একজন ভদ্র সুবোধ সন্তানকে বানায় মা-বাবার অবাধ্য ও অপ্রিয়।
মনে রাখা উচিত, আমাদের একটু অসতর্কতার জন্য যদি সন্তানরা বিপথগামী হওয়ার সুযোগ পায়। তবে এর ক্ষতির প্রথম শিকার হতে হবে আমাকেই। সমাজে মাথা নিচু হবে আমারই। আপন ঔরশজাত সন্তানের জন্য মানুষের কটু-বক্তব্যও হজম করতে হবে কেবল আমাকে। তাছাড়া মরণের পরও এর জন্য ক্ষতি পোহাতে হবে। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেনÑ ‘তোমাদের প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল আর সবাই তোমরা জিজ্ঞাসিত হবে নিজ দায়িত্ব সম্পর্কে। ইমাম একজন দায়িত্বশীল; তিনি তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবেন। পুরুষ দায়িত্বশীল তার পরিবারের; সে জিজ্ঞাসিত হবে তার দায়িত্ব সম্পর্কে। মহিলা দায়িত্বশীল তার স্বামীর গৃহের; সে জিজ্ঞাসিত হবে তার দায়িত্ব সম্পর্কে। ভৃত্যও একজন দায়িত্বশীল, সে জিজ্ঞাসিত হবে তার মনিবের সম্পদ সম্পর্কে। (এক কথায়) তোমরা সবাই দায়িত্বশীল আর সবাই জিজ্ঞাসিত হবে সে দায়িত্ব সম্পর্কে।’ (বোখারি : ৮৪৪)।
বিষয়: বিবিধ
১১৬৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন