উৎসব কর, তবে স্বাতন্ত্র্যতা বিসর্জন দিয়ে নয় !
লিখেছেন লিখেছেন েনেসাঁ ০১ জানুয়ারি, ২০১৪, ০২:২৫:৫৭ দুপুর
মানুষের উৎসব উদযাপনের স্বভাবজাত বাসনা সম্পর্কে আল্লাহ সুপরিজ্ঞাত। তাই তিনি তা প্রকাশের মার্জিত এবং সম্মানজনক পদ্ধতি বিধিবদ্ধ করে দিয়েছেন। সৃষ্টিসংলগ্ন সামগ্রিক প্রজ্ঞাময়তা, পৃথিবীবক্ষে মানবপ্রজন্মের দায়দায়িত্ব, আল্লাহর ইবাদত এবং দাসত্বের দায়িত্ব ইত্যাদি বিবেচনায় রেখেই তিনি দিয়েছেন উৎসব পালনে সম্মানজনক বিধান। আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) মদিনায় আগমন করলেন। তাদের ক্রীড়া-উল্লাসের ছিল দুটি দিবস। রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন ‘এ দিবস দুটি কী?’ উত্তরে তারা বললেন ‘জাহেলি যুগে দিবস দুটি ক্রীড়া-উল্লাসে কাটাতাম।’ রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন আল্লাহ এ দিবস দুটির পরিবর্তে উত্তম দুটি দিবস তোমাদের দিয়েছেন ঈদুল আজহা ও ঈদুল ফিতর। (আবু দাউদ)। রাসূলুল্লাহ (সা.) আবু বকর (রা.) কে বললেনÑ ‘হে আবু বকর! প্রত্যেক জাতিরই উৎসব রয়েছে, আর এটা আমাদের উৎসব।’ (বোখারি)।
মুসলিম উম্মাহর সব উৎসবের সঙ্গেই আকিদা-বিশ্বাস ও জীবনাদর্শ সংমিশ্রিত। এটি বিজাতীয় সব উৎসব থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন তা আকার-প্রকৃতি, ধর্মসংলগ্নতা, জাতীয় অথবা পার্থিব যে ধরনেরই হোক না কেন। ২৫ ডিসেম্বর থেকে পৃথিবীময় শুরু হয় খ্রিস্টীয় উৎসব যা ৩১ ডিসেম্বর নববর্ষীয় মহোৎসবের মাধ্যমে শেষ হয়। আর মুসলমানরা সজ্ঞানে অথবা অবচেতনভাবে, আল্লাহ তাদের যে সম্মান ও বৈশিষ্ট্য দিয়েছেন তা বিশ্রুত হয়ে এ উৎসবে অংশ নিয়ে থাকে।
আমাদের বহু শরিয় টেক্সট রয়েছে, যা উম্মতে মুহাম্মদির আলাদা বৈশিষ্ট্যের কথা স্পষ্টভাবে ব্যক্ত করে এবং অন্য জাতি থেকে তাদের যে স্বাতন্ত্র্য ও উন্নত অবস্থান নিয়ে চলমান থাকতে হবে সে বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেয়। আর এতে আশ্চর্যের কিছু নেই। কেননা এ উম্মত সর্বশেষ ঐশীবার্তা বাহক জাতি। যাদের নবী মুহাম্মদ (সা.) এবং পবিত্র গ্রন্থ আল কোরআন।
আল্লাহ এ উম্মতকে সর্বোচ্চ সৌন্দর্যে অভিষিক্ত করেছেন, যখন তিনি ঘোষণা দিয়েছেন ‘তোমরা হলে সর্বোত্তম উম্মত, যাদের বের করা হয়েছে মানুষের জন্য। তোমরা ভালো কাজের নির্দেশ দেবে ও মন্দ কাজ থেকে বারণ করবে, আর আল্লাহর প্রতি ঈমান আনবে।’ (সূরা আল ইমরান : ১১০)।
সে হিসেবে এ উম্মত হচ্ছে সর্বোত্তম উম্মত। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন ‘তোমরা সত্তর উম্মতের সংখ্যা পূর্ণকারী। আর তোমরা এ সত্তর উম্মতের মধ্যে সর্বোত্তম এবং আল্লাহর কাছে অধিক সম্মানিত।’ (আহমদ ও তিরমিজি)। তিনি আরও বলেছেনÑ ‘জান্নাতবাসীদের ১২০ কাতার হবে, তন্মধ্যে এ উম্মত হবে ৮০ কাতার।’ (তিরমিজি)। তিনি আরও বলেনÑ ‘আমরা কেয়ামত দিবসে শেষ ও শুরু, আমরা সর্বাগ্রে জান্নাতে প্রবেশকারী, যদিও তাদের কিতাব দেয়া হয়েছে আমাদের আগে, আর এসেছি তাদের পরে। তারা মতানৈক্য করেছে। তারা যে বিষয়ে মতানৈক্য করেছে আল্লাহ আমাদের সে বিষয়ে সঠিক পথ দেখিয়েছেন। এটা সে দিবস, যে দিবস সম্পর্কে তারা মতানৈক্য করেছে। আর আমাদের আল্লাহ এ বিষয়ে হেদায়েত দিয়েছেন। অদ্যকার দিবস আমাদের। কালকেরটা ইহুদিদের এবং পরশু হলো নাসারাদের।’ (বোখারি ও মুসলিম)।
নববর্ষ উৎসব পার্থিবতা ও অশ্লীলতাসর্বস্ব, যাতে চর্চিত হয় বেলেল্লাপনা, বেহায়াপনা, পাশবিকতাপূর্ণ আচরণ, যা সর্বার্থে মানুষের পরকালীন চেতনাবিবর্জিত। মোমিনের কথা তো এখানে আসতেই পারে না। রাসূলুল্লাহ (সা.) এ বিষয়ে খুবই সচেতন ছিলেন। তিনি বলেন ‘যে ব্যক্তি মুশরিকদের দেশে বাড়ি তৈরি করল, তাদের উৎসব-দিবস পালন করল এবং এ অবস্থায় সে মারা গেল, তবে তার হাশর-নশর তাদের সঙ্গেই হবে।’ (বায়হাকি : ৯/২৩৪)।
এ ধরনের উৎসব পালন অবৈধ হওয়ার কারণ বাহ্যিক ধরন-ধারণে সাদৃশ্যগ্রহণ ও আন্তরিক বিশ্বাস এ দুয়ের মাঝে গভীর সম্পর্ক রয়েছে। যে কেউ আলেমদের পোশাক গ্রহণ করে সে নিজেকে আলেমদের সঙ্গে সম্পৃক্ত বলে অনুভব করতে থাকে। আর যে সৈনিকদের পোশাক পরে তার হৃদয়ে সৈনিকসুলভ ভাব জন্মে। তার মেজাজও সৈনিকতুল্য হয়ে যায়। যদি না এ পথে কোনো বাধা থাকে।
প্রকাশ্য বেশভুষায় সাদৃশ্য গ্রহণ বাহ্যত মিলমিলাপ ও সংমিশ্রণ-সম্মিলন ঘটানোর কারণ হয়। হেদায়েতপ্রাপ্ত মোমিন এবং অভিশপ্তদের মাঝে ভিন্নতা ও বৈশিষ্ট্যের দেয়াল ওঠে যায়। ধর্মীয় বিষয়ে নয় বরং সাধারণ ক্ষেত্রে তাদের সাদৃশ্য গ্রহণের বিষয়টি যদি এরূপ হয়, তাহলে যেসব বিষয় বিজাতিদের মুসলিম না হওয়ার কারণ সেসব বিষয়ের ক্ষেত্রে তাদের অনুকরণের পাপ-অপরাধ তাদের পাপের মাত্রানুযায়ী নির্ধারিত হবে। এই মূলনীতিটি সবাইকে অনুধাবন করতে হবে।
বিষয়: বিবিধ
১৪০৩ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
খুব ভালো লাগ্লো...
মন্তব্য করতে লগইন করুন