নৈতিকতার বিকাশ ছাড়া শান্তি অসম্ভব!

লিখেছেন লিখেছেন েনেসাঁ ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৩, ০৩:২৭:৪৩ দুপুর



বিপন্ন নৈতিকতার কারণে কাক্সিক্ষত শান্তি লাভ আমাদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। মানবতা মুখোমুখি হচ্ছে চরম বিপর্যয়ের। এ ক্ষেত্রে যারা সমাজ ও জাতির নেতৃস্থানীয় দায়িত্বশীল তাদের ভূমিকা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্বব্যাপী ভয়াবহ অনৈতিকতার অবসান ঘটাতে হলে একটি প্রজন্মের শৈশব থেকেই পরিকল্পিত কর্মসূচি গ্রহণ করা অপরিহার্য। কর্মক্ষেত্রে প্রবেশের আগেই শিশু-কিশোরদের চরিত্র বিশুদ্ধভাবে গঠন করতে নৈতিক শিক্ষা নিশ্চিত করা অপরিহার্য। নৈতিক শিক্ষার প্রকৃত উৎস হলো ধর্ম। ধর্ম পরিহার করে এ শিক্ষার সন্ধান পাওয়া সম্ভব নয়। ধর্মই যুগে যুগে নৈতিকতার মান উন্নত করার শক্তিশালী মন্ত্র শুনিয়ে এসেছে। আজ অনেক অসততা ও নৈতিক শূন্যতার ভিড়েও যেটুকু নীতির অবস্থান আমরা লক্ষ্য করি তা মূলত ধর্মীয় শিক্ষার অনবদ্য অবদান। সামাজিক অবক্ষয় রোধে ধর্মের অবদান উল্লেখযোগ্য না হলে পৃথিবীতে আজ এমন কাউকে পাওয়া প্রকৃতই দুষ্কর হতো, যিনি অন্তরে ভালো চিন্তা ও সততা লালন করেন। শিক্ষা ব্যবস্থায় প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের পাঠ্য শিক্ষার্থীদের মনে অতি মাত্রায় প্রভাব ফেলে। সুতরাং এ সময়ের প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মীয় শিক্ষার তাগিদ তাদের আজীবন সত্য ও সুন্দরের পথে রাখতে সাহায্য করে। এ অবস্থায় মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক করলে নৈতিক ও সামাজিক অবক্ষয় রোধে তা সুদূরপ্রসারী ভূমিকা রাখত।

একজন শিক্ষার্থী যখন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা সমাপ্ত করে বের হয়, তখন কর্মজীবনের সমৃদ্ধ অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎ তাকে হাতছানি দেয়। সমাজের প্রচলিত ব্যবস্থাপনায় তিনি সামনে এগিয়ে যেতে থাকেন এবং খুব অল্পসংখ্যক ব্যক্তি এ ক্ষেত্রে সাধুতা-অসাধুতার ভেদ বিচার করেন। তাদের মধ্যে আরও অল্পসংখ্যক ব্যক্তি নীতির অবস্থানে অটল থাকেন, যাদের কোনো রকম উচ্চাভিলাষ কিংবা অসাধু লালসা গ্রাস করতে পারে না। অনুসন্ধান করলে তথ্য মিলবে যে, তারা সবাই ধর্মীয় নৈতিকতাকে জীবনের জন্য অপরিহার্য প্রহরী মনে করেন। ধর্মীয় শিক্ষার গ-ি অত্যন্ত শক্তিশালী ও দুর্ভেদ্য। এ শিক্ষার পেছনে অদৃশ্য ঐশীশক্তি সব সময় সক্রিয় থাকে বলে এর লক্ষ্য-উদ্দেশ্য ব্যর্থতায় পর্যবসিত হতে পারে না। ধর্মের পরিচ্ছন্ন ও বাস্তবোচিত শাসন মানুষকে খারাপ পথে যেতে দেয় না। শয়তানের তাড়নায় আল্লাহর বান্দাদের কারও পদস্খলন ঘটলে ধর্ম তাকে ফের সত্য ও সুন্দরের পথে প্রত্যাবর্তনের সুযোগ দেয়। ধর্ম যেমন কড়া শাসক, তেমনি উদারও বটে। ধর্মীয় অনুশাসনের অমৃত পান করা মানুষগুলোই যুগে যুগে পৃথিবীতে স্বর্ণমানবের মর্যাদা পেয়েছে। যে কোনো ধর্মই হোক, ধর্ম মানুষকে কখনোই খারাপ প্রবৃত্তিকে প্রশ্রয় দেয় না। জেনা-ব্যভিচার, চুরি-ডাকাতি, খুন-সংঘর্ষ ছাড়াও অন্যান্য সামাজিক অপরাধের বিরুদ্ধে ধর্ম সব সময়ই সোচ্চার। ধর্মের আবির্ভাবই হয়েছে মানবগোষ্ঠীকে সুন্দর ও সততার পথ দেখানোর জন্য। নৈতিক অবক্ষয় রোধকল্পে আঞ্চলিক-সামগ্রিক সব ধর্মই অভিন্ন অবস্থানের দাবিদার। সন্তান যখন দুনিয়ায় আগমন করে, সঙ্গে সঙ্গে তাকে সর্বাগ্রে সৃষ্টিকর্তার নাম কানে প্রবেশ করানো হয়। কেউ আজান, কেউ বা অন্য বাণী পাঠ করে যে যেভাবেই হোক নবজাতকের শিরা-উপশিরায় ধর্মের সৌরভ ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করে। এখান থেকেই ধর্মের শুরু ও সম্পৃক্ততা। এ প্রথা ও বাস্তবতা কি অস্বীকার করার কোনো উপায় আছে? ধর্মের প্রতি একজন মানুষের সহজাত ভক্তি ও আস্থার সূচনা হয় এখান থেকেই। মাতৃগর্ভ থেকে ভূমিষ্ঠ হওয়ার গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে শিশুর বহমান রক্তকণিকায় ধর্মের বাণী প্রবেশ করার পর তা থেকে মুক্ত হওয়া সহজ হয় না। ধর্মীয় অনুশাসনের আবরণ কাউকে পরানো হলে তার নৈতিক অধঃপতন বা পদস্খলনের সম্ভাবনা কম থাকে। নেতৃস্থানীয় পদের জন্য আমরা ঠিক এ ধরনের নীতিবান মানুষ অহরহ খুঁজে ফিরি। ধর্মীয় শিক্ষা ও মূল্যবোধ একজন মানুষের নৈতিক মানের যে উন্নতি ঘটায়, অন্য আর কোনো শিক্ষা তার সঙ্গে তুলনা হতে পারে না। জ্ঞান-বিজ্ঞানের শিক্ষা হয়তো তাকে শিখতে হবে; কিন্তু মনুষ্যত্বের দাবি নিয়ে সমাজে হাজির হতে হলে ধর্মীয় শিক্ষার অপরিহার্যতা কীভাবে প্রত্যাখ্যান করা সম্ভব?

বিষয়: বিবিধ

১০৪০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File