সুন্দর নাম রাখা সুন্নত, যার প্রভাব পড়বে তার জীবনে।

লিখেছেন লিখেছেন েনেসাঁ ২৯ ডিসেম্বর, ২০১৩, ০৪:৪১:১৬ বিকাল



ইবনুল মুসাইয়িবের পিতা রাসূলুল্লাহ (সা.) এর কাছে এলে তিনি তার নাম জিজ্ঞেস করেন। তিনি বললেন, ‘হাজন’ (কর্কশ/রুক্ষ)। নবী করিম (সা.) বললেন, “বরং তোমার নাম ‘সাহল’ (কোমল)।” তিনি বললেন, ‘আমার পিতার দেয়া নাম বদলাব না।’ ইবনুল মুসাইয়িব (রা.) বলেন, ‘পরবর্তীতে আমাদের বংশে চিরকাল রুক্ষতা বিদ্যমান ছিল।’ (আদাবুল মুফরাদ : ৫৭৪)।

নবজাতকের নামকরণের দর্শন একটি হাদিসে চমৎকারভাবে বিধৃত হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমরা নবীদের নামে নাম রাখো। আল্লাহর কাছে সর্বাধিক প্রিয় নাম আবদুল্লাহ ও আবদুর রহমান। সবচেয়ে সত্যনিষ্ঠ নাম হারিস (কর্মজীবী/উপার্জনকারী) ও হাম্মাম (উদ্যমী/আকাক্সক্ষী)। সর্ব ঘৃণিত নাম হারব (যুদ্ধ-বিগ্রহ) ও মুররাহ (তিক্ততা-বিষাক্ততা)।’ (আল আদাবুল মুফরাদ : ৮১৪)। আবদুল্লাহ/আবদুর রহমান নাম দুটিতে আল্লাহর গুণ প্রতিবিম্বিত। হারিস/হাম্মাম নামগুলো ইতিবাচক প্রেরণাদায়ক এবং হারব/মুররাহ নামগুলো অশুভ প্রবণতা-পরিণতির ইঙ্গিতবাহক বিধায় এসব নামকরণে রাসূলুল্লাহ (সা.) ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি দিয়েছেন।

নামের মধ্যে মানুষের ব্যক্তিত্বের প্রকাশ ঘটে। মনস্তাত্ত্বিক দৃষ্টিতেও এর ব্যাপক ইতিবাচক বা নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে। একটি ভালো নাম সদ্য ভূমিষ্ঠের অনাগত দিনগুলো পরিণত করতে পারে সুন্দর ও কল্যাণময় রূপে। তাই তো মহানবী (সা.) কারও ভালো নাম শুনে আশাবাদী হতেন, আবার অশুভ ইঙ্গিতবাহী নাম পরিবর্তন করে দিতেন। হুদাইবিয়ার সন্ধিকালে মুসলিম ও কাফেরদের টানাপড়েনের মধ্যে কাফেরদের প্রতিনিধি হয়ে আসা সুহাইলকে দেখে রাসূলুল্লাহ (সা.) আশাবাদী হয়ে সাহাবিদের উদ্দেশে বললেন, ‘সুহাইল আসছে, অতএব তোমাদের বিষয়টি সহজ হয়ে যাবে।’ (বোখারি : ৯৫১)।

নবজাতকের নাম সুন্দর রাখা সুন্নত। হাদিসে এসেছে, ‘কেয়ামতের দিন তোমাদের নিজেদের অথবা বাপ-দাদার নামে আহ্বান করা হবে, অতএব তোমাদের সুন্দর নাম রাখো।’ (আবু দাউদ, সুনান : ১৩/৩৪৮)। ভূমিষ্ঠের প্রথম, তৃতীয় অথবা সপ্তম দিন নবজাতকের নাম রাখা সুন্নত। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, আজ রাতে আমার একটি সন্তান ভূমিষ্ঠ হয়েছে, আমি তার নাম দিয়েছি আমার পিতা ইবরাহিমের নামানুসারে। (বোখারি : ১০/৫৫৭)। তবে সন্তান জন্মের আগেও তার নাম পরিকল্পনায় রেখে দেয়া যেতে পারে। সন্তানের নামকরণে পিতা অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত।

নামকরণের মূলনীতি

* আল্লাহর গুণবাচক নামের সঙ্গে ‘আব্দ’ (বান্দাহ/গোলাম/ক্রীতদাস) যুক্ত করে তার দাসত্বের স্বীকৃতিবাহক নাম রাখা। যেমন আবদুল্লাহ, আবদুর রহমান।

* কোনো নবীর নামে নাম রাখা। রাসূলুল্লাহ (সা.) স্বীয় ছেলের নাম রেখেছেন ইবরাহিম।

* আল্লাহওয়ালা ব্যক্তিদের নামে নাম রাখা। এক্ষেত্রে সাহাবায়ে কেরাম, তাবেয়িন, সলফে সালেহিন, আইম্মা-ওলামায়ে কেরামের নাম নির্বাচন করা যায়।

* আরবি বা কোরআনে উল্লিখিত শব্দের মাধ্যমেই নাম রাখা বাধ্যতামূলক নয়। অনৈসলামিক, মন্দার্থক অথবা মূল্যবোধবিবর্জিত না হলে বাংলাসহ অন্য ভাষায়ও নাম রাখা যাবে।

* কোনো নামের (যেমন ব্যক্তির বড় সন্তানের নাম) আগে আবু (পিতা) শব্দযোগে কুনিয়াত/উপনাম দিয়ে নাম রাখা। একজন সাহাবির ‘আবুল হাকাম’ উপনাম পরিবর্তন করে রাসূল (সা.) নাম দিলেন ‘আবু শুরাইহ’। কারণ হাকাম আল্লাহর একটি একান্ত নাম, আর তার সন্তানদের মধ্যে বড় ছিলেন শুরাইহ। (বোখারি : ১০/৫৫৭)।

যদি কারও নামে শরিয়তনিষিদ্ধ উপাদান থাকে তাহলে তা পরিবর্তন করা উচিত। জয়নবের (রা.) নাম ‘বাররা/পুণ্যবতী’ শুনে রাসূল (সা.) তাকে বললেন, ‘তুমি তো আত্মস্তুতি করছ’। তিনি তার নাম পরিবর্তন করে দিলেন ‘জয়নব’। (ইবনে মাজাহ : ৩৭৩২)।

অশুভ নাম পরিত্যাগের মূলনীতি

* আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও দাসত্ববোধক অথবা গাইরুল্লাহর নামের আগে ‘আব্দ’ শব্দযোগে কোনো নাম। যেমন আবদুন্নবী, গোলাম খাজা, আবদুল আলী।

* একান্তই আল্লাহর জন্য বিশেষায়িত, আলিফ লাম সংযুক্ত আল্লাহর গুণবাচক নাম। যেমন আর-রহমান, আর-রহিম।

* স্পষ্টতই বিধর্মী ঐতিহ্যবাহী নাম। যেমন পল, দুর্গা, লক্ষ্মী, জর্জ।

* অহঙ্কার, আত্মশ্লাঘা, অসার দাবিপূর্ণ উপাধিবিশিষ্ট নাম। যেমন শাহেনশাহ, মালিকুল মুলক (রাজাধিরাজ), মহারাজ।

যেসব বিষয়বস্তু নিয়ে নাম রাখা মাকরুহ

* এমন অর্থবোধক শব্দযোগে নাম রাখা, যার অনুপস্থিতি কুলক্ষণ মনে করা হয়। যেমন রাবাহ (লাভবান), আফলাহ (সফলকাম), বরকত।

* দাম্ভিক ও অহঙ্কারী শাসকদের নামে নাম রাখা। যেমন ফেরাউন, হামান, কারুন।

* অশুভ, খারাপ বা অর্থহীন নাম। যেমন হারব/যুদ্ধবিগ্রহ, জুজু, মিমি।

* মানুষের চিরায়ত রুচিবোধ অথবা ভদ্রতা-শালীনতা পরিপন্থী কোনো নাম-উপনাম গ্রহণ। যেমন কালব/কুকুর।

* ইবনুল কাইয়িম (রহ.) কোরআনের নামে নাম রাখাকে নিরুৎসাহিত করতেন। যেমন তাহা, ইয়াসিন, হা-মিম। ইমাম মালেক (রহ.) ইয়াসিন নাম রাখা সম্পর্কে বলেন, আমি এটা অনুচিত মনে করি। (বকর আবু যায়দ, তাসমিয়াতুল মাওলুদ : ১/২৭)।

* শয়তান বা তার বৈশিষ্ট্য নির্দেশক নাম রাখা। তাবেয়ি মাসরুকের (রহ.) পিতার নাম ছিল আজদা। হজরত ওমর (রা.) তাকে স্মরণ করিয়ে দিলেন যে আজদা শয়তানের নাম। (আবু দাউদ ও ইবনে মাজাহ)।

* ইমাম মালেকসহ অনেক মনীষী ফেরেশতাদের নামে নাম রাখা অপছন্দ করতেন। (নববী, শারহু মুসলিম)।

সন্তানদের জন্য পিতামাতার সর্বোত্তম উপহারের একটি হতে পারে ‘একটি সুন্দর নাম’।

বিষয়: বিবিধ

১৪৮৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File