তালাক দেওয়ার হুকুম কি?
লিখেছেন লিখেছেন েনেসাঁ ২৮ ডিসেম্বর, ২০১৩, ০২:০৫:১৬ দুপুর
শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়্যা (রহঃ) বলেন,
“তালাক দেওয়ার ব্যপারে শরীয়তের মূলনীতি হচ্ছে তালাক দেওয়া নিষিদ্ধ। তবে এটা শুধুমাত্র তখনই জায়েজ হবে যখন তালাক দেওয়ার “উপযুক্ত কারণ” থাকা সাপেক্ষে তালাক দেওয়ার “প্রয়োজনীয়তা” থাকে।” (মাজমু ফাতওয়া ৩৩/৮১)।
উপযুক্ত কারণ কি?
সংসারে চলতে গিয়ে অনেক কারণেই স্বামী-স্ত্রীর মাঝে মনোমালিন্য হতে পারে। বা স্বামী-স্ত্রী একজন আরেক জনের উপর অনেক কারণেই অসন্তুষ্ট হতে পারেন। তাই বলে মন চাইলেই কি তালাক দিয়ে দেবে?
আল্লাহ তাআ’লা স্বামী-স্ত্রী একজন আরেকজনের “পোশাক” বলেছেন।
আমাদের পোশাকে যদি একটু ময়লা লাগে আমরা কি পোশাকটা ফেলে দেই? না, বরং আমরা সেটা সুন্দর করে পরিষ্কার করে আবার ব্যবহার করি। ঠিক তেমনি ইসলাম আমাদেরকে শিক্ষা দেয়, সামান্য মনোমালিন্য বা বাঁধাবাঁধির কারণে সংসার ভেঙ্গে না দিতে। এতে যেমন দুইটা মানুষের জীবনের উপরে আঘাত আসে, আবার তাদের সাথে তাদের ছেলেমেয়ে ও পরিবারের উপরেও অনেক দুঃখ নেমে আসে।
যে কারণগুলোর কারণে তালাক দেওয়া বৈধ হতে পারেঃ
১. স্ত্রী যদি চরিত্রহীনা হয়, ফাহেশা কাজে লিপ্ত হয়।
২. স্ত্রী যদি দ্বীনদার না হয় অথবা, স্বামীর দ্বীনের জন্য ক্ষতিকর হয়।
৩. স্ত্রীর কাছ থেকে ক্ষতির কোনো আশংকা থাকে।
বোঝাই যাচ্ছে, এইরকম মারাত্মক কারণ থাকলে তবেই তালাক দেওয়া বৈধ হতে পারে। কিন্তু কেউ যদি অন্যায়ভাবে কাউকে তালাক দিয়ে দেয়, তাহলে তার কি শাস্তি হবে?
প্রথম কথাঃ এর দ্বারা কি একজন মানুষ উপর যুলুম করা হচ্ছেনা?
একজনের জীবন বিপন্ন করে দেওয়া হচ্ছেনা? যুলুমের কি শাস্তির কথা কুরআন-হাদীসে বলা হয়েছে?
আল্লাহ সুবহা’নাহু তাআ’লা স্বয়ং নিজের উপর যুলুম করা নিষিদ্ধ করে দিয়েছেন, সেইখানে আমাদের মতো তুচ্ছ একজন বান্দার কোনো অধিকার আছে কারো উপর যুলুম করার?
একটি হাদীসে কুদসীতে আল্লাহ বলেনঃ “হে আমার বান্দারা! আমি নিজের ওপর যুলুম হারাম করে নিয়েছি এবং তোমাদের পরস্পরের মধ্যেও তা হারাম করে দিয়েছি। সুতরাং তোমরা পরস্পরের ওপর যুলুম করো না”। (মুসলিম, তিরমিজী)
জালেমদের শাস্তিঃ
একজন মানুষের উপর যুলুম করাতো দূরের কথা, সহীহ হাদীসে এসেছে একটা বিড়ালের উপর যুলুম করার কারণে একজন জাহান্নামে যাবে।
রাসুল (সাঃ) বলেছেনঃ “আল্লাহ তা’আলা যালিমকে দীর্ঘ সময় দিয়ে থাকেন। অবশেষে যখন পাকড়াও করেন তখন তাকে আর রেহাই দেন না। তারপর তিনি (সাঃ) এই আয়াত পাঠ করেনঃ “তোমার প্রভুর পাকড়াও এ রকমই হয়ে থাকে, যখন তিনি যুলুমরত জনপদগুলোকে পাকড়াও করেন। তাঁর পাকড়াও অত্যন্ত যন্ত্রণাদায়ক, অপ্রতিরোধ্য”। (বুখারী, মুসলিম, তিরমিজী)
রাসুল (সাঃ) আরো বলেছেনঃ “কেউ যদি তার কোনো ভাইয়ের সম্মান হানি কিংবা কোনো জিনিসের ক্ষতি করে থাকে, তবে আজই তার কাছ থেকে তা বৈধ করে নেয়া উচিত এবং সেই ভয়াবহ দিন আসার আগেই এটা করা উচিত, যে দিন টাকাকড়ি দিয়ে কোনো প্রতিকার করা যাবে না, বরং তার কাছে কোনো নেক আমল থাকলে তার যুলুমের পরিমাণ হিসাবে মযলুমকে সেই নেক আমল দিয়ে দেয়া হবে এবং অসৎ কাজ না থাকলেও ওই মযলুমের অসৎ কাজ তার ওপর বর্তাবে”। (বুখারী ও তিরমিজী)
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বিশেষভাবে আমাদেরকে জুলুম থেকে বেঁচে থাকতে আদেশ করেছেন। “তোমরা জুলুম থেকে বেঁচে থাকো কারন জুলুম কিয়ামতের দিন গভীর অন্ধকার হয়ে দেখা দিবে”। (মুসলিমঃ ৬৭৪১)
জুলুম এতো মারাত্মক যে, মজলুম যদি জালেমের বিরুদ্ধে বদদোয়া করে আল্লাহ সাথে সাথে সেই দুয়া কবুল করে নেন। আর এইজন্য জালেমরা দু্নিয়ার বুকে বেশিদিন টিকে থাকতে পারেনা।
এইজন্য এক আরব কবি বলেছেনঃ “ক্ষমতা থাকলেই তুমি কারো প্রতি যুলুম করো না, যুলুমের পরিণাম অনুশোচনা ছাড়া আর কিছুইনা। যুলুম করার পর তুমি তো সুখে নিদ্রা যাও, কিন্তু মযলুমের চোখে ঘুম আসে না। সে সারা রাত তোমার জন্য বদ দোয়া করে আর আল্লাহ তা শোনেন। কেননা তিনিও ঘুমান না”!
সুতরাং হে আমার দ্বীনি ভাইয়েরা! অন্যায়ভাবে কাউকে তালাক দেওয়ার ব্যপারে সাবধান। আপনি মনে করছেন তালাক দিলেই ভালো হবে, কিন্তু অন্যায়ভাবে তালাক দিলে যদি আপনার স্ত্রীর অভিশাপ আপনার উপর পড়ে, আপনি কি সুখী হতে পারবেন, দুনিয়া বা আখেরাতে?
আর স্ত্রীর এই্টা ভালোনা, সেইটা এইরকম...
আপনি নিজের কথা চিন্তা করুন...আপনি নিজে কতটুকু ভালো? কারণ আল্লাহ নিজেই বলেছেন, “দুশ্চরিত্রা নারীরা দুশ্চরিত্র পুরুষদের জন্যে এবং দুশ্চরিত্র পুরুষেরা দুশ্চরিত্রা নারীদের জন্যে। সচ্চরিত্রা নারীরা সচ্চরিত্র পুরুষদের জন্যে এবং সচ্চরিত্র পুরুষেরা সচ্চরিত্রা নারীদের জন্যে”। (সুরা আন-নুরঃ ২৬)।
আপনি যেরকম সেইরকম স্ত্রীই আল্লাহ আপনার ভাগ্যে লিখে রেখেছেন। নিজে সংশোধন হওয়ার চেষ্টা করুন – আপনার স্ত্রীও সংশো্ধন হবে।
বিষয়: বিবিধ
১৫৯২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন