আমরা যদি আমাদের পরিবারে মহানবী (সা.) এর আদর্শ প্রতিষ্ঠা করতে পারি, তবেই সমাজ, রাষ্ট্র সর্বত্র মানবাধিকার সুপ্রতিষ্ঠিত হবে।
লিখেছেন লিখেছেন েনেসাঁ ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৩, ০২:২৪:৩৯ দুপুর
মানবাধিকারের ব্যাপারে বাংলাদেশের সংবিধানে মৌলিক অধিকার শিরোনামে ২৬-৪৭ পর্যন্ত মোট ২৩টি অনুচ্ছেদে মৌলিক অধিকারের বিষয়ে বিশদভাবে আলোচনা করা হয়েছে। এর মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য দিকগুলো হলো আইনের দৃষ্টিতে সমতা, ধর্ম-বিশ্বাসের কারণে বৈষম্য না করা, সরকারি নিয়োগ লাভে সুযোগের সমতা, আইনের আশ্রয় লাভের অধিকার, জীবন ও ব্যক্তি স্বাধীনতার অধিকার রক্ষণ, জবরদস্তি শ্রম নিষিদ্ধকরণ, বিচার ও দ- সম্পর্কে রক্ষণ, চলাফেরার স্বাধীনতা, সমাবেশের স্বাধীনতা, সংগঠনের স্বাধীনতা, চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা এবং বাকস্বাধীনতা ইত্যাদি। এ জাতীয় সব অধিকার হচ্ছে মানবাধিকার। ১৯৪৮ সালে জাতিসংঘ তার সাধারণ পরিষদে একটি ঘোষণা প্রচার করেছে। সে ঘোষণার নাম হলো বিশ্ব মানবাধিকার বা সর্বজনীন মানবাধিকার পত্র। ১৯৪৮ সালে এ ঘোষণার পর থেকে সারা পৃথিবীতে ১০ ডিসেম্বর বিশ্ব মানবাধিকার দিবস হিসেবে পালিত হয়। ১৯৪৮ সালে জাতিসংঘ বিশ্ব মানবাধিকার ঘোষণা করার পর, মানবাধিকার শব্দটি মানুষের মুখে মুখে উচ্চারিত হচ্ছে। আন্তর্জাতিক এবং জাতীয় পর্যায়ে অনেক সংগঠন, সংস্থা এ ব্যাপারে কাজ করে যাচ্ছে। জাতিসংঘে মানবাধিকার ঘোষণা করার আগে ৬৩২ সালে আরাফা প্রান্তরে মহানবী (সা.) এর কণ্ঠে যে ভাষণ উচ্চারিত হয়েছে, সে ভাষণ হচ্ছে মানবতার জন্য সর্বপ্রথম মানবাধিকারের ঘোষণা। আরাফার ময়দানে রাসূল (সা.) সব বিভেদ-বৈষম্য ও কল্পিত মর্যাদার মানদ- এবং অসাম্যের মাথায় কুঠারাঘাত করে বজ্রকণ্ঠে ঘোষণা করেন, হে মানবজাতি! নিশ্চয় তোমাদের প্রভু এক, তোমাদের পিতা এক। সাবধান! অনারবের ওপর আরবের কিংবা আরবের ওপর অনারবের, কৃষ্ণাঙ্গের ওপর শ্বেতাঙ্গের কিংবা শ্বেতাঙ্গের ওপর কৃষ্ণাঙ্গের কোনো শ্রেষ্ঠত্ব বা প্রাধান্য নেই তাকওয়া ব্যতীত। অর্থাৎ জাতি বা বর্ণভেদ শ্রেষ্ঠত্বের মাপকাঠি নয়, বরং শ্রেষ্ঠত্বের প্রকৃত মাপকাঠি হলো তাকওয়া বা আল্লাহভীতি। (সিরাতুন নবী : ২-৪৩৬)। রাসূল (সা.) চুরি-ডাকাতি, ছিনতাই-রাহাজানি বন্ধে এবং সবার জন্য শান্তি, স্বস্তি ও নিরাপত্তার আশ্বাস প্রদান করে ঘোষণা করেন, তোমাদের রক্ত (জীবন) ও তোমাদের সম্পদ পরস্পরের জন্য হারাম। (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া : ৫-২১১)।
অনুরূপভাবে সংখ্যালঘুদের অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা, বাসস্থান, জীবনের নিরাপত্তা, সামাজিক, রাজনৈতিক ইত্যাদি অধিকার ইসলাম স্বীকার করে। মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘যে মুসলিম রাষ্ট্রে বসবাসকারী কোনো অমুসলিম নাগরিককে হত্যা করবে সে জান্নাতে স্থান পাবে না।’ (আবু দাউদ : ২-৩৮০)। সমাজে মানুষ যেন ইজ্জতের সঙ্গে বসবাস করতে পারে এবং নিজের জান-মাল হেফাজত করতে পারে, সে ব্যাপারে রাসূল (সা.) বলেছেন, তোমরা অন্যায়ভাবে একে অন্যকে হত্যা করতে পারবে না। কেননা, আল্লাহ পাক বলেন, কেউ যদি অন্যায়ভাবে একজন মানুষকে হত্যা করে, সে যেন সব মানুষকে হত্যা করল। (সূরা মায়েদা : ৩২)। কারণ একজন মানুষকে হত্যা করার মাধ্যমে সব নাগরিকের নিরাপত্তা বিনষ্ট হয়।
অন্যত্র রাসূল (সা.) প্রতিবেশীর সঙ্গে সদাচরণের জন্য সুস্পষ্ট ভাষায় নির্দেশ প্রদান করেছেন। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেছেন, যারা আল্লাহ ও কেয়ামত দিবসের ওপর ঈমান রাখে, তারা যেন প্রতিবেশীকে কষ্ট না দেয়। (আবু দাউদ : ২-৭০১)। শ্রমিকের ন্যায্য অধিকার ও পাওনার ব্যাপারে নবী করিম (সা.) দ্ব্যর্থহীন ভাষায় ঘোষণা করেন, শ্রমিকের মজুরি তার শরীরের ঘাম শুকানোর আগেই দিয়ে দাও। (মেশকাত : ১-২৫৮)। অনুরূপভাবে ইসলাম সব নাগরিকের বিবেক ও ধর্ম বিশ্বাসের স্বাধীনতা দিয়েছে। এ ব্যাপারে আল কোরআনের ঘোষণা, দ্বীনের ব্যাপারে কোনো জবরদস্তি বা বাধ্যবাধকতা নেই। নিঃসন্দেহে হেদায়েত গোমরাহি থেকে আলাদা হয়ে গেছে। (সূরা বাকারা : ২৫৬)।
মত প্রকাশের অধিকার, ন্যায়সঙ্গতভাবে সরকারের সমালোচনা করার অধিকার ও সব ধরনের মানবাধিকার ইসলামে স্বীকৃত। ১০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের এ দিবসে অনেক জায়গায় অনেক সেমিনার, র্যালি ইত্যাদি কর্মসূচি পালন হয়ে থাকে। কিন্তু আমরা কি আমাদের পরিবারে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছি? আমরা যদি আমাদের পরিবারে মহানবী (সা.) এর আদর্শ প্রতিষ্ঠা করতে পারি, তবেই সমাজ, রাষ্ট্র সর্বত্র মানবাধিকার সুপ্রতিষ্ঠিত হবে।
বিষয়: বিবিধ
১২৩৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন