ধর্ম ও বিজ্ঞানে প্রথম মানব
লিখেছেন লিখেছেন েনেসাঁ ১৭ ডিসেম্বর, ২০১৩, ১১:২৪:২২ সকাল
এ পৃথিবীতে মানুষ কোত্থেকে এলো এবং কী করে তার উৎপত্তি হলো তা নিয়ে হাজার হাজার বছর ধরে চিন্তা-ভাবনা ও গবেষণা চলছে। ধর্মীয় ও দার্শনিক দৃষ্টিকোণ ছাড়াও বিগত শতাব্দী থেকে আধুনিক বৈজ্ঞানিক মননের চিন্তা-ভাবনা ও গবেষণার রীতি চালু হয়েছে। পৃথিবী মহাবিশ্ব গ্রন্থের একটি পৃষ্ঠা মাত্র। সে মহাবিশ্ব স্থায়ী ভিত্তিশীল মহাসত্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত। সৃষ্টিপর্বের প্রথম মানুষ হিসেবে আমরা যাকে জানি, তিনি হলেন আদম (আ.)। তিন অক্ষরের একটি নাম। অর্থ রক্তিম, সুন্দর ও সুঠাম। প্রথম নারী হাওয়া (আ.), যিনি তার স্ত্রী। আদম ও ‘ঈভ’ নামটি বর্তমান বিশ্বে ব্যাপক জনপ্রিয়। আল কোরআন, কিতাব-ই-ইকান, বংশাবলি ও ইবরাহিম (আ.) ধর্মগ্রন্থে তার ব্যাপক বর্ণনা রয়েছে। বিভিন্ন পৌরাণিক কাহিনীতেও তিনি সৃষ্টি পর্বের প্রথম মানুষ। ইহুদি, খ্রিস্টান ও ইসলাম ধর্মের অনুসারীদের বিশ্বাস মতে, তিনি ছিলেন প্রথম সৃষ্ট মানুষ। ইসলামের দৃষ্টিতে, তিনি প্রথম নবী ও আদি মুসলমান। পৃথিবীতে আল্লাহর প্রতিনিধির সূচনা সত্তা। আর ইহুদি ও খ্রিস্ট ধর্ম মতে, তিনি পরমেশ্বরের মনোনীত সেবক। হাওয়া (আ.) কে তারা ‘হবা’ বলে থাকেন। আর হিন্দু ধর্ম মতে, প্রথম মানব-মানবী হলোÑ ‘মনু’ আর ‘অদিতি’। মনুর সন্তান বলে আমরা মানুষ।
পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘আমি আদম (আ.) কে পৃথিবীতে আমার প্রতিনিধি নিযুক্ত করব।’ (সূরা বাকারা : ৩০)। আল কোরআনে অন্তত ২৫ বার তার নাম এসেছে। মাটি দ্বারা সৃষ্টির পর আদম ও হাওয়া (আ.) এর অবস্থান ছিল জান্নাতে। তারা সেখানে নিষিদ্ধ ফল খেয়ে তিরস্কৃত হয়ে মাটির পৃথিবীতে এসে পড়েন দুজন ভিন্ন ভিন্ন স্থানে। আদম (আ.) সরণদ্বীপ পর্বতে (বর্তমান শ্রীলঙ্কা) আর হাওয়া (আ.) আরব উপত্যকায়। দীর্ঘদিন পর আরাফাত প্রান্তরে তাদের পুনর্মিলন হয়। ইবনে বতুতার বর্ণনায়, বিশ্বের অন্যতম উঁচু পর্বত সরণদ্বীপ, যা অ্যাডামস পিক হিসেবে পরিচিত। এখানে পাথরের গায়ে আদম (আ.) এর পায়ের ছাপ এখনও বিদ্যমান আছে। আদম (আ.) এর আগেও কি মানুষের অস্তিত্ব ছিল? এ গ্রহের বয়সই বা কত? এসব প্রশ্নের জবাব খুঁজতে বিজ্ঞানী, দার্শনিক ও ধর্ম তত্ত্ববিদরা বহুধা বিভক্ত হয়ে বিভিন্ন তথ্য হাজির করেছেন। বাইবেলের তথ্য অনুযায়ী, আদম (আ.) পৃথিবীতে এসেছিলেন প্রায় ৬ হাজার বছর আগে। ইহুদিদের ধর্মগ্রন্থ অনুযায়ী এরূপ অভিমত পাওয়া যায়। অন্যকিছু প্রাচীন তথ্যানুযায়ী এ সময়টা ৬ হাজার বছরের বেশি বলে উল্লেখ হলেও, তা কোনো ভাবেই ১০ হাজার বছরের বেশি নয়। পুরাকথা ও ধর্মগ্রন্থে আদম নামে আদি পুরুষটি আকারে-প্রকারে ভিন্নতা থাকলেও মূলত আমাদের মতোই তিনি আধুনিক মানুষ ছিলেন। আধুনিক বিজ্ঞানের তথ্যানুসারে, আমরা পৃথিবীতে মানুষের আবির্ভাবের মোটামুটি একটা সময়কাল পাচ্ছি বটে। কিন্তু এতেও কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এক নির্দিষ্ট সময়ের আগে এ পৃথিবীতে কর্মক্ষম ও বুদ্ধিবৃত্তি সম্পন্ন মানুষ বা অনুরূপ কোনো প্রাণীর অস্তিত্ব লাখ লাখ বছর আছে দৃশ্যমান ছিল। আধুনিক এ হিসাবের ভিত্তি হচ্ছে প্রাগৈতিহাসিক মানব জাতির অস্তিত্ব। অতি সম্প্রতি পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে ‘ক্র-মাগনাম ম্যান’ বলে পরিচিত, এমন মানুষ প্রজাতির অস্তিত্বের প্রমাণ আবিষ্কৃত হয়েছে। ফসিল গবেষণার মাধ্যমে জানা যায়, আদি মানব হোমোর আবার গোত্র বিভাগ ছিল। ক্রম বিবর্তনে কোনো গোত্রের আবির্ভাব ঘটেছে আগে কোনোটার পরে। কোনো কোনো গোত্র আগেই বিলুপ্ত হয়েছে, কেউ টিকেছে নিকট অতীত পর্যন্ত। এ বিবর্তনের পথে ‘হোমো স্যাপিয়েন্স’ পূর্ব পুরুষ মানুষের অস্তিত্ব ছিল ১ লাখ বছর আগে। জীবাশ্ম-নৃতাত্ত্বি¡ক অনুসন্ধান থেকে জানা যায়, প্রায় ৩ লাখ বছর আগে ‘স্যাপিয়েন্স’ মানবের সমসাময়িককালে ভিন্ন গোত্রের ‘নিয়ানডার্থাল’ মানবের আবির্ভাব ঘটেছিল। তাদের বিলুপ্তির পর আমরা ছাড়া হোমো গোত্রের আর কেউ অবশিষ্ট থাকেনি। ফসিলের আকৃতিগত বৈশিষ্ট্য, এক্সরে, আইটোটপ বিশ্লেষণ প্রভৃতি কার্যকরী ভূমিকা রাখছে আধুনিক নৃবিজ্ঞান গবেষণার ক্ষেত্রে। সম্প্রতি সায়েন্স সাময়িকীর একটি নিবন্ধে প্রকাশিত, ১৮ লাখ বছরের পুরনো একটি খুলির ওপর গবেষণা চালিয়ে বিজ্ঞানীরা বলছেন, মানুষের পূর্বসূরী আদি প্রজাতি (হোমিনিড) মূলত একটিই ছিল। আদিবাসীরা পৃথিবীর আদি মানব! এ ধারণার পক্ষেও কিছু বিজ্ঞানী অভিমত দিয়েছেন। পৃথিবীর বিভিন্ন ভূখ-ে প্রথম যে মানবভূমি গড়ে ওঠে, তারা ছিল সে অঞ্চলের প্রথম নাগরিক। সেজন্য ইংরেজিতে আদিবাসীদের অপর নাম ‘দ্য ফাস্ট পিপল’। বৃহত্তর আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, বৃহত্তর আফ্রিকা, ভারত, চীনসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ, এমনকি বাংলাদেশেও আদিবাসীদের অস্তিত্ব এখনও টিকে আছে। বাংলাদেশ সরকারের মতে, ‘বাংলাদেশে কোনো আদিবাসী জনগোষ্ঠী নেই।’ যারা আছেন তারা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী!Click this link
বিষয়: বিবিধ
২১৫৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন