আসমানী তিন ধর্মে হাওয়া (আঃ)।ইহুদী আলেমের মতে, তার বেহেশত থেকে বের হওয়ার কারণে মহিলাদের ৯টা অভিশাপ দেয়া হয়েছে।
লিখেছেন লিখেছেন েনেসাঁ ১৪ ডিসেম্বর, ২০১৩, ০৩:৩৭:৩৭ দুপুর
তিনটি ধর্ম একটি সত্যের ওপর একমত, তা হলো- আল্লাহ রাব্বুল আলামিন পুরুষ ও নারীকে সৃষ্টি করেছেন আর তিনি সারা পৃথিবীর সৃষ্টিকর্তা। ধর্মগুলোর মধ্যে যতসব বৈপরীত্য হয়েছে সবই প্রথম মানুষ আদম ও হাওয়া (আ.) এর সৃষ্টির পর। ইহুদি ও খ্রিস্টানদের বিশ্বাস হচ্ছে, আল্লাহ তায়ালা আদম ও হাওয়া (আ.) কে নিষিদ্ধ গাছের ফল খেতে নিষেধ করেছিলেন। কিন্তু সাপ হাওয়া (আ.) কে নিষিদ্ধ গাছের ফল খাওয়ার প্ররোচনা দিয়েছে। আর হাওয়া আদম (আ.) কে তা খেতে প্ররোচনা দিয়েছেন। আল্লাহ তায়ালা যখন আদম (আ.) কে অপরাধের জন্য দোষারোপ করেছেন তখন আদম (আ.) তার সব দোষ হাওয়াকে দিয়ে বলেছেন- ‘অতঃপর আদম (আ.) বললেন, ওই মহিলা আমাকে দিয়েছে তাই আমি তা খেয়েছি।’ (জেনেসিস : ৩/১২)।
স্রষ্টা মহিলাদের সম্পর্কে বললেন, ‘আমি তোমাদের অনেক কষ্টের সম্মুখীন করব। সন্তান প্রসবের সময় ব্যথা পাবে; আর তোমার সব মনোনিবেশ হবে তোমার স্বামীর দিকে। যে তোমার ওপর কর্তৃত্ব করবে। আর তিনি আদম (আ.) কে বললেন- তুমি তোমার স্ত্রীর কথা শুনে আমার নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে নিষিদ্ধ গাছের ফল খেয়েছ। যার সম্পর্কে আমি বলেছিলাম, পৃথিবীর এ অভিশপ্ত গাছ থেকে ভক্ষণ কর না। এর কারণে দুঃখ-কষ্ট তোমার জীবনের দিনগুলোকে খেয়ে ফেলবে। (জেনেসিস : ৩/১৬-১৭)।
অপরদিকে সৃষ্টির শুরুর ঘটনাবলি কোরআন শরিফের বিভিন্ন স্থানে আলোচিত হয়েছে। যেমন আল্লাহ বলেন, ‘হে আদম! তুমি এবং তোমার স্ত্রী জান্নাতে প্রবেশ কর। অতঃপর সেখান থেকে যা ইচ্ছা খাও, তবে ওই বৃক্ষের পাশে যেয় না। তাহলে তোমরা গুনাহগার হয়ে যাবে। অতঃপর শয়তান উভয়কে প্ররোচিত করল, যাতে তাদের গোপন অঙ্গগুলো প্রকাশিত হয়। সে বললÑ তোমরা উভয়ে ফেরেশতা কিংবা চিরকাল জান্নাতে বসবাসকারী হয়ে যাবে। (সূরা আরাফ : ১৯-২৩)। উপরোক্ত দুটি ঘটনার দিকে যদি আমরা দৃষ্টি নিবদ্ধ করি তাহলে আমরা অনেক মৌলিক পার্থক্য দেখতে পাব। কোরআন শরিফ বাইবেলের বিপরীত, যেখানে দোষারোপ করা হয়েছে আদম ও হাওয়া (আ.) উভয়কেই। কোরআন শরিফের কোথাও বলা হয়নি যে, হাওয়া আদমকে গাছ থেকে ফল খেতে প্ররোচিত করেছেন বা তিনি আদম (আ.) এর আগেই তা খেয়েছেন। সুতরাং কোরআন অনুযায়ী হাওয়া আদম (আ.) কে প্রতারণা কিংবা বিপথে পরিচালিত করেননি। আর গর্ভধারণের যন্ত্রণা মায়েদের ওপর আল্লাহ তায়ালার শাস্তি নয়। কোরআন শরিফে উল্লিখিত বর্ণনানুযায়ী আল্লাহ তায়ালা কারও অপরাধের কারণে অন্যকে শাস্তি দেন না। অতএব আদম ও হাওয়া উভয়েই সমান অপরাধ করে আল্লাহ তায়ালার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেছিলেন আর আল্লাহ তায়ালা তাদের ক্ষমা করে দিয়েছেন। হাওয়া (আ.) এর অপরাধের উত্তরাধিকার বাইবেলে বর্ণিত ‘হাওয়া (আ.) হজরত আদম (আ.) কে পথভ্রষ্ট করেছিলেন’ বাক্যটি ইহুদি ও খ্রিস্টান ধর্মবিশ্বাসে নারী জাতিকে নেতিবাচক হিসেবে উপস্থাপন করেছে। ধারণা করা হয় যে, নারী জাতি উত্তরাধিকার সূত্রে তাদের আদিমাতা হাওয়া এর অপরাধের প্রায়শ্চিত্ত ভোগ করে থাকে। অতএব নারীদের ওপর নির্ভর করা যাবে না এবং তারা সৎচরিত্রবান নয়। এছাড়াও বিশ্বাস করা হয় যে, নারী জাতির অপবিত্র হওয়া, গর্ভধারণ করা ও সন্তান প্রসব করা এগুলো হাওয়া (আ.) এর অপরাধের প্রায়শ্চিত্ত হিসেবে স্থায়ী শাস্তি। এ জাতীয় ধারণা ভিত্তিহীন। নারীদের প্রতি নেতিবাচক আচরণ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আমাদের ইহুদি ও খ্রিস্টানদের গুরুত্বপূর্ণ বইয়ের দিকে মনোনিবেশ করা আবশ্যক।
প্রথমে বাইবেলের ‘পুরাতন নিয়ম’ (ড়ষফ ঃবংঃধসবহঃ) এর কথায় আসা যাক। আমরা এর কারণ খুঁজতে গিয়ে দেখতে পাই যে, ‘মহিলারা মৃত্যুর চেয়েও বেশি তিক্ত। সে হচ্ছে ফাঁদের মতো, তার অন্তর ফিতার মতো এবং হাতগুলো বন্ধন। নেককার ব্যক্তি তাদের থেকে মুক্ত থাকবে। পক্ষান্তরে বদকারদের তাদের কারণে পাকড়াও করা হবে।’ দেখুন! আমি এটাই পেয়েছি।
‘এক এক করে আমার মনের প্রশ্নের সমাধান খুঁজে দেখেছি। কিন্তু আমি তার জবাব খুঁজে পাইনি। হাজার পুরুষের মধ্যে একজনকে এ রকম পেয়েছি। কিন্তু হাজারে একজন মহিলাকেও এ রকম পাইনি।’ ক্যাথলিক বাইবেলে আছে- ‘এমন কোনো পাপ নেই যাকে নারীর পাপের সঙ্গে তুলনা করা যায়। প্রত্যেক পাপের পেছনে আছে কোনো না কোনো মহিলা আর মহিলাদের কারণেই আমরা সবাই মরে যাব।’ (এক্সিলেসিয়াস্টিকাস : ২৫/১৯, ২৪)।
এক ইহুদি আলেম প্রচার করেছেন, বেহেশত থেকে বের হওয়ার কারণে মহিলাদের ৯টা অভিশাপ দেয়া হয়েছে। ‘মহিলাদের উপরে মৃত্যুর আগে ৯টি অভিশাপ রয়েছে। সেগুলো হলোঃ
* অপবিত্র হওয়া
* কুমারিত্বের রক্ত
* গর্ভধারণের কষ্ট
* সন্তান প্রতিপালন ও সন্তান প্রসবের কষ্ট
* মাথা ঢেকে রাখার বিধান, যেন সে শোক পালন করছে
* তাদের কান ছিদ্র করতে হয়
* তাদের সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য নয়
এগুলোর পরে রয়েছে মৃত্যু। (Leonard j. Swindler, women in Judaism : the status of women in formative Judaism (Metuchen, N.J : Scarecrow press, 1976) P.115).
এখনও অর্থোডক্স ইহুদি পুরুষরা তাদের প্রার্থনায় বলে থাকে- আমরা ঈশ্বরের প্রশংসা করি এ জন্য যে, ঈশ্বর আমাদের নারী করে দুনিয়ায় পাঠাননি। আর নারীরা বলে- আমরা আল্লাহ তায়ালার প্রশংসা করি এ জন্য যে, তিনি যেমন খুশি তেমনি করে আমাদের সৃষ্টি করেছেন। ইহুদিদের গ্রন্থে আরেকটি প্রার্থনার উল্লেখ পাওয়া যায় তা হলো- সব প্রশংসা আল্লাহর, যিনি আমাকে মূর্তিপূজারি করে সৃষ্টি করেননি। প্রশংসা আল্লাহর, যিনি আমাদের নারী হিসেবে সৃষ্টি করেননি আর প্রশংসা সে আল্লাহর যিনি আমাদের মূর্খ করে সৃষ্টি করেননি।’ (Thena kendath, “Memories of an orthodox youth” in Susannah heschel, ed. on being a Jewish feminist (New York : Schocken books, 1983), P-96-97).
নারীদের প্রতি এ নেতিবাচক ধারণার কুপ্রভাব ইহুদি ধর্মের চেয়ে খ্রিস্টান ধর্মে বেশি প্রকট আকার ধারণ করেছে। হাওয়া (আ.) এর অপরাধের ব্যাপারটা খ্রিস্টান ধর্ম বিশ্বাসে বড় ধরনের প্রভাব ফেলছে। ঈসা (আ.) আল্লাহর বিধানের সঙ্গে হাওয়া (আ.) এর নাফরমানির ফলাফল। তিনি প্রথম নাফরমানি করেছেন এবং আদম (আ.) কেও তা করার প্ররোচনা দিয়েছেন। ফলে আল্লাহ তায়ালা তাদের বেহেশত থেকে দুনিয়ায় নামিয়ে দিয়েছেন এবং তারা অভিশপ্ত হয়েছে। আল্লাহ তাদের এ অপরাধ ক্ষমা করেননি; বরং তা সব মানুষের কাছে স্থানান্তরিত হয়, প্রত্যেকেই এ গুনাহের বোঝা নিয়ে দুনিয়ায় আসে। এসব মানুষের ওই অপরাধের প্রায়শ্চিত্ত হিসেবে ঈসা (আ.) কে মৃত্যুদ- দেয়া হয়েছে। (খ্রিস্টানদের ধারণা অনুযায়ী ঈসা (আ.) মৃত্যুবরণ করেছেন। কিন্তু ঈসা (আ.) কে জীবিত উঠিয়ে নেয়া হয়েছে- অনুবাদক। তাকে সৃষ্টার পুত্র হিসেবে গণ্য করা হয়। তাকে ক্রুশবিদ্ধ করে মৃত্যুদ- দেয়া হয়েছে। এসব কারণে হাওয়া (আ.) তার নিজের, স্বামীর ও সব মানুষের প্রথম পাপের জন্য দায়ী এমনকি ঈসা (আ.) এর ক্রুশবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করার জন্যও দায়ী। অন্য কথায় বলতে গেলে সব মানুষের বেহেশত থেকে দুনিয়ায় নেমে আসার কারণ হচ্ছে শুধু একজন নারী। (Rosemary R. Ruether, “Christianity”, in Arvind Sharma, ed, Women in World Religions (Albany: State University of New York Press, 1987) P. 209).
বিষয়: বিবিধ
২৩৫১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন