আমার-৪টি-প্রশ্নের-জবাব-দিন-কাদের মোল্লার ছেলে জামিল

লিখেছেন লিখেছেন েনেসাঁ ১২ ডিসেম্বর, ২০১৩, ০৫:২২:০৮ বিকাল



মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি হিসেবে কারাগারে রয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লা। তবে তার ছেলে এখনো মানতে নারাজ তার বাবা যুদ্ধাপরাধী ছিলেন। এমনকী মুক্তিযুদ্ধের সময় নৃশংসতার জন্য ‘মিরপুরের কসাই’ হিসেবে কাদের মোল্লা যে পরিচিত পেয়েছিলেন সেটাও প্রত্যাখান করলেন কাদের মোল্লার বড় ছেলে হাসান জামিল। বরং উল্টো ৪টি প্রশ্ন তুলেছেন হাসান জামিল। প্রথম প্রশ্ন ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি (ঘাদানিক) নিয়ে।

* প্রথম প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমার বাবা এতো বড় যুদ্ধাপরাধী এটাতো ঘাদানিক জানতো। জামায়াতের সঙ্গে আওয়ামী লীগ যখন জোটবদ্ধ হয়ে আন্দোলন করেছে তখন আমার বাবা কাদের মোল্লা লিয়াজো কমিটির সদস্য ছিলেন। ৯৬ সালে তৎকালীন সরকার আমার বাবা এবং আওয়ামী লীগ নেতা তোফায়েল আহমেদকে গ্রেফতারের চেষ্টা করেছে। তখন শেখ হাসিনা আমার বাবা ও তোফায়েল আহমেদকে আত্মগোপনে থাকার নির্দেশ দিলে তারা একসঙ্গেই ছিলেন। বাবা যদি এতো বড় যুদ্ধাপরাধী হয় তখন কেন আওয়ামী লীগ চুপ ছিলো। তোফায়েল সাহেব কেন তখন সংবাদ সম্মেলন করে আপত্তি জানালেন না। তখন কোথায় ছিল ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি? তারা কেন তখন সংবাদ সম্মেলন করে বলেন নাই কাদের মোল্লা যুদ্ধাপরাধী।?’

* ২য় প্রশ্ন করেন, ‘তিনি (কাদের মোল্লা) যদি যুদ্ধাপরাধী কিংবা হত্যাকারী হন তবে ২০০৭ সালে তার বিরুদ্ধে মামলার আগ পর্যন্ত কোন মামলা বা কোনো জিডি (সাধারণ ডায়েরি) কেন নেই?

* তৃতীয় প্রশ্নে হাসান জামিল বলেন, ‘১৯৭৮ সাল পর্যন্ত কাদের মোল্লা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইন্টারন্যাশনাল রিলেশনশিপ (আইআর) বিষয়ে স্নাতক করেছেন। তিনি যদি যুদ্ধাপরাধী হয়ে থাকেন দেশ স্বাধীন হবার পরও দেশের সর্বোচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়ার সুযোগ পেলেন কিভাবে ?

* হাসান জামিলের ৪র্থ প্রশ্ন, ‘তৎকালীন রাইফেলস পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজে ( বর্তমান বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ পাবলিক কলেজ) সিনিয়র শিক্ষক ছিলেন, পরে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ছিলেন। তিনি উদয়ন স্কুলেও শিক্ষকতাও করেছেন। এতো বড় যুদ্ধাপরাধী হলে কিভাবে তিনি এই সুযোগ পেলেন? কেন তাকে তখন বরখাস্ত করা হলো না ? আমার বাবা সাংবাদিক ইউনিয়নে পরপর দুবার নির্বাচিত প্রতিনিধি ছিলেন। এত বড় যুদ্ধাপরাধীকে কেন সাংবাদিকরা ভোট দিলেন? কেন সেই সময়কার সাংবাদিকরা সেই নির্বাচন প্রত্যাখান করলেন?’

এই বিচার বিরোধী দলের নেতাকে দমন করতেই উল্লেখ করেন জামায়াত নেতা কাদের মোল্লার ছেলে হাসান জামিল। রাজনৈতিক উদ্দেশে এই বিচার চলছে উল্লেখ করে জামিল বলেন, ‘বাবা এখন শুধুমাত্র আওয়ামী বিরোধী রাজনীতি করার জন্য এবং ইসলামী রাজনীতিতে সম্পৃক্ত থাকায় এ হত্যাকাণ্ড হচ্ছে।’

জামায়াত নেতা কাদের মোল্লার ছেলে নিজের রাজনীতির প্রতি অনীহা প্রকাশ করে বলেন, ‘আমি রাজনীতি পছন্দ করি না। কখনো রাজনীতি করবো না।’

কাদের মোল্লার ফাঁসি নিয়ে মোটেও চিন্তিত নন তার পরিবার। আমার এতে বিচলিত নই উল্লেখ করে জামিল বলেন, ‘আমাদের পরিবার মানসিকভাবে শক্ত আছে। মঙ্গলবার তো আমরা শেষ দেখা করেই এসেছিলাম। তবে আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলে দেখা করার চেষ্টা করব।’

জাতিসংঘ, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, ব্রিটিশ পার্লামেন্টারী হিউম্যান রাইটস গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান লর্ড অ্যাভে বুরি, লর্ড কারলাইল, ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সদস্য গ্রাহাম এলেন এমপি, এশিয়ান হিউম্যান রাইটস্ কমিশন জামায়াত নেতা আব্দুল কাদের মোল্লার মৃত্যু স্থগিতের আহ্বান জানিয়েছে।

জামায়াত বিচার বাধাগ্রস্থ করতে চাইছে, মধ্যপ্রাচ্য বাংলাদেশে চাপ দিচ্ছে এমন অভিযোগ নিয়ে আপত্তি তুলেন কাদের মোল্লার ছেলে জামিল।

জামিল বলেন, ‘মধ্যপ্রাচ্য কোথায় চাপ দিচ্ছে? সৌদি আরব না অন্য কোন আরব রাষ্ট্র কি বলেছে কাদের মোল্লার ফাঁসি হলে তাদের দেশে বাংলাদেশের ভিসা বন্ধ করবে? ওআইসি কি বলেছে ইসলামি নেতা কাদের মোল্লার ফাঁসি হলে বাংলাদেশের সদস্য পদ বাতিল হবে। কেউই কিছু বলেন নাই। বাংলাদশের মধ্যপ্রাচের দেশে অনেক নির্ভরতা আছে কিন্তু তারা কিছুই করেন নাই।’

জামিল আরো বলেন, ‘আমাদের আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক, তাজুল ইসলামসহ অন্যরা দেশের বাইরে অনেক মানবাধিকার সংগঠন, ইসলামী নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছেন কিন্তু কেউ কিছুই করেনি। আমাদের আইনজীবীরা সব সময় সর্বাত্মক সহায়তা করেছেন, তাদের কাছে আমরা কৃতজ্ঞ। দলীয় ভাবেই আমার বাবার মামলা পরিচালনার খরচ চালিয়েছে জামায়াত। তারা যদি সহায়তা না করতো তবে আমাদের পক্ষে কিছুই করা সম্ভব হতো না। এখনো বাবা দলের সঙ্গে আছেন, তাই দল থেকে কিছু আর্থিক সহায়তাও আমরা পাই। তা না হলে আমাদের পরিবারের জন্য অনেক বেশি কস্টের সময় যেত।’

গত মঙ্গলবার কারা কর্তৃপক্ষের জরুরী চিঠি পাওয়ার পর রাত ৮ টায় আব্দুল কাদের মোল্লার পরিবারের সদস্যরা তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যান। দেখা হবার পর কাদের মোল্লার সঙ্গে কি কথা হয়েছে এ প্রসঙ্গে জামিল বলেন, ‘আমার বাবা জানিয়েছেন তিনি জানতেন না আমাদের কারাগারে ডাকা হয়েছে, তার ফাঁসি হবে। তখন পর্যন্ত বাবার শারিরীক পরীক্ষা ও আনুষ্ঠানিকতাও সম্পন্ন করা হয়নি। আমাদের সঙ্গে সাক্ষাতের পর তিনি জেনেছেন কারা কর্তৃপক্ষ আমাদের সাক্ষাতের জন্য ডেকে এনেছে।’

বাবা তখন আমাদের বলেন, ‘আমি তোমাদের অভিভাবক ছিলাম। এ সরকার যদি আমাকে অন্যায়ভাবে হত্যা করে, তাহলে সেটা হবে আমার শাহাদাতের মৃত্যু। আমার শাহাদাতের পর মহান রাব্বুল আলামীন তোমাদের অভিভাবক হবেন। তিনিই উত্তম অভিভাবক। সুতরাং তোমাদের দুশ্চিন্তার কোন কারণ নেই। আমি সম্পূর্ণ নির্দোষ। শুধুমাত্র ইসলামী আন্দোলন করার অপরাধেই আমাকে হত্যা করা হচ্ছে। আমি অন্যায়ের কাছে মাথা নত করিনি, কখনো করবো না। দুনিয়ার কোন কর্তৃপক্ষের নিকট প্রাণ ভিক্ষা চাওয়ার প্রশ্ন্ই আসে না। জীবনের মালিক আল্লাহ্। কিভাবে আমার মৃত্যু হবে তা আল্লাহই নির্ধারণ করবেন। কোন ব্যক্তির সিদ্ধান্তে আমার মৃত্যু কার্যকর হবে না। আল্লাহর ফায়সালা অনুযায়ীই আমার মৃত্যুর সময় ও তা কার্যকর হবে।’

জামিল জানান, বাবা এতটুকু বিচলিত ছিলেন না। তিনি আমাদের উদ্দেশে বলেন, তোমরা ধৈর্য্যের পরিচয় দিবে। একমাত্র ধৈর্য্য ও সহনশীলতার মাধ্যমেই আল্লাহ তায়ালার ঘোষিত পুরস্কার পাওয়া সম্ভব। দুনিয়া নয়, আখেরাতের মুক্তি আমার কাম্য। আমি দেশবাসীর কাছে আমার শাহাদত কবুলিয়াতের জন্য দোয়া চাই।

প্রসঙ্গত গত ৫ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কাদের মোল্লাকে দোষী সাব্যস্ত করে যাবজ্জীবন সাজার রায় দেয়। এই রায়ের প্রতিক্রিয়ায় শাহবাগে গড়ে ওঠে যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবি নিয়ে আন্দোলন।

তারপর আপিলের রায়ে সর্বোচ্চ আদালত জামায়াত নেতা কাদের মোল্লার সর্বোচ্চ শাস্তি দেয়। গত বৃহস্পতিবার আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর রোববার ট্রাইব্যুনাল মৃত্যু পরোয়ানা জারি করে। এরপর গত রোববার এ রায়ের অনুলিপি সংশ্লিষ্ট ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়। রায়ের কপি পাওয়ার কিছুক্ষনের মধ্যেই ট্রাইব্যুনাল কাদের মোল্লার মৃত্যু পরোয়ানা জারি করেন এবং এ পরোয়ানার অনুলিপি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার কর্তৃপক্ষের কাছেও পাঠানো হয়।

বিষয়: বিবিধ

১৫৭৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File