ইস্তিঞ্জা ও ঢিলা কুলুখের সুন্নতী তরীকাঃ

লিখেছেন লিখেছেন েনেসাঁ ০৫ ডিসেম্বর, ২০১৩, ০২:৪২:৩১ দুপুর



ইস্তিঞ্জার পর নাপাকী দুইভাবে দূর করা যেতে পারে -

১. পানি দ্বারা।

২. ঢিলা-কুলুখ দ্বারা।

পানি দ্বারা নাপাকী দূর করলে আর ঢিলা বা কুলুখ নেওয়ার প্রয়োজন নেই।

এটা নারী ও পুরষ, উভয়ের জন্য। অনেকে মনে করেন, পুরুষের পবিত্রতা অর্জনের শুধুমাত্র ঢিলা কুলুখ বা পানি যথেষ্ঠ না, প্রথমে ঢিলা কুলুখ নিয়ে পরে পানি নিতে হবে। এটা ভুল ধারণা। বরং, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর সময়ে কুবা মসজিদের কিছু মুসল্লী ঢিলা-কুলুখ না নিয়ে সরাসরি পানি দিয়ে পবিত্রতা অর্জন করতো আর আল্লাহ এটাকে পছন্দ করেন এজন্য তাদের প্রশংসা করে কুরআনে আয়াত নাযিল করেন।

আবু হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (সাঃ) বলেন:

فيه رجال يحبون أن يتطهروا

“সেখানে এমন কিছু লোক আছে যারা নিজেদেরকে পূত-পবিত্র রাখতে পছন্দ করে।”

সূরা তাওবাঃ ১০৮।

এই আয়াতটি কূবাবাসীদের উদ্দেশ্যে নাযিল হয়েছে। কারণ তারা শুধু পানি দ্বারা ইস্তেন্জা করত। (তিরমিযী, আবু দাউদ ও ইবনে মাজাহ, হাদীছ সহীহ)

পবিত্রতা অর্জনের জন্য ইস্তিঞ্জার পরে তাড়াহুড়া করে উঠে না পড়ে, একটু সময় অপেক্ষা করতে হবে, যাতে করে নিশ্চিত হওয়া যায় পেশাব আর বের হবেনা। তারপর পানি অথবা ঢিলা-কুলুখ (অথবা টিস্যু) দিয়ে নাপাকী পরিষ্কার করতে হবে।

শুধু পানি দিয়ে নাপাকী দূর করা উত্তম। তবে পানি ব্যবহার না করে শুধু টিস্যু বা ঢিলা কুলুখ ব্যবহার করলেও হয়ে যাবে।

কিন্তু এটা নিয়ে বাড়াবাড়ি করা যাবেনা বা শয়তানের ওসওয়াসাকে অন্তরে স্থান দেওয়া যাবেনা। আপনি এটা নিয়ে দুঃশিচন্তা করে আপনার জীবন অতিষ্ট করে তুলবেন না আবার পেশাব থেকে বেঁচে থাকতে অসতর্কও হবেন না।

আপনার যতটুকু সাধ্য আছে সে অনুযায়ী চেষ্টা করবেন নাপাকী থেকে মুক্ত থাকার জন্য। কিন্তু রোগের কারণে সেটা সম্ভব না হলে, আল্লাহ কাউকে তার সাধ্যের বাইরে কোনো বোঝা চাপিয়ে দেন না।

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) কুলুখ ও পানি একত্রে ব্যবহার করেছেন মর্মে প্রমাণ পাওয়া যায় না। তিনি কখনো কেবল পানি ব্যবহার করেছেন। (মুত্তাফাক্ব আলাইহ, আবুদাঊদ, মিশকাত হা/৩৪২, ৩৬০ ‘টয়লেটের শিষ্টাচার’ অনুচ্ছেদ) কখনো বেজোড় সংখ্যক কুলুখ ব্যবহার করেছেন (বুখারী হা/১৫৫-৫৬ ‘ওযূ’ অধ্যায় ‘কুলুখ’ ব্যবহার অনুচ্ছেদ ২০, ২১). ওযূ শেষে তিনি কিছু পানি লজ্জাস্থান বরাবর ছিটিয়ে দিতেন (আহমাদ, আবুদাঊদ, মিশকাত হা/৩৬১, ৩৬৬). এটি ছিল সন্দেহ দূর করার জন্য। এর চেয়ে বেশী কিছু করা বাড়াবাড়ি মাত্র।

উল্লেখ্য, ঢিলা ব্যবহার করার পর পানি নেওয়ার যে বর্ণনা প্রচলিত আছে তা ভিত্তিহীন (ইরওয়াউল গালীল হা/৪২; সিলসিলা যঈফাহ হা/১০৩১)।

ইসলাম আমাদেরকে নির্লজ্জ-বেহায়া হতে শিক্ষা দেয়নাঃ

আমি যখন ছোটো ছিলাম তখন নামায পড়া আমার কাছে খুব কঠিন একটা কাজ মনে হতো। কারণ আমার উস্তাদেরা শিক্ষা দিতো ছেলেদের ইস্তিঞ্জার পরে ঢিলা-কুলুখ নিয়ে ৪০ কদম হাটতে হবে (নাউযুবিল্লাহ). বিষয়টা শুনে ঘৃণায় আমার গা কেমন জানি রি রি করে উঠতো। আবার তারা বলতো এটা করা ওয়াজিব, না করলে পবিত্রতা অর্জন হবেনা, আর পবিত্রতা ছাড়া নামাযও হবেনা। তাই ১০ বছর বয়সে আমার উপরে নামায ফরয হওয়ার আগে থেকেই আমার দুঃশ্চিন্তা হতো, কিভাবে আমি এই (জঘন্য) অভ্যাসটা গড়ে তুলবো।

আমাদের দেশের মসজিদগুলোর বাথরুমের পাশ দিয়ে গেলে ভয়ে ভয়ে থাকতে হয়, কখন আপনি সভ্যতা বিরোধী এই কাজের সম্মুখে পড়ে যান। অথচ, যে করছে সে দিব্যি এগুলো নেকীর কাজ মনে করে করে যাচ্ছে, কোনো বিকার নেই (লা হা'উলা ওয়াল কুওয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ)।

যাই হোক, আলহামদুলিল্লাহ! আল্লাহ আমাকে রাসুল (সাঃ) এর সুন্নাহ জানার সুযোগ করে দিয়েছেন। এই জঘন্য কাজ রাসুলুল্লাহ (সাঃ) একবারও করেন নি, এমনকি কোনো সাহাবী, তাবেয়ী ও তাবে তাবেয়ী কেউই করেন নি। এটা স্রেফ মূর্খ মুসলমানের ফতোয়া।

দেশের বিশাল একটা জনগোষ্ঠী এই নিকৃষ্ট বেদাতের সাথে জড়িত। নিজে জানুন, শেয়ার করে অন্যকে জানান। এইরকম নিকৃষ্ট শিরক ও বেদাতের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলার চেষ্টা করুন।

আল্লাহ আমাদেরকে তাঁর হাবীব (সাঃ) এর সুন্নাতের জন্য কাজ করার তোওফিক দান করুন।

লজ্জাস্থান ধরে রাস্তায় হাটাহাটি করা বেদাতঃ

যে কাজ রাসুলুল্লাহ (সাঃ) নিজে করেন নি, তাঁর সাহাবীদেরকে করতে বলেন নি অথবা কোনো সাহাবী, তাবেয়ী বা তাবে তাবেয়ী করেন নি, সেই কাজটা হলো বেদাত।

রাসুলুল্লাহ (সাঃ) ইস্তিঞ্জার পরে ৪০ কদম হাটেন নি, তিনি তাঁর সাহাবীদের এমনটা করতে বলেন নি, কোনো একজন সাহাবী এমনটা করেন নি। এমনকি যাদের পেশাব ফোটায় ফোটায় পড়তো তারাও এইরকম বেহায়াপনা করেন নি।

এখন কেউ যদি এসে বলে সেটা করতে হবে, এটাই হলো বেদাত – ধর্মের নামে নতুন কাজ যা রাসুলুল্লাহ (সাঃ) করেন নি।

আর এই কাজটা দেখতে এতোটাই দৃষ্টিকটু, লজ্জা শরমের মাথা না খেয়ে কেউই এই নিকৃষ্ট বেদাতী কাজটা করতে পারবেনা।

তারপরেও বেদাত করতে করতে যাদের ঘাড় ত্যাড়া হয়ে গেছ, দয়া করে বলবেন কুরআনের কোন আয়াতে, কত নাম্বার হাদীসে অথবা কোন সাহাবী এই বেহায়াপনা করেছন। যদি দলীল দিতে পারেন তাহলে, ইন শা’ আল্লাহ আমরা এই বেহায়াপনাকে মেনে নেবো। আর যদি না পারেন তাহলে এইসমস্ত বেহায়াপন ও নোংরামি বাদ দেবেন।

বিষয়: বিবিধ

১৭৭৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File