আগামী সপ্তাহগুলোতে সেনাবাহিনী হস্তক্ষেপ করতে পারে- ফাইনান্সিয়াল টাইমস

লিখেছেন লিখেছেন েনেসাঁ ০৪ ডিসেম্বর, ২০১৩, ১০:০৩:৩০ রাত



দু’টি খবর। একটি ছাপা হয়েছে ভারতের শীর্ষ স্থানীয় দৈনিক দ্য হিন্দুতে। অন্যটি লন্ডনের প্রভাবশালী দৈনিক দ্য ফিনান্সিয়াল টাইমসে। ঢাকা থেকে ভারতের রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত সংবাদ সংস্থা প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়া গতকাল খবর দিয়েছে যে, নির্বাচন থেকে এরশাদের সরে দাঁড়ানোর ফলে ৫ই জানুয়ারির প্রস্তাবিত নির্বাচনের বিশ্বাসযোগ্যতা আরও প্রশ্নের মুখে পড়লো। এরশাদ সরে দাঁড়ানোয় নির্বাচন প্রক্রিয়ায় আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য কোন বড় দল থাকলো না। দ্য হিন্দু এই খবরের শিরোনাম করেছে ‘‘আরও একটি দল নির্বাচন বয়কটের সিদ্ধান্ত নেয়ায় অনিশ্চয়তা গভীরতর হলো।’’

অন্যদিকে লন্ডনের প্রভাবশালী দৈনিক দ্য ফিনান্সিয়াল টাইমস ঢাকা ও দিল্লি ডেটলাইনে একটি সরজমিন রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। ঢাকায় যোসেফ আলচিন ও দিল্লি থেকে ভিক্টর ম্যালেত যৌথভাবে একটি সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের দিকে ইঙ্গিত করেছেন। তারা লিখেছেন যে ‘দুই নেত্রী যদি আগামী সপ্তাহগুলোর মধ্যে কোন সমঝোতায় পৌঁছতে না পারেন, তাহলে বাংলাদেশীদের বিশ্বাস যে, সশস্ত্র বাহিনী হস্তক্ষেপ করতে পারে- আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা ও একটি নতুন নির্বাচনের পথ তৈরি করার জন্য তারা অতীতেও যেমনটা করেছে।’’

গত ২রা ডিসেম্বর প্রকাশিত দ্য ফিনান্সিয়াল টাইমসের ওই প্রতিবেদনটির অবিকল বাংলা তরজমা এখানে দেয়া হলো:

‘‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সমর্থকদের মধ্যে সহিংসতার বৃদ্ধি ঘটেছে। এর কারণে বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী দল আগামী মাসে অনুষ্ঠেয় সাধারণ নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

বাংলাদেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের অনড় অবস্থার কারণে বিএনপি কর্তৃক রাস্তাঘাট অবরোধের ফলে যোগাযোগ ব্যবস্থার বিঘ্ন ঘটেছে। তৈরী পোশাক শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আন্তর্জাতিক মার্কেটে পোশাক রপ্তানি জটিল ও কঠিন হচ্ছে।

জানুয়ারির ৫ তারিখ সাধারণ নির্বাচন। এ উপলক্ষে বেগম জিয়ার নির্দলীয় সরকার গঠনের প্রস্তাব শেখ হাসিনা এবং তার সরকারী দল কর্তৃক প্রত্যাখ্যাত হওয়ার ফল হলো অস্বাভাবিক অবস্থার সৃষ্টি।

নির্বাচন কমিশনের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সরকার দলীয় নেতারা তাদের মনোনয়নপত্র গত সোমবার ৫টার মধ্যে দাখিল করে।

বিএনপি’র ভাইস প্রেসিডেন্ট শমসের মুবিন চৌধুরী এএফপিকে জানিয়েছেন যে, তার দল এবং তাদের সহযোগী ১৭ দল আগামী ৫ তারিখ নির্বাচনে যাচ্ছে না।

স্থানীয় সংবাদ মাধ্যম ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো জানিয়েছে যে, বিএনপি ও তার সহযোগী দলগুলোর গত সপ্তাহের আহূত হরতাল বা অবরোধের কারণে অন্ততপক্ষে ২০ জন মারা গেছেন। আর এসময় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক বিনা কারণে নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার ও তাদের ওপর নির্যাতন চলেছে।

অধিকার নামের স্বাধীন মানবাধিকার সংগঠন গত রোববার জানিয়েছে যে, হরতাল চলাকালীন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক বাছবিচারহীন গুলিবর্ষণেও সাধারণ মানুষ এবং বিরোধী দলের কর্মী মারা গেছে।

অধিকার মনে করে যে, বর্তমান সময়ের চলমান রাজনৈতিক সঙ্কট জরুরি ভিত্তিতে দুই প্রধান দলের সৌহার্দ্যপূর্ণ আলোচনার মাধ্যমে সমাধানে আসা উচিত।

জাতিসংঘের মানবাধিকার হাই কমিশনার নাভিল পিল্লাই গত সপ্তাহে বলেন, প্রধান দুই দলের মধ্যে মতপার্থক্য যা-ই থাকুক না কেন, উভয় পক্ষের রাজনৈতিক নেতাদের ধ্বংসাত্মক মনোভাব পরিবর্তন করা আবশ্যক। এখন সেটাই বাংলাদেশকে একটি বড় সঙ্কটে ফেলে দেবে।

তিনি আরও বলেন, এই সহিংসতা বাংলাদেশের মানুষকে মর্মাহত করে। তাদের বেশির ভাগই সকলের অংশগ্রহণে একটি শান্তিপূর্ণ সাধারণ নির্বাচন প্রত্যাশা করে।

পোশাক শিল্পের বিশ্বব্যাপী চাহিদার ফলে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থা একটি ভাল অবস্থানে এসে দাঁড়িয়েছে। ১৫ কোটি জনবসতিপূর্ণ দেশের একসময় দুর্ভিক্ষ ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর দেশ হিসেবেই চিহ্নিত হতো। কিন্তু তারাই এশিয়ার শিল্প শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হতে চলেছে। যদিও নিরাপত্তা ও মানবাধিকারের দিক থেকে তার রেকর্ড খুবই দুর্বল। গত এপ্রিলে রানা প্লাজা ধসে পড়ার ফলে অন্ততপক্ষে ১,১২৯ জন গার্মেন্টস কর্মী নিহত হয়েছেন।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল এই সপ্তাহে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার ও স্থিতিশীল অবস্থা তৈরি করতে তিন বছরের একটি কর্মসূচির জন্য ১৪ কোটি ডলার বিতরণ করেছে। আইএমএফ বলেছে, স্থিতি ও অর্থনীতি সংস্কারে বিরাট অগ্রগতি নিশ্চিত করেছে।

আইএমএফ-এর উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাউকি শিনোহারা এক বিবৃতিতে বলেন, হরতাল এবং আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠানে অনিশ্চয়তা, প্রবৃদ্ধিতে মন্থরতা এবং গার্মেন্টস সেক্টরে একটি প্রত্যাশিত উচ্চ বিনিয়োগ মূল্য এবং শ্রমিকদের উন্নতি ও নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের খরচ বৃদ্ধিজনিত বিষয়গুলো একটি চ্যালেঞ্জ ডেকে আনবে।

ঢাকায় বিনিয়োগকারী এবং রাজনৈতিক ভাষ্যকারগণ মনে করেন বাংলাদেশের দারিদ্র্য হ্রাস অর্জনের বিষয়টি এখন দুর্নীতির কারণে হুমকিকবলিত হয়ে পড়েছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে রাজনীতিবিদদের বিশেষ করে শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়ার মধ্যকার ব্যক্তিগত শত্রুতা।

দুই নেত্রী যদি আগামী সপ্তাহগুলোর মধ্যে কোন সমঝোতায় পৌঁছতে না পারেন, তাহলে বাংলাদেশীদের বিশ্বাস যে, সশস্ত্র বাহিনী হস্তক্ষেপ করতে পারে- আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা ও একটি নতুন নির্বাচনের পথ তৈরি করার জন্য তারা অতীতেও যেমনটা করেছেন।’Click this link

বিষয়: বিবিধ

১২২৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File