আমাদের হুজুর তো বললেন ধূমপান, তামাক - জর্দা মাকরুহ! কিন্তু আপনারা ইদানীং এগুলো হারাম হারাম করছেন এর কারন কি?

লিখেছেন লিখেছেন েনেসাঁ ০২ ডিসেম্বর, ২০১৩, ০৫:০২:৫৭ বিকাল





আমাদের হুজুর তো বললেন ধূমপান, তামাক - জর্দা মাকরুহ! কিন্তু আপনারা ইদানীং এগুলো হারাম হারাম করছেন এর কারন কি? জারা এগুলোতে আসক্ত তারা মাকরুহ ফতোয়াকে সহজ মনে করে তাদের উপ হারাম ফতোয়া চাপিয়ে দেয়া কি ঠিক হবে?

উত্তর> আসসালামু আলাইকুম। সমস্ত প্রশংসা মহান আল্লাহর। দুরুদ ও সালাম প্রিয় রাসুল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর প্রতি।

কেন ধূমপান ও তামাক কে মাক্রুহ বলা হল?

---------------------------------------------

ধূমপান তামাক এর কারনে মুখে দুর্গন্ধের সৃষ্টি হয় যা পাশের মানুষ, মুসল্লির বা পথচারীদের জন্য কষ্টের কারন হয়।

এর পক্ষে দলিল ছিল- “কখনোও কেউ যদি কাঁচা রসুন বা পেঁয়াজ খায় সে আমার কাছ থেকে,মসজিদ থেকে দূরে থাকবে।” সহিহ বুখারী।

রাসুলুল্লাহ (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কাঁচা পিয়াজ বা কাঁচা রসুন খেয়ে অথবা দুর্গন্ধ নিয় মসজিদে প্রবেশ করতে নিষেধ করেছেন। কেননা বনী আদম যে বিষয়ে কষ্ট অনুভব করে ফিরিশতাগণ তা থেকে কষ্ট অনুভব করেন। হাদীসে এরশাদ হচ্ছে: দুর্গন্ধময় এই দুটি সবজি (কাঁচা পেয়াজ ও কাঁচা রসূন) খেয়ে তোমরা মসজিদে প্রবেশ করা থেকে সাবধান। যদি খেতেই হয় তবে আগুনের সাহায্যে এগুলোর দুর্গন্ধ ধ্বংস করে নিবে। (ত্ববরানী)

কাঁচা পেঁয়াজ রসুনের কারনে মুখে অত্যন্ত বাজে গন্ধ হয় যা মানুষকে কষ্ট দেয়। এই একই কারনে ধূমপান ও তামাক কে মাকরুহ বলা হয়েছে কেননা এগুলো মুখে প্রচন্ড দুর্গন্ধের সৃষ্টি করে যা অধূমপায়ীদের জন্য অসহনীয়।

উপরোক্ত দলিলের ভিত্তিতে কেবল দুর্গন্ধের কারনে ধূমপান তামাক জর্দা ''মাক্রুহ'' হিসেবে ফতোয়া দেয়া হত।

এখন কিভাবে মাক্রুহ থেকে ফতোয়া হারামে উন্নীত হল?

---------------------------------------------------------

"তোমরা তোমাদের নিজেদের হাতে নিজেদের ধ্বংসের মুখে নিক্ষেপ করো না।....." সুরা বাকারাহ ১৯৫।

“সমস্ত নেশাকারী বস্তু মদ আর প্রত্যেক নেশাকারী বস্তু হারাম।” (মুসলিম হা/৩৭৩৩)

“যার অধিক সেবন নেশা নিয়ে আসে তার অল্পও হারাম।” (আবু দাউদ হা/৩১৯৬ তিরমিযী হা/ ১৭৮৮ ইবনু মাজাহ্ হা/ ৩৩৮৪)

আধুনিক গবেষণায় এটা প্রমাণিত যে ধূমপান তামাক ক্যান্সারের অন্যতম কারন। ধূমপান ফুসফুসকে ছিন্ন ভিন্ন করে দেয়।

তামাক অধিক পরিমাণে খেলে মানুষ অজ্ঞান কিংবা পাগল হয়ে যায়, এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে এবং তামাক একটি নেশা জাতীয় দ্রব্য।

যখন আধুনিক গবেষণায় তামাক ও সিগারেটের এরূপ ক্ষতিকর দিক পাওয়া গেল তখন ফতোয়াও পরিবর্তন হয়ে গেল।

এসকল ক্ষতিকর বিষয়ের কারনে ধূমপান, তামাক, জর্দা হারাম সাব্যস্ত হয়ে গেছে।

যে হুজুর এগুলোকে মাকরুহ বলছেন তিনি কি কম বুঝেন?

-----------------------------------------------------------

এটা একটা গুরুত্তপুর্ন প্রশ্ন। উপরের আলোচনা যাচাই করে আপনিই স্বিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন যে এখনও ধূমপানকে মাকরুহ বল আহুজুর কি আসলেই কম বুঝেন না ভাল বুঝেন।

বিভ্রান্তিকারী হুজুররাই ইসলামের জন্য অন্যতম ক্ষতির কারন। এবং অজ্ঞরা নিজের অজ্ঞতা থাকা সত্ত্বেও যখন ফতোয়া দিয়ে বেড়ায় এবং আসল ও সঠিক ফতোয়ার বিরুদ্ধে অবস্থান নেয় তখন অজ্ঞ মানুষরাই বিভ্রান্তির মধ্যে পতিত হয়।

সচেতন আলেম ও সচেতন মুসলিম কখনও বিভ্রান্তির মধ্যে পতিত হয় না।

'তোমরা যদি না জান, তাহ'লে জ্ঞানীদেরকে জিজ্ঞেস কর' - সুরা নাহল ৪৩।

ওইসকল ভ্রান্ত হুজুর অজ্ঞের মতই পুর্বের বিধানে স্থির রয়ে বিভ্রান্ত রয়েছে। পুর্বে মাকরুহ ফতোয়া দেয়া হয়েছিল ''দুর্গন্ধের'' কারনে তখন ক্ষতিকর বিষয়গুলো আবিষ্কৃত হয় নি সে জন্য।

কিন্তু বিজ্ঞ জ্ঞানী আলেমরা সচেতন। তারা এটা জেনেছেন যে ধূমপান তামাক জর্দা শুধু দুর্গন্ধেই সীমাবদ্ধ নয় বরং এগুলো ভয়ংকর ক্ষতিকর ও প্রাণ নাশী।

যার কারনে তাঁরা ফতোয়াকে মাকরুহ থেকে উন্নীত করে ''হারাম'' পর্যায়ে নিয়ে এসেছেন।

অতএব আমাদের সচেতন হতে হবে এবং নিজেদেরও কিছু জানতে হবে। কোন হুজুরেরই অন্ধ অনুসরণ করা যাবে না। একাধিক হুজুরের কাছে প্রশ্ন করে তা যাচাই করে নিতে হবে এবং প্রত্যেক ফতোয়ার পিছনে মূল দলিল কি তা যাচাই করতে হবে। প্রত্যেক ফতোয়ার পিছনেই কুরআন হাদিসের দলিল ইসলামে বাধ্যতামূলক।

আশা করি ধূমপান, তামাক জর্দা বিষয়ে বিভ্রান্তি কাটতে এই লেখাটি অনেকের সহায় হবে।

আর এটা বাস্তবতা কিছু মানুষ বিভ্রান্তিতেই নিমজ্জিত থাকবেই।

জাজাকাল্লাহু খায়ের।

বিষয়: বিবিধ

২৬০৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File