আ:লীগের মনোনয়নে সন্ত্রাসীদের গডফাদার ও বিতর্কিতদের স্থান

লিখেছেন লিখেছেন েনেসাঁ ০১ ডিসেম্বর, ২০১৩, ০৬:০০:৪৬ সন্ধ্যা



খুলনা-৪ আসনে মনোনীত প্রাথী মোস্তফা রশীদ সুজা যিনি নিজ দলেই বিতর্কতী । অভিযোগ আছে তিনি নিজ দলের নেতা কর্মিদের হত্যা, খুলনা বিভাগে তাকে সন্ত্রাসীদের গডফাদার বলা হয়। তিনি নিষিদ্ধ ঘোষিত পূর্ববাংলা কমিউনিষ্ট পার্টি, চরমপন্থীদের লালন পালন করে থাকেন ।দূনীর্তি কারণে বিগত নির্বাচন নির্বাচন করতে পারেন নি। অভিযোগ রয়েছে তার নিজ নির্বাচনি এলাকার চেয়ারম্যান গাজী আব্দুল হালীমের হত্যা র সাথে জড়িত রয়েছেন।

খুলনা-২ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ঠিকাদারি কাজে প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ আছে। মিজানের মালিকানাধীন ইলোরা ট্রেডার্স বর্তমান সরকারের আমলে ৫২ কোটি টাকায় খুলনা বিভাগীয় স্টেডিয়াম নির্মাণের কাজ পায়। ঠিকাদারি কাজের ভাগাভাগি নিয়ে দ্বন্দ্বের একপর্যায়ে ২০০৯ সালের ১১ জুলাই যুবলীগের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি ও খুলনা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক শহিদ ইকবাল বিথার খুন হন। সম্প্রতি বিথার হত্যা মামলার অভিযোগপত্রে মিজানকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।

আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীদের মধ্যে অন্তত ১২ জন ব্যাপকভাবে বিতর্কিত ও সমালোচিত। সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, হত্যা, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, ভূমিদস্যুতা, মাদক চোরাচালান ও আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ আছে তাঁদের বিরুদ্ধে। কেউ কেউ এলাকায় ‘গডফাদার’ হিসেবে পরিচিত।

১২ জনের মধ্যে আটজন বর্তমান সাংসদ। তাঁরা গত পাঁচ বছরে ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন বলে অভিযোগ আছে। সরকারি সুবিধা নিয়ে তাঁরা আর্থিক অনিয়ম করেছেন।

আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীদের মধ্যে শামীম ওসমান, আবদুর রহমান বদি, আমানুর রহমান খান রানা, নূরুন্নবী চৌধুরী শাওন, আব্দুস শহীদ, সোলায়মান জোয়ার্দার সেলুন, মিজানুর রহমান, মতিউর রহমান, আ স ম ফিরোজ, কামাল আহমেদ মজুমদার, আবু রেজা নদভী ও জাহাঙ্গীর আলম নানাভাবে বিতর্কিত ও সমালোচিত।

শামীম ওসমান নারায়ণগঞ্জে সন্ত্রাসের গডফাদার হিসেবে খ্যাত। দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার পরপরই তাঁর লোকজন ব্যবসায়ীদের কাছে চাঁদা দাবি শুরু করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত পাঁচ বছরে শামীম ওসমানের লোকজন পরিবহন চাঁদাবাজি ও টেন্ডারবাজির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। মাস দুয়েক আগে যাত্রী অধিকার সংরক্ষণ ফোরাম নারায়ণগঞ্জে সংবাদ সম্মেলন করে অভিযোগ করে যে শামীম ওসমান ও তাঁর ভাইদের ছত্রচ্ছায়ায় পাঁচ বছরে পরিবহন খাত থেকে ২০০ কোটি টাকা লুটপাট করা হয়েছে। গত পাঁচ বছরে শামীম কত টাকা চাঁদা নিয়েছেন, সংবাদ সম্মেলন করে তার হিসাব দেওয়া হয়।

সর্বশেষ তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যার ঘটনায় ওসমান পরিবারের জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে। একজন আসামির জবানবন্দিতে নাসিম ওসমানের ছেলে আজমেরী ওসমানের নাম এসেছে। ত্বকীর বাবা রফিউর রাব্বির অভিযোগ, নাসিম ও তাঁর ভাই শামীম এবং তাঁদের দুই ছেলে আজমেরী ও অয়ন এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত। নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলীয় সমর্থন পেলেও শামীম ওসমান বিপুল ভোটে হেরে যান সেলিনা হায়াৎ আইভীর কাছে।

আবদুর রহমান বদি টেকনাফের গডফাদার হিসেবে পরিচিত। সাংসদ বদির বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় অভিযোগ, মিয়ানমার থেকে মাদক চোরাচালানের অন্যতম প্রধান পৃষ্ঠপোষক তিনি। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা সরকারের কাছে প্রতিবেদনে জানিয়েছে, বদি ও তাঁর ভাই আবদুল আমিন, আবদুল শুক্কুর, মাওলানা মুজিব, শফিকুর রহমান, ফয়সাল এবং তাঁর প্রধান সহযোগী জাহেদ হোসেন জাকু ইয়াবা চোরাচালানের মূল হোতা।

গত পাঁচ বছর সাংসদ থাকাকালে বদি সরকারি কর্মকর্তা, ঠিকাদার, শিক্ষক, আইনজীবীসহ বিভিন্ন মানুষকে পিটিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নিজ দলের রাজনৈতিক কর্মী রয়েছেন।

সাংসদ নূরুন্নবী চৌধুরী শাওনের বিরুদ্ধে দলীয় কর্মী ইব্রাহিম হত্যার অভিযোগ ছিল। তাঁর বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় অভিযোগ হচ্ছে, চাঁদাবাজি ও টেন্ডারবাজি। গত পাঁচ বছরে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সব টেন্ডার ছিল শাওনের নিয়ন্ত্রণে। তাঁর মতের বাইরে অন্য কেউ ঢাকা সিটি করপোরেশনে কাজ পাননি।

টাঙ্গাইলের সাংসদ আমানুর রহমান খান রানা একাধিক হত্যা মামলার আসামি। পরিবহন চাঁদাবাজি, দখল ও ভূমিদস্যুতা তাঁর মূল কাজ। তিনি টাঙ্গাইল ট্রাক মালিক সমিতিরও নেতা। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার আগে জেলা পুলিশের খাতায় তিনি ছিলেন শীর্ষ সন্ত্রাসী। টাঙ্গাইল শহরে রানা ও তাঁর ভাইদের বিরুদ্ধে কারও কথা বলার সাহস নেই।

ক্যাডারভিত্তিক রাজনীতি, দখলবাজি, উন্নয়নকাজ থেকে কমিশন আদায় এবং নিয়োগ-বাণিজ্যসহ নানা কারণে সাংসদ সোলায়মান হক জোয়ার্দার দলের ভেতরে-বাইরে আলোচিত-সমালোচিত। ঢাকায় দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে মতবিনিময়কালে আলমডাঙ্গা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ তাঁর কর্মকাণ্ডের তীব্র সমালোচনা করেন।

২০১২ সালের এপ্রিলে চুয়াডাঙ্গার একমাত্র বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের জন্য জমি দখল নিয়ে বিতর্ক ওঠে। বিষয়টি শেষ পর্যন্ত আদালতে গড়ায়। সাংসদ সোলায়মান ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান। এ ছাড়া বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে সাংসদ তাঁর অনুসারীদের দিয়ে দরপত্র নিয়ন্ত্রণ করেন। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে লোকবল নিয়োগ নিয়েও তাঁর বিরুদ্ধে বাণিজ্যের অভিযোগ আছে। গত পাঁচ বছরে সাংসদের ঘনিষ্ঠরাই হাট-ঘাট, বিল-বাঁওড় ও উন্নয়নকাজের ইজারা পেয়েছেন। সেলুনের বিরুদ্ধে সাংবাদিক নির্যাতনেরও অভিযোগ আছে।

আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর জাহাঙ্গীর আলম সরকার মুরাদনগরের অঘোষিত সাংসদ ছিলেন। তাঁর কথার বাইরে মুরাদনগরে কোনো কাজ হয় না। জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টির জন্য নিজের লাইসেন্স করা দুটি অস্ত্র গাড়ির সামনে রাখেন। কখনো কখনো ফাঁকা গুলি ছুড়ে প্রভাব দেখান।

অভিযোগ আছে, মুরাদনগরের সব ইউনিয়নের তাঁর অনুগতদের দিয়ে বাহিনী করা হয়েছে। তাঁর ছত্রছায়ায় সেখানে পরিবহন চাঁদাবাজি ও টেন্ডারবাজি হয়েছে।

চট্টগ্রাম-১৬ আসনে বিতর্কিত আবু রেজা নদভীকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। আগে জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে তিনি সম্পৃক্ত ছিলেন বলে অভিযোগ আছে। পরে বিএনপিতে যোগ দিতে গিয়ে ব্যর্থ হয়ে চট্টগ্রাম অঞ্চলের একজন মন্ত্রীর সহযোগিতায় তিনি আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করেন। লোহাগাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সালাহউদ্দিন হিরু প্রথম আলোকে বলেন, জামায়াতের সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় নদভী আওয়ামী লীগে এসেছেন। আগে কখনো আওয়ামী লীগে ছিলেন না। তৃণমূল থেকে নদভীর নাম প্রস্তাবই করা হয়নি।

মৌলভীবাজার-৪ আসন থেকে চারবারের সাংসদ আব্দুস শহীদ এবার সংসদের চিফ হুইপ হয়ে এলাকায় বিতর্কিত হয়ে পড়েছেন। স্থানীয় আওয়ামী লীগকে তিনি পরিবারকেন্দ্রিক করে ফেলেছেন। তাঁর ছোট ভাই কমলগঞ্জ আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং আরেক ছোট ভাই ইফতেখার আহমেদ সাংগঠনিক সম্পাদক। আব্দুস শহীদের অপর ভাই ইমতিয়াজ আহমেদ বিআরডিবি ও লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি। তিনি স্থানীয় ঠিকাদার সমিতিরও সভাপতি। স্থানীয় সব টেন্ডার তিনি নিয়ন্ত্রণ করেন। এবার তিনি কমলগঞ্জে বাগানবাড়ি করেছেন। এই বাড়ির কাজে তিনি সরকারি চা-বাগানের শ্রমিকদের ব্যবহার করেছেন বলে অভিযোগ আছে।

সংসদের হুইপ আ স ম ফিরোজ নিয়মনীতি লঙ্ঘন করে আটবারের মতো খেলাপি ঋণ পুনঃ তফসিল করেছেন। আইন অনুযায়ী তিনবারের বেশি ঋণ পুনঃ তফসিল করা যায় না।

কামাল আহমেদ মজুমদারের বিরুদ্ধে মনিপুর স্কুলে ভর্তি-বাণিজ্যের অভিযোগ আছে। তাঁর বিরুদ্ধে অভিভাবকেরা মিছিলও করেছেন। এ ছাড়া মিরপুর ১৩ নম্বর সেকশনে আহছানউল্লাহ মিশন হাসপাতালের নামে সরকারি বরাদ্দ প্লট দখলেরও অভিযোগ আছে তাঁর বিরুদ্ধে।

ময়মনসিংহের সাংসদ মতিউর রহমান শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে পারিবারিকীকরণ করেছেন। ময়মনসিংহের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই তাঁর পরিবার ও আত্মীয়স্বজনদের সভাপতি পদ দেওয়া হয়েছে। তাঁর ছেলে ও বংশের অন্যদের বিরুদ্ধে বালুমহাল দখল, পরিবহন চাঁদাবাজি ও টেন্ডারবাজির অভিযোগ আছে।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই বিতর্কিত সন্ত্রাসি , চাদাবাজি ও বিতর্কিত ব্যাক্তিরা নির্বাচিত হয়ে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করে আগামীতে দেশের ভবিষ্যত কোথায় গিয়ে দাড়াবে এব্যাপারে সংশয় প্রকাশ করছে বিশেষজ্ঞ মহল।Click this link

বিষয়: বিবিধ

১১৯৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File