হুদহুদ পাখি সুলাইমানের (আঃ) চিঠি নিয়ে পৌঁছে গেল রানী বিলকিসের প্রাসাদে।অগ্নিপূজা ছেড়ে দিয়ে তিনি শামিল হলেন চির শান্তির পতাকাতলে।
লিখেছেন লিখেছেন েনেসাঁ ২৭ নভেম্বর, ২০১৩, ০৯:১১:০৪ রাত
হুদহুদ। ইতিহাসের পাখি। আকারে ছোট। সৌন্দর্যে অনন্য। হজরত সুলাইমানের (আ.) পোষ মানানো সেই হুদহুদ। একজন রাজার কত কিছুরই তো খবর রাখতে হয়। অন্যান্য দেশে কী হচ্ছে, কী চিন্তাভাবনা চলছে, কোথায় কী ঘটছে, কোন রাজা কোথায় সৈন্য পাঠাচ্ছে, কেন পাঠাচ্ছে ইত্যাদি। আর এসবের জন্য হজরত সুলাইমান (আ.) পশুপাখিদের ব্যবহার করতেন। এদের অন্যতম ছোট্ট মিষ্টি পাখি হুদহুদ।
সুলাইমান (আ.) ছিলেন একটি দেশের বাদশাহ। আবার নবীও। তাই তার দায়িত্বও ছিল অনেক। তিনি পশুপাখিদের ভাষা বুঝতেন। আল্লাহ তায়ালা তাকে এই অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী করেছিলেন। রাষ্ট্রের গোয়েন্দাগিরি, গুপ্তচরবৃত্তি আর সংবাদ আদান-প্রদানে হুদহুদ পাখি ব্যবহার করেছেন। আল্লাহ তায়ালা বলছে, আর সুলাইমান পাখিদের খোঁজখবর নিতে গিয়ে বললেন, আমি যে হুদহুদকে দেখছি না, কারণ কী? সে কি অনুপস্থিত? (সুরা নামল : ২০)।
হুদহুদ সুলাইমানের (আ.) অত্যন্ত অনুগত ছিল। অন্য রাষ্ট্রের দরকারি খবরাখবর নিয়মিতই সুলাইমান (আ.) এদের মাধ্যমেই নিতেন। এখনকার মতো তখন তো আর রাডার ওয়ারলেস ছিল না। রাডার ওয়ারলেসের চাহিদাই তখন মিটিয়েছে এই হুদহুদ। সুলাইমানের (আ.) এই হুদহুদের নাম ছিল ইয়াফুর। একদিন হুদহুদ বললো, বাদশাহ নামদার! খোঁজ নিয়ে জানলাম, ইয়েমেন দেশটি চালান একজন নারী; কিন্তু তিনি অগ্নিপূজক। নাম তার বিলকিস বিনতে শারাহিল। সুলাইমান (আ.) খানিক ভেবে একটি চিঠি লিখলেন রানী বিলকিসের কাছে। তাতে লিখলেন ‘গোমরাহির পথ ছেড়ে দাও, সত্যের পথে ফিরে এসো। অগ্নিপূজা বন্ধ করো, আল্লাহর কৃতজ্ঞতা আদায় করো, তার ইবাদত করো। সময় থাকতে আমার অধীনতা স্বীকার করো।’
হুদহুদ ঠোঁটে করে এই চিঠি বয়ে নিয়ে পৌঁছে গেল রানী বিলকিসের প্রাসাদে। জানালা দিয়ে ফুড়–ৎ করে ঢুকে পড়ল রানীর ঘরে। ঘুমন্ত রানীর বিছানার পাশে রেখে আবার দে ছুট। এত পাইক-পেয়াদা, সৈন্যসামন্তের কঠোর প্রহরা ভেদ করে কে রেখে গেল এই চিঠি কেউ বলতে পারল না। রানী ভড়কে গেলেন। অনেক ভেবেচিন্তে সুলাইমানকে (আ.) বাগে আনতে দামি দামি উপঢৌকন দিয়ে দূত পাঠালেন। সুলাইমান (আ.) আল্লাহর নবী। তিনি অত সহজে দমবার পাত্র নন। পরিষ্কার জানিয়ে দিলেন, ‘রানী বিলকিস কি এসব উপঢৌকন দিয়ে আমাকে খুশি করতে চায়? আমি সম্পদের কাঙাল নই। তোমাদের রানী এখনও অগ্নিপূজা ছাড়েনি, তাকে গিয়ে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হতে বলো।’
খবর পেয়ে রানী ছুটে এলেন নবীর দরবারে। রানী কখন আসছেন, কীভাবে আসছেন। এসব হুদহুদ আগেই জানিয়ে দিল সুলাইমানকে (আ.)। হোক না অগ্নি-উপাসক। কিন্তু তিনিও তো একটি দেশের রানী। তারও সম্মান আছে। মর্যাদা আছে। সুলাইমান (আ.) রাজ দরবারকে সুন্দরভাবে সাজালেন। এখানে সেখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে দিলেন সুন্দর সুন্দর ফুল ও সুগন্ধি। বিলকিসের আসার পথে তৈরি করলেন তোরণ। রানী আসার আগেই জিনের মাধ্যমে সুলাইমান (আ.) সাবা নগরী থেকে রানীর স্বর্ণখচিত ও পাথরে অলঙ্কৃত সিংহাসন নিয়ে এলেন নিজের দরবারে। রানী এলেন। এখানে নিজের সিংহাসন দেখে তিনি ভেবেই পেলেন না কেমন করে এটা সম্ভব! সুলাইমান (আ.) তাকে অত্যন্ত সুন্দরভাবে ইসলামের দাওয়াত দিলেন। আল্লাহর একত্ববাদের কথা বললেন। সব দেখে-শুনে মুগ্ধ রানী। অগ্নিপূজা ছেড়ে দিয়ে তখনই শামিল হলেন চির শান্তির পতাকাতলে। তাওহিদের পতাকাতলে।
বিষয়: বিবিধ
৩৩০০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন