প্রশ্নঃ আত্মহত্যাকারী বা অপঘাতে মৃত ব্যক্তির আত্মা ভূত হয়ে দুনিয়াতে ঘুরে বেড়ায়, কথাটা কি সত্যি?
লিখেছেন লিখেছেন েনেসাঁ ২৬ নভেম্বর, ২০১৩, ০৫:৫৯:৫৮ বিকাল
উত্তরঃ আমাদের মুসলমানদের সমস্যা হচ্ছে, আমরা দিন-রাত ২৪ ঘন্টা কাফের মুশরেকদের বানানো নাটক-সিনেমা আর গল্পের বই নিয়ে পড়ে থাকি কিন্তু দিনের অন্তত কিছুটা সময় বের করে কুরান হাদীস পড়ার মতো সময় আমাদের হয়না!
আমরা এতো ব্যস্ত যে জাহান্নাম থেকে বাঁচার জন্য কি করতে হবে সেটা শেখার মতো সময় আমাদের হয়না।
কিন্তু দেশ বিদেশ ঘুরে বেড়ানো আর বিনোদন নামে অপসংস্কৃতির পেছনে সময় বের করতে আমরা বড়ই উস্তাদ!
এর ফলে কি হয়েছে?
অধিকাংশ মানুষ ইসলামের বেসিক জ্ঞান রাখেনা।
যার ফলে নাটক-সিনেমাতে কাফের মুশরেকদের শিরকি ও কুফুরী আকীদা আমাদের মধ্যে ঢুকে গেছে।
দুঃখের বিষয় হলো আমাদের অনেকে জানেইনা যে এইগুলো শিরকি কুফুরী আকীদা।
ইসলামের ডিপ আন্ডারস্ট্যান্ডিংতো দূরের কথা (যেটা ছাড়া ইবাদত করা খুব ডিফিকাল্ট),
সাধারণ ঈমান-ইসলামের অর্থ কি, সংজ্ঞা কি মানুষ এইগুলোই জানেনা।
কুরানের সুরা ফাতেহার অর্থ ও তাফসীর জানেনা।
নামায পড়ে ঠিকই কিন্তু নামায কেনো পড়া হচ্ছে, নামাযে কি পড়া হচ্ছে সেটা জানেনা।
নামাযের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অর্জন করাতো দূরের কথা, অধিকাংশ মানুষ নামায পড়ার উদ্দেশ্য কি সেটাই জানেনা।
শুধু মন্ত্র পড়ার মতো আনুষ্ঠানিকতাতে পরিণত হয়েছে আমাদের অধিকাংশের নামাযগুলো।
যাই হোক, যে প্রসংগে এই কথাগুলো বলা। মৃত ব্যক্তির আত্মার ভাগ্যে কি হয় সেটা কুরানেই সুন্দর বর্ণনা করা হয়েছে।
মানুষ দুইটি জিনিসের সমন্বয়ে গঠিত। দেহ ও আত্মা। মৃত ব্যক্তির দেহকে তো আমরা কবর মাটি চাপা দেই, যা সময়ের ব্যবধানে পচে গলে মাটির সাথে মিশে যায়। উল্লেখ্য, সহীহ হাদীসে উল্লেখ আছে নবী রাসূলদের দেহ মাটি খেতে পারেনা। তাই আমাদের বিশ্বাস সমস্ত নবী রাসুলদের দেহ তাদের কবরে অক্ষত অবস্থায় আছে। কিন্তু অন্যদের দেহ মাটির সাথে মিশে যায়।
আর আত্মাগুলো কোথায় যায়?
এটা নির্ভর করে, আত্মাটা কি ধরণের মানুষের তার উপরে। ব্যক্তি যদি ঈমানদার, ধার্মিক ও পবিত্র জীবন যাপনকারী কেউ হয় তাজলে তার আত্মাটাকে আসমানের উপরে ইল্যিয়িনে সম্মানের সহিত রাখা হয়। যেখানে সে আল্লাহর নেয়ামত ও সন্তুষ্টির সাথে বসবাস করতে থাকে।
আর আত্মা যদি কাফের, মুশরেক, পাপাচারী ও খবিস জীবন যাপনকারী কারো হয় তাহলে আসমানের দরজা তার জন্য উন্মুক্ত করা হয়না এবং আকাশ থেকে জমীনের সিজ্জিনে ছুড়ে ফেলা দেয়া হয়। সেইখানে তার আত্মাটা গ্রেফতার করা অবস্থায় আল্লাহ তার উপর ক্রোধান্বিত এমন অবস্থায় বন্দী হয়ে থাকে।
এই সম্পর্কে কুরানে বলা হয়েছে...
৭. নিশ্চয় পাপাচারীদের আমলনামা সিজ্জীনে আছে।
৮. আপনি কি জানেন সিজ্জীন কি?
৯. এটা লিপিবদ্ধ খাতা।
১০. সেদিন দুর্ভোগ মিথ্যারোপকারীদের,
১১. যারা বিচারের দিনকে মিথ্যারোপ করে।
১২. প্রত্যেক সীমালংঘনকারী পাপিষ্ঠই কেবল একে মিথ্যারোপ করে।
১৩. তার কাছে আমার আয়াতসমূহ পাঠ করা হলে সে বলে, এতো প্রাচীনকালের উপকথা।
১৪. কখনও না, বরং তারা যা করে তাই তাদের হৃদয় মরিচা ধরিয়ে দিয়েছে।
১৫. কখনও না, তারা সেদিন তাদের পালনকর্তার থেকে পর্দার আড়ালে থাকবে।
১৬. অতঃপর তারা জাহান্নামে প্রবেশ করবে।
১৭. এরপর তাদেরকে বলা হবে, একেই তো তোমরা মিথ্যারোপ করতে।
১৮. কখনও না, নিশ্চয় সৎলোকদের আমলনামা আছে ইল্লিয়্যীনে।
১৯. আপনি কি জানেন ইল্লিয়্যীন কি?
২০. এটা লিপিবদ্ধ খাতা।
২১. আল্লাহর নৈকট্যপ্রাপ্ত ফেরেশতাগণ একে প্রত্যক্ষ করে।
সুরা আল-মুতাফফিফিন, আয়াত ৭-২১।
এখন যার আত্মা ইল্যিয়িনে নেয়ামত ভোগ করছে, তার আত্মাতো কোনোদিন দুঃখ-দুর্দশার দুনিয়াতে আসতে চাইবেনা, আর আসতে চাইলেও তাকে আসতে দেওয়া হবেনা!
আর যার আত্মা সিজ্জিনে বন্দী অবস্থায় থাকবে শাস্তির ভয়ে সেতো সেখান থেকে পালাতেই চাইবে, কিন্তু তাকেও সিজ্জিন থেকে বের হতে দেওয়া হবেনা।
মৃত ব্যক্তির আত্মা দুনিয়াতে ঘোরাফেরা করে, মৃত্যুর ৭দিন/৪০দিন পর্যন্ত আত্মীয় স্বজনদের কাছে থাকে, মৃতের খুনি বা নির্যাতনকারীকে হত্যা করে প্রতিশোধ নেওয়ার চেষ্টা করে, পীর ফকিরেরা মৃত্যুর পর তাদের মুরীদদেরকে বা মানুষদেরকে সাহায্য করে... এই ধরণের কথা বার্তা সম্পূর্ণ কুফুরী, যার উৎস হলো হিন্দু বা অন্য বাতিল ধর্ম।
জিন সত্যি - কুরান হাদীস দ্বারা প্রমানিত আল্লাহ তাআ'লার বিশেষ সৃষ্ট এক ধরণের প্রাণী হলো জিন। জিন জাতির অস্তিত্ব যে অস্বীকার করে সে পরিষ্কার কাফের।
কিন্তু মৃত ব্যক্তির আত্মা দুনিয়াতে ভূত প্রেত হিসেবে অবস্থান করে - এইধরণের আকীদা ইসলাম বিরোধী আকীদা।
বিঃদ্রঃ বিস্তারিত জানতে তাফসীর ইবনে কাসীর থেকে সুরা আত-তিফফিনের ব্যখ্যা দেখে নেবেন। আর এই লেকচারটা দেখুন। এইগুলো অবশ্যই জানা উচিত, কারণ মৃত্যুর পরের জীবন একজন মুমিনের ঈমানের অংশ।
বিষয়: বিবিধ
২৫২৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন