আগুনে পুড়ে গেলে কি করবেন?

লিখেছেন লিখেছেন েনেসাঁ ১৯ নভেম্বর, ২০১৩, ০৩:০৩:৩৬ দুপুর



আগুনে পোড়া রোগীর অবস্থা সাধারণ বা মারাত্বক যাই হোকনা কেনো, রোগীকে সঠিক সেবা দিতে হলে জানতে হবে, কিভাবে রোগীকে প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা দিতে হবে অথবা কি কি করা যাবে না।

আগুনে পোড়া রোগীর ত্বকের পোড়া অংশের সঠিক চিকিৎসার পরিবর্তে ভুল চিকিৎসার ফলে আগুনে পোড়া রোগীরা সঠিক চিকিৎসার অভাবে মৃত্যু মুখে পতিত হয়।

শরীরে যদি আগুন ধরে যায় তবে কি করা উচিতঃ

• শরীরের কাপড়ে যদি আগুন ধরে যায় তবে তা সাথে সাথে নেভানোর চেষ্টা করতে হবে। যেমনঃ আগুনলাগা কাপড়ের আগুন নেভানোর জন্য মোটা সুতিকাপড়, কাথাঁ ইত্যাদি দিয়ে চেপে ধরতে হবে, হাতের কাছে পানি থাকলে শরীরে পানি ঢালতে হবে অথবা মাটিতে গড়াগড়ি খেতে হবে যাতে আগুন নিভে যায়।

• পোড়া ত্বকের আক্রান্ত জায়গায় অন্য কিছু না দিয়ে সাধারন তাপমাত্রায় ঠান্ডা করতে হবে অথবা আস্তে আস্তে পোড়া জায়গায় পানি ঢালতে হবে যাতে ত্বকের আপমাত্রা স্বাভাবিক হয়ে আসে, ব্যাথা কমে যায়, পোড়া জায়গায় কোনো ঘাঁ সৃষ্টি না হয়।

• আগুনে পোড়া রোগীর কাপড় শরীর থেকে খুলে নিতে হবে। পুড়ে যাওয়া রোগীকে সোজা করে সমতল জায়গায় শুইয়ে দিতে হবে। ত্বকের সাথে হালকা ভাবে লেগে যাওয়া কাপড়গুলো আস্তে আস্তে খুলে নিতে হবে, শরীরে কোনো অলংকার, গয়না, পায়ে জুতা থাকলে তাও খুলে নিতে হবে যাতে শরীরে কোনো মারাত্বক ধরনের ক্ষত তৈরী হতে না পারে। যদি কাপড় পুড়ে পোড়া ত্বকে লেগে থাকে তবে পোড়া কাপড়গুলো খুব দ্রুত আস্তে আস্তে শরীর থেকে সরিয়ে নিতে হবে।

• ত্বকের উপড়িভাগের পোড়া অংশ পরিস্কার কাপড় দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। পরিস্কার পানি দিয়ে পোড়া জায়গা ঠান্ডা করার পর আক্রান্ত পোড়া জায়গা ড্রেসিং করে ব্যান্ডেজ করে দিতে হবে। পুড়ে যাওয়া রোগীর শরীর পরিস্কার কাপড় দিয়ে ডেকে দিতে হবে যাতে রোগীর শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক থাকে।

• পুড়ে যাওয়া রোগীকে খুব দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে।জটিল পুড়ে যাওয়া রোগীকে খুব দ্রুত হাসপাতালে নিতে অবহেলা করবেন না।

• পোড়া রোগীর ত্বকে মলম লাগাবেন না। বিশেষ ধরনের স্প্রে, ক্রীম ইত্যাদি লাগানো যেতে পারে। লোকমুখে শুনে আক্রান্ত পোড়া রোগীর শরীরে অন্য কোনো কিছু লাগানো যাবে না।

• বিশেষ ভাবে মনে রাখতে হবে, শরীরের অধিকাংশ জায়গা আগুনে পুড়ে গেলে রোগীর শরীরের তাপমাত্রা খুব দ্রুত কমে যেতে পারে। আগুনে পোড়া রোগী যদি ঠান্ডার অনুভুতি প্রকাশ করে তাঁর শরীর মোটা কাথাঁ, মোটা কাপড় দিয়ে ডেকে দিতে হবে এবং খুব দ্রুত ডাক্তারের কাছে রোগীকে নিয়ে যেতে হবে।

আগুনে পোড়া রোগীর অবস্থা কতোটুকু জটিল কিভাবে বুঝবেনঃ

• ত্বক পুড়ে গভীর ক্ষত হলেঃ পুড়ে যাওয়া ত্বকের গভীরতার উপড় নির্ভর করে রোগীর অবস্থা সাধারন, মাঝারি ধরনের কিংবা তীব্র জটিল ইত্যাদি ভাবে ভাগ করা যায়। রোগীর প্রাথমিক অবস্থা নির্ধারন করা হয় ত্বক কতো গভীর ভাবে পুড়েছে তাঁর উপড়।

• ত্বকের বেশীরভাগ অংশ পুড়ে ক্ষত হলেঃ ত্বকের কতোভাগ জায়গায় ক্ষতস্থান তৈরী হয়েছে তাঁর উপড় নির্ভর করেও রোগীর অবস্থা পর্যালোচনা করা হয়। যদি পুড়ে যাওয়া জায়গার পরিমান হাতের তালুর এক বিঘার বেশী হয় তবে উক্ত রোগীকে অবশ্যই ডাক্তারের কাছে অবশ্যই নিতে হবে। যদিও সামান্য পুড়ে যাওয়া রোগীর অবস্থাও ভয়াবহ হতে পারে বিশেষ করে যদি আগুনে পোড়া রোগী বয়স্ক বা শিশু হয়।

• ত্বকের বিশেষ অংশ পুড়ে ক্ষত হলেঃ শরীরের গুরুত্বপুর্ন কয়েকটি অংশে আগুনে পুড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশী থাকে যেমনঃ দুই হাত, পা, মুখমন্ডল বিশেষভাবে চোখ, শরীরের সামনে অংশ ইত্যাদি। তবে এই জায়গাগুলো পুড়ে গেলে তা খুব সহজে জটিল আকার ধারন করতে পারে। এসব ক্ষেত্রে খুব সামান্য পুড়ে যাওয়া স্থানও মারাত্বক আকার ধারন করতে পারে এবং রোগীকে হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা করাতে হবে।

• যে উৎসের কারনে ত্বক পুড়ে যেতে পারেঃ বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিটের কারনে আগুন লেগে, রাসায়নিক উপাদান থেকে, সিগারেটের পোড়া উচিছষ্টাংশ থেকে, গ্যাসের চুলা থেকে, প্লাস্টিকের বস্ত্ততে আগুন লেগে মারাত্বক ভাবে ত্বক পুড়ে যেতে পারে।

• ডায়েবেটিসঃ ডায়েবেটিসে আক্রান্ত রোগীর শরীর যদি আগুনে পুড়ে যায় তবে পুড়ে যাওয়া ত্বকে মারাত্বক ক্ষত সৃষ্টি হয়ে তীব্র ধরনের জটিল প্রদাহে পরিনত হতে পারে।

• ছোট ধরনের অগ্নিকান্ডেও সদ্য ভুমিষ্ট হওয়া নবজাতক, ছোট শিশু, বৃদ্ধ মহিলা বা পুরুষদের শ্বাসনালী পুড়ে কিংবা শরীরের যে কোনো অংশ পুড়ে জটিল অবস্থা হতে পারে।

আগুনে পোড়া রোগীর চিকিৎসায় অধিক যত্নবান হওয়া উচিতঃ

আগুনে পোড়া রোগীর জরুরী চিকিৎসার ক্ষেত্রে কি করা উচিত? আগুনে পোড়া ক্ষত স্থানে বরফ দেওয়া কি উচিত? উত্তর হবে না। আগুনে পুড়ে যাওয়া ত্বকে খুব ঠান্ডা পানি দিলে কিংবা বরফ দিলে রোগীর শরীরের তাপমাত্রা অনেক কমে যেতে পারে। এছাড়াও আগুনে পোড়া ত্বকে বরফ দিলে ত্বকের ক্ষতি আরও বেড়ে যেতে পারে এবং ত্বকে ব্যকটেরিয়া দিয়ে সৃষ্ট প্রদাহ তৈরী হতে পারে। পুড়ে যাওয়া ত্বকে শুধুমাত্র স্বাভাবিক আপমাত্রার পানি ব্যবহার করা যেতে পারে।

আগুনে পোড়া ত্বকের ফোস্কা বা ব্লিষ্টার কী ফাটিয়ে দেয়া উচিত?

উত্তর হবে না। আগুনে পোড়া ত্বকে কিছু কিছু ছোট ছোট ফোস্কা তৈরী হবে যেগুলো ফাটিয়ে দেওয়া ঠিক হবে না। কারন এই ফোস্কাগলো ফাটিয়ে দিলে খুব সহজে ব্যকাটেরিয়া আক্রান্ত হয়ে পোড়া জায়গায় প্রদাহ হতে পারে। খুব বড় ধরনের ফোস্কা তৈরী হলে কিংবা ফোস্কার ভিতরের জমে থাকা পানি ফ্যাকাশে হয়ে গেলে সাথে সাথে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে হবে।

আগুনে পোড়া রোগীর ত্বকে কী ক্রীম, অয়েন্টমেন্ট ব্যবহার করা যাবে?

উত্তর হচ্ছে না। আগুনে পোড়া ত্বকে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো ওষুধ যেমনঃ ক্রীম, অয়েন্টমেন্ট ইত্যাদি ব্যবহার করা যাবে না। প্রাথমিক পুড়ে যাওয়া ত্বকে প্রাথমিক চিকিৎসা হিসেবে ক্রীম, অয়েন্টমেন্ট ইত্যাদি ব্যবহার করলে ক্ষতিকর ব্যকটেরিয়া থেকে খুব সামান্য পরিমানে রক্ষা পাওয়া যায়।

আগুনে পুড়ে যাওয়া রোগীকে কখন চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া উচিতঃ

আগুনে পুড়ে যাওয়া রোগীকে অবশ্যই চিকিৎসকের কাছে নেওয়া উচিত। পুড়ে যাওয়ার ধরন যাই হোক না কেনো পুড়ে যাওয়া রোগীকে অবশ্যই চিকিৎসকের কাছে নিতে হবে। কারন ত্বকের পুড়ে যাওয়ার ধরন ভিন্ন হলেও ব্যকটেরিয়ার সংক্রমনের কারনে পুড়ে যাওয়া রোগীরা অবস্থা যেকোন সময় খারাপ হতে পারে। সূতরাং পুড়ে যাওয়া রোগীকে সম্ভব হলে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পূর্বেই চিকিৎসকের কাছে নিতে হবে।

সূত্র: ওয়েবসাইট

বিষয়: বিবিধ

১৫৮৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File