দেহের বিনিময় কেবল ক্ষুধা নিবারন,ওরা যেন প্রানহীন রোবট।

লিখেছেন লিখেছেন েনেসাঁ ১২ নভেম্বর, ২০১৩, ০২:৪৯:২৩ দুপুর



সভ্য সমাজে স্বাভাবিক জীবন যাপনের সকল অধিকার থেকে বঞ্চিত ওরা। মানুষের আড়-চোখা দৃষ্টি আর লাঞ্চনাকে সহ্য করে চলছে ওদের জীবন নামের দমের গাড়ী। যার শেষ ঠিকানা অযত্ন অবহেলায় নদীর জলের সাথে মিশে একাকার হয়ে যাওয়া। আর দশজন সাধারন মানুষের মত মৃত্যুকালে ধর্মীয় রীতিনীতি পালনের সুযোগ না থাকলেও বিন্দুমাত্র আক্ষেপ নেই ওদের। নারী দেহের শ্রেষ্ঠ সম্পদ বিকিয়ে দিয়ে ক্ষুধামুক্ত নিরাপদ জীবনই তাদের শেষ চাওয়া। নানা প্রতিকুলতাকে জয় করে সেই আশায় বেঁচে থাকলেও বর্তমানে প্রকৃতির কাছে ওরা খুব— অসহায় হয়ে পড়েছে।

বানীশান্তা যৌনপল্লীর বাসিন্দাদের চলমান জীবন যাত্রার তথ্য সংগ্রহে গেলে তাঁদের ভাষ্যে উঠে আসে এমন চিত্র। সমাজ সংসারে নানা ঘাত প্রতিঘাতের মুখে বেঁচে থাকার শেষ চেষ্টা হিসেবে তাঁদের ঠাঁই মেলে এই রাষ্ট্র স্বীকৃত অন্ধগলিতে। আবার অনেকে মানুষ রুপী নরপশুদের প্রতারনার ফাঁদে পড়ে ইচ্ছার বিরুদ্ধে যৌনপল্লীকে আপন ঠিকানা হিসেবে বেছে নিয়েছে। যে যেভাবেই আসুক এই সভ্য সমাজের কাছে মানুষ হিসেবে ওদের মেলেনি কোন স্বীকৃতি। ভদ্রবেশী সাদা পোশাকের এই সমাজের মানুষ গুলো ওদের কেবলই নির্দিষ্ঠ সময়ের জন্য খরিদ করা ভোগের পন্য হিসেবে দেখে এমনটাই জানালো তারা। সঙ্গত কারনে যৌন কর্মিরা প্রানহীন রোবটের ন্যায় নিজেদের উজাড় করে দিয়ে বিনিময়ে কেবল ক্ষুধা নিবারন করা তাদের কর্তব্য বলে মনে করে। প্রতিষ্ঠার শুরু থেকে বানীশান্তা যৌনপল্লীতে নানা সমাস্যা থাকলেও আর্থিক দৈন্যতা তাঁদের তেমন একটা স্পর্শ করেনি। কিন্তু গত আইলার পর হতে সেখানে দেখা দিয়েছে চরম অভাব অনাটন। আগের মত আর খরিদ্দার না হওয়ায় অভাবের তাড়নায় অনেকে পল্লী ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছে। বর্তমানে যারা আছে তাঁদের দিন চলছে অনেকটা অর্ধাহারে অনাহারে।

পল্লীর বর্তমান অবস্থা সর্ম্পকে জানতে চাইলে সেখানকার মহিলা সমিতির সাধারন সম্পাদিকা শাহিদা বেগম জানায়, আইলার পূর্বে সেখানে ২ শতাধীক যৌনকর্মি থাকলেও নানা কারনে বর্তমানে ওই সংখ্যা ১৩০ এসে দাডীয়েছে। গোটা দাকোপে অর্থনৈতিক দৈন্যতা, বন্দরে কর্মতৎপরতা কমে যাওয়া, প্রয়োজনীয় দ্রব্যের এই অগ্নিমূল্যের বাজারে যৌন কর্মিদের দিন কাটছে অনাহারে অর্ধাহারে। সব কিছু ছাডিয়ে প্রকৃতির নিষ্ঠুর আচারন বর্তমানে তাঁদের দুর্ভোগের অন্যতম কারন। পশুর নদীর অব্যহত ভাঙন তাঁদেরকে করছে গৃহহারা। প্রতিনিয়ত কমে আসছে যৌনপল্লীর আয়তন। যৌনপল্লী এলাকার চারিপাশে কোন বেড়ীবাঁধ না থাকায় জোয়ারের চাপ সামান্য বাডলেই তাঁদের পানির মধ্যে হাবুডুবু খেতে হয়। সুত্র মতে তাদের যৌন নিরাপত্তায় অতীতে অনেক এনজিও কাজ করলেও বর্তমানে তাঁরাও মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। ফলে সেখানকার কর্মিদের জীবন এখন অনেকাংশে ঝুকির মুখে। খোজ নিয়ে জানা যায় মেয়েদের এইচ আই ভি নিরাপত্তায় অতীতে জে জে এস, ওয়ার্ল্ড ভীশন, ব্রাক, সি এস এস, পি এস টি নানা কার্যক্রম পরিচালনা করতো। কিন্তু গত বছর দেড় হলো ওই সকল বেসরকারী সাহায্য সংস্থা তাদের কর্মকান্ড বন্ধ করে দেওয়ায় এখন নিরাপত্তার ক্ষেত্রে নিজেদের সচেতনতায় একমাত্র ভরসা। সে ক্ষেত্রে সেখানকার বাসিন্দাদের চিকিৎসা সেবার পাশাপাশি কনডমসহ প্রযয়োজনীয় অন্যান্য উপকরনের মারাত্বক সংকট দেখা দিয়েছে। বর্তমান নাজুক পরিস্থিতিতে নিজেদের চলাই যেখানে কষ্ট সাধ্য সেখানে তাঁদের পক্ষে সেগুলো কিনে ব্যবহার একেবারেই অসম্ভব এমনটাই জানিয়েছে তারা। সুত্র মতে যৌন কমির্রা পাশ্ববর্তী আমতলা এলাকা থেকে ১০ টাকা ড্রাম মূল্যে পানি কিনে জীবন ধারন করছে বলে জানা যায়। সেখারকার শিশুদের শিক্ষা সুবিধা বলতে এনজিও জে জে এস পরিচালিত একটি মাত্র প্রাথমিক শিক্ষা কেন্দ্র, তাও আবার নাম মাত্র চলছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের ভূমিকা সম্পর্কে জানতে চাইলে অনেকটা ক্ষোভের সাথে তাঁরা জানায়, যখন ভোট আসে কেবল তখনই তাঁদের চোখে আমরা মানুষ। বাকী সময়টা ডাষ্টবিনের দুঃগন্ধময় বস্তুর সাথে আমাদেরকে তুলনা করা হয়।

এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান সুদেব রায়ের নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি গতকাল সেখানকার ভাঙনের অবস্থা দেখেছি, তিনি সেখানকার ভয়ানক অবস্থার কথা উল্লেখ করে বলেন আমাদের ইউনিয়ন পরিষদের এ ব্যাপারে আসলে তেমন কিছু করনীয় নেই। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন পানি সংকট নিরসনে এনজিও উলাসীর সহায়তায় কিছু প্রকল্প গ্রহন করা হয়েছে। ভাগ্য বিড়ম্বিত এই অন্ধগলির কর্মিদের আছে বেঁচে থাকার অধিকার। রাষ্ট্র কখনো অস্বীকার করতে পারবেনা তাঁদের অস্তিত্বের কথা। বরং ভদ্র সমাজে রাতের আঁধারে ঘটে যাওয়া অনেক দায়িত্বহীন ঘটনায় না জড়িয়ে অন্ধগলির এই বাসিন্দারা রাষ্ট্রের স্বীকৃত আইনের প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে চলেছে। সঙ্গত কারনে নায্য অধিকার হিসেবে বানীশান্তা যৌনপল্লীর বাসিন্দাদের এই দূঃর্বিষহ জীবনের দূর্ভোগ লাঘবে দায়ত্বিশীল মহলের সদয় সহানুভূতি কামনা করেছে তাঁরা।

কালো আছে বলেই আমরা আলোকে চিনতে পারি। তাই আজ যারা অন্ধগলিতে আটকা পড়েছে তারা আমাদের সমাজের অংশ। তাই তাদেরকে ঘৃনা না করে তাদের ক্ষুধার জ্বালা নিবারণের সৎ জীবিকার ব্যবস্থা করার জন্য সরকারের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি। সরকার যেহেতু ক্ষুধা ও দারিদ্রতা ‍নিবারণের জন্য যুদ্ধ শুরু করেছে তাই এই আহ্বান যথাযথ। ক্ষুধার জন্য কেউ কেউ দেহ বিলিয়ে দিচ্ছে, আর কেউ কেউ বিনা কারণে অর্থ

অপচয় করছে। হায়রে সমাজ ব্যবস্থা !

বিষয়: বিবিধ

৩২৬০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File