এক হিন্দু ভাইয়ের মুসলিম হওয়ার বর্ননা
লিখেছেন লিখেছেন েনেসাঁ ৩০ অক্টোবর, ২০১৩, ০৫:৫৮:১১ বিকাল
একটি ছাত্রের ঘটনা আমি তুলে ধরছি যা সকলের হৃদয়কে গভীর ভাবে স্পর্শ করবে। সে একজন নব মুসলিম তার নাম ‘‘আব্দুর রহমান’’ । পূর্বে নামছিল নারায়ন। তার বাসস্থান উত্তর প্রদেশ, ইন্ডিয়া। সে একজন ঠাকুর বংশের ছেলে। কীভাবে ও কি কারণে সে ইসলাম গ্রহণ করেছে তা জানতে চাওয়ায় সে বলল :
আমার গ্রামে একটি প্রাইমারি স্কুল ছিল। সেখানেই আমি লেখাপড়া করতাম। একই গ্রামের আব্দুল্লাহ্ নামে আমার এক বাল্য বন্ধু ছিল। এক সাথে একই ক্লাসে লেখা পড়া করতাম। সে সম্ভ্রান্ত পরিবারের ছেলে। আমি তার বাড়িতে যেতাম। সেও আমার বাড়িতে আসতো। সুখে দুঃখে আমরা একজন আরেকজনের সব সময় খোঁজ খবর নিতাম । ক্লাস রুমে একই সাথে বসতাম।একজন অপরজনের পাশেই ছিলাম। এমনিভাবে দীর্ঘদিন অতিবাহিত হচ্ছিল। আমরা যখন ৭ম শ্রেণীতে অধ্যয়নরত ছিলাম, একদিন তার মা হঠাৎ মারা গেল। তাই আমি তাকে সান্তনা দেয়ার জন্য তার বাড়িতে গেলাম। তার মা অত্যন্ত পর্দা মেনে চলত। জীবদ্দশায় তার বাড়িতে কতবার গিয়ে ছিলাম কিন্তু একটি বারও আমার নজরে পড়েনি। যদিও আমি ছোট ছিলাম, মনে মনে ভেবে ছিলাম, মৃত্যুর পর এবার একনজর তাকে দেখব । কিন্তু………।
মুর্দার খাটে করে তাকে কাফন পড়িয়ে এমন ভাবে তার উপর আর একটি পর্দার ব্যবস্থা করে কয়েক জনের কাঁধে করে বাড়ি থেকে বের করল। অন্য কারো অনুমান করা সম্ভব নয় যে আব্দুল্লাহর মা কত বড় ছিল? লম্বা ছিল, না খাটো ছিল? মোটা ছিল, না পাতলা ছিল?
সবাই তাঁকে নিয়ে বিভিন্ন দোয়া পড়তে পড়তে কবরস্থানের দিকে যাচ্ছে। তাই আমি তাদের সাথে কবরস্থানের দিকে রওয়ানা হলাম। আর মনে ইচ্ছা ছিল যে, কবরে নামানোর সময় একটু দেখব। কিন্তু আমার মনের আকাঙ্ক্ষা আর পূরণ হলো না। কারণ তার মাকে কবরের নামানোর পূর্বেই কবরের চতুর পার্শ্বে পর্দা দিয়ে ঘিরে তার পর তাকে সসম্মানে নামানোর ব্যবস্থা করল। ভাবলাম এটা হয়তো তাদের ধর্মের বিধান।
যাক পরিশেষে আমার বন্ধুকে কিছু সান্তনা দিয়ে আমার বাড়িতে ফিরে আসলাম। আল্লাহর কি ইচ্ছা কয়েকদিন পরেই আমার মাও ইহজগৎ পরিত্যাগ করলেন। আমার মুসলিম বন্ধুটিও এমন দুঃখের দিনে পাশে এসে আমাকে সান্তনা দিতে ত্রুটি করেনি। আমার মা ও উচ্চ পরিবারের মহিলা ছিলেন বিধায় তিনি তার জীবদ্দশায় সাধারণ মানুষের চোখে দেখা দিতেন না।
হিন্দু ধর্ম অনুযায়ী মাকে শ্মশানে নিয়ে চিতায় পুড়াতে হবে। তাই বাড়ি থেকে বের করা হলো। আমার মার উপরে এমন এটি পাতলা কাপড় ছিল যে, ভিতর থেকে তার অঙ্গপ্রত্যঙ্গ দেখা যাচ্ছিল। আমার বন্ধু আমার পাশে ছিল তাই কিছুটা সংকোচ বোধ করছিলাম। তার পর আমার আম্মাকে নিয়ে যাওয়া হলো শ্মশানে, রাখা হলো চিতায়। আগুন দেয়ার সাথে সাথে তার উপরে পাতলা আবরণটি পুড়ে গিয়ে আমার মা প্রায় উলঙ্গ অবস্থায় আগুনে জ্বলছে। আমার লজ্জায় মাথানত হয়ে আসছে। আমার বন্ধুর দিকে তাকাতে পারছি না। কিন্তু উপায় নেই, এতো আমাদের ধর্মের বিধান।
আগুন যখন ভালভাবে ধরেছে তখন দেখি আমার মা তখন বাঁকা হতে চাচ্ছে। আবার কখনো সোজা আবার কখনো দাঁড়াতে চাচ্ছে। এদিকে আসে পাশে অনেক লোক কারো হতে লাঠি ও বল্লম। তারা সবাই তাকে আঘাত করে সেই আগুনেই যথাযথ ভাবে পুড়তে বাধ্য করছে। কি করুন দৃশ্য! এ বেদনা দায়ক দৃশ্য আমাকে যেন হতবাক, অচেতন করে ফেলেছে।
হঠাৎ আমার সামনে ভেসে উঠল বন্ধু আব্দুল্লাহর মায়ের কাফন দাফনের সুন্দর দৃশ্য। কত সম্মান জনক ভাবে তাকে মাটি দেয়ার পর তার চির শান্তির জন্য সবাই দোয়া করে বিদায় নিল। তিনি যখন বেঁচে ছিলেন তখন ও তার সম্মানের কিছু কমতি ছিল না। মৃত্যুর পরও তাকে যথাযথ সম্মানে কবর দেয়া হলো। মনে হয় পরগজতেও তাঁর সম্মান অক্ষুণ্ণ থাকবে।
আমার জ্ঞান আবার ফিরে আসল। দেখছি আমার মা আগুনে জ্বলছে। কত কষ্ট, কত যাতনা ও কত বেদনা আমি পেয়েছি যা আজ বর্ণনার ভাষা নেই। আমার মা আমাকে অত্যন্ত স্নেহ ও আদর করতেন।
আমার মা অভিজাত পরিবারে সসম্মানে জীবন যাপন করেছিলেন। হিন্দু ধর্মে হলেও আমার মা সাধারণ মানুষের সাথে দেখা দিতেন না। বাড়ির বাহিরে যেতেন না। অন্যান্য মেয়েদের মত ঘোরাফেরা করতেন না। আস্তে আস্তে কথা বলতেন। শান্ত মেজাজের ছিলেন তিনি। ঝগড়া ফাসাদকে তিনি কখনো পছন্দ করতে না। এমন সুন্দর স্বভাবের মা ছিলেন আমার। সুখ ও শান্তিতে ইজ্জতসহ বসবাস করতেন তিনি, অথচ মৃত্যুর সাথে সাথে তাকে এমন করে বেইজ্জত করা হলো। তার চেহারা অপর কেহ দেখেনি কিন্তু জীবনটা চলে যাওয়ার সাথে সাথে একী অবস্থা? তিনি কোন দিন কাউকে আঘাত করেননি, এমন কি কারো সাথে ঝগড়া করেননি, গালিও দেননি। কিন্তু তার আত্মা বিদায় নেয়ার সাথে সাথে এ ভাবে মানুষ তাকে আঘাত করছে।
বিষয়: বিবিধ
১৪০৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন