একি মরণ! সহস্র জীবন উৎসর্গ করেও এমন জীবনের সাক্ষাত পাওয়া যায় না

লিখেছেন লিখেছেন েনেসাঁ ০৬ অক্টোবর, ২০১৩, ০১:১৯:০৭ দুপুর



উহুদ যুদ্ধ। মুসলমানদের জয় বিপর্যয়ে পরিণত হবার পরের মুহূর্ত। রাসূল (সা) তখন যুদ্ধের কেন্দ্র হয়ে দাঁড়িয়েছেন। পেছন থেকে শত্রুর আকস্মিক আক্রমণে বিজয়-আনন্দরত মুসলিম সৈন্যরা একত্রিত হয়ে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধে এগিয়ে আসতে পারল না। বিশৃঙ্খল হয়ে পড়েছে তারা।

মুষ্টিমেয় মুসলিম সৈন্যের ছোট্ট একটি দল মহানবী (সা) কে কেন্দ্র করে দাঁড়িয়ে। মক্কার মুশরিক সৈন্যরা একে মহাসুযোগ হিসেবে গ্রহণ করল। মহা আস্ফালনে চারদিক কাঁপিয়ে মুশরিক সৈন্যরা ঝড়ের বেগে অগ্রসর হলো রাসূল (সা) কে লক্ষ্য করে। এই ঝড় প্রতিহত করতে হলে এর চেয়েও দুরন্ত গতির আরেক ঝড় প্রয়োজন। মহানবী (সা) তাঁকালেন তাঁর চারদিকের সাথীদের দিকে। ধ্বনিত হলো তাঁর তেজদীপ্ত গম্ভীর কন্ঠ, 'নিজের প্রাণ উৎসর্গ করে শত্রুর গতিরোধ করতে পারে, এমন কে আছে?' মহানবীর (সা) ঠোঁটের শেষ শব্দ বাতাসে মিলিয়ে যাবার আগেই আনসার যুবক জিয়াদ তেজদীপ্ত কন্ঠে হুংকার দিয়ে বলে উঠলো, 'আমি আমি'।

কন্ঠে তার সে কি তেজ! দু'চোখে তার ভক্তির কি অপূর্ব বিচ্ছুরণ!

রাসূল (সা) এর আদেশ নিয়েই জিয়াদ পাঁচ-সাতজন আনসার যুবককে সাথে নিয়ে ভীষণ গতির এক ঝড় তুলে ঝাঁপিয়ে পড়ল শত্রুর উপর।

এ যেন বেগ-এর উপর এক মহাবেগের আঘাত। শত্রুর গতি স্তব্ধ হয়ে গেলো। চললো ক্ষুদ্র একটি বাহিনীর সাথে আক্রমণকারী বিশাল বাহিনীর মরণপণ লড়াই। পেছনে হটে গেল মুশরিক বাহিনী অনেক ক্ষতি স্বীকার করে। শত্রু সরে গেলে দেখা গেল, জিয়াদ-এর ক্ষুদ্র বাহিনীর কেউ দাঁড়িয়ে নেই। শহীদ হয়েছেন বেশিরভাগ। জিয়াদ তখন মুমূর্ষু। মহানবী (সা) যুদ্ধক্ষেত্র থেকে জিয়াদকে তুলে আনার নির্দেশ দিলেন।

মুমূর্ষু জিয়াদের মাথা রাসূল (সা) নিজের পদযুগলের উপর রাখলেন। প্রার্থনা করতে লাগলেন জিয়াদের জন্যে। জিয়াদের প্রাণটা যেন এ মহাসৌভাগ্যেরই অপেক্ষা করছিল।

মুমূর্ষু জিয়াদের মুখটি গড়িয়ে গিয়ে তার গন্ড রাসূল (সা)-এর পদযুগল স্পর্শ করল। পর মুহূর্তেই তার প্রাণপাখি উড়ে গেল। উড়ে গেল যেন জান্নাতের উদ্দেশ্যে।

কবির ভাষায়ঃ

একি মরণ! সহস্র জীবন উৎসর্গ করেও

এমন জীবনের সাক্ষাত পাওয়া যায় না

বিষয়: বিবিধ

১৩৬৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File