সুখী দাম্পত্য জীবনের যত উপকারিতা
লিখেছেন লিখেছেন েনেসাঁ ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৩, ০৪:১৪:২৯ বিকাল
স্বামী-স্ত্রীর পরস্পরের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশের এক গুরুত্বপূর্ণ দিক শারীরিক মিলন৷ এটি শারীরিক প্রয়োজনীয়তার বহিঃপ্রকাশও বটে। কিন্তু আমাদের সমাজে যৌন শিক্ষার সম্যক জ্ঞানের অভাবে অনেক কিছুই অনেকের জানা নেই। এ কারণে এই আলট্রামডার্ন ক্যারিয়ারমুখী জীবনে আপনি হয়তো সঙ্গীর কথা বেমালুম ভুলেই গেছেন। রাতদিন শুধু ক্যারিয়ার আর ক্যারিয়ার। এভাবে সঙ্গীকে দীর্ঘ অবহেলার কারণে বিষয়টি সংসারে নানা অশান্তি এমনকি বিচ্ছেদও ডেকে আনতে পারে। আসক্তি জন্মাতে পারে মাদকে, অপকর্মে কিংবা অন্য কোনো অপরাধে। এ তো গেলো শারীরিক মিলন নিয়মিত না করার সামান্য কুফল, এর চেয়ে ভয়াবহ পরিণতিও আসতে পারে। আসুন জেনে নেয়া যাক, শারীরিক চাহিদা বা ভালোবাসা প্রকাশের দিক ছাড়াও স্বামী স্ত্রীর যৌন মিলনের আর কি কি গুণ আছে সেসব সম্পর্কে।
ভালো ব্যায়াম
স্বামী-স্ত্রীর শারীরিক মিলনে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ যেভাবে সঞ্চালিত হয় তার মাধ্যমে ব্যয়াম কার্য খুব ভালোভাবে সম্পাদিত হয়৷ এর দ্বারা প্রচুর ক্যালোরি খরচ হয়, ফলে কোলেস্টেরলের মাত্রা কম হয়, রক্তপ্রবাহ ভালো হয়, শারীরিক মিলন কার্যে আপনি ৩০ মিনিট ব্যয় করলে আপনার ৮৫ ক্যালোরি খরচ হয়৷ আপনি এক সপ্তাহ নিয়মিত হাঁটা-চলা করলে যে পরিমান ক্যালোরি খরচ হয়, সপ্তাহে তিন দিন নিয়মিতভাবে শারীরিক মিলনে লিপ্ত হলে আপনার সেই পরিমান ক্যালোরি খরচ হবে৷ সারা বছর নিয়মিত রূপে শারীরিক মিলনে লিপ্ত হতে পারলে ৭৫ মাইল জগিং করার সমান ক্যালোরি আপনার শরীর থেকে নির্গত হবে৷
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাঁড়ায়
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার ক্ষেত্রে বা আমাদের ইমিয়্যুন সিস্টেম ঠিক রাখতে সাহায্য করে স্বামী স্ত্রীর শারীরিক মিলন প্রক্রিয়া৷ রোগ প্রতিরোধের ক্ষেত্রে এটি থেরাপির মত কাজ করে, এর মাধ্যমে পাচন কার্য ঠিক হওয়ার ফলে রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতাও সুদৃঢ় হয়৷
জীবনকাল বাড়ে
স্বামী স্ত্রীর নিয়মিত সেক্স্যুয়াল অ্যাক্টিভিটি আপনার আয়ু বাঁড়ায়৷ এর মাধ্যমে শরীরের সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ এবং সব তন্ত্র খুব ভালো ভাবে কাজ করে৷ কারণ শারীরিক কার্যকলাপ শরীরের বিভিন্ন কোষের মধ্যে অক্সিজেনের মাত্রা বৃদ্ধি করে বিভিন্ন অঙ্গগুলিকে সচল রাখতে সাহায্য করে৷ একদিকে যেখানে সেক্স্যুয়াল অ্যক্টিভিটির দ্বারা শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা সঠিক থাকে তেমনি কোলেস্টেরলের মাত্রা ধীরে ধীরে কমতে থাকে৷ সপ্তাহের তিনবার বা তার থেকে বেশী বার শারীরিক মিলন হার্টঅ্যাটাকের সম্ভাবনাও কমিয়ে দেয়৷
ব্যাথা থেকে মুক্তি
বিভিন্ন অধ্যয়নের দ্বারা জানা গেছে, স্বামী স্ত্রীর শারীরিক মিলনের ফলে মাথা এবং হাড়ের জয়েণ্টের ব্যাথার ক্ষেত্রে আরাম পাওয়া যায়৷ ওর্গাজমের আগে অক্সিটোসিন হর্মোনের স্তর সামান্য থেকে পাঁচ গুন বেঁড়ে যাওয়ায় এণ্ড্রোফিন হর্মোন নিঃসৃত হতে থাকার ফলে মাথা ব্যাথা, মাইগ্রেন আর আর্থারাইটিসএর ব্যাথা থেকে আরাম পাওয়া যায়৷ তাই ব্যাথা কমানোর ওষুধ না খেয়ে শারীরিক মিলনের আনন্দ উপভোগ করুন আর ব্যাথা থেকে নিষ্কৃতি পান৷
পিরিয়ডের সময় ব্যাথা কমে
যেসব স্ত্রীদের সেক্স্যুয়াল লাইফ খুব ভালো হয় তাদের পিরিয়ডের ক্ষেত্রে সমস্যা কম হয়৷ সাধারণতঃ পিরিয়ডের সময় নারীদের (সবার নয়) খুব বেশী ব্যাথা হয়ে থাকে৷ যাদের সেক্স্যুয়াল লাইফে কোন প্রকার অসুবিধা থাকে না তাদের এই সময়ে ব্যাথার অনুভুতি কম হয়৷ আর শরীরিক মিলনের দিক ঠিক থাকলে পিরিয়ডের আগে নারীদের মধ্যে অনেক সময় যে সমস্যা দেখা যায় তাও থাকে না৷
মানসিক অশান্তি থেকে মুক্তি
স্বামী স্ত্রীর মানসিক প্রশান্তি আনার দিক থেকে নিয়মিত শারীরিক মিলনের অভ্যাস সব থেকে ভালো৷ কারণ শারীরিক মিলনের ফলে মন উত্ফুল্ল থাকে ফলে মানসিক অশান্তি কম হয়৷
ভালোবাসা বাড়ে শারীরিক মিলনের আকর্ষনের ফলে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে দূরত্ব কম হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মনে খুশী সঞ্চারিত হয়৷ মনের উদাসিনতা দূর করতে এই কার্যকারিতা ভীষণ জরুরি৷ মানসিক দিক থেকে বিরক্তির নানা কারণ শারীরিক মিলনের ফলে দূর হয়ে যায়৷ এই সান্নিধ্যের ফলে সঙ্গীর সঙ্গে সম্পর্ক ভালো হয় এবং দুজনের মধ্যে ভালোবাসা বাড়ে৷ যে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে শারীরিক সম্পর্ক উন্নতমানের তারা তাদের সম্পর্কের ক্ষেত্রে কোন সমস্যায় পড়লে তার সমাধান একসঙ্গে করতে পারেন৷
কর্ম ক্ষমতা বাড়ে
স্বামী স্ত্রীর শারীরিক মিলনের সময় হরমোন নিঃসরণ হয় তাই মন শান্ত থাকে আর নিরন্তর কাজের ক্ষমতা বাড়তে থাকে৷ নিয়মিতভাবে শারীরিক মিলনের ফলে ব্যক্তির যৌবন অনেক দিন পর্যন্ত বর্তমান থাকে৷ এর মাধ্যমে ফিটনেস লেবেল বাড়ে৷ শারীরিক মিলনের ফলে ব্যক্তি সারাদিন স্ফুর্তি অনুভব করে৷ সারাদিনের কাজে এই স্ফুর্তির প্রভাব দেখা যায়৷ এর দ্বারা সারাদিনের ক্লান্তি থেকে এবং নানা রোগের হাত থেকে মুক্তি পাওয়া যায়৷
ভালো ঘুম হয়
শারীরিক মিলনের ফলে অক্সিটোসিন হরমোন রিলিজ হয়, ফলে মিলনের পরে ঘুমও খুব ভালো হয়৷ তাই যাদের ঘুমের ক্ষেত্রে কোন অসুবিধা আছে তারা অতি অবশ্যই এই পদ্ধতি অবলম্বন করে উপকার পাবেন৷
আত্মবিশ্বাস বাড়ে
স্বামী স্ত্রীর শারীরিক মিলনের ফলে ব্যক্তির মনে চিন্তা করার ক্ষমতা বাড়ে৷ তার ভেতরকার সন্তুষ্টি তার মানসিক প্রশান্তি, তার মধ্যে আত্মবিশ্বাসের পরিমান বাড়িয়ে তোলে৷
ওজন কমে
স্বামী স্ত্রীর শারীরিক মিলনের ফলে প্রচুর পরিমান ক্যালোরি কম হয়, তার ফলে ব্যক্তির ওজন কমে৷ নিয়মিতভাবে শারীরিক মিলনের ফলে পেটের স্থূলতা হ্রাস পায়, আর মাংসপেশীতে জড়তা কম দেখা যায়৷ অনেকে লাখো টাকা ব্যয় করেন ওজন কমানোর পেছনে। এ ক্ষেত্রে তারা উপকার পাবেন।
সৌন্দর্য্য বাড়ে
স্বামী স্ত্রীর শারীরিক মিলনকালে হরমোন নিঃসরনের ফলে রক্তপ্রবাহের মাত্রা বেড়ে যায়। যার প্রভাব পড়ে ত্বকের ওপর৷ এতে সৌন্দর্য্যর রক্তিমচ্ছটা ছড়িয়ে পড়ে। আপনার সারা শরীরের মাদকতা আপনার মধ্যে বিশেষ আভা আর কমনীয়তা আনে৷ শারীরিক মিলন কালে নারীদের শরীর থেকে এস্ট্রোজেন হরমোন নিংসৃত হতে থাকে, যার দ্বারা তাদের চুল এবং ত্বক আকর্ষনীয় হয়ে ওঠে৷
শারীরিক মিলনের সময় সারা শরীরে একপ্রকার স্পা চলে তার দ্বারা রিল্যাক্সেশনের ফলে শরীরে কোন প্রকার দাগ থাকে না বা তা ধীরে ধীরে লুপ্ত হতে থাকে৷
এছাড়াও
স্বামীদের প্রোস্টেটে ক্যান্সার প্রবণতা কমে, হাঁপানি বা জ্বর থেকে মুক্তি, যাদের ফুসফুসের সমস্যা বা জ্বর হয় তাদের সমস্যার সমাধানও হয়ে থাকে৷ কারণ জ্বরও এক ধরণের উত্তেজনা। উত্তেজনায় (ফেভার) উত্তেজনা প্রশমন করে। যেমনটা বিষে বিষ কাটে।
আশা করি বিবাহিত দম্পতিরা আজকের প্রতিবেদনের মূল বক্তব্য থেকে উপকৃত হবেন। সামনে অন্য কোনো প্রসঙ্গ নিয়ে আবার হাজির হবো। আপনাদের সবার জীবন সুখী সমৃদ্ধ হোক। ভাল থাকুন।
বিষয়: বিবিধ
১০৪৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন