পানি কেন খাবেন, কিভাবে খাবেন?

লিখেছেন লিখেছেন েনেসাঁ ১১ মে, ২০১৪, ০৩:৪৯:৩৪ দুপুর



তীব্র পিপাসায় এক গ্লাস পানি আমাদের শরীর-মন তৃপ্ত করে। কিন্তু তাতে কি শরীরের প্রয়োজন মিটছে? কতটুকু পানি পান করা উচিত, আমরা অনেকেই হয়তো জানি না। জানলেও এ সম্পর্কে নানা বিভ্রান্তি আছে।

কী আছে পানিতে

পানির নিজস্ব কোনো শক্তি নেই। খাদ্যের এ উপাদানটিতে নেই কোনো ক্যালোরি, চর্বি। পানি শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের কার্যক্রমে সাহায্য করে। ঋতু, বয়স, ওজনভেদে পানি পান করা উচিত। পিপাসা মেটানো ছাড়াও নানা শারীরবৃত্তীয় নানা কাজ করে থাকে পানি।

কেন খাবেন পানি

* হজম ক্ষমতা বাড়ায়।

* অ্যাজমার টান উঠলে কুসুম গরম পানি খেলে আরাম হয়।

* শরীরের তাপমাত্রা ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে।

* কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। গ্যাস্ট্রিক, আলসার ও বুক-জ্বালা থেকে রেহাই পাওয়া যায়।

* প্রস্রাবের প্রদাহ দূর করে।

* কিডনি-সংক্রান্ত সমস্যা নিয়ন্ত্রণ করে।

* শরীরে পানিস্বল্পতা দূর করে ভারসাম্য বজায় রাখে।

পানি পানের পরিমাণ

ঋতু, বয়স, ওজন ও লিঙ্গভেদে একেকজন একেক পরিমাণ পানি পান করে। তবে নারীর চেয়ে পুরুষরা পরিমাণে বেশি পানি পান করেন। অনেকে ভাবেন, শিশুদের কম পানি পান করলেও চলবে। এটি ঠিক নয়। প্রাপ্তবয়স্ক নারীদের দিনে ৮ থেকে ১০ গ্লাস বা দুই থেকে তিন লিটার পানি পান করা দরকার। অন্যদিকে পুরুষদের প্রায় ১২ গ্লাস পানি পান করতে হবে। এক থেকে ১০ কেজি ওজনের শিশুকে প্রতি কেজি ওজন হিসাবে ১০০ সিসি তরল পান করাতে হবে। ১১ থেকে ২০ কেজি ওজনের জন্য প্রতি কেজি ওজন হিসাবে ১০০০ সিসি ও ২০ কেজির বেশি ওজনের শিশুর জন্য প্রতি কেজি ওজন হিসাবে ১৫০০ সিসি তরল পান করাতে হবে। এ ক্ষেত্রে পানি পান করানোই ভালো। শীতকালের তুলনায় গরমকালেই মানুষ বেশি পানি পান করেন। গরমে ঘাম বেশি হয়। তখন পানিস্বল্পতাও দেখা দেয়।

পানিস্বল্পতার চিহ্নসমূহ

পানিস্বল্পতা দেখা দিলে নাড়ির স্পন্দন কমে যায়। মস্তিষ্কে রক্ত চলাচল ব্যাহত হয়। এ ছাড়া সাধারণ কিছু লক্ষণও দেখা দেয়। পিপাসা বেড়ে যায়। জিহ্বা শুকিয়ে যায়। মাথা ঘোরে। চোখ কোটরে ঢুকে যায়। প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যায়। চেহারায় মলিনতা দেখা দেয়। ত্বক শুষ্ক ও রুক্ষ হয়ে পড়ে। শরীরে দুর্বলতা দেখা দেয়।

পানিস্বল্পতা দূর করার একমাত্র সমাধান পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা। বমি বা ডায়রিয়া না হলে ওরস্যালাইন খাওয়ার প্রয়োজন নেই। তবে সামান্য লবণ মিশিয়ে পানি পান করা যেতে পারে।

পানিস্বল্পতার প্রাথমিক চিহ্নগুলি হচ্ছে-

পিপাসা

মাথা ঘোরা

গাঢ় রঙের প্রস্রাব

প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যাওয়া

মুখ ও ঠোঁট শুকিয়ে যাওয়া

এসব চিহ্নগুলি দেখা দিলে বুঝতে হবে পানিস্বল্পতা হয়েছে। পরবর্তিতে এ থেকে মারাত্মক পানিস্বল্পতা হতে পারে।

মারাত্মক পানিস্বল্পতার চিহ্ন-

চামড়া শুকনো, ভাঁজপড়া। চিমটি কাটলে ধীরে ধীরে পুর্বাবস্থায় ফিরে যায়।

আট ঘন্টা সময়েও প্রস্রাবের বেগ না আসা বা প্রস্রাব করতে না পারা।

খিটখিটে ভাব

চোখ গর্তে ঢুকে যাওয়া

ব্লাড প্রেসার কমে যাওয়া

দুর্বল নাড়ী (পালস)

দ্রুত হৃদস্পন্দন

হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসা

হঠাৎ বেহুঁশ হয়ে পড়ে যাওয়া

সম্পূর্ণ সজ্ঞান না থাকা

গায়ে বল না পাওয়া

বমি বা মলের সঙ্গে রক্ত যাওয়া

অতিরিক্ত পানিস্বল্পতার কারণে নানাবিধ জটিলতা দেখা দিতে পারে এবং একপর্যায়ে শরীরের ভেতর রক্তসঞ্চালন ব্যাহত হতে পারে। এমতাবস্থায় দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি হয়ে ইন্ট্রাভেনাস স্যালাইন নিতে হবে।

শিশুদের শরীরে পানির পরিমান বড়দের তুলনায় কম থাকে বিধায় খুব সহজেই পানিস্বল্পতা দেখা দিতে পারে, তবে স্যালাইন দেয়ার পর বড়দের তুলনায় শিশুরা আরও দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠে।

শিশুদের পানিস্বল্পতার চিহ্নসমূহ-

মাথার মাঝখানে হাড়বিহীন অংশ (ফন্টানেলে) দেবে যাওয়া।

কাঁদলে অশ্রু কম বা না বের হওয়া।

মুখ শুকিয়ে যাওয়া

ডায়পার বা ন্যাপি ভেজানো কমে যাওয়া।

বেশি বেশি ঘুম ঘুম ভাব

দ্রুত শ্বাস নেয়া

পানি পানের নিয়ম

পানি খাওয়ার কোনো সুনির্দিষ্ট নিয়ম নেই। রক্তে ৯৬ শতাংশই পানি থাকে। স্বাভাবিক তাপমাত্রায় রাখা পানিই পান করা উচিত। অনেকেই মনে করেন, বেশি পানি পান করলে শরীরের ওজন বেড়ে যায়। আসলে অতিরিক্ত ঠাণ্ডা পানি পান করলে শরীরের চর্বিগুলো জমাট বাঁধে। সে কারণে অতিরিক্ত ঠাণ্ডা পানি পান করা উচিত নয়।

সকালে ঘুম থেকে উঠে এক গ্লাস পানি খেতে হবে। এতে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা কমে যাবে। খাওয়ার রুচি বাড়বে। ওজন কমাতে অনেকে লেবুপানি খান। লেবুপানিতে সামান্য মধুও মেশানো উচিত। এতে জীবনীশক্তি বেড়ে যায়।

খাওয়ার ন্যূনতম ১০ মিনিট পরে পানি খাওয়া উচিত। তা না হলে হজমে অসুবিধা হতে পারে।

গরমে বাইরে বের হলে সারাদিনের জন্য এক বোতল পানি নিতে ভুলবেন না। প্রয়োজনে গ্রিন টির পানীয়ও নিতে পারেন। এতে শক্তি বৃদ্ধি পায়।

এ ছাড়া রসালো, পানিযুক্ত ফলও খাওয়া উচিত। ব্যায়াম বা হাঁটার মধ্যে প্রতি ১৫ মিনিট পর আধা গ্লাস পানি খাওয়া উচিত। অবশ্যই গরমে বেশি চা বা কফি খাবেন না। ফলের শরবত খেতে পারেন।

প্রয়োজনের অতিরিক্ত পানি পানের দরকার নেই। শরীর, মন ও ত্বক সুস্থ-সতেজ রাখতে হলে পানি খেতে ভুলবেন না।

বিষয়: বিবিধ

১২৫৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File