অষ্ট্রেলিয়ান নও-মুসলিম ফিলমা উইলিম (সালভা)
লিখেছেন লিখেছেন েনেসাঁ ০৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৩, ০৩:৫৮:১৬ দুপুর
ঐশী ধর্মগুলোই হল সত্যিকারের ধর্ম। এইসব ধর্ম,বিশেষ করে,ইসলাম মানবজাতির ওপর সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলেছে। ধর্মের সুন্দরতম উপহার ঈমান বা বিশ্বাস মানুষকে ভবিষ্যত সম্পর্কে দুশ্চিন্তামুক্ত করে এবং এনে দেয় অনাবিল প্রশান্তি। কারণ,ঈমান মানুষের কাছে এটা স্পষ্ট করে যে,এই বিশ্বজগত সৃষ্টির পেছনে স্রস্টার রয়েছে নির্দিষ্ট লক্ষ্য। মানুষ পার্থিব জীবনে যা করে তার জন্য রয়েছে শাস্তি অথবা পুরস্কার এবং আল্লাহ ভাল কাজকে বৃথা যেতে দেবেন না।
মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, ধর্ম মানুষের প্রকৃতির সঙ্গেই মিশে আছে। তাই বর্তমান বিশ্বের মানুষ আবারও ধর্মমুখী হচ্ছেন। অবশ্য অতীতের মতই যেসব ধর্ম মানুষের যুগ-জিজ্ঞাসার জবাব দিতে ব্যর্থ হচ্ছে এবং মানুষের চিন্তাধারা ও বিজ্ঞানের অগ্রগতির সঙ্গে এগিয়ে যেতে পারছে না সেইসব ধর্মকে ত্যাগ করছে চিন্তাশীল ব্যক্তিরা। কারণ, তারা মনে করেন এইসব ধর্ম মানুষের অগ্রগতির পথে বাধা সৃষ্টি করছে। তারা খুঁজে বেড়াচ্ছেন এমন ধর্ম যাতে রয়েছে মানুষের জন্য ব্যাপক আধ্যাত্মিক সম্পদ এবং যাতে রয়েছে মানুষের জীবনের নানা দিকের জন্য সঠিক দিক-নির্দেশনা, সঠিক কর্মসূচি ও সমস্যাগুলোর সমাধান। তারা খুঁজে বেড়াচ্ছেন এমন এক ধর্ম যা ইতিহাসের পরিক্রমায় সেকেলে হয়ে যায়নি। ইরানের ইসলামী বিপ্লবের রূপকার মরহুম ইমাম খোমেনী (র.) এ প্রসঙ্গে বলেছেন,
"আমরা মনে করি একমাত্র যে ধর্মটি সমাজকে সুপথ দেখাতে ও এগিয়ে নিতে পারে তা হল, ইসলাম। বর্তমান বিশ্ব হাজারো সমস্যায় জর্জরিত। যদি এইসব সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার ইচ্ছা থাকে এই বিশ্বের এবং মানুষ যদি সত্যিকারের মানুষ হিসেবে জীবন যাপন করতে চায় তবে তাকে অবশ্যই ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে আশ্রয় নিতে হবে।"
ইসলামকে যারা মুক্তির আশ্রয় হিসেবে বেছে নিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার নও-মুসলিম ফিলমা উইলিম সেইসব সৌভাগ্যবান ব্যক্তিত্বদের মধ্যে অন্যতম। ইসলাম ধর্ম গ্রহণের কাহিনী তুলে ধরতে গিয়ে তিনি বলেছেন: " যখন প্রথমবারের মত সুরা মরিয়ম শুনলাম, অশ্রু সংবরণ করতে পারিনি। এই ঘটনা ছিল আমার জীবনে নতুন অধ্যায়ের সূচনা।"
অস্ট্রেলিয়ার নও-মুসলিম ফিলমা উইলিম ছিলেন মারম্যান গির্জার সক্রিয় নারী কর্মী ও খ্রিস্ট ধর্ম প্রচারক। ১৫ বছর ধরে খ্রিস্ট ধর্ম প্রচারের দায়িত্ব পেয়েছিলেন তিনি। এই ধর্ম প্রচারের জন্য তিনি ঘুরেছেন পথে পথে ও গিয়েছেন ঘর থেকে ঘরে। অবশ্য তিনি যেই গির্জায় কাজ করতেন তা ছিল বর্ণবাদী ও ইহুদীবাদী এবং ফিলিস্তিনি জাতির বিরোধী। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন,
"মারম্যান গির্জার অনুসারী খ্রিস্টানরা কেবল ফিলিস্তিনি জাতিরও বিরোধী নয়। তারা কৃষ্ণাঙ্গদেরও বিরোধী। এরা এতটাই বর্ণবাদী যে তাদের গির্জায় কৃষ্ণাঙ্গদের প্রবেশ নিষিদ্ধ। এই গির্জার লোকেরা ১৯৬৭ সালের যুদ্ধে আরবদের ওপর ইসরাইলের বিজয়ের জন্য উতসব পালন করে আসছে। এ ধরনের উতসবে অংশ নেয়ার জন্য ছোটবেলা থেকেই আমার খুব খারাপ লাগত এবং আমি বলতাম, নারী ও শিশুদের হত্যার জন্য কি উতসব করতে হয়? আর এই উতসবকে খারাপ লাগত বলে স্রস্টার সাহায্য চাইতাম এবং আমাকে সুপথ দেখানোর জন্য প্রার্থনা করতাম। যদিও আমি খ্রিস্ট ধর্মের জন্য প্রচারণায় অবিচল ছিলাম তবুও সব সময়ই মনের মধ্যে কিছু প্রশ্ন জাগত। যেমন, আল্লাহর আবার ছেলে বা পুত্র থাকে কি করে? কিংবা কেন আমাদের আদি পিতা হযরত আদম (আ.)'র গোনাহ বা পাপের বোঝাগুলো আমরা বহন করব?"
অস্ট্রেলিয়ায় অবস্থানরত একজন ফিলিস্তিনির বাড়ীতে খ্রিস্ট ধর্মের দাওয়াত দিতে গিয়ে ফিলমা উইলিমের জীবনের মোড় ঘুরে যায়। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন,
"ওই ফিলিস্তিনিরা আমায় জানালেন যে আমাদের ধর্মগ্রন্থ পবিত্র কুরআনে হযরত মরিয়মের (সালামুল্লাহ আলাইহা) নামে একটি সুরা বা অধ্যায় রয়েছে। এরপর তারা ওই সুরা পড়ে শোনাতে লাগলেন। যেখানে (কুরআনের ১৯ নম্বর সুরায়) আল্লাহর বাণীতে এসেছে: « বর্ণনা কর এই কিতাবের মরিয়মের [ কাহিনীর ] কথা। যখন সে তার পরিবারবর্গ থেকে পৃথক হয়ে [নিরালায় ] পূর্ব দিকে (তথা বায়তুল মুকাদ্দাসের) এক স্থানে আশ্রয় নিল। সে তাদের কাছ থেকে [ আড়াল করার উদ্দেশ্যে ] পর্দা স্থাপন করলো (যাতে ওই নির্জন স্থান সব দিক থেকে ইবাদতের জন্য উপযুক্ত হয়)। অতঃপর আমি আমার ফেরেশতাকে পাঠালাম এবং সে তার সামনে পূর্ণ মানবাকৃতিতে আত্মপ্রকাশ করলো। মারইয়াম বলেছিলো, " আমি তোমা থেকে দয়াময় [আল্লাহ্র ] আশ্রয় প্রার্থনা করছি: যদি তুমি আল্লাহ্কে ভয় কর [ তবে আমার কাছে এস না ]।' সে বলেছিলো, " আমি তো তোমার প্রভুর পাঠানো দূত, তোমার কাছে [ ঘোষণা করতে ] এসেছি এক পবিত্র পুত্র সন্তান উপহারের [ বার্তা ]। (সুরা মরিয়ম, ১৬-১৯) » "
ফিলমা উইলিম বলছিলেন, "তারা যখন এই আয়াতগুলোর ইংরেজি অনুবাদ আমাকে পড়ে শোনালেন তখন আমার চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছিল। মনে হল যেন বিদ্যুতের স্ফুলিঙ্গ আমাকে আঘাত করেছে। আমি বিস্মিত হলাম যে মুসলমানদের ধর্মগ্রন্থে মরিয়মের ঘটনা এমন সুন্দর ও সুললিত ভাষায় বর্ণনা করা হয়েছে! এ ঘটনা আমার মন ও হৃদয়কে অনেক দিন আচ্ছন্ন করে রাখে। কুরআন পড়ার আগ্রহ আমার মধ্যে দিনকে দিন প্রবল হতে থাকে। এভাবে ইসলামের পথ আমার সামনে খুলে যায়। ফলে ইসলাম নিয়ে গবেষণার সিদ্ধান্ত নিলাম। ৫ বছর ধরে এ নিয়ে গবেষণা করলাম এবং এমনকি ইসলাম বিরোধীদের মতামত নিয়েও গবেষণা করলাম। এরপর একদিন আমার বাসা থেকে ৮০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত একটি ইসলামী সেন্টারে গিয়ে ইসলাম ধর্মের বিধানগুলো শিখতে লাগলাম এবং হিজাব বা পর্দাকেও বেছে নিলাম। পরবর্তীতে ইসলামী জ্ঞানগুলো গভীরভাবে জানার ও শেখার পদক্ষেপও নিলাম। বর্তমানে আমি অস্ট্রেলিয়ায় ইসলাম ধর্ম প্রচারক হিসেবে কাজ করছি। মুসলমান হওয়ার পর এখন আমার নাম সালভা।"
বিষয়: বিবিধ
৮৩০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন