জাপানি নও-মুসলিম তোশিও কুরোদা

লিখেছেন লিখেছেন েনেসাঁ ১১ সেপ্টেম্বর, ২০১৩, ০২:৩৬:০৩ দুপুর



জাপানি নও-মুসলিম তোশিও কুরোদা তার দেশের একজন ইসলাম- বিশেষজ্ঞ ও লেখক। তিনি ইসলামী অর্থনীতির ওপর ব্যাপক গবেষণা করেছেন। তোশিও'র জন্ম হয়েছিল এক বৌদ্ধ পরিবারে। ছাত্র জীবনে ফরাসি ভাষা ও সাহিত্য কলেজের একজন অধ্যাপক তাকে ইসলাম নামক এক নতুন ও বিশাল জগতের সঙ্গে তার পরিচয় করিয়ে দেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন,

"আমার জন্ম হয়েছিল টোকিওতে। আমি জাতিগতভাবেই জাপানের নাগরিক। মাধ্যমিক পর্যায়ের পড়াশুনা শেষ করে একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ফরাসি ভাষা ও সাহিত্য কোর্সে ভর্তি হই। এর পাশাপাশি বিশ্বের নানা দেশের সংস্কৃতি এবং বিশেষ করে, জাপান ও পাশ্চাত্যের সংস্কৃতি সম্পর্কে পড়াশুনা করার সময় পরিচিত হই অধ্যাপক 'ইজুতসু'র সঙ্গে। এরপর দুই মুসলিম দার্শনিক মোল্লা সাদরা ও সোহরাওয়ার্দির চিন্তাধারা নিয়েও পড়াশুনা করেছি। তাদের চিন্তাধারা সম্পর্কে পড়াশুনা করতে গিয়েই ইসলাম সম্পর্কে জানার আগ্রহ জন্মে আমার মধ্যে। অবশ্য খ্রিস্ট ধর্ম সম্পর্কেও আমার সংক্ষিপ্ত ধারণা ছিল। কিন্তু ইসলামের সঙ্গে পরিচয় হওয়ার পর পরই আমি মুসলমান হয়ে যাই। বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশুনার বিষয় পরিবর্তনের পর ইসলাম সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানার জন্য আরবী ভাষা শিখতে থাকি। " তোশিও কুরোদা আরো বলছেন:

"ব্যাপক অধ্যয়নের সুবাদে ইসলাম সম্পর্কে সঠিক ধারণা অর্জন করতে সক্ষম হই। ইসলামের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ইতিহাস সম্পর্কে কিছু বই পড়ার পর জাপানি ভাষায় ইসলাম সম্পর্কিত কয়েকটি বই অনুবাদ করেছি। এই বইগুলোর মধ্যে কয়েকটি বইয়ের বিষয়বস্তু ছিল ইসলামী দর্শন, ইসলামী ব্যাংকিং ও অর্থনীতি।"

জাপানি নও-মুসলিম কুরোদা আরো বলেছেন, "অন্য ধর্মগুলোর তুলনায় ইসলামের শ্রেষ্ঠত্বের দিকগুলো হল, একত্ববাদ, ইসলামী আইন ও মুসলিম উম্মাহ। এই বিষয়গুলো পরস্পর-সম্পর্কিত। তাই এই দিকগুলোকে পৃথকভাবে বিশ্লেষণ করলে ইসলামকে বোঝা যাবে না। ইসলাম ইহলৌকিক বা পার্থিব বিষয়গুলোর পাশাপাশি অতি-প্রাকৃতিক বা অলৌকিক এবং পারলৌকিক বিষয়গুলোর প্রতিও গুরুত্ব দেয়। অন্য কথায় ইসলামী শরিয়ত আধ্যাত্মিক ও বস্তুগত ক্ষেত্রে কিছু বাস্তব লক্ষ্য অর্জন করতে চায়। এই দিক থেকে বলা যায়, অন্য কোনো ধর্মের বিধানই ইসলামের মত নয়। ইসলামের সৌন্দর্য কেবল পারলৌকিক ও ধর্মীয় বিষয়েই সীমিত নয়। মানুষের সামাজিক জীবন সম্পর্কেও এ ধর্মে রয়েছে পূর্ণাঙ্গ ও হৃদয়গ্রাহী অনেক বিধান। মুসলমানদের ঈমান তাদের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বিষয়গুলোকেও গভীরভাবে প্রভাবিত করে। আর এটাও ইসলামের আরো এক অনুপম সৌন্দর্য।"

ইসলামের একত্ববাদ সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে জাপানি নও-মুসলিম তোশিও কুরোদা বলেছেন, "খোদা এক ও অদ্বিতীয় ইসলামের এই মূলনীতির অর্থ হল, বিশ্বে সব কিছুই হল আল্লাহর জন্য। এই সুবিশাল বিশ্ব চরাচর ও তার অতুল সৌন্দর্যগুলোর স্রস্টা হলেন এক আল্লাহ এবং অস্তিত্বের জগত তিনিই পরিচালনা করেন। সৃষ্টি জগতের বিস্ময়কর নানা দিক আমাদের কাছে এটা তুলে ধরছে যে, এর স্রষ্টা হলেন এমন মহাজ্ঞানী ও কৌশলী যে কেউই তাঁর সমকক্ষ নয়। কেবল তিনিই বিশ্বজগতের সব সৌন্দর্যের উতস। অস্তিত্ব-জগতের সব কিছুই আল্লাহর ইচ্ছা অনুযায়ী সৃষ্টি হয়েছে। আধ্যাত্মিক ও বস্তুগত সব বিষয়ের জন্যই এই নীতি প্রযোজ্য বলে আমি মনে করি। ইসলামী বিশ্বাসের সব দিকই কোনো না কোনোভাবে মানুষের সামাজিক জীবন ও ততপরতার সঙ্গে সম্পর্কিত। অর্থনীতি, পরিবার, রাজনীতি ও সংস্কৃতিসহ জীবনের সব ক্ষেত্রেই রয়েছে এই মহান ধর্মের কর্মসূচি। অথচ ইসলাম ছাড়া অন্য ধর্মগুলোর এই বৈশিষ্ট্য নেই, কিংবা কিছু কিছু কর্মসূচি থাকলেও তা খুবই দুর্বল। ধর্মীয় বিষয় ছাড়াও অর্থনীতিসহ অন্য অনেক বিষয়ে ইসলামের রয়েছে পূর্ণাঙ্গ বিধান।"

জাপানি নও-মুসলিম তোশিও কুরোদা পুঁজিবাদী অর্থনীতির সঙ্গে ইসলামী অর্থনীতির তুলনা করে বলেছেন,

"অর্থনৈতিক পরিস্থিতি সংক্রান্ত কর্মসূচি হল বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে সমস্যাপূর্ণ বিষয়। অর্থকে যদি পণ্যে রূপান্তর করা যায় তাহলে তা খুবই ভাল বিষয়। কিন্তু পুঁজিবাদের বিকাশের ফলে অর্থ হয়ে পড়েছে সম্পদ জমিয়ে রাখার মাধ্যম। এই অবস্থা মোটেই কাম্য নয়। বর্তমান যুগে যাদের বিপুল অর্থ রয়েছে তারা কোনো একটি স্থানে অর্থ বিনিয়োগ করেন এবং কিছু দিন পর তার বিপুল পুঁজি অন্য জায়গায় সরিয়ে নেন। আর এভাবে তারা বিপুল অংকের অর্থ মুনাফা বা লাভ হিসেবে অর্জন করছেন। কিন্তু ইসলামী অর্থনীতিতে লাভ বা মুনাফার ভিত্তি হল কাজ ও প্রচেষ্টা। অবশ্য এই অর্থনীতিতেও পুঁজির একটা গুরুত্ব রয়েছে। মুসলমানদের উচিত ইসলামী অর্থনীতি ও ব্যাংকিংয়ের নানা সুবিধাগুলো সম্পর্কে চিন্তাভাবনা করা বা জ্ঞান অর্জন করা। যদিও বর্তমান বিশ্বে পুঁজিবাদী ব্যবস্থা অত্যন্ত শক্তিশালী, কিন্তু ইসলামী অর্থনীতির পথ খোলা হলে তা পুঁজিবাদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে সক্ষম হবে। ইসলামের রয়েছে সবচেয়ে ভাল অর্থনৈতিক ব্যবস্থা। কিন্তু বর্তমান বিশ্বে তার প্রয়োগ কিভাবে করতে হবে সেটা অবশ্যই জানতে হবে।"

জাপানি নও-মুসলিম তোশিও কুরোদা ইরানের ইসলামী বিপ্লব প্রসঙ্গে বলেছেন,

"ইরানের ইসলামী বিপ্লবের বিজয়ের আগে জাপানে ইসলাম বিষয়ক কোনো বই প্রকাশিত হলে তার কপির সংখ্যা হত এক হাজারেরও কম। কিন্তু আল্লাহর ইচ্ছায় এই বিপ্লবের পর এইসব বইয়ের অনেক বেশি সংখ্যক কপি এখন বিক্রি হচ্ছে। কিছুকাল আগে আমি নিজে ইসলামের দৃষ্টিতে আত্মা ও আধ্যাত্মিকতা বিষয়ে একটি বই লিখেছি জাপানি ভাষায়। মাত্র এক মাসের মধ্যে এর বিশ হাজারেরও বেশি কপি বিক্রি হয়েছে।"

বিষয়: বিবিধ

৮৮৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File