“হিজাব করা চারটি খানি কথা না” ---মেয়েটি এভাবেই প্রকাশ করল তার অনুভূতিগুলো।
লিখেছেন লিখেছেন েনেসাঁ ০২ সেপ্টেম্বর, ২০১৩, ০৩:৪৭:৫৫ দুপুর
আমি যখন হিজাব (পর্দা) শুরু করি নাই তখন কোন হিজাব পরা মেয়ে দেখলে মনে মনে ভাবতাম মেয়ে টা আমার চাইতে বেটার মুসলিম। কেননা সে পেরেছে আমি এখনও পারছি না। মনে মনে নিজেকে ধিক্কার দিতাম। কখনই ভাবি নাই ওরা বাঙালি না। ওদের প্রতি শ্রদ্ধা বেড়ে যেত। হিজাব করা চারটি খানি কথা না। একজন হিজাবি অনেক দিক থেকে অনেকের থেকে শক্তি সম্পন্ন কেননা তারা বাহ্যিক অনেক কিছুই থেকে নিজেদের বঞ্ছিত করেন শুধু মাত্র আল্লাহর নির্দেশ মান্য করার জন্য।
আলহামদুলিল্লাহ।
যেই দেশে সবাই হিজাব পরে না,সেখানে অনেক বিপত্তির সন্মুক্ষিণ অবশ্যই হতে হয় । আর এই বিপত্তির গায়ে তেল ঢেলে আগুন জ্বালান কিছু আলট্রা বাঙালি। অন্য ধর্মের আচার-আচরণ পোশাক আশাক নিয়ে আপনারা কথা বলছেন না। বলাও উচিত না। কারণ বাংলাদেশে সব ধর্মের মানুষ বাঙালি। আপনারা আওয়ামী লীগের সমর্থক সেজে ইসলাম বিরোধী কথা বলে লীগকেই একটা বিশাল ধর্ম অবলম্বী গোষ্ঠিকে লীগের বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়ে দিচ্ছেন। আপনাদের এই সকল মূর্খতার দায়ভার হিসাবে লীগ হারাচ্ছে জন সমর্থন। যারা আল্লাহ্র নির্দেশ পালন করেন তাদের প্রতি শ্রদ্ধা আসাটাই স্বাভাবিক। আমি নিজের অবস্থান থেকেই বলছি আমি হিজাব পরে বাঙালিয়ানা ছেড়ে দেই নাই। আগেও যতটুকু বাঙালি ছিলাম এখনও ঠিক ততটাই আছি। আমার মতো অনেকেই নারী-পুরুষ নির্বিশেষে এই কথাই বলবেন। ১৯০০ শতকের শেষের দিকে রবি ঠাকুরের বড় ভাইয়ের বউ ইন্দিরা দেবীর মা প্রথম ব্লাউজ এর প্রচলন করেন। সেই থেকে শাড়ি ব্লাউজ এসেছে। ( সূত্র: প্রথম আলো ) সভ্যতার বিকাশে বাঙালি ব্লাউজ পরা শিখেছে, সার্ট প্যান্ট পরছে… মেয়েরা সালোয়ার-কামিজ পরছে, তাহলে কেউ যদি নিজের ইচ্ছায় হিজাব, নেকাব ,বরখা পড়ে তাহলে দোষ কোথায়? মানুষের পোশাকটাই পর্দা সুতরাং যার যার রুচি অনুযায়ী পোশাক পর্দা করবেন এটাই স্বাভাবিক। বিশ্বাসীরা তাদের বিশ্বাসকে অবলম্বন করে জিবনাচার পালন করবেন এতাই-তো স্বাভাবিক ।
খ্রিস্টান ন্যান’রা এমন যারা ইহুদি ধর্মানুসারী তারাও পর্দা করে থাকেন তখন কি তাঁরা আধুনিক সভ্যতা থেকে দূরে থাকেন…? এমনকি গ্রাম বাংলার মেয়েরা, মহিলা ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে (হিন্দুসহ) সবাই ঘোমটা দিয়ে থাকেন … তারাই যদি বাঙালি না হোন তাহলে কি শুধু গুটি কয়েক শহুরে মানুষের কাছে বাঙালিত্ব ইজারা দিয়েছে বাঙালিরা স্লিভ লেস ব্লাউজ, কপালে বড় টিপ না দিলে যে কেউ বাঙালি না সেটা মনে হয় ঠিক না। আর যদি তাই হতো তবে চিন্তা করুন প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী নেত্রী, মহিলা মন্ত্রীদেরকে, যে ওনারা স্লিভ লেস ব্লাউস আর কপালে টিপ পরে ভাষণ দিচ্ছেন। বেগম রোকেয়া, জাহানারা ইমাম ওনারা জিন্স টি-শার্ট কিংবা ফতুয়া পরে আন্দোলন করেছেন। হয়ত তখন বুঝতাম যে, না , বাঙালি হতে হলে এই পোশাক বাঞ্ছনীয়। যারা হিজাবকে বাঙালিয়ানার সন্মুক্ষিণ করেছেন তাদের জ্ঞাতার্থে, জিন্স, স্লিভ লেস , হল্টরা নেক, এমন কি কামসূত্রের মডেলদের মতো পোশাক যদি বাঙালিয়ানার পরিপন্থি না হয় তবে হিজাব এর মতো সুন্দর শালীন পোশাক বাঙালি পরিপন্থি হবে কেন? হিজাব (পর্দা ) করার নির্দেশ পবিত্র কোরআনে উল্লেখিত আছে। একজন মুসলিম সেটাই পালন করেন। জাতি হিসেবে স্বাধীনতা পরিপন্থি যে কোনো কিছুকেই একজন বাঙালি ঘৃণা করে তারা হিজাবি কিনবা জিন্স বা ভিন্ন পোশাকি যে কেউ হতে পারেন ।
হিজাব সম্পর্কে বহু হাদিস দেয়া যায় কিন্তু আমার লেখাটা হিজাব কেন পরবে সেটা নয় , আমার লেখাটা যে একজন হিজাবি ও ১০০% বাঙালির নিরসন্দেহে। এইটা জাতিগত ব্যাপার না পোশাক নির্ধারণ সেই ব্যাক্তির নিজের রুচি, পারিবারিক, সামাজিক , পারিপার্শ্বিক ব্যাপারটাই বেশি। যেহেতু জাতিও পোশাক বলে কিছু নির্ধারিত নাই। আপনারা খুব গলা ছেড়ে অনেক কথাই বলেন তা হলে সালোয়ার দিয়ে পাঞ্জাবি পরেন কেন ? সালোয়ার (পাঞ্জাবি) কামিজ কোন দেশে বেশি প্রচলিত? পাকিস্তানীদের পোশাক সালোয়ার কামিজ যা কিনা পাঞ্জাবি নামে আমরা পরি। ওরা শেরওয়ানি, আজকান সালোয়ার কামিজ এই সব পরেন। যা আমাদের দেশের খুব খ্যাতি সম্পন্ন বাঙালিরাও পরেন। তাদের ব্যাপারে কী বলবেন ? আসলে বাঙালিদের কোন পোশাক নির্ধারিত নেই। আর কোন পোশাক দিয়ে বাঙালিয়ানা যাচাই করাটা যুক্তি পূর্ণ না। বরং নিজেদের শরম ঢাকবার এক নির্লজ্জ্ব ব্যর্থ চেষ্টা। যেহেতু আপনারা ইসলাম পরিপন্থী কাজ করছেন আর সেটা করতে হলে গায়ের জড়ে হিজাব, দাড়ি-টুপিকে ছোট করতে হয় সেহেতু আপনি দাড়ি-টুপিকে ছোট করছেন। যদি জীবিকার জন্য বাঙালিত্বকে ছোট করতে হতো - আপনার যে আঁতলামো তাতে - আপনি বড় টিপ দেয়া নিয়েই উপহাস করতেন। আপনাদের যা ইচ্ছা পরুন অন্যকেও যা ইচ্ছা পরতে দেন । কারও স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ ঠিক না। গণতন্ত্রের পরিপন্থী।
বিষয়: বিবিধ
৪৫৬১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন