‘ড্রোন কপ্টার’ বানাল কুয়েট শিক্ষার্থী
লিখেছেন লিখেছেন েনেসাঁ ২০ আগস্ট, ২০১৩, ০৬:০২:০৬ সন্ধ্যা
চালকবিহীন উড়োজাহাজের কথা আমরা সকলেই জানি। চালকবিহীন এবং নিঃশব্দে চলা উড়োজাহাজের (ড্রোন) মাধ্যমে বোমা হমলার কথাও আমরা শুনে থাকি। বিশেষ করে আমেরিকা কর্তৃক পাকিস্তানে ড্রোন হামলার সুবাদে ড্রোন-এর ভয়াবহতা ও ধ্বংসাত্মক তৎপরতা সম্পর্কে সবাই জানে।
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়-কুয়েটের এক শিক্ষার্থী ড্রোন-এর আদলে চালকবিহীন একটি উড়ন্ত যান তৈরি করেছেন। তবে তা বড়ো নয়, আকারে খুবই ছোট। যাকে বলা হচ্ছে ‘কোয়াডকপ্টার’। কোনো অনুসন্ধানী কাজে যেমন- আগুন লাগা কোন ভবনের কক্ষে কে কোথায় কি অবস্থায় আছে তা এই কোয়াডকপ্টারের সাহায্যে জানা যেতে পারে, ছবিও সংগ্রহ করা যেতে পারে।
কোয়াডকপ্টার বা উড়ন্ত যানটি তৈরি করেছেন কুয়েটের তড়িৎ ও ইলেক্ট্রনিক্স বিভাগের শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ আল মামুন খান, ডাকনাম দীপ।
এটি তার চতুর্থ বর্ষের থিসিস প্রজেক্ট ছিল। এক বছরের প্রচেষ্টায় এটি তৈরি করা সম্ভব হয়েছে। তাকে সহযোগিতা করেছেন বন্ধু রিজভি আহমেদ। গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেছেন সহপাঠী গোলাম সুলতান মাহমুদ রানা।
এই উড়ন্ত যানটি সম্পর্কে কুয়েটের তড়িৎ ও ইলেক্ট্রনিক্স বিভাগের প্রফেসর ড. এমডি শাহজাহান বলেন, ‘উন্নত বিশ্বে এই ধরনের যান আছে। আমাদের সাফল্য হচ্ছে, দেশে এই প্রথম এ ধরনের একটি উড়ন্ত যান একজন শিক্ষার্থী তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘দুর্যোগপ্রবণ আমাদের এই দেশে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার অনেক ক্ষেত্রে এই যানটি ব্যবহার করা যেতে পারে।’
জানা যায়, এই কোয়াডকপ্টারটি বহুবিধ কাজে ব্যবহার করা সম্ভব। এটি সোজাভাবে উঠতে ও নামতে পারে বলে সাধারণ উড়োজাহাজের মত এটির উড্ডয়নে বড় কোন জায়গার দরকার হয়না। এমনকি এটি একটি কক্ষের মধ্যে চালানো সম্ভব।
কোন স্থানে বিষাক্ত গ্যাসের অস্তিত্ব আছে কি-না, এটি ব্যবহার করে তা চিহ্নিত করা সম্ভব। কোন নিউক্লিয়র রি-অ্যাক্টর দুর্ঘটনায় পড়লে সেখানে রেডিয়েশনের মাত্রা নির্ণয়ের জন্যও এটি ব্যবহার করা যাবে।
এটি যে জায়গায় পাঠানো হবে, সেখানকার লাইভ ভিডিও ছবিও পাঠাতে সক্ষম। এটিকে এক থেকে দুই কিলোমিটার দূরে পাঠিয়ে দূর-নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে সেখানকার বাস্তব অবস্থা জানা সম্ভব।
কোয়াডকপ্টার মূলতঃ একটি উড়ন্ত যান যাকে কন্ট্রোল করা হয় চারদিকে চারটি ব্রাশলেস ডিসি মটর এবং প্রোপেলর দ্বারা।
এটি সাধারণ উড়োজাহাজের মত রোল, পিচ এবং ইও এই তিন অক্ষ বরাবর চলতে পারে। চারটি মটরের গতি পরিবর্তন করে এটি তিন অক্ষ বরাবর ঘুরানো যায়। আর এটি স্বাভাবিক অবস্থায় যেকোন একটি পয়েন্টে ভেসে থাকতে পারে। একে হোভারিং অবস্থা বলা হয়। এ অবস্থায় চারটি মটরের গতি পুরোপুরি সমান থাকে এবং পুরো ক্রাফটি ভূমির সাথে সমান্তরাল অবস্থায় থাকে।
কোয়াডকপ্টারটি তৈরিতে ০ দশমিক ৫ এলুমিনিয়াম স্কয়ার বার ব্যবহার করা হয়েছে। দুটো দুই ফুট বার একটি আরেকটির সাথে ৯০ ডিগ্রী কোণ করে বসানো হয়েছে। এই দুটি বারের মধ্যবিন্দুতে কোয়াডকপ্টারটির ভরকেন্দ্র অবস্থিত। এই ভরকেন্দ্র থেকে চারটি মটর লম্বালম্বিভাবে সমান দূরত্বে অবস্থিত।
এয়ার ক্রাফটটি নিয়ন্ত্রণের জন্য রয়েছে একটি আইএমইউ বোর্ড। এতে আছে থ্রি-এক্সিস জাইরো, এক্সেলেরোমিটার এবং ম্যাগনেটোমিটার। এক্সেলেরোমিটারটি তিন অক্ষ (রোল, পিচ এবং ইও) বরাবর এয়ারক্রাফটটির এক্সিলারেশন সম্পর্কিত তথ্য মেইন প্রসেসরে পাঠায়। জাইরোস্কোপ সেন্সরটি তিন অক্ষ বরাবর, এটি কপ্টারটি হেলানো অবস্থা সম্পর্কিত তথ্য প্রসেসরে পাঠায়।
রিয়েল টাইম ডাটা রিডিং এবং তা ব্যাখ্যা করার জন্যে পিআইডি কন্ট্রোলার ব্যবহার করা হয়েছে। এটি একটি সফটওয়্যার যা ডাটা ইনপুট নিয়ে সেটিকে প্রসেস করে বুঝতে পারে যে কপ্টারটি কোন পজিশনে আছে। এটি সেই অনুয়ায়ী মটরগুলোকে সিগনাল পাঠায়। মটরগুলো প্রসেসরের পাঠানো কমান্ড অনুযায়ী তাদের গতি পরিবর্তন করে।
দীপ বলেন, এই কোয়াডকপ্টারটি এখন পুরোপুরি স্বয়ংক্রিয়ভাবে চালানোর জন্য কাজ চলছে। এছাড়াও জিপিএস-এর মাধ্যমে একে নিয়ন্ত্রণ করে পরিচালনা করার কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। এটিকে উন্নততর ও ব্যবহারোপযোগী করে তুলতে সরকারি ও বেসরকারি সহযোগিতা প্রয়োজন বলে তিনি উল্লেখ করেন
দীপ বলেন, প্রায় এক বছরের চেষ্টায় দেশের বাইরে থেকে প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ আনিয়ে এটি তৈরি করা হয়েছে। এই ধরনের কাজে অনেক অর্থের প্রয়োজন হয়। স্পন্সর জোগাড়ের চেষ্টা করেছি, পাইনি। অবশেষে একাজে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন অনেক সিনিয়র ভাই, বিশেষ করে আমার বড় ভাই। তার উৎসাহ ও সহযোগিতায় শেষ পর্যন্ত এটি তৈরি করা সম্ভব হয়েছে।
কুয়েটের শিক্ষার্থীরা এর আগে লাইন ফলোয়ার, মেজ সলভার, অবস্টাকল এভয়ডার, গার্বেজ ক্লিনার, ভয়েস কন্ট্রোল রোবট তৈরি করেছেন। এবারে তার সাথে যুক্ত হলো ‘কোয়াডকপ্টার’।
বিষয়: বিবিধ
১৪৪৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন