‘অ্যাপ্লিকেটর’ উদ্ভাবন করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন কৃষি প্রকৌশলী ড. আবদুল ওহাব, ওবামাও মুগ্ধ
লিখেছেন লিখেছেন েনেসাঁ ১৮ আগস্ট, ২০১৩, ০১:০৪:৪৯ দুপুর
কৃষকের জন্য সহজে বহনযোগ্য ও স্বল্পমূল্যের গুটি ইউরিয়া প্রয়োগ যন্ত্র বা ‘অ্যাপ্লিকেটর’ উদ্ভাবন করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন কৃষি প্রকৌশলী ড. আবদুল ওহাব। তার যন্ত্র দেখে খুশি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাও। ‘ইন্টারন্যাশনাল ফার্টিলাইজার ডেভেলপমেন্ট সেন্টার’ বা আইএফডিসির বাংলাদেশ কার্যালয়ে কর্মরত ড. ওহাব বছর দেড়েক আগে যন্ত্রটি উদ্ভাবন করেন। জুন মাসে সেনেগালে একটি কৃষি প্রযুক্তি মেলায় ওবামা অ্যাপ্লিকেটরটি দেখেন। তখন সেখানে উপস্থিত আইএফডিসির একজন প্রতিনিধি ওবামাকে জানান, যন্ত্রটির উদ্ভাবক একজন বাংলাদেশী। বিশ্বের অন্যান্য দেশের কৃষকদের মধ্যেও সাড়া ফেলেছে এ অ্যাপ্লিকেটরটি। সূত্র : ডয়চে ভেলে। গুটি ইউরিয়া এক ধরনের নাইট্রোজেন সার যার উদ্ভাবকও বাংলাদেশের বিজ্ঞানীরা। এখন সেটা ছড়িয়ে পড়ছে বিশ্বের অন্যান্য ধান উৎপাদনকারী দেশেও। সাধারণ ইউরিয়া থেকেই গুটি ইউরিয়া তৈরি হয়। দেখতে অনেকটা ন্যাপথালিনের মতো। এটা মাটির ৭ থেকে ১০ সেন্টিমিটার গভীরে পুঁতে দিতে হয়। এতে লাভ হয় দুটো। এর ফলে গাছ গুটি ইউরিয়া থেকে প্রায় ৭০ ভাগ নাইট্রোজেন নিতে পারে, অর্থাৎ নষ্ট হয় মাত্র ৩০ ভাগ। অন্যদিকে সাধারণ ইউরিয়া ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ব্যবহার করার কারণে গাছ মাত্র ৩৩ ভাগ নাইট্রোজেন পায়। আর বাকি ৬৭ ভাগই অপচয় হয়। গুটি ইউরিয়া ব্যবহারের দ্বিতীয় সুবিধাটি হচ্ছে, গাছ পর্যাপ্ত নাইট্রোজেন পাওয়ায় ধানের উৎপাদন ভালো হয়। অর্থাৎ ইউরিয়ার অপচয় কম হওয়ায় স্বল্প খরচে অধিক ফলন পাওয়া যায়। কিন্তু গুটি ইউরিয়া মাটির গভীরে লাগাতে হয় বলে কৃষকদের কাছে এতদিন সেটা তেমন একটা জনপ্রিয়তা পায়নি। এভাবে সার দিতে কৃষককে কোমর নোয়াতে হয় বলে বিষয়টা যেমন কষ্টকর, তেমনি সার একটা রাসায়নিক উপাদান হওয়ায় তা হাতে করে দেয়াটাও স্বাস্থ্যসম্মত নয়। গুটি ইউরিয়ার এসব সমস্যা দূর করতে কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী আইএফডিসিকে একটা অ্যাপ্লিকেটর উদ্ভাবন করার পরামর্শ দেন যেন কৃষকরা সহজে তা জমিতে দিতে পারে। এ উদ্যোগের ফলে উদ্ভাবিত অ্যাপ্লিকেটরটির সুবিধা দুটি। এটা প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি হওয়ায় ওজন মাত্র দেড় কেজি। ফলে কৃষকরা সহজেই সেটা বাড়ি থেকে ক্ষেতে নিয়ে যেতে পারেন। আর আরেকটা বড় সুবিধা হচ্ছে দামে অনেক সস্তা, মাত্র সাড়ে চারশ’ টাকা। আইএফডিসির বাংলাদেশ কার্যালয়ের আবাসিক প্রতিনিধি ইশরাত জাহান অ্যাপ্লিকেটরটি উদ্ভাবনের পেছনের কথা জানান। তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট ওবামার ‘ফিড দি ফিউচার’ প্রকল্পের আওতায় ইউএসএআইডির কাছ থেকে অর্থ সহায়তা পেয়ে তারা কৃষিমন্ত্রীর পরামর্শ বাস্তবায়ন করেছেন। প্রাপ্ত অর্থের একটা অংশ তারা বাংলাদেশের কয়েকটি সংস্থাকে দিয়েছেন, যেন তারা সেটা অ্যাপ্লিকেটর উদ্ভাবনের গবেষণায় কাজে লাগাতে পারে। এক পর্যায়ে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় একটা অ্যাপ্লিকেটর উদ্ভাবন করেছিল। তবে সেটাতে প্রতিবার একটি করে গুটি ইউরিয়া ঢোকাতে হতো। ফলে কৃষকরা এতে আগ্রহী হচ্ছিলেন না। পরবর্তী সময়ে আইএফডিসির বিজ্ঞানী ড. ওহাব কয়েক মাস ধরে দিনরাত পরিশ্রম করে ওই যন্ত্রটিরই একটি উন্নত সংস্করণ বের করেন। ফলে এখন এ অ্যাপ্লিকেটর দিয়ে একসঙ্গে ৫০-৬০টা গুটি ইউরিয়া জমিতে প্রয়োগ করা সম্ভব হচ্ছে বলে জানান ড. ওহাব।
ড. ওহাব যা বললেন : অ্যাপ্লিকেটরটি দিয়ে আপাতত এক ঘণ্টায় ৮ থেকে ১০ শতাংশ জমিতে গুটি ইউরিয়া প্রয়োগ করা যায়। সে হিসাবে এক বিঘা বা ৩৩ শতাংশ জমিতে সার প্রয়োগ করতে প্রায় তিন ঘণ্টা লাগার কথা। তবে এর চেয়েও উন্নতমানের যন্ত্র উদ্ভাবনের চেষ্টা করে যাচ্ছেন বলে জানান ড. ওহাব। তিনি বলেন, এ অ্যাপ্লিকেটরটির দাম একটু বেশি হবে। আড়াই হাজার টাকার মতো। তবে সুবিধা হলো উন্নত সংস্করণের অ্যাপ্লিকেটরটি দিয়ে ঘণ্টায় ১৫ থেকে ২০ শতাংশ জমিতে গুটি ইউরিয়া প্রয়োগ করা যাবে। আগামী বোরো মৌসুমেই সেটা পাওয়া যেতে পারে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
বিষয়: বিবিধ
১০৭৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন