মানুষ যতক্ষণ ইতিকাফ অবস্থায় থাকে ততক্ষণ তার প্রতিটি মুহূর্ত ইবাদত হিসেবে লেখা হয়

লিখেছেন লিখেছেন েনেসাঁ ২৯ জুলাই, ২০১৩, ১১:৫১:৩৫ সকাল



২০ রমজান সূর্যাস্তের কিছুক্ষণ আগে থেকে ২৯/৩০ তারিখ অর্থাত্ ঈদের চাঁদ দেখার তারিখের সূর্যাস্ত পর্যন্ত পুরুষদের জন্য মসজিদে এবং মহিলাদের জন্য নিজ গৃহে নামাজের নির্ধারিত স্থানে নিয়মিত একাধারে অবস্থান করাকে ‘ইতিকাফ’ বলে।

রমজান শরীফের শেষ দশকের এই ইতিকাফ সুন্নতে মুয়াক্কাদা কেফায়া। অর্থাত্ কোনো বস্তি বা মহল্লার একজন হলেও এ ইতিকাফ অবশ্যই করতে হবে। যদি অন্ততপক্ষে এক ব্যক্তি এই ইতিকাফ করে নেয়, তবে সব মহল্লাবাসীর পক্ষ থেকে দায়িত্ব আদায় হবে। কিন্তু মহল্লাবাসীদের মধ্য থেকে একজনও যদি ইতিকাফ না করে, তবে এ দায়িত্বের প্রতি অবহেলার কারণে সব মহল্লাবাসীই গোনাহগার হবে।

—শামী

ষকাজেই সব মহল্লাবাসীর ওপর এ দায়িত্ব অর্পিত হয়, আগে থেকেই তারা খোঁজ-খবর নিয়ে দেখবে—আমাদের মসজিদে কেউ ইতিকাফ করবে কি-না। যদি এমন পাওয়া না যায় তাহলে চিন্তা-ভাবনা ও আলাপ-আলোচনা করে কাউকে অবশ্যই ইতিকাফে বসাতে হবে।

ষকিন্তু স্মরণ রাখতে হবে, উজরত অর্থাত্ বিনিময় বা পারিশ্রমিক দিয়ে কাউকে ইতিকাফে বসানো জায়েয নয়। কেননা ইবাদতের উজরত দেয়া ও নেয়া উভয়ই শরিয়তের দৃষ্টিতে না-জায়েয ও হারাম। —শামী

ষকোনো মজবুরি বা অপারগতার কারণে মহল্লাবাসীর মধ্য থেকে কেউই যদি ইতিকাফে বসতে তৈরি না হয়, তবে অন্য কোনো মহল্লার লোককে নিজেদের মসজিদে ইতিকাফ করার জন্য উদ্বুদ্ধ করে তৈরি করে নেবে। অপারগতার ক্ষেত্রে এ রূপ করার দ্বারাও ইনশাআল্লাহ সুন্নত আদায় হয়ে যাবে। -ফাতাওয়া দা. উলূম দেওবন্দ মুকাম্মাল : খণ্ড ৬, পৃ. ৫১২

ইতিকাফের সওয়াব ও ফজিলত : ইতিকাফের ইবাদতে মানুষ তার দুনিয়াবি যাবতীয় কাজকর্ম পরিত্যাগ করে আল্লাহতায়ালার ঘর অর্থাত্ মসজিদে আশ্রয় গ্রহণ করে। আল্লাহ ছাড়া সবকিছু থেকে সম্পর্ক ছিন্ন করে কেবল মহান আল্লাহর পবিত্র সত্তার সঙ্গেই নিবিড় সম্পর্ক স্থাপন করে নেয়। কিছুটা সময় পূর্ণ একাগ্রতার সঙ্গে আল্লাহর স্মরণ ও তাঁর একান্ত সান্নিধ্যে নিমগ্ন থাকার মাধ্যমে আল্লাহতায়ালার সঙ্গে যে গভীর সম্পর্ক ও তাঁর প্রতি রুজু হওয়ার যে বিশেষ অবস্থার সৃষ্টি হয়, তা সব ইবাদতের মধ্যে এক অনন্য বৈশিষ্ট্যের অধিকারী।

ইতিকাফকারী আল্লাহর দুয়ারে এসে পৌঁছে গেছে; তার মুখ থেকে এ আকুতি বের হচ্ছে যে, আয় আল্লাহ! আপনি যতক্ষণ আমাকে ক্ষমা না করবেন আমি আপনার দরবার থেকে সরে যাব না।

মানুষ যতক্ষণ ইতিকাফ অবস্থায় থাকে ততক্ষণ তার প্রতিটি মুহূর্ত ইবাদত হিসেবে লেখা হয়। তার ঘুম, খাওয়া-দাওয়া ও নড়াচড়া পর্যন্ত ইবাদতে গণ্য হয়।

রমজান শরীফে সুন্নত ইতিকাফের রহস্য এটাই যে, শবেকদরের ফজিলত ও কল্যাণ লাভের জন্য ইতিকাফের চেয়ে সুনিশ্চিত আর কোনো পন্থাই হতে পারে না। সব মুসলমানই অবগত রয়েছেন, রমজান মাসের শেষ ১০ দিনের বেজোড় রাতগুলোয় জেগে ইবাদতে নিমগ্ন থাকার উদ্দেশ্যেই শবেকদরকে সুনির্দিষ্ট না করে গোপন রাখা হয়েছে। কিন্তু সাধারণ অবস্থায় রাতের প্রতিটি মুহূর্তে ইবাদতে নিমগ্ন থাকা মানুষের জন্য অত্যন্ত কঠিন ব্যাপার। বরং মানবীয় প্রয়োজনে রাতের কিছু অংশ তাকে অন্যান্য কাজে ব্যয় করতেই হয়। তাই মানুষ যদি ইতিকাফ অবস্থায় থাকে, তাহলে সে রাতে ঘুমিয়ে থাকলেও তাকে ইবাদতকারীদের মধ্যেই গণ্য করা হয়। এভাবে সে শবেকদরের প্রতিটি মুহূর্ত ইবাদতে নিমগ্ন থাকার ফজিলতও হাসিল করে নেয়। আর এই ফজিলত ও কল্যাণ এতো বিশাল ও ব্যাপক যে, এর তুলনায় ১০টি দিনের এই সামান্য মেহনত কিছুই নয়।

ষইতিকাফের প্রতি হজরত রাসুলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিশেষ আকর্ষণ ছিল। তিনি প্রতি বছর রমজান মাসের ইতিকাফের প্রতি অত্যন্ত গুরুত্ব আরোপ করতেন। তিনি কখনও পুরো রমজান মাস ইতিকাফ করেছেন, কখনও ২০ দিন ইতিকাফ করেছেন। ১০ দিনের ইতিকাফ তো তিনি প্রতিবছর অবশ্যই করতেন। একবার বিশেষ কারণে রমজান শরীফে ইতিকাফ করতে পারেননি, তাই শাওয়াল মাসে ১০ দিন রোজা রেখে তিনি ইতিকাফ করেছেন। —বুখারি শরীফ

আরেক বছর রমজান মাসে সফরে থাকার কারণে ইতিকাফ করতে পারেননি; তাই পরবর্তী বছর ১০ দিনের স্থলে ২০ দিনের ইতিকাফ করেন।

—তিরমিযি শরীফ ও মুসনাদে আহমদের বরাতে ‘নাইলুল আওতার’, খণ্ড-৪, পৃ.-২৬৪

যে ব্যক্তি আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে একদিনের ইতিকাফ করবে, আল্লাহতায়ালা তার এবং জাহান্নামের মাঝে তিন খন্দক দূরত্ব সৃষ্টি করে দেবেন। যেগুলোর দূরত্ব আসমান-জমিনের মধ্যবর্তী দূরত্বের চেয়েও অধিক হবে।

—হাকেম সহিহ বলেছেন, বায়হাকি জয়িফ বলেছেন—দ্রষ্টব্য : কানজুল উম্মাল।

ষহজরত হুসাইন ইবনে আলী (রাজি.) হতে আরেকটি হাদিস বর্ণিত হয়েছে, হজরত রাসুলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি রমজান মাসে ১০ দিন ইতিকাফ করবে, তার এ আমলটি দুটি হজ ও দুটি উমরার মতো হবে। —কানজুল উম্মাল, বায়হাকি

ষকিছুলোক মসজিদের জন্য খুঁটি হয়ে যায় (অর্থাত্ এরা সর্বদাই মসজিদে অবস্থান করে) ফেরেশতারা (মসজিদে) এরূপ লোকদের সঙ্গী হয়ে থাকেন। এরূপ লোকরা যদি কখনও মসজিদে অনুপস্থিত থাকে তাহলে ফেরেশতারা তাদের অনুসন্ধান করেন, অসুস্থ হয়ে পড়লে তাদের দেখতে যান এবং তাদের কোনো প্রয়োজন দেখা দিলে ফেরেশতারা তাদের সাহায্য করেন।

আল-ফাতহুর রব্বানি : হাকেম সহি বলেছেন।

বিষয়: বিবিধ

১১৭৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File