জাতিসংঘে উভয়েরই একটি ভোট, তবে কেন বাংলাদেশ ভারতের অধীনস্ত বন্ধু রাষ্ট্র হবে ?

লিখেছেন লিখেছেন েনেসাঁ ২৮ জুলাই, ২০১৩, ১২:১৪:২৭ দুপুর



ভারতের পক্ষ থেকে যত না, তার চেয়ে অনেক বেশি বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ভারত-বাংলাদেশ বন্ধুত্বের কথা বলা হয়ে থাকে। বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক অহরহ ভারতকে বন্ধুরাষ্ট্র হিসেবে আখ্যায়িত করে পারস্পরিক বন্ধুত্বের গৌরব প্রচার করা হয়। কিন্তু বাংলাদেশ সরকারের এই প্রচার সত্ত্বেও দু’দেশের এই বন্ধুত্ব কতখানি বাস্তব ও কার্যকর তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহের অবকাশ আছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী এবং অন্য নেতারা প্রায়ই বলে থাকেন, ভারত এমন কোনো কাজ করবে না যাতে বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর মর্মার্থ, ক্ষতি করার ক্ষমতা তাদের আছে কিন্তু মহানুভবতার কারণে বাংলাদেশের কোনো ক্ষতি তারা করবে না! টিপাইমুখ বাঁধ সম্পর্কে যখনই বাংলাদেশের সরকার ও বিভিন্ন সংগঠন থেকে আপত্তি জানানো হয়, তখন তারা বিশেষ করে এসব কথা বলে থাকেন। অতি সম্প্রতি বাংলাদেশের বিদেশমন্ত্রীর ভারত সফরের সময়েও প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং তাকে সে কথাই বলেছেন।

এ দুই দেশের বন্ধুত্ব বলতে কী বোঝায় সেটা প্রচার মাধ্যমের ক্ষেত্রে যা ঘটছে তার দিকে তাকালে যত স্পষ্টভাবে বোঝা যায়, এমন আর কোনোভাবে বোঝা যায় না। এদিক দিয়ে টেলিভিশনের বিষয়টি উল্লেখ করা যায়। ভারতের অসংখ্য টেলিভিশন চ্যানেলের দরজা বাংলাদেশের জন্য খোলা রাখা হয়েছে। এদিক দিয়ে তথ্য মন্ত্রণালয়ের উদারতার শেষ নেই। ভারতের সরকারি চ্যানেল ডিডি বাংলা থেকে নিয়ে অসংখ্য ভারতীয় টিভি চ্যানেল এখন বাংলাদেশে অবাধে তাদের প্রোগ্রাম প্রচারের সুযোগ পায়। কিন্তু বিস্ময়ের ব্যাপার এই যে, বাংলাদেশের কোনো টিভি চ্যানেলের প্রবেশাধিকার ভারতে নেই! এই হল বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের পরম বন্ধুত্বের নিদর্শন!! এটা যে কোনো তথাকথিত দুই ‘বন্ধু দেশ’ ছাড়াও কোনো দুই দেশের সাধারণ ও স্বাভাবিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে সম্ভব, এটা চিন্তা করাই যায় না। সম্ভবত ভারত ও বাংলাদেশ ছাড়া অন্য কোনো দুই দেশের মধ্যে এ ধরনের অসম সম্পর্ক দেখা যায় না। বাংলাদেশের তথ্য মন্ত্রণালয় ও তথ্যমন্ত্রী অনেক লম্বা-চওড়া গালভরা কথা বলে থাকেন, কিন্তু ভারতের সঙ্গে প্রচার মাধ্যমের এই অসম ও হীন সম্পর্কের বিষয়ে তাদের মুখ থেকে কোনো কথা শোনা যায় না। তারা এ নিয়ে ভারত সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি তো দূরের কথা, কোনো কথাবার্তা বলেন- এমন কিছু শোনাও যায় না। দু’দেশের এই সম্পর্ক যে বন্ধুত্বের সম্পর্কের পরিবর্তে দাস ও প্রভুর সম্পর্ক- এ কথা বললে কি সত্যের অপলাপ হয়? অনেক সময় দেখা যায় এখানকার কোনো কোনো সংবাদপত্র সম্পাদক বা কলাম লেখককে ভারতের কোনো কোনো টিভি চ্যানেলের প্রোগ্রাম সম্পর্কে গদগদ ভাষায় লিখতে। কিন্তু ভারতের জনগণ যে বাংলাদেশের কোনো টিভির কিছুই দেখতে-শুনতে পান না, এ নিয়ে তাদের কোনো মাথাব্যথা নেই! ভারতের জনগণের মধ্যেও বাংলাদেশের টিভি প্রোগ্রাম না দেখা নিয়ে অসন্তোষ আছে। তারা এখানকার প্রোগ্রাম শুনতে চান, কিন্তু ভারত সরকার তাদের ইচ্ছাকে পাত্তা দেয়ার কোনো প্রয়োজন বোধ করে না। বাংলাদেশের ব্যাপারে ভারতের জনগণ কিছু জানুক, এটা তাদের অভিপ্রেত নয়! এসব দেখে মনে হয় যে, প্রকৃতপক্ষে ভারত ও বাংলাদেশের পারস্পরিক সম্পর্ক বন্ধুত্বপূর্ণ নয়, শত্র“তামূলক। ভারত নিজের স্বার্থ উদ্ধারের জন্য বাংলাদেশের সঙ্গে বন্ধুত্বের কথা বললেও প্রকৃতপক্ষে প্রত্যেকটি গুরুতর বিষয়ে তারা বাংলাদেশের সঙ্গে শত্র“তামূলক আচরণ করে থাকে। শুধু কেন্দ্রীয় সরকারই নয়, পশ্চিমবঙ্গের সরকার ও তার মুখ্যমন্ত্রী যে বাংলাদেশের কোনো ধরনের বন্ধু নয়, এটা তিস্তা চুক্তির বিরোধিতার ক্ষেত্রে তারা যে অবস্থানে আছে, তার থেকে বড় প্রমাণ আর কী হতে পারে? বাংলাদেশ সরকারের এই ভারতনীতি পরিবর্তনের কোনো সম্ভাবনা নেই যতদিন বর্তমান শাসক শ্রেণী এবং তার যে কোনো রাজনৈতিক দল শাসন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থাকে। ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্ক প্রকৃতপক্ষে বন্ধুত্বপূর্ণ করার জন্য প্রয়োজন উভয় দেশেই প্রকৃত গণতান্ত্রিক সরকারের প্রতিষ্ঠা। এই গণতান্ত্রিক সরকারের অর্থ সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটের জোরে গঠিত সরকার নয়। এর অর্থ এমন সরকার, যারা ধাপ্পাবাজির মাধ্যমে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট অর্জনের থেকে জনগণের মৌলিক সমস্যার প্রতি বেশি যত্নœবান হবে এবং সেই হিসেবে শুধু নিজেদের দেশের জনগণের জন্যই নয়, অন্য দেশের জনগণের স্বার্থও কোনোভাবে যাতে ক্ষুণœ না হয় সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখবে।

বিষয়: বিবিধ

১৫৪৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File