নিমপাতা থেকেই ক্যান্সারের ওষুধ

লিখেছেন লিখেছেন েনেসাঁ ২৪ জুলাই, ২০১৩, ০২:৩৬:১৯ দুপুর



“যেখানে দেখিবে ছাঁই, উড়াইয়া দেখ তাই,

পাইলেও পাইতে পার মানিক ও রতন।”

দেশ-বিদেশে কত গবেষণা তার কোন হিসাব নেই। অবশেষে বাড়ীর পাশের নিমেই মিলতে যাচ্ছে সমাধান। আদি অকৃত্রিম নিমেই কি লুকিয়ে আছে ক্যান্সার-নাশের চাবিকাঠি? কলকাতারই একদল বিজ্ঞানীর দাবি যদি সত্যি হয়, তা হলে উত্তরটা ‘হ্যাঁ!

রসনায় স্বাদ ফেরানোর টোটকা বা জলবসন্তর অব্যর্থ ওষুধ, এমন বিবিধ ধারণার ক্ষুদ্র গণ্ডি পেরিয়ে ক্যান্সার-চিকিৎসায় নয়া দিগন্ত খুলে দিতে পারে নিম৷ ভারতের কলকাতার চিত্তরঞ্জন ক্যান্সার রিসার্চ ইনস্টিটিউটের গবেষকরা বলছেন, নিমপাতা থেকে পাওয়া এক ধরনের গ্লাইকোপ্রোটিন, যা বিষহরার মতো কাজ করে টিউমারের উপর৷ সেই গ্লাইকোপ্রোটিনের সূত্র ধরেই তারা আবিষ্কার করে ফেলেছেন এমন এক ওষুধ, যা সারিয়ে ফেলতে পারে ক্যান্সারও৷ ইনস্টিটিউটের অধিকর্তা জয়দীপ বিশ্বাস জানাচ্ছেন, ‘আমরা নিমের পাতা থেকে একটি মোনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি তৈরি করেছি৷ সেটা ক্যান্সারে আশ্চর্য রকম ভাবে কাজ করে৷ এই অ্যান্টিবডির পেটেন্ট পাওয়ার জন্য আবেদন করছি৷’

নিমের গুণাবলি নিয়ে নানা রটনা আদতে মিথ না বাস্তব, তা খতিয়ে দেখতে বছর দশেক আগে নিমপাতা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করেন চিত্তরঞ্জন ন্যাশনাল ক্যান্সার রিসার্চ ইনস্টিটিউটের গবেষকরা৷ গবেষক দলের অন্যতম প্রধান সদস্য, হাসপাতালের ইমিউনোলজি বিভাগের প্রধান রথীন্দ্রনাথ বড়াল জানাচ্ছেন, ‘আমরা দেখতে পাই, নিম-লিফ গ্লাইকোপ্রোটিনের (এনএলজি) অ্যন্টি টিউমার অ্যাকটিভিটি আছে৷ তাই আমরা আরও গভীরে রিসার্চ চালিয়ে যেতে থাকি৷ গত কয়েক মাসে যে ফলাফল পাওয়া গিয়েছে তা বেশ আশাপ্রদ৷’ কী ফল পাওয়া গিয়েছে?

জানা গেল, সম্প্রতি গবেষক দলের অন্যতম সদস্য অর্ণব দাস এনএলজি-র থেকে একটি মোনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি তৈরি করেছেন, যা ক্যান্সারের বিরুদ্ধে বেশ কার্যকরী৷ কী রকম? গবেষক দলের আর এক সদস্য, সিএনসিআই-এর বায়োকেমিস্ট্রি বিভাগের প্রধান স্মরজিত্ পালের কথায়, ‘কোলোন ক্যান্সারের সময় শরীরে কারসিনো-এমব্রায়োনিক অ্যান্টিজেন (সিইএ) নামক একটি প্রোটিনের পরিমাণ বেড়ে যায়৷ আমরা পরীক্ষা করে দেখেছি, এনএলজি-র বিরুদ্ধে তৈরি এই মোনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি শরীরে সিইএ-র পরিমাণ কমিয়ে দেয় অনেকটাই৷ আর সিইএ যদি কমিয়ে দেয়া যায়, তা হলে ক্যান্সারকেও আয়ত্তে আনা সম্ভব৷’

এটুকুই নয়৷ সিএনসিআই-এর বিজ্ঞানীদের দাবি, এই মোনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি যেহেতু ক্যান্সারের টার্গেটেড থেরাপি (অর্থাৎ যা কাজ করে শুধু ক্যান্সার আক্রান্ত কোষেই), তাই শরীরের অন্য কোষের ক্ষতি না-করেই তা সারিয়ে ফেলবে ক্যান্সারকে৷ সব ক্যান্সারকেই কি সারিয়ে ফেলতে পারে এই অ্যান্টিবডি? স্মরজিত্ পাল জানাচ্ছেন, ‘এখনও পর্যন্ত বৃহদন্ত্র, স্তন, ডিম্বাশয় এবং ফুসফুসের ক্যান্সারে সিইএ-র উপস্থিতির প্রমাণ মিলেছে৷ কাজেই ওই ক্যান্সারগুলি সারিয়ে ফেলা সম্ভব৷ বাকিটা এখনও পরীক্ষার স্তরে রয়েছে৷’

অতঃপর? উচ্ছ্বসিত রথীন্দ্রনাথ বড়াল জানাচ্ছেন, ‘আমরা আপাতত পেটেন্টের আবেদন করছি৷ সেটা পেয়ে গেলে ড্রাগ কন্ট্রোলার এবং এথিক্যাল কমিটির কছে আবেদন করা হবে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের জন্য৷ সব যদি ঠিকঠাক থাকে, তা হলে আমাদের ল্যাবরেটরিতেই বাল্ক আকারে তৈরি করব এই অ্যান্টিবডি৷ যার দাম বাজার চলতি মোনোক্লোনাল অ্যান্টিবডির চেয়ে অনেকটাই কম হবে৷ উপকৃত হবেন রোগীরা৷’

এই খবরে উৎসাহী কলকাতার ক্যান্সার-চিকিৎসকরাও৷ মেডিক্যাল কলেজের অঙ্কোলজি বিভাগের প্রধান শিবাশিস ভট্টাচার্য বলছেন, ‘আধুনিক চিকিত্সায় যে মোনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি ব্যবহূত হয়, তার দাম রীতিমতো বেশি৷ সাধারণ রোগীদের নাগালের বাইরে৷ এই গবেষণা যদি সাফল্য পায়, তা হলে অনেক কম দামে এই অ্যান্টিবডি পাওয়া যাবে৷’ শহরের অন্যান্য অঙ্কোলজিস্টরা বলছেন, ক্যান্সার গবেষণায় রাজ্য পিছনের সারিতে, এমন একটা ধারণা রয়েছে৷ এই গবেষণা সাফল্যের শিখর ছুঁলে, সেই ধারণা ভাঙবেন।

সূত্রঃ // ঢাকা, ২১ জুলাই (বাংলাটাইমস টুয়েন্টিফোর) // টি এম //

বিষয়: বিবিধ

৯৯৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File