সচিবের স্ত্রীর জন্য জনতা ব্যাংকের গাড়ি কতটুকু যুক্তিযুক্ত

লিখেছেন লিখেছেন েনেসাঁ ২৩ জুলাই, ২০১৩, ০৩:০০:১৪ দুপুর



প্রভাব খাটিয়ে ন্যক্কারজনক কাণ্ড ঘটিয়েছেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব ড. এম আসলাম আলম। স্ত্রীর জন্য জনতা ব্যাংক থেকে সর্ম্পূণ বেআইনিভাবে বিলাসবহুল গাড়ি নিয়েছেন এই আমলা। তবে কোনো ধরনের কাগজপত্রে নয়, তার মৌখিক নির্দেশেই গাড়িটি দিয়েছে জনতা ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।

পাজেরো জিপ গাড়িটির নম্বর ঢাকা মেট্রো-ঘ-১৩-৪০২৩। গাড়িটির পেছনে মাসিক ব্যয় প্রায় ৫০ হাজার টাকা। খরচের পুরো অর্থও বহন করতে হয় রাষ্ট্রায়ত্ব জনতা ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে।

নির্ভরযোগ্য সূত্রগুলো এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

সূত্র জানায়, সরকারিভাবে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে গাড়ি রয়েছে সচিব ড. এম আসলাম আলমের নামে। কিন্তু এর বাইরে সোনালী ব্যাংক থেকে আরো একটি গাড়ি নিয়ে সচিব নিজে ব্যবহার করছেন। কখনও কখনও তার পরিবারের সদস্যরাও ব্যবহার করছেন সেটি।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সভাপতি এম হাফিজ উদ্দিন খান বলেন, প্রভাব খাটিয়ে এ ধরনের কাজ ন্যক্কারজনক। বেআইনি। প্রশাসনের সর্বোচ্চ কর্তাদের এ ধরনের বেআইনি সুযোগ-সুবিধা ভোগ বন্ধ করতে না পারলে সুশাসন নিশ্চিত করা কোনো দিনই সম্ভব হবে না।

সাবেক এই উপদেষ্টা আরো বলেন, আমরাও সচিব ছিলাম। কিন্তু খোঁজ নিয়ে দেখেন, প্রয়োজনে গাড়ি চাইলেও সেগুলো নিজের খরচে নিতাম। অর্থাৎ পে করে ব্যবহার করতাম।

সূত্র জানায়, ব্যাংকিং সচিবের গাড়িটি জনতা ব্যাংক কর্তৃপক্ষ দিয়েছে কোনো ধরনের অফিসিয়াল নির্দেশনা ছাড়াই। শুধু মৌখিক নির্দেশনার ভিত্তিতে এটি সচিব নিয়েছেন।

জানা গেছে, ড. এম আসলাম আলম অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে সচিবের দায়িত্ব নেন গত বছরের নভেম্বর মাসে। তিনি মো. শফিকুর রহমান পাটোয়ারির স্থলাভিষিক্ত হন। নভেম্বর মাসে শফিকুর রহমান পাটেয়ারিকে বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের সচিবের দায়িত্ব দেয় সরকার।

সূত্র জানায়, আসলাম আলম ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের দায়িত্ব পালনের আগে দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের সচিবের দায়িত্ব পালন করেন।

সূত্র জানায়, নতুন দায়িত্ব নেওয়ার পরই জনতা ব্যাংককে একটি গাড়ি দিতে বলেন ড. এম আসলাম আলম। জনতা ব্যাংক কর্তৃপক্ষও প্রভাবের কারণে বিধি পরিপালন না করেই তাকে পাজেরো জিপ দিতে রাজি হয়।

জানা গেছে, গাড়িটির বর্তমানে চালক হিসেবে রয়েছেন মো. শাহাদত হোসেন। তার মাসিক বেতন ১৭ হাজার টাকা। এর বাইরে তার ওভারটাইম বাবদ জনতা ব্যাংককে দিতে হচ্ছে আরো প্রায় ৮ হাজার টাকা। গাড়িটির জ্বালানি বাবদ ব্যয় হচ্ছে আরো প্রায় ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা। এর বাইরে মেইন্টেনেন্স খরচ প্রতি মাসে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা। সব মিলিয়ে সচিবের স্ত্রীকে ব্যবহার করতে দেওয়া গাড়িটির পেছনে জনতা ব্যাংকের মাসিক ব্যয় ৫০ হাজার টাকারও বেশি। রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংক হিসেবে এই অর্থ সাধারণ নাগরিকের। অর্থাৎ সাধারণ নাগরিকের টাকায় বিলাসী গাড়িতে চলছেন এই আমলার স্ত্রী।

এম হাফিজ উদ্দিন খান বলেন, দুর্নীতিপরায়ন আমলাদের জন্য দেশটিতে সুশাসন বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। দুর্নীতি করে তারা রাষ্ট্রের সম্পদ লুটপাট করছেন। তবে সবাই নয়।

এ ব্যাপারে সচিব ড. এম আসলাম আলমের মুঠোফোনে কয়েক দফা কথা বলার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। কথা বলতে চেয়ে এসএমএস পাঠানো হলেও কোনো উত্তর দেননি তিনি।

জানা গেছে, শফিকুর রহমান পাটোয়ারি দীর্ঘদিন ধরে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের দায়িত্ব পালন করছিলেন। তিনি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের খুবই আস্থাভাজন ছিলেন। কিন্তু গত বছরের হলমার্ক কেলেঙ্কারির পর অভিযোগের তীর যায় তার দিকেও। ধারণা করা হয়, সে কারণেই তাকে সরিয়ে দিতে বলেন মন্ত্রী। এরপর ড. আসলাম আলমকে ওই পদে দায়িত্ব দেওয়া হয়।

সূত্রঃ বিডিটুডে.নেট

বিষয়: বিবিধ

১৪৬২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File