প্রাকৃতিক দুর্যোগ মানুষের কর্মের ফসল
লিখেছেন লিখেছেন েনেসাঁ ২৬ এপ্রিল, ২০১৪, ১১:০৮:১১ সকাল
মানুষ যখন পাপের কাজে আকণ্ঠ নিমজ্জিত হয় এবং আল্লাহকে ভুলে যায় তখনই আল্লাহতায়ালার শাস্তি নেমে আসে। পবিত্র কুরআনে আল্লাহতায়ালা
বলেন, 'এমন কোন জনপদ নেই, যা আমরা কেয়ামতের আগে ধ্বংস না করব, অথবা অতীব কঠোর আজাব দেব' (সূরা বনী ইসরাঈল :৫৮)।
কেয়ামত বুঝি চলে এসেছে, প্রকৃতির এমন ভয়াবহ রূপ আগে কখনো দেখিনি, স্বচক্ষে না দেখলে বিশ্বাস করার মত নয়, মানুষ, গরু, ছাগল, ঘরবাড়ি যেন পাখির মত উড়ছে, হায় প্রকৃতির যে কি হয়েছিল সেদিন। কয়েক মিনিটের মধ্যে বাড়িঘর সব ধ্বংস করে দিয়ে গেল, আর রেখে গেল সীমাহীন কষ্ট। আমাদের দেশে প্রায় প্রতি বছরই কম বেশি প্রাকৃতিক দুর্যোগ হানা দেয়। প্রাকৃতিক দুর্যোগ কখনো এমনভাবে ধেয়ে আসে যার ফলে গ্রামের পর গ্রাম তছনছ করে দিয়ে চলে যায়। বন্যা, জলোচ্ছ্বাস, টর্নেডো ইত্যাদি দুর্যোগ প্রাকৃতিক, মানুষের এতে কোন হাত নেই। এধরণের দুর্যোগ মহান আল্লাহতায়ালা যেকোন দেশে এবং যেকোন শহরে যেকোন মুহুর্তে ঘটাতে পারেন। এইসব দুর্যোগে কোন মানুষের হাত থাকে না।
আমরা কেউ বলতে পারি না কোন সময় আমরা ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকারে পরিণত হতে যাচ্ছি। তাই এসব প্রাকৃতিক আজাব থেকে যেন আল্লাহ আমাদের নিরাপদ রাখেন এজন্য সব সময় দোয়া করা উচিত্। এই যে একের পর এক প্রাকৃতিক দুর্যোগ ধেয়ে আসছে এসব আসলে আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে সতর্ক সংকেত। আল্লাহ সতর্ক করছেন যে তোমরা সহজ সরল পথ অবলম্বন কর। সমাজ ও দেশের বেশির ভাগ মানুষ যখন পাপ, ব্যাভিচার, অন্যায় এবং আল্লাহকে ভুলতে বসে তখনই আল্লাহতায়ালার শাস্তি নেমে আসে।
পবিত্র কুরআনে আল্লাহতায়ালা বলেন, 'এমন কোন জনপদ নেই যা আমরা কেয়ামতের আগে ধ্বংস না করব, অথবা অতি কঠোর আযাব দিব' (সূরা বনী ইসরাঈল: ৫৮)। আল্লাহ-তায়ালার উপরোক্ত ভবিষ্যদ্বাণী আজ আমরা অক্ষরে অক্ষরে পূর্ণ হতে দেখছি। যে সকল আজাব আমরা প্রত্যক্ষ করছি, তা কেয়ামত তথা মহাধ্বংসের পূর্বলক্ষণ স্বরূপ প্রকাশিত হচ্ছে। আর এসব পবিত্র কুরআন তথা ইসলামের সত্যতার জলন্ত নিদর্শন বহন করছে। আল্লাহতায়ালা পরম করুণাময়, তিনি কোন জাতিকে সাবধান না করে কখনও আজাব অবতীর্ণ করেন না। যেভাবে পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে, 'আমরা সতর্ক করার জন্য রসূল প্রেরণ না করে কখনও আজাব অবতীর্ণ করি না' (বনী ইসরাঈল: ১৫)। তারপর আবার উল্লেখ রয়েছে 'নূহের পর আমরা কত প্রজন্মকেই ধ্বংস করেছি। আর তোমার প্রভুপ্রতিপালক তার বান্দাদের পাপের খবরাখবর রাখার ক্ষেত্রে এবং পর্যবেক্ষণের ব্যাপারে যথেষ্ট' (বনী ইসরাঈল: ১৭)। আজাবের এমন একটি দিক নেই, যেদিক দিয়ে আজ পৃথিবী আক্রান্ত হয়নি। পৃথিবীর এমন কোন দেশ বা এমন কোন জাতি নেই যার ওপর আজাব না এসেছে, সে যত বড় শক্তিধর রাষ্ট্রই হোক না কেন। সকল প্রকার আজাবের প্রবল আক্রমণ মরণাহত মানবের ওপর বারবার এসে আঘাত হানছে।
মানব প্রকৃতি বিকৃত হয়েছে। তার কারণে আল্লাহর রুদ্র রূপও প্রকাশিত হচ্ছে। আল্লাহতায়ালা যেভাবে ঘোষণা দিয়েছেন যে, কোন সতর্ককারী প্রেরণ না করে তিনি আজাব দেন না, পৃথিবীবাসী যেহেতু আজ আল্লাহর সতর্ককারীর আহ্বানকে ভুলতে বসেছে তাই তিনি তার রুদ্র রূপের বহিঃপ্রকাশ দেখাচ্ছেন, মানুষ যেন সতর্ক হয় এবং আল্লাহর শিক্ষানুযায়ী জীবন পরিচালনা করেন। আল্লাহর পক্ষ থেকে শাস্তিস্বরূপ যখন কোন আজাব আসে তখন তা থেকে রক্ষা পাওয়ার কোন রাস্তা থাকে না। যেভাবে কুরআনে উল্লেখ রয়েছে 'তুমি বল, আল্লাহর হাত থেকে কে তোমাদের রক্ষা করতে পারে যদি তিনি তোমাদের কোন শাস্তি দিতে চান? অথবা তিনি যদি তোমাদের প্রতি কৃপা করতে চান তবে কে এ থেকে তোমাদের বঞ্চিত করতে পারে? আর তারা নিজেদের জন্য আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন অভিভাবক বা কোন সাহায্যকারীও খুঁজে পাবে না' (সূরা আহজাব: ১৭)।
আরো উল্লেখ রয়েছে 'আর আমরা যে জনপদেই কোন নবী পাঠিয়েছি এর অধিবাসীদেরকে আমরা অবশ্যই অভাব-অনটন ও দুঃখকষ্টে জর্জরিত করেছি যাতে করে তারা আকুতিমিনতি করে। আবার আমরা তাদের মন্দ অবস্থাকে ভালো অবস্থায় বদলে দিলাম। অবশেষে তারা যখন প্রাচুর্য লাভ করলো এবং বলতে লাগলো, আমাদের পূর্বপুরুষদের বেলায়ও দুঃখ ও সুখ পালাক্রমে আসতো, তখন আমরা হঠাত্ তাদের ধরে ফেললাম এবং তারা তা বুঝতেও পারেনি। আর এসব জনপদের অধিবাসীরা যদি ঈমান আনতো এবং তাকওয়া অবলম্বন করতো তাহলে আমরা নিশ্চয় তাদের জন্য আকাশ ও পৃথিবীর কল্যাণের দুয়ার খুলে দিতাম। কিন্তু তারা প্রত্যাখ্যান করলো। সুতরাং তাদের কৃতকর্মের দরুন তাদেরকে আমরা ধরে ফেললাম। এসব জনপদের অধিবাসীরা কি এ ব্যাপারে নিরাপদ হয়ে গেছে যে, রাতের বেলায় ঘুমন্ত অবস্থায় তাদের ওপর আমার শাস্তি নেমে আসবে না? আর এসব জনপদের অধিবাসীরা কি এ বিষয়ে নিরাপদ হয়ে গেছে যে, দুপুর বেলায় খেলাধূলায় মত্ত থাকা অবস্থায় তাদের ওপর আমার শাস্তি নেমে আসবে না? (সূরা আরাফ: ৯৪-৯৮)।
আল্লাহতায়ালা পবিত্র কুরআনের অন্যত্রে বলেন, 'আর আমরা কোন জনপদকে এর জন্য পূর্ব নির্ধারিত এক সিদ্ধান্ত ছাড়া কখনো ধ্বংস করিনি' (সূরা হিজর: ৪)। মহান আল্লাহতায়ালা পৃথিবীতে কেন আজাব-গজব পাঠান সে সম্পর্কে পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন স্থানে বর্ণনা করা হয়েছে। একটা বিষয় সবার অনুধাবন করা উচিত্, কেন বার বার আল্লাহতায়ালা আজাবের কথা উল্লেখ করলেন? তিনি যেহেতু রহমানুর রাহিম, তার এটা ইচ্ছা নয় যে, তার বান্দা যেন কোনভাবে কষ্টে নিপতিত হয়। তাই তিনি বারবার সতর্ক করছেন, যেন তার বান্দারা সঠিক পথে পরিচালিত হয়। কিন্তু যখন কোন জাতি তার নির্দেশাবলি অমান্য করতে করতে সীমা ছাড়িয়ে যায় তখনই তার পক্ষ থেকে কোন না কোন শাস্তি নিপতিত হয়।
এই যে সারা পৃথিবীতে একের পর এক প্রাকৃতিক দুর্যোগ ধেয়ে আসছে এর একটাই কারণ, তা হলো রহমান খোদার বান্দারা আজকে খোদাকে ভুলতে বসেছে, আর এ কারণেই কোন দেশ আজ এমন নেই যারা বলতে পারবে যে, আমরা এসব প্রাকৃতিক আজাব থেকে নিরাপদ। এসব দুর্যোগ থেকে বাঁচার জন্য এখন একটিই রাস্তা খোলা আছে আর তাহলো মহান আল্লাহতায়ালার প্রকৃত বান্দায় পরিণত হওয়া। আল্লাহর অধিকার এবং বান্দার অধিকার যথাযথ প্রদান করা। আমরা সবাই যদি সমাজ ও দেশে শান্তির জন্য কাজ করি তাহলে আল্লাহতায়ালাও আমাদের জন্য শান্তির ব্যবস্থা করবেন। প্রাকৃতিক দুর্যোগ-পরবর্তী সময়ে আমরা দুর্যোগ কবলিত লোকদের পাশে গিয়ে দাঁড়াতে পারি।
আমাদের সবার একটু সহযোগিতার ফলে একটি পরিবার ফিরে আসতে পারে স্বাভাবিক জীবনে। এই দুর্যোগে তারা যা হারিয়েছে হয়তো তা আমরা পুরণ করতে পারবো না কিন্তু তাদের জন্য যদি আমরা সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেই তাহলে হয়তো তারা সব হারানোর যে দুঃখ তাথেকে কিছুটা হলেও সুখ খুঁজে নেবে। আমরা কী পারি না এই সব দুর্যোগ কবলিত লোকদের পাশে গিয়ে দাঁড়াতে? আমরা কী পারি না তাদের দুঃখের দিনের বন্ধু হতে? মানুষ হিসেবে কী আমাদের ওপর এই দায়ীত্ব বর্তায় না তাদের সাহায্য করা? সমাজে অনেক এমন মানুষও রয়েছেন যারা সব সময় অন্যের সাহায্যের জন্য নিবেদিত থাকে।
ক্ষতিগ্রস্তদেরকে সাহায্যের জন্য দেশের বিত্তশালী, বিভিন্ন এনজিও, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনসহ সাধারণ মানুষকে পাশে দাঁড়ানো উচিত্। ইতিপূর্বে টর্নেডোয় যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তারা নিতান্তই গ্রামের সহজ-সরল দরিদ্র মানুষ। আমরা যদি সবাই মিলে এদের পাশে গিয়ে দাঁড়াই তাহলে হয়তো তারা আবার বাঁচার স্বপ্ন দেখতে পারে। অবুঝ শিশুদের মুখে আবার হাসি ফুটে উঠবে। এইসব লোকদের জন্য আমাদের অনেক কিছুই করার আছে, আমাদের সবার সম্মিলিত সহযোগিতার ফলে হাজারো মানুষের দুঃখ-কষ্ট লাঘবে সহায়ক হতে পারে।
আজকে যারা দেশে কে মুসলমান আর কে নাস্তিক এই বিষয় নিয়ে আন্দোলন করছেন তাদের বলতে চাই, আপনরা যদি নিজেকে প্রকৃত মুসলমান বলে দাবি করেন তাহলে সেখানে যান যেখানে খোলা আকাশের নিচে হাজার হাজার মানুষ রাত্রি যাপন করছে, আপনারা পাঁচ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করুন যে, আমরা সবাই দুর্যোগ কবলিত এলাকায় পাঁচদিন বিনা পরিশ্রমে তাদের ঘরবাড়ি তৈরী করে দেওয়ার কাজ করবো। আসুন, আমরা সবাই সেইসব লোকদের পাশে যাই যারা অপেক্ষায় বসে আছেন যে, হয়তো আল্লাহ কোন ফেরেশতাকে পাঠাবেন আমাদের সাহায্য করতে, আমাদের মুখে দু'মুঠো ভাত তুলে দেবে। মহান আল্লাহতায়ালা আমাদের সকলকে তার শিক্ষানুযায়ী চলার সৌভাগ্য দান করুন এবং তার আজাবের শাস্তি থেকে আমাদের নিরাপদ রাখুন।
বিষয়: বিবিধ
১২২৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন