আজ ১৭ ই জুলাই ইসমাইল হোসেন শিরাজীর ৮২ তম মৃত্যুবার্ষিকী ও জাতীয় জাগরণে তার অবদান
লিখেছেন লিখেছেন েনেসাঁ ১৭ জুলাই, ২০১৩, ০২:০৪:৪১ দুপুর
আমার নানী ছিলেন সিরাজী সাহেবের ভাতিজী। তার নিকট থেকেই আমরা সিরাজী সাহেবের গল্প শুনেছি। আমার নানীর পরিবার অনেক আগেই সিরাজগঞ্জ থেকে কুষ্টিয়ার কালুয়াতে বসবাস শুরু করে। এখনও কয়া ইউনিয়নের বানীয়াপাড়াতে বসবাস করছে তার উত্তরাধীকারীরা। যা হোক আজ ১৭ ই জুলাই ইসমাইল হোসেন শিরাজীর ৮২ তম মৃত্যুবার্ষিiকী। আমরা তার আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি।mg]http://www.bdtomorrow.net/blog/bloggeruploadedimage/dolon/1374045485.jpg[/img]
বৃটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলন ও জাতীয় জাগরণের অগ্নি-পুরুষ সৈয়দ ইসমাইল হোসেন শিরাজী। ঘুমন্ত মুসলমানের নিষ্প্রাণ দেহে পরাধীনতার গ্লানি মুছে আত্মবিশ্বাস ও জাগরণের স্ফুলিঙ্গ ছড়ানোর অন্যতম প্রধান নকীব। এক্ষেত্রে অবলম্বন ছিল তাঁর কণ্ঠ আর কলম। সাহিত্যের প্রায় প্রতিটি শাখায় অবিরাম বলিষ্ঠ লেখনি আর চারণের বেশে দেশময় অনলবর্ষী বক্তৃতা পরাধীন জাতিকে স্বাধীনতা মন্ত্রে উদ্দীপ্ত করে তুলেছিল।
'হেরি স্বাধীনতা দস্যু কবলিত/ সাজিতেছে রুদ্রবেশে ক্রোধে উদ্বেলিত।...এবার সে মহাসিন্ধু প্রলয় গর্জনে/ উঠিবে গরজি ঘোর প্রচণ্ড তর্জনে।...বিতারিয়া দস্যুদলে সমুদ্রের পার/ করিবে এবার তারা স্বদেশ উদ্ধার।' (অনল প্রবাহ, ১৯০০ সাল)।
ভারতের স্বনামধন্য সাংবাদিক গবেষক ডঃ শিশির কর তাঁর 'স্বদেশী যুগে কারাদণ্ডিত কবি শিরাজী' গ্রন্থে মুখবন্ধে লিখেছেন— '...সম্পূর্ণ অসাম্প্রদায়িক মনোভাব নিয়ে ইংরেজ সরকারের বিরুদ্ধে এমন বলিষ্ঠ লেখনি ধারণ করতে সে সময়কার কোন মুসলিম কবিকে দেখা যায়নি। ঐ সময়ের জাতীয়তাবাদী কবি ও লেখকদের মধ্যে অনল, প্রবাহের লেখক শিরাজীর স্থান স্বতন্ত্র ও অনন্যও। ... শিরাজীই প্রথম ভারতীয় বাঙালি কবি, লেখার জন্য যাঁকে জেলে যেতে হয়েছিল এবং দীর্ঘদিনের জন্য। অনল প্রবাহ বাজেয়াপ্তর আগে থেকেই পুলিশের খাতায় শিরাজীর নাম ছিল, পরিচয় দেয়া হয়েছিল, 'বাংলার নামকরা মুসলিম আন্দোলনকারী' হিসেবে।
মাত্র ৫১ বছরের ক্ষণজন্মা এই মহান পুরুষ জন্মেছিলেন সিরাজগঞ্জ শহরে ১৮৮০'র ১৩ জুলাই। প্রথম কাব্যগ্রন্থ অনল প্রবাহ প্রকাশিত হয় ১৮৯৯ সালে (পুস্তিকা) ১৯০০ সালে, (গ্রন্থ) প্রথম কারাবরণ ১৯১০ সালে, কারামুক্তি ১৪ মে ১৯১২ সালে, তুরস্ক যুদ্ধে গমন ২ ডিসেম্বর ১৯১২ সালে; যুদ্ধ ফেরত ১৩ জুলাই ১৯১৩ সালে।
শিরাজী ১৯২১ সালে খেলাফত ও অহিংস আন্দোলনে যোগদান করেন। ১৯২২ সালে মওলানা আকরম খাঁ কারারুদ্ধ হলে ৮ হাজার টাকা জরিমানার জন্য 'মোহম্মদী' পত্রিকা বন্ধের বিরুদ্ধে সংবাদপত্রে আবেদন ছাড়াও বিভিন্ন জেলায় বক্তৃতা করে জনমত গড়ে তোলেন।
১৯২১ সালে ২৫, ২৬, ২৭ সেপ্টেম্বর সিরাজগঞ্জে অসহযোগ আন্দোলনের কর্মসূচিতে ৩টি সভায় সভাপতিত্ব করেন। ১৯২২ সালে কলকাতায় খেলাফত কমিটির সভায় জ্বালাময়ী বক্তৃতা এবং আঙ্গোবায় দশ হাজার মুজাহেদীন পাঠানোর প্রস্তাব করেন। কাজী নজরুল 'রণভরী' কবিতা লিখে তাতে সমর্থন যোগান। ১৯২৪ সালে নিখিল ভারত কংগ্রেস কমিটির সম্মেলনে শিরাজীকে বাদ দিয়ে অন্যকে সভাপতি করায় অসন্তুষ্ট মুসলমানেরা 'বঙ্গীয় মুসলিম মহাসমাবেশের আয়োজন করে, শিরাজী অভ্যর্থনা কমিটির সভাপতি হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ বক্তৃতা করেন। ১৯২৬ সালে দাদাভাই নওরোজের সভাপতিত্বে কংগ্রেসের কলকাতা অধিবেশনে সরকারের কাছে আবেদন-নিবেদন নীতি ত্যাগ করে সরাসরি স্বাধীনতার প্রস্তাব উত্থাপন করেন। ১৯২৭ সালের ২৫ অক্টোবর 'মোসলেম তরুণ সংঘের সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন ১৯২৯ সালে প্রাদেশিক কাউন্সিল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৩১ সালে লাহোরে তার নির্দেশে পুত্র আসাদ উদ দৌলা শিরাজী গান্ধী-ডারউইন চুক্তির বিরুদ্ধে প্রস্তাব উত্থাপন করেন। ১৯৩১ সালে আইন অমান্য আন্দোলনে যোগ দিয়ে কারারুদ্ধ হন। কারাগারেই তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে। 'আমি মৃত্যুর মাঝে চিরদিন খুঁজি নবজীবনের সন্ধান/' উচ্চারক এই মহান মানুষটি ১৯৩১'র ১৭ জুলাই নিজেকে চিরতরে সঁপে দিয়েছিলেন মৃত্যুর কাছে।
তাঁর মৃত্যুতে কামাল পাশা এক শোকবাণীতে বলেন- 'আমার পুরনো বন্ধু সৈয়দ ইসমাইল হোসেন শিরাজীর মৃত্যুতে আমি গভীর দুঃখ প্রকাশ করছি। তিনি যে কেবল ভারতের গৌরব ছিলেন তাহা নহে, তিনি ইসলাম জগতের নেতা ছিলেন। তাহার মৃত্যুতে ইসলাম জগতে এক বিখ্যাত ব্যক্তির অভাব হইল। তুর্কীগণ আপনার শোকে-সহানুভূতি প্রকাশ করিতেছে'। অমৃত বাজার পত্রিকায় বলা হয়- 'মওলানা সৈয়দ ইসমাইল হোসেন শিরাজীর মৃত্যুতে সারা বাংলা আজ গভীরভাবে শোকাভিভূত। মরহুম শুধু একজন কবি ও বিখ্যাত পণ্ডিতই ছিলেন না তিনি ছিলেন একজন খাঁটি জাতীয়তাবাদী। ৩৫ বছর ধরিয়া তিনি জাতির অমূল্য সেবা করিয়া গিয়াছেন। তিনি একজন ধর্মপ্রাণ মুসলমান ছিলেন। কিন্তু ধর্মের প্রতি তাহার নিষ্ঠা জাতীয় স্বার্থের একজন অগ্রণী সেনায় পরিণত হইতে কোন বাধা হইয়া দাঁড়ায় নাই। তাঁহার মৃত্যু এই সময়ে দেশের জন্য এক বিরাট ক্ষতি।'বৃটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলন ও জাতীয় জাগরণের অগ্নি-পুরুষ সৈয়দ ইসমাইল হোসেন শিরাজী। ঘুমন্ত মুসলমানের নিষ্প্রাণ দেহে পরাধীনতার গ্লানি মুছে আত্মবিশ্বাস ও জাগরণের স্ফুলিঙ্গ ছড়ানোর অন্যতম প্রধান নকীব। এক্ষেত্রে অবলম্বন ছিল তাঁর কণ্ঠ আর কলম। সাহিত্যের প্রায় প্রতিটি শাখায় অবিরাম বলিষ্ঠ লেখনি আর চারণের বেশে দেশময় অনলবর্ষী বক্তৃতা পরাধীন জাতিকে স্বাধীনতা মন্ত্রে উদ্দীপ্ত করে তুলেছিল।
'হেরি স্বাধীনতা দস্যু কবলিত/ সাজিতেছে রুদ্রবেশে ক্রোধে উদ্বেলিত।...এবার সে মহাসিন্ধু প্রলয় গর্জনে/ উঠিবে গরজি ঘোর প্রচণ্ড তর্জনে।...বিতারিয়া দস্যুদলে সমুদ্রের পার/ করিবে এবার তারা স্বদেশ উদ্ধার।' (অনল প্রবাহ, ১৯০০ সাল)।
ভারতের স্বনামধন্য সাংবাদিক গবেষক ডঃ শিশির কর তাঁর 'স্বদেশী যুগে কারাদণ্ডিত কবি শিরাজী' গ্রন্থে মুখবন্ধে লিখেছেন— '...সম্পূর্ণ অসাম্প্রদায়িক মনোভাব নিয়ে ইংরেজ সরকারের বিরুদ্ধে এমন বলিষ্ঠ লেখনি ধারণ করতে সে সময়কার কোন মুসলিম কবিকে দেখা যায়নি। ঐ সময়ের জাতীয়তাবাদী কবি ও লেখকদের মধ্যে অনল, প্রবাহের লেখক শিরাজীর স্থান স্বতন্ত্র ও অনন্যও। ... শিরাজীই প্রথম ভারতীয় বাঙালি কবি, লেখার জন্য যাঁকে জেলে যেতে হয়েছিল এবং দীর্ঘদিনের জন্য। অনল প্রবাহ বাজেয়াপ্তর আগে থেকেই পুলিশের খাতায় শিরাজীর নাম ছিল, পরিচয় দেয়া হয়েছিল, 'বাংলার নামকরা মুসলিম আন্দোলনকারী' হিসেবে।
মাত্র ৫১ বছরের ক্ষণজন্মা এই মহান পুরুষ জন্মেছিলেন সিরাজগঞ্জ শহরে ১৮৮০'র ১৩ জুলাই। প্রথম কাব্যগ্রন্থ অনল প্রবাহ প্রকাশিত হয় ১৮৯৯ সালে (পুস্তিকা) ১৯০০ সালে, (গ্রন্থ) প্রথম কারাবরণ ১৯১০ সালে, কারামুক্তি ১৪ মে ১৯১২ সালে, তুরস্ক যুদ্ধে গমন ২ ডিসেম্বর ১৯১২ সালে; যুদ্ধ ফেরত ১৩ জুলাই ১৯১৩ সালে।
শিরাজী ১৯২১ সালে খেলাফত ও অহিংস আন্দোলনে যোগদান করেন। ১৯২২ সালে মওলানা আকরম খাঁ কারারুদ্ধ হলে ৮ হাজার টাকা জরিমানার জন্য 'মোহম্মদী' পত্রিকা বন্ধের বিরুদ্ধে সংবাদপত্রে আবেদন ছাড়াও বিভিন্ন জেলায় বক্তৃতা করে জনমত গড়ে তোলেন।
১৯২১ সালে ২৫, ২৬, ২৭ সেপ্টেম্বর সিরাজগঞ্জে অসহযোগ আন্দোলনের কর্মসূচিতে ৩টি সভায় সভাপতিত্ব করেন। ১৯২২ সালে কলকাতায় খেলাফত কমিটির সভায় জ্বালাময়ী বক্তৃতা এবং আঙ্গোবায় দশ হাজার মুজাহেদীন পাঠানোর প্রস্তাব করেন। কাজী নজরুল 'রণভরী' কবিতা লিখে তাতে সমর্থন যোগান। ১৯২৪ সালে নিখিল ভারত কংগ্রেস কমিটির সম্মেলনে শিরাজীকে বাদ দিয়ে অন্যকে সভাপতি করায় অসন্তুষ্ট মুসলমানেরা 'বঙ্গীয় মুসলিম মহাসমাবেশের আয়োজন করে, শিরাজী অভ্যর্থনা কমিটির সভাপতি হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ বক্তৃতা করেন। ১৯২৬ সালে দাদাভাই নওরোজের সভাপতিত্বে কংগ্রেসের কলকাতা অধিবেশনে সরকারের কাছে আবেদন-নিবেদন নীতি ত্যাগ করে সরাসরি স্বাধীনতার প্রস্তাব উত্থাপন করেন। ১৯২৭ সালের ২৫ অক্টোবর 'মোসলেম তরুণ সংঘের সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন ১৯২৯ সালে প্রাদেশিক কাউন্সিল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৩১ সালে লাহোরে তার নির্দেশে পুত্র আসাদ উদ দৌলা শিরাজী গান্ধী-ডারউইন চুক্তির বিরুদ্ধে প্রস্তাব উত্থাপন করেন। ১৯৩১ সালে আইন অমান্য আন্দোলনে যোগ দিয়ে কারারুদ্ধ হন। কারাগারেই তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে। 'আমি মৃত্যুর মাঝে চিরদিন খুঁজি নবজীবনের সন্ধান/' উচ্চারক এই মহান মানুষটি ১৯৩১'র ১৭ জুলাই নিজেকে চিরতরে সঁপে দিয়েছিলেন মৃত্যুর কাছে।
তাঁর মৃত্যুতে কামাল পাশা এক শোকবাণীতে বলেন- 'আমার পুরনো বন্ধু সৈয়দ ইসমাইল হোসেন শিরাজীর মৃত্যুতে আমি গভীর দুঃখ প্রকাশ করছি। তিনি যে কেবল ভারতের গৌরব ছিলেন তাহা নহে, তিনি ইসলাম জগতের নেতা ছিলেন। তাহার মৃত্যুতে ইসলাম জগতে এক বিখ্যাত ব্যক্তির অভাব হইল। তুর্কীগণ আপনার শোকে-সহানুভূতি প্রকাশ করিতেছে'। অমৃত বাজার পত্রিকায় বলা হয়- 'মওলানা সৈয়দ ইসমাইল হোসেন শিরাজীর মৃত্যুতে সারা বাংলা আজ গভীরভাবে শোকাভিভূত। মরহুম শুধু একজন কবি ও বিখ্যাত পণ্ডিতই ছিলেন না তিনি ছিলেন একজন খাঁটি জাতীয়তাবাদী। ৩৫ বছর ধরিয়া তিনি জাতির অমূল্য সেবা করিয়া গিয়াছেন। তিনি একজন ধর্মপ্রাণ মুসলমান ছিলেন। কিন্তু ধর্মের প্রতি তাহার নিষ্ঠা জাতীয় স্বার্থের একজন অগ্রণী সেনায় পরিণত হইতে কোন বাধা হইয়া দাঁড়ায় নাই। তাঁহার মৃত্যু এই সময়ে দেশের জন্য এক বিরাট ক্ষতি।'
বিষয়: বিবিধ
৯২৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন