তারাবিহর নামাজ বা কিয়ামুল লাইলের ফজিলত
লিখেছেন লিখেছেন েনেসাঁ ১৫ জুলাই, ২০১৩, ১২:৫০:০৬ দুপুর
আমাদের রব মহান আল্লাহতায়ালা আশরাফুল মাখলুকাত বা সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব মানুষকে খুবই ভালবাসেন। তিনি আমাদেরকে কখনোই শাস্তি দিতে চান না। জাহান্নামের আগুনে দগ্ধিভূত করতে চান না। সেইজন্য প্রত্যেক বছর একমাস রমজান দিয়ে আমাদের গোনাহ মাফের অবাধ সুযোগ করে দেন। এ মাসে আল্লাহর দয়া, করুণা ও ক্ষমা অবারিতভাবে দুনিয়াবাসীর প্রতি বর্ষিত হয়। তাঁর দয়া করুণা অনুগ্রহে সিক্ত হয়ে প্রতিটি মুমিন হৃদয় প্রকম্পিত হয়।
রসূল (স.) বলেছেন, এই পবিত্র মোবারক মাসে যে ব্যক্তি ঈমান অবস্থায় সওয়াবের আশায় রাত জেগে তারাবিহের নামাজ আদায় করে তাঁর অতীত সকল গোনাহ মাফ হয়ে যায়। (বুখারী ও মুসলিম)
তারাবিহ শব্দটি কুরআন ও হাদীসের কোনো জায়গায় খুঁজে পাওয়া যায় না। অথচ সমগ্র মুসলিম জাহান তারাবিহ শব্দটির সাথে ওতপ্রোতভাবে পরিচিত। রসূলুল্লাহ (স.) রমজান ছাড়া বাকি ১১ মাস রাতে যে ইবাদত করতেন কুরআন ও হাদিসের পরিভাষায় তাকে বলা হয় কিয়ামূল লাইল বা রাতের নামাজ। এরই অপর নাম তাহাজ্জুদ। আর রমজান মাসের রাতে তিনি যে ‘ইবাদত’ করতেন হাদীসের পরিভাষায় তাকে কিয়ামে রমজান বা রমজানের (রাতের) সালাত বলে। তারাবিহ এর মধ্যে পড়ে।
মুসলিম শরীফের ভাষ্যকার হাদীস শাস্ত্রের মহারথী ইমাম নববী (রহ.) বলেন, তারাবির সালাত দ্বারা কিয়ামে রমজান আদায় হয়ে যায়।
তাই বুখারী শরীফের ভাষ্যকার আল্লামা কিরমানী (রহ.) বলেন, কিয়ামে রমজানেরই অপর নাম তারাবিহ (নায়লুল আওতার, ২য় খ-, ২৯৫ পৃঃ)।
ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ। এ উপমহাদেশের সবচেয়ে বড় মুহাদ্দিস ও মেশকাত শরীফের ভাষ্যকার আল্লামা ওবায়দুল্লাহ রহমানী (রহ.) সাহেব বলেন : তারাবিহ, তাহাজ্জুদ, কিয়ামে রমজান ও সালাতুল লাইল প্রভৃতি একই জিনিস এবং একই সালাতের নাম।
উম্মূল মু’মিনীন আয়শা (রা.) বলেন, রসূলুল্লাহ (স.) রাতে ৪ রাকাত করে সালাত পড়তেন। তারপর তিনি একটু বিশ্রাম নিতেন।
যায়েদ ইবনে ওয়াহাব বলেন, ওমর (রা.) রমজানে আমাদেরকে (তারাবির) সালাত পড়াবার সময় প্রত্যেক চার রাকআতের পর এতটুকু বিশ্রাম দিতেন যতটা সময়ের মধ্যে একজন লোক মসজিদে নববী হতে ‘সালওয়া’ পাহাড় পর্যন্ত চলে যেত (সুনান কুবরা, বায়হাকী, ২য় খ- ৪৯৭ পৃঃ)।
এই দুইটি হাদীসে বিশ্রাম নেবার ও দেবার জন্য ইয়াতারওয়াহো ওয়া য়ুরাওবেহো’ শব্দ ব্যবহূত হয়েছে। যার বিশেষ্য হল তারাবীহাতুন এবং এরই বহুবচন তারাবিহ।
তাই প্রখ্যাত সাহাবী আবূ সাঈদ (রা.) বলেন, রমজান মাসের রাতে সালাত পড়াবার সময় সাহাবিরা প্রত্যেক চার রাকাআত-এর পর একটু বিশ্রাম নিতেন বলে এর নাম তারাবিহ রাখা হয়েছে। (আলমুগরব, ১ম খ-, ২২৩পৃঃ)
নবী (স.) বলেন : আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা রমজানের সিয়াম ফরজ করেছেন এবং আমি তার কিয়ামকে (তারাবিহকে) সুন্নাত করেছি। সুতরাং যে ব্যক্তি ঈমান অবস্থায় নেকীর আশায় রমজানের রোজা রাখে এবং রাতে সালাতে দাঁড়ায় সে মায়ের পেট থেকে ভূমিষ্ট হবার মতো সমস্ত গুনাহ থেকে নিষ্পাপ হয়ে যায়। (নাসাঈ, ১ম খ-, ২৩৯ পৃঃ, ইবনে মাজাহ, ৯৫ পৃঃ, আহমাদ, নায়লুল আওতার, ২য় খ- ২৯৫পৃঃ)
এ জন্যই মনে হয় একশো বিশ বছরের বৃদ্ধ সুআদ ইবনে গাফলাহ (রা.) রমজান মাসের রাতে (তারাবির) ইমামতি করতেন। (মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা, ২য় খ- ৩৯৫পৃঃ)
রাফেযীরা ছাড়া আর কোন ফির্কাহ তারাবিহ অস্বীকার করে না। (মাবসুত, ২য় খ-, ১৪২ পৃঃ)
তারাবির সালাত আদায় করে তার সম্পর্কে রসূলুল্লাহ (স.) বলেন, যে ব্যক্তি ইমামের সালাম না ফেরা পর্যন্ত ইমামের সাথে জামায়াতে (তারাবির) সালাত পড়ে তার জন্য রাতভর সালাত পড়ার সওয়াব লেখা হয়। (আবূ দাউদ, তিরমিযী, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ, মেশকাত, ১১৪পৃঃ)
আরফাজাহ (রহ.) বলেন, হযরত আলী (রা.) লোকদেরকে রমজান মাসের রাতে সালাতের জন্য হুকুম দিতেন এবং পুরুষদের জন্য একজন ইমাম ও মেয়েদের জন্য একজন ইমাম নিযুক্ত করতেন। আমি মেয়েদের ইমাম হতাম। (বায়হাকী, কানযুল ওমামাল্ল, ৮ম খ-, ২৬৫ পৃঃ)
এই বর্ণনা প্রমাণ করে যে, খোলাফায়ে রাশেদীনের যুগে মেয়েদেরও তারাবির জামায়াত হতো। সুতরাং পুরুষদের মতো মেয়েদেরও তারাবিহ পড়া সুন্নাত। (ফিকহুস সুন্নাহ, ১ম খ- ২০৫ পৃঃ)
বিষয়: বিবিধ
২৩৩৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন