ইফতারের আগে বেশী বেশী দোয়া ও তাসবীহ পাঠ করা উচিত
লিখেছেন লিখেছেন েনেসাঁ ১৪ জুলাই, ২০১৩, ১২:৪৮:০২ দুপুর
আল্লাহতায়ালা কুরআনুল কারীমে বলেছেন, রোজা তো গণনার কয়েকটি দিনের জন্য। অতঃপর তোমাদের মধ্যে যে অসুস্থ থাকবে অথবা সফরে থাকবে, তার পক্ষে অন্য সময়ে সে রোজা পূরণ করে নিতে হবে। আর এটি যাদের জন্য অত্যন্ত কষ্টদায়ক হয়, তারা এর পরিবর্তে একজন মিসকিনকে খাদ্য দান করবে। যে ব্যক্তি খুশির সাথে সৎকর্ম করে, তা তার জন্য কল্যাণকর হয়। আর যদি রোজা রাখো, তবে তা তোমাদের জন্যে বিশেষ কল্যাণকর। যদি তোমরা তা বুঝতে পারো (সূরা বাকারা-১৮৪ আয়াত)।
এই পবিত্র রমজানুল মোবারকের অন্যতম দান হলো ইফতার। রসূল (স.) বলেনঃ কেউ যদি রমজান মাসে কোনো রোজাদারকে ইফতার করায় তাহলে ঐ ইফতার করানোটা তার গুনাহ মাফের ও জাহান্নাম থেকে মুক্তির কারণ হবে এবং সে একটি রোজার সওয়াব পাবে অথচ রোজা পালনকারীর নেকী মোটেই কমানো হবে না। সাহাবীরা বলেন, হে আল্লাহর রসূল (স.) আমাদের এমন সংস্থান নেই যা দিয়ে আমরা কাউকে ইফতার করাতে পারি? তিনি (স.) বলেন, আল্লাহ তাকেও এই সওয়াব দেবেন। যে ব্যক্তি কোনো রোজা পালনকারীকে এক ঢোক দুধ অথবা একটা শুকনো খেজুর কিংবা এক চুমুক পানি দিয়েও ইফতার করাবে আর যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে পরিতৃপ্তি সহকারে খাওয়াবে আল্লাহ তাকে আমার “হাউজে কাওছার” থেকে এমনভাবে পানি পান করাবেন যার ফলে সে জান্নাতে না পৌঁছানো পর্যন্ত আর তৃষ্ণার্ত হবে না (বায়হাকী ওয়াবুল ঈমান, মেশকাত ১৭৪ পৃষ্ঠা)।
আল্লাহর রসূল (স.) বলেনঃ লোকেরা ততক্ষণ কল্যাণে থাকবে যতক্ষণ তারা ইফতার জলদি করবে (বুখারী, মুসলিম ১ খ--৩২১ পৃঃ মিশকাত ১৭৫ পৃঃ)।
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেনঃ আমার নিকট সবচেয়ে প্রিয় সেই বান্দা যে ইফতার সঠিক সময়ে করে (তিরমিযী ১ম খ-, ৮৮ পৃঃ, মেশকাত ১৭৫ পৃঃ)।
সমস্ত নবীদেরও স্বভাব ছিল ইফতারে দেরী না করা। (তাবারানী কাবীর, মাজমাউজ যাওয়ায়িদ ২য় খ-, ১০৫ পৃঃ) এ হাদীসগুলো প্রমাণ করে যে, ইফতারের নির্দিষ্ট সময় থেকে দেরী করা মোটেই উচিত নয়। যদি কেউ ইচ্ছা করে ইফতারে দেরী করে তাহলে সে রসূলুল্লাহ (স.)-এর নির্দেশ অনুযায়ী কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হবে এবং আল্লাহর নিকট অপ্রিয় হবে। সুতরাং এ ব্যাপারে আমাদের সচেতন হওয়া উচিত।
আব্দুল্লাহ ইবনে আবী আওফ (রা.) বলেন, একবার আমরা (রমাজানে) আল্লাহর রসূল (স.)-এর সাথে সফরে ছিলাম (তখন তিনি রোজা অবস্থায় ছিলেন)। অতঃপর (সূর্য অস্তমিত হওয়ার পর) তিনি একজন সাহাবীকে বললেন, নামো এবং আমার জন্য ছাতু গুলে দাও। সাহাবী (সূর্য আস্তমিত হওয়ার পর) লালিমা দেখে বলল, হে আল্লাহর রসূল (স.)ঐ যে সূর্য (দেখা যায়)। তিনি (তার কথায় কান না দিয়ে) আবার বললেন, তুমি নামো এবং আমার জন্য ছাতু গুলে দাও। এভাবে তিনবার বললেন। অতঃপর তিনি (বেলাল রা.) নামলেন এবং রসূলুল্লাহ (স.)-এর জন্য ছাতু গুলে দিলেন। তিনি তা পান করলেন। তারপর তিনি পূর্বদিকে ইশারা করে বললেন, যখন তোমরা দেখবে যে, রাত ঐদিক থেকে আসছে তখন বুঝবে সিয়াম পালনকরীর ইফতারের সময় হয়ে গেছে (বুখারী ২৬০ পৃঃ মুসলিম ১ম খ- ৩৫১ পৃঃ)।
এই হাদীসটি প্রমাণ করে যে, সূর্য অস্তমিত হওয়ার সাথে সাথেই ইফতার করতে হবে। কারণ আবূ দাউদে বর্ণিত হাদীস অনুযায়ী সূর্যের গোলক ডুবে যাবার পর মুহূর্তে তার আভা দেখে বেলালের (রা.) যে সন্দেহ হয়েছিল তাও তিনি দূর করে দিয়েছেন। আল্লাহর নবী (স.) এ কথাও বলেছেন, একবার আমাকে জিবরাঈল (আ.) মাগরিবের সালাত যখন পড়ালেন তখন সিয়াম পালনকারী ইফতার করে (আবূ দাঊদ, তিরমিযী, মিশকাত পৃঃ ৫৯) নবী (স.)মাগরিবের সালাত কখন পড়তেন সে সম্পর্কে রাফে ইবনে খাদীজ (রা.) বলেন, আমরা রসূলুল্লাহ (স.)-এর সাথে মাগরিবের সালাত পড়তাম। তারপর আমরা কেউ তীর ছুঁড়লে আমরা তার সেই তীর পড়ার জায়গাটা দেখতে পেতাম (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত ৬০ পৃঃ)। এ হাদীসটি প্রমাণ করে যে, নবী (স.)-এর মাগরিবের সালাত পড়ার পরও আলো থাকতো। একটু অন্ধকার হোক বলে তিনি মোটেই দেরী করতেন না। আনাস (রা.) বলেন, নবী (স.) মাগরিবের সালাতের আগেই ইফতার করতেন। (তিরমিযী, আবূ দাউদ, মেশকাত ১৭৬ পৃঃ)। অন্য বর্ণনায় আছে, তিনি (স.) ইফতার না করা পর্যন্ত মাগরিবের সালাত পড়তেন না। যদিও তাঁর ইফতার এক ঢোক পানি দিয়েও হতো (সহীহ ইবনে খুযায়মা ৩য় খন্ড, ২৭৬পৃঃ)। এ হাদীস দুটি প্রমাণ করে যে, মাগরিবের সালাত আদায় করার আগেই ইফতার করতে হবে। রসূল (স.) বলেন, আমার উম্মত ততক্ষণ আমার সুন্নাত ও নিয়মের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকবে যতক্ষণ তাঁরা ইফতারের জন্য তারকা উদয়ের অপেক্ষা করবে না (ইবনে খুযায়মা ৩য় খ-, ২৭৫পৃঃ)।
রসূলুল্লাহ (স.) বলেনঃ রমজানের প্রত্যেক রাতে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বহু জাহান্নামীকে মুক্তি দেন (তিরমিযী ১ম খন্ড ৮৬ পৃ, আহমাদ, মিশকাত ১৭৩পৃঃ)। অন্য হাদীস থেকে জানা যায় যে, জাহান্নাম থেকে মুক্তি বিশেষ করে ইফতারের সময় হয় (ইবনে মাজাহ ১২০পৃঃ, মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক ৪থর্ খ- ১৭৬পৃঃ)। রোজাদারের দু’আ সম্পর্কে নবী (স.) বলেনঃ সিয়াম পালনকারীর দু’আ ফেরত দেয়া হয় না (মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা ৩য় খন্ড, ৭ম পৃঃ)। অন্য হাদীসে বলা হয়েছে যে, বিশেষ করে ইফতারের সময় তা রদ হয় না। যেমন তিনি (স.) বলেন, ইফতারের সময়ে দু’আ খুব তাড়াতাড়ি কবুল হয় (বায়হাকী)। উল্লেখিত হাদীসগুলো আমাদের শিক্ষা দেয় যে, ইফতারের সামগ্রী সাজাতে কিংবা মেসওয়াক করতে অথবা আজে-বাজে গল্পগুজবে সময় নষ্ট না করে ইফতারের ১০/১৫ মিনিট আগে ইফতারের খাদ্যদ্রব্য নিয়ে বসা এবং দু’আ-তাসবীহ পাঠে রত হওয়া দরকার। এ সময়ে রাসূল (সাঃ) “ইয়া অছিয়াল ফাদলী ইগ ফিরলী ” ও “ইয়া অছিয়াল মাগফিরাতি ইগ ফিরলী” বেশী বেশী করে পাঠ করতেন। আর এ সময় আল্লাহতা’য়ালা যেহেতু প্রতিদিন অসংখ্য জাহান্নামীকে মুক্তি দেন। সে কারণে প্রার্থনারত রোজাদারগণ জাহান্নাম থেকে মুক্তি পেয়ে যেতে পারেন। হাদীসে খেজুর ও পানি দিয়ে ইফতার শুরু করার কথা বলা হয়েছে। এ ব্যাপারে ইবনে কাইয়্যেম (রহ.) বলেন, খালি পেট মিষ্টি জিনিস পছন্দ করে এবং এর দ্বারা তা শক্তি সঞ্চয় করে। বিশেষ করে দৃষ্টিশক্তি এর ফলে সবল হয়। তাই খেজুর দিয়ে ইফতার শুরু করতে বলা হয়েছে। পানির ব্যাপার হলো, রোজা রাখার ফলে পেটের মধ্যে যে শুষ্কতা সৃষ্টি হয় পানির মাধ্যমে তা সতেজ ও সজীব হয়ে উঠে। এজন্য একজন ক্ষুধার্ত ও তৃষ্ণার্ত ব্যক্তির উচিত খাওয়া শুরু করার আগে সামান্য পানি পান করা, তারপর খাওয়া শুরু করা। আর তা যদি খেজুর ও পানি দিয়ে হয় তাহলে হূদয়কে সুস্থ করার ব্যাপারে একটা বিশেষ প্রভাব বিস্তার করে (যাদুল মা’আদ ১ম খ-, ১৬০পৃঃ)।
সুতরাং প্রত্যেক রোজাদারের উচিত ইফতারির সময়ে দো’আ, তাসবীহ ও তওবা পাঠের মাধ্যমে ক্ষমাপ্রাপ্ত হওয়া ও আল্লাহর নেয়ামতপ্রাপ্ত বান্দাদের দলভুক্ত হওয়ার জন্য সাধ্যমত চেষ্টা করা। আল্লাহ আমাদের ব্যক্তি, পরিবার, সমাজের যে যেখানে যে অবস্থায় রোজা পালন করছেন সকল ঈমানদার রোজাদারকে সে তাওফীক দান করুন, আমীন।
বিষয়: বিবিধ
৩০৭৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন