রোজার কিছু বিধি-বিধান

লিখেছেন লিখেছেন েনেসাঁ ১১ জুলাই, ২০১৩, ০২:৪৯:৪৬ দুপুর





রোজার নিয়ত

রোজার জন্য রাতে শুধু এই নিয়ত করে নেয়াই যথেষ্ট যে, ‘আমি আগামীকাল রোজা রাখব’ কিংবা দিনে (এগারটার আগে) এই নিয়ত করাই যথেষ্ট যে, ‘আজ রোজা রাখব’। যদি কেউ আরবি নিয়ত করতে চায়, তবে এরূপ করবে ‘নাওয়াইতুআন আসুমা গাদাম মিন শাহরি রামাজান।

‘রমজান মাসের আগামীকালের রোজা রাখার নিয়ত করছি।’

যেসব কারণে রোজা ভঙ্গ হয় না

* অনিচ্ছাকৃত গলার ভেতর ধুলা-বালি, ধোঁয়া অথবা মশা-মাছি প্রবেশ করা * অনিচ্ছাকৃত কানে পানি প্রবেশ করা * অনিচ্ছাকৃত বমি আসা অথবা ইচ্ছাকৃত অল্প পরিমাণ বমি করা (মুখ ভরে নয়)। * বমি আসার পর নিজে নিজেই ফিরে যাওয়া * চোখে ওষুধ বা সুরমা ব্যবহার করা * ইনজেকশন নেয়া * ভুলক্রমে পানাহার করা * সুগন্ধি ব্যবহার করা বা অন্য কিছুর ঘ্রাণ নেয়া * নিজ মুখের থুথু, কফ ইত্যাদি গলাধঃকরণ করা * শরীর ও মাথায় তেল ব্যবহার করা

* ঠাণ্ডার জন্য গোসল করা * দিনের বেলায় ঘুমের মধ্যে স্বপ্নদোষ হওয়া * মিসওয়াক করা। যদিও মিসওয়াক করার দরুন দাঁত থেকে রক্ত বের হয়। তবে শর্ত হলো গলার ভেতর না পৌঁছানো।

রোজা ভঙ্গের কারণ

* কান ও নাকে তেল অথবা ওষুধ প্রবেশ করানো * নস্য গ্রহণ করা। * ইচ্ছাকৃত মুখ ভরে বমি করা * মুখ ভরে বমি আসার পর আবার গিলে ফেলা * কুলি করার সময় পানি গলায় ঢুকে যাওয়া। অবশ্য রোজার কথা স্মরণ না থাকলে রোজা ভাঙ্গবে না * দাঁতে আটকানো খাদ্যকণা গিলে ফেলা। * মুখে পান রেখে ঘুমিয়ে পড়ে সুবহে সাদিকের পর নিদ্রা হতে জাগরিত হওয়া * ধূমপান করা * ইচ্ছাকৃতভাবে সুগন্ধি দ্রব্যের ধোঁয়া গলাধঃকরণ করা বা নাকের ভেতর টেনে নেয়া * রাত মনে করে সুবহে সাদিকের পর সাহরি খাওয়া * সূর্যাস্তের আগে সূর্য অস্তমিত হয়েছে মনে করে ইফতার করা; এ অবস্থায় শুধু কাজা ওয়াজিব হবে। আর যদি রোজা অবস্থায় ইচ্ছাকৃতভাবে স্বামী-স্ত্রী সহবাস অথবা পানাহার করে তবে কাজা ও কাফফারা উভয়ই ওয়াজিব হবে। কাফফারার মাসআলা অভিজ্ঞ ওলামায়ে কেরামের থেকে জেনে নেবে।

রোজার মাকরুহ

* অনাবশ্যক কোনো জিনিস চিবানো * কোনো দ্রব্য মুখে দিয়ে রাখা * গড়গড় করা বা নাকের ভেতর পানি টেনে নেয়া কিন্তু পানি যদি নাক দিয়ে গলায় পৌঁছে যায়, তাহলে রোজা ভেঙে যাবে * ইচ্ছাকৃত মুখে থুথু জমা করে গলাধঃকরণ করা * গীবত, গালা-গালি ও ঝগড়া-ফাসাদ করা। কেউ গায়ে পড়ে ঝগড়া-ফাসাদ করতে এলে বলবে, আমি রোজাদার তোমাকে প্রত্যুত্থর দিতে অক্ষম * সাড়া দিন নাপাক অবস্থায় থাকা। এটি অত্যন্ত গুনাহের কাজ * অস্থিরতা ও কাতরতা প্রকাশ করা * কয়লা চিবিয়ে অথবা পাউডার, পেস্ট ও মাজন ইত্যাদি দ্বারা দাঁত পরিষ্কার করা * গুল লাগানো। তবে শর্ত থাকে যে, যদি গুল থুথুর সঙ্গে গলার ভেতর চলে যায় তবে রোজা ভেঙে যাবে।

সাহরি খাওয়ার ফজিলত ও নিয়ম

রোজার জন্য সাহরি খাওয়া সুন্নত ও সওয়াবের কাজ। বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা সাহরি খাবে, এতে অনেক বরকত আছে’ * পেট পুরে সাহরি খাওয়া জরুরি নয়, দুই বা এক লোকমা অথবা খেজুরের টুকরা কিংবা দু’চার দানা খেলেও যথেষ্ট * সুবহে সাদিকে পূর্বে রাতের শেষভাগে সাহরি খাওয়া মুস্তাহাব * যদি সাহরি খেতে বিলম্ব হয়ে যায় এবং প্রবল ধারণা হয় যে, ভোর হওয়ার পর কিছু পানাহার করেছে, তবে এ অবস্থায় সন্ধ্যা পর্যন্ত পানাহার ত্যাগ করা এবং পরে ওই রোজা কাজা করা ওয়াজিব।

ইফতার করার মুস্তাহাব নিয়ম

* সূর্যাস্তের পর ইফতারে বিলম্ব করা অনুচিত। কিন্তু আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকলে সাবধানতার জন্য কিছু সময় বিলম্ব করা উত্তম। *খেজুর কিংবা খোরমা দ্বারা ইফতার করা সুন্নত। তা না হলে অন্য কোনে মিষ্টিদ্রব্য বা শুধু পানি দ্বারা ইফতার করবে। * আগুনে পাকানো খাদ্য, রুটি, ভাত, শিরনি ইত্যাদি দ্বারা ইফতার করা দূষণীয় নয়। কিন্তু ফল দ্বারা ইফতার করাই উত্তম। ইফতার করার আগে এই দোয়া পড়বেন :

‘আল্লাহুম্মা লাকা সুমতু ওয়া আলা রিজকিকা আফতারতু’

‘হে আল্লাহ! আমি তোমারই জন্য রোজা রেখেছি, তোমারই প্রদত্ত রিজিক দ্বারা ইফতার করছি।’

তারাবি

পবিত্র রমজান মাসের রাতে ইশার ফরজ ও সুন্নত নামাজের পর বিতরের আগে ২০ রাকাত নামাজ পড়া সুন্নতে মুআক্কাদাহ। পুরো রমজান মাসে তারাবির নামাজ জামাতে পড়া ও সম্পূর্ণ কোরআন একবার খতম করাও সুন্নতে মুআক্কাদাহ। খতমে তারাবিতে হাফেজ সাহেবের জন্য কোনো প্রকার টাকা-পয়সার শর্তারোপ করা জায়েজ নেই। হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামা ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি রমজান মাসে ঈমানসহকারে শুধু সওয়াবের আশায় তারাবি পড়েন, তার অতীতের সব (ছগিরা) গোনাহ মাফ করে দেয়া হয়’ [বুখারি ও মুসলিম শরিফ]।

তারাবির দোয়া

তারাবির নামাজে প্রতি চার রাকাত অন্তর নিম্ন অথবা অন্য কোনো দোয়া পড়া উত্তম। দোয়টি হলো,

‘নুওয়াতু আন উসাল্লিয়া লিল্লাহি তায়ালা রাকাআতাই সাল্লাতিত তারাবীহি, সুন্নাতু রাসুলিল্লাহি মুতাওয়াজজিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিস শারীফাতি আল্লাহু আকবার।’

সদকায়ে ফিতর

যার কাছে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য ব্যতীত কমপক্ষে সাড়ে বায়ান্ন তোলা বা ততোধিক রৌপ্য কিংবা তত্মূল্যের দ্রব্য, অলঙ্কার অথবা ব্যবসায়ের মাল ইত্যাদি রয়েছে, তার ওপর সদকায়ে ফিতর ওয়াজিব। সদকায়ে ফিতর ওয়াজিব হওয়ার জন্য ওই পণ্য বছরকাল থাকা আবশ্যক নয়। অপ্রাপ্তবয়স্ক ছেলেমেয়েদের পক্ষ থেকে পিতা আদায় করবে। ঈদের নামাজের আগে সদকায়ে ফিতর আদায় করা উত্তম। ঈদের দিন আদায় না করলে মাফ হবে না। অন্য যে কোনো দিন আদায় করতে হবে। যে ব্যক্তি ওজরবশত বা গাফলত করে রোজা রাখেনি তাকেও সদকায়ে ফিতর আদায় করতে হবে। এক ব্যক্তি সদকায়ে ফিতরের পরিমাণ হলো পৌনে দুই সের (এক কেজি পাঁচশত ষাট গ্রাম) গম বা তার মূল্য। সদকায়ে ফিতর দ্বারা ইমাম, মুআজজিন প্রভৃতিদের উজরত বা বেতন দেয়া জায়েজ নয়।

বিষয়: বিবিধ

১২৮৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File