ঝিঙার ঔষধি গুন.....
লিখেছেন লিখেছেন কথার_খই ২৪ মে, ২০১৫, ০৬:৪৮:৫২ সন্ধ্যা
সবজিতে ভেষজ গুণ রয়েছে। ব্যবহারবিধি জানা থাকলে সবজি মাত্রই ভেষজ হিসেবে ব্যবহার করা যায়। ঝিঙ্গা আর ধুন্দুলের (চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জায়গায় পরুল) ব্যতিক্রম নয়। অন্য দিকে ঝিঙ্গা আর ধুন্দুলের ভেষজ গুণের কথা বলতে গেলেই যকৃৎ ও প্লীহার (কলজে আর পিলে) কথা এসে যায়।
বৈদিক শাস্ত্রমতে এ দু’টি মানুষের শরীরে যেন দু’টি দৈব্য। এরা যেন দুই ভাই, কাজ করে এরা একযোগে, একজন বিগড়ালে আরেকজনও বিগড়ে যায়; নয়তো বসে যায়। আবার এরা বিগড়ালে ঝিঙ্গা আর ধুন্দুল এদেরকে শাসন ও শায়েস্তা করতে পারে। ঝিঙ্গা ও ধুন্দুলের অপর নাম যথাক্রমে ধারা কোষিতক ও কোষিতক। মহাভারতের অনুসারে ভগবতীর নিজের কোষ হতে তৈরি এ দুই কোষিতকই একই গুণসম্পন্ন; তাই ব্যবহারবিধিও একই, এ জন্য পরবর্তীকালে এদের ব্যবহারবিধি একই সাথে দেয়া হলো।
আয়ুর্বেদ মতে ঝিঙ্গা শীতল, মধুর, পিত্তনাশক, ুধাবর্ধক; তবে বাত, কফ ও বায়ু সৃষ্টি করে। এটি শ্বাসের কষ্ট অর্থাৎ হাঁপানি, জ্বর, কাশি ও কৃমিরোগ উপশম করে, কোষ্ঠকাঠিন্য দূরে করে ও পেট পরিষ্কার করে। এটি দেরিতে হজম হয় বলে রোগীদের পক্ষে খাওয়া অনুচিত।
ধুন্দুল স্নিগ্ধ, বলকারক, রুচিবর্ধক, বায়ুনাশক, রক্তপিত্ত (নাক ও মুখ দিয়ে রক্তপড়া) ও বাতপিত্ত কমায়, ুধাবর্ধক, কৃমিনাশক ও কফ নিবারক। নিচে ঝিঙ্গা ও ধুন্দুলের ব্যবহারবিধি দেয়া হলো।
শোথের মূত্রকৃচ্ছ্রতা : হৃদরোগ, যকৃৎগত রোগ বা অন্যান্য কারণে শোথ হয়; তাতে প্রস্রাবের কৃচ্ছ্রতাও হয়। সে সময় কাঁচা ঝিঙ্গা ও এর পাতার রস অথবা যেকোনো একটার রস নিয়ে একটু গরম করে রাখতে হবে। সে রস থেকে দুই চা চামচ করে ২ ঘণ্টা পর পর তিন-চারবার আধা কাপ পানির সাথে মিশিয়ে পান করতে হবে। তবে শুধু পাতার রস হলে দুইবার খাবে ও ঝিঙ্গা ফলের রস চারবার দেয়া যাবে। ক’দিন এভাবে খেলে ধীরে ধীরে শোথ ও মূত্রকৃচ্ছ্রতা, সে সাথে মূত্রস্বল্পতার উপশম হবে।
বমির ভাব : চাপা অম্বল, গা প্রায় সময় বমি বমি করে, সে ক্ষেত্রে ঝিঙ্গার পাকা বীজ তিন-চারটা নিয়ে বেঁটে এক কাপ পানি গুলে খেতে হয়। তাতে পেটে বায়ু থাকলে তাও কমে যাবে। বমির ইচ্ছাটাও থাকবে না; তবে বীজ তেতো হলে বমি হয় বলে দুর্বল, বৃদ্ধ, শিশু ও গর্ভবতী মহিলাকে খাওয়ানো যাবে না।
পাথুরী : ঝিঙ্গা লতার শিকড় (আকশী) গরুর দুধে বা ঠাণ্ডা পানিতে মেড়ে পর পর তিন দিন খেলে পাথুরী দূর হয়।
মাথার যন্ত্রণা (শ্লেষ্মাজনিত) : কাঁচা ঝিঙ্গার রস দুই-তিন ফোঁটা নাকে টেনে নিলে এবং সে সাথে দুই চা চামচ রস একটু গরম করে সাত-আট চা চামচ পানিতে মিশিয়ে পান করলে শ্লেষ্মা বেরিয়ে গিয়ে যন্ত্রণা কমে যাবে। এ ছাড়া ঝিঙ্গা শুকিয়ে গুঁড়া করে নস্যি নিলে মাথাব্যথা সারে।
অর্শের রক্ত পড়া : এ রোগকে রক্তার্শও বলা হয়। এতে রক্ত পড়ে, যন্ত্রণাও আছে। এ ক্ষেত্রে কচিও নয়, আবার পাকাও নয় (আধা পাকা) এ রকম ঝিঙ্গা কুচি কুচি করে কেটে রোদে শুকিয়ে গুঁড়া করে নিতে হয় এবং কাপড় বা চালনিতে চেলে সে গুঁড়া এক গ্রাম মাত্রায় নিয়ে আধা কাপ গরম পানিতে মিশিয়ে প্রতিদিন সকাল ও বিকেলে দুইবার করে খেতে হয়।
কুষ্ঠরোগ : আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে কুষ্ঠ কথার অর্থ ব্যাপক। এতে দাদকেও ক্ষুদ্র কুষ্ঠ বলা হয়েছে। যদি দেখা যায়, কিছুতেই কিছু হচ্ছে না বা চিকিৎসাও সম্ভব হচ্ছে না, তখন ঝিঙ্গা পাতার রস এক-দেড় চা চামচ প্রতিদিন সকাল ও বিকেলে একটু পানি মিশিয়ে খেতে হয়। কুষ্ঠের রূপ নিলে সে ঘায়ে পাতার রস লাগাতে হবে। এভাবে দুই মাস খেলে কিছুটা পরিত্রাণ মিলবে।
চোখে পিঁচুটি বা জুড়ে যেতে থাকা : এটা শ্লেষ্মাধিকারজনিত কারণে অথবা ঠাণ্ডা লেগে যায়। এ সময় ঝিঙ্গার কচি পাতার রস প্রথমে গরম করে তারপর ঠাণ্ডা করে এক-দুই ফোঁটা করে দিতে হয়। ঝিঙ্গার বদলে ধুন্দুলও ব্যবহার করা যাবে।
শোথোদর : ধুন্দুলের পাতার রস বড় চামচে দুই চামচ পান করলে ও পাতা বেঁটে পেটের ফোলা অংশের ওপর লাগালে এ রোগ সারে।
নালী ঘা : তেতো ঝিঙ্গার রস নালী ঘায়ে লাগালে ঘা শুকিয়ে যায়।
উৎস onnodiganta
বিষয়: বিবিধ
১২০৪ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
চিংড়ি মাছ বা শুঁটকি দিয়ে রান্না করলেই শুধু ঝিঙ্গা থাই!
মন্তব্য করতে লগইন করুন