‘লজ্জা-শরম বিপুল কল্যাণই নিয়ে আসে; তা থেকে কোন অকল্যাণের আশঙ্কা নেই’ আল হাদিস।
লিখেছেন লিখেছেন কথার_খই ১৫ এপ্রিল, ২০১৫, ১১:২৫:০২ রাত
কোরআন এবং হাদিসের আলোকে নারীর পর্দা
‘লজ্জা-শরম বিপুল কল্যাণই নিয়ে আসে; তা থেকে কোন অকল্যাণের আশঙ্কা নেই’ আল হাদিস। মহান আল্লাহ তা’আলার দরবারে লাখো কোটি শুকরিয়া আদায় করছি যিনি অত্যন্ত মেহেরবানী করে আমাদেরকে আশরাফুল মাখলুকাত হিসেবে সৃষ্টি করে এ বিশ্বজগতে প্রেরণ করেন। দরূদ ও সালাম জানাই বিশ্বনবী হযরত মোহাম্মদ (সা.)-এর ওপর যিনি পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা ইসলাম ধর্মের প্রবর্তক হিসেবে এ জগতে রহমত হিসেবে প্রেরিত হয়েছেন। মানব জাতি হল মহান আল্লাহপাকের অতুলনীয় এক মহান সৃষ্টি। আর এ মানবজাতি সৃষ্টি করে আল্লাহপাক নারী এবং পুরুষ এ দু’ভাগে বিভক্ত করে সামাজিক মূল্যবোধ সংরক্ষণের জন্য তাদের প্রত্যেকের জন্য কিছু স্বতন্ত্র বিধান প্রবর্তন করে দেন। নারী পুরুষ সকলকেই ধর্মীয় বিধিবদ্ধ হয়ে সামাজিক মূল্যবোধ রক্ষায় তাদের এ দায়িত্ব পালন করতে হয়। কেননা সকল বিধি-বিধান মহান আল্লাহর পক্ষ থেকেই মুসলিম নর-নারীর কল্যাণের জন্যই প্রবর্তিত হয়েছে। আল্লাহপাক মানব জাতিকে সৃষ্টি করেছেন কেবল মাত্র তাঁর ইবাদত বন্দেগী এবং তাঁর আদেশ-নিষেধ, বিধি-বিধান মেনে জীবনযাপন করে দুনিয়া এবং পরকালের জীবনের সুখ-শান্তি এবং মুক্তি লাভ করার জন্যেই। আর এসব বিধি-বিধানের মধ্যে পর্দা তেমনিভাবে আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রবর্তিত একটি আদেশ। একটি ইবাদত সমতুল্য অত্যাবশ্যকীয় বিধান। যা মহান আল্লাহপাক পবিত্র কোরআনের দুটি সূরার সাতটি আয়াতের মাধ্যম মানব জাতির জন্য অবতীর্ণ করেন। সুতরাং প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীকেই জীবনের সর্বক্ষেত্রে পর্দা প্রথা অনুসরণ এবং অনুকরণ করে জীবনযাপন করা তাদের জন্য একান্ত অপরিহার্য কর্তৃব্য। অন্যথায় এ আদেশ অমান্য করার কারণে তাদেরকে পরকালে কঠিন শাস্তি ভোগ করতে হবে এতে বিন্দুমাত্র কোন সন্দেহ এবং সংশয়ের অবকাশ নেই। আমাদের আদি পিতা হযরত আদম (আ.) থেকে শুরু করে বিশ্ব নবী (সা.)-এর সময়ের পর্দা প্রথা ফরজ হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত কোন জামানাই নারী পুরুষের অবাধ মেলামেশা ও বেপর্দায় চলাফেরা করার কোন বৈধতা ছিল না। তা ছিল দৃষ্টিকটূর এবং লজ্জা-শরম বিবর্জিত একটি কাজ। তাছাড়া ইহা কেবলমাত্র একত্ববাদে বিশ্বাসী অনুসারীদের নিকটেই অবৈধ ছিল না বরং তা ছিল সকল শ্রেণির অভিজাত এবং সমাজের উঁচুশ্রেণির লোকদের কাছে ঘৃণার এবং অপছন্দের। তারা কখনই নারী পুরুষের অবাধ মেলামেশা ও নারীকে বেপর্দায় চলাফেরা করাকে ভালো চোখে দেখতেন না। সম্ভ্রান্ত নারীরা যতটুকু সম্ভব ভিন পুরুষ থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখেই চলতেন। এ প্রসঙ্গে হযরত মুসা (আ.)-এর মাদইয়ান শহরে ভ্রমণের ঘটনাটি বিশেষভাবে উল্লেখ করা যেতে পারে যা পবিত্র কোরআনের সূরা কাসাসের ২১-২৬ নং আয়াতে আল্লাহপাক স্পষ্ট ভাষায় উল্লেখ করেন। আয়াতের মর্মবাণী থেকে বুঝা যায় হযরত শোযাইব (আ.) এর দু’কন্যা যারা তার পিতার অসুস্থতার কারণেই তাদের গৃহপালিত পশুগুলোকে পুরুষ রাখালদের সামনে উপস্থিত হয়ে পানি পান না করিয়ে কূপের একটু দূরে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করেছিলেন এইভেবে যে, পুরুষ রাখালরা যখন চলে যাবে তখন তারা তাদের পশুগুলোকে পানি পান করাবেন। কিন্তু পরবর্তীতে তারা হযরত মুসা (আ.)-এর সহযোগিতায় পশুগুলোকে পানি পান করালেন। এখানে দুটি বিষয় স্পষ্ট যে, প্রথমত, তাদের লজ্জাবোধের কারণে তারা পুরুষ রাখালদের সামনে যাওয়াকে পছন্দ করেননি, তাই দূরে অপেক্ষা করেছিলেন। দ্বিতীয়ত, অনিচ্ছাকৃত ভাবে এবং বিশেষ প্রয়োজনেই কেবলমাত্র ঘরের বাহিরে বের হয়েছেন। হযরত মুসা (আ.)-এর সার্বিক সহযোগিতায় পশুগুলোকে পানি পান করানোর পর বাড়ি যাওয়ার পথে শুধু লজ্জা-শরম এবং সামাজিক মূল্যবোধের কারণেই তারা হযরত মুসা (আ.)-এর সামনে সামনে না হেঁটে বরং তার পেছনে পেছনে হেঁটে তাকে নিয়ে বাড়ি গেলেন। এমনকি হযরত শোয়াইব (আ.)-এর মেয়েরা যখন হযরত মুসা (আ.)-এর সাথে কথা বলতেন, তখন তাদের মুখ ওড়নার আস্তিকের অংশ দ্বারা আবৃত করে রাখতেন। যদিও তৎকালে তাদের জন্য পর্দার বিধান পালন করা বাধ্যতামূলক ছিল না। তারপরেও সামাজিক মূল্যবোধ ও স্বভাবজাত ভদ্রতা ও লজ্জা-শরমের কারণেই তারা এ বিধান মেনে চলতেন। কারণ ঐ সময়ে কোন অভিজাত ও সম্ভ্রান্ত পরিবারের নারীদের মধ্যে বেপওয়ারা, বেপর্দায় চলাফেরার বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান ছিল না বরং এসব বৈশিষ্ট্য আরবের বেদুঈন দাসী নারীদের মধ্যে বিদ্যমান ছিল। যা পবিত্র কোরআনেও উল্লেখ আছে। একদিন বিশ্ব নবী হযরত মোহাম্মদ (সা.) সাহাবায়ে কেরাম (রা.)সহ এক মজলিসে বসে তাদের নিকট জানতে চাইলেন- “নারীদের জন্য কোন পন্থায় চলাফেরা করা উত্তম হবে”। কোন সাহাবায়ে কেরাম (রা.) নবীজি (সা.)-এর এ কথায় কোন উত্তর না দিয়ে বরং সবাই চুপচাপ থাকলেন। হযরত আলী (রা.) বলেন আমি বাড়িতে গিয়ে হযরত ফাতেমা (রা.) কে এ প্রশ্নের উত্তর জিজ্ঞেস করলে তিনি সাবলিলভাবে প্রশ্নের উত্তরে বললেন নারীদের জন্য উত্তমপন্থা হচ্ছে, “নারীরা পুরষদেরকে দেখবে না আর পুরুষরা নারীদেরকে দেখবে না” (এখানে পুরুষ বলতে ভিন পুরুষকে তথা যাদের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া জায়েজ তাদেরকে বুঝানো হয়েছে)। হযরত আলী (রা.) বললেন আমি নবীজি (সা.) কে হযরত ফাতেমা (রা.)-এর এ জবাবটি বললাম তখন নবীজি (সা.) বললেন- “ফাতেমা ঠিকই বলেছে, সে তো আমারই একটি অংশ”। যদিও তখনো সার্বজনিনভাবে পর্দা প্রথা চালু হয়নি। এ থেকে বুঝা যায় সম্ভ্রান্ত বংশের নারীরা তখনো কারণে অকারণে ভিন পুরুষদের সামনে আসা-যাওয়াকে পছন্দ করতেন না। ভিন পুরুষের সামনে অকাতরে যাওয়াকে তারা লজ্জা ও সংকোচ মনে করে তা সর্বদা এড়িয়ে চলতেন (কিন্তু অত্যন্ত দুঃখ এবং পরিতাপের সাথে বলতে হয় শরীয়ত যাদের সামনে বিনা বাধায় যেতে অনুমতি প্রদান করেছেন আমরা তাদের সাথে দেখা করি না, দেখা করার সুযোগ পাই না, পক্ষান্তরে শরীয়ত যাদের সামনে যাওয়াকে কঠোর ভাবে নিষেধ করেছেন, বিপদজনক হিসেবে উল্লেখ করেছেন আজকাল আমরা নিজেদের লজ্জা-শরমকে পদদলিত করে তাদের কাছে যেতে হুড়মুড় খেয়ে পড়ি)। হাদিসে হযরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত আছে একবার হযরত ওমর (রা.) নবীজি (সা.)-এর দরবারে আরজ করলেন ইয়া রাসূল্লাহ (সা.) আপনার কাছে অনেক সৎ-অসৎ অনেক রকমের লোক আসে আপনি (আপনার) পতœীগণকে পর্দা করার আদেশ দিলেই খুবই ভালো হত”। পঞ্চম হিজরী যিলকাদ মাসে মহানবী (সা.) হযরত যয়নব ইবনে জাহাশ (রা.)-এর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার অনুষ্ঠানেই মহান আল্লাহরপক্ষ থেকে সার্বজনিন বিধান হিসেবে পর্দা প্রথার প্রথম আয়াত অবতীর্ণ হয়। সাথে সাথে নবীজি (সা.) উপস্থিত পুরুষ সাহাবীদের (রা.) সামনে একটি চাদরের পর্দা দিয়ে হযরত যয়নব বিনতে জাহাশকে (রা.) আড়াল করে দিলেন। হাদিসের বর্ণনানুসারে যদিও পূর্ব থেকেই তিনি প্রাচীরের দিকে মূখ করে বসেছিলেন যাতে কোন পুরুষ সাহাবী (রা.)গণ তার পবিত্র মুখ বা চেহারা মোবারক দেখতে না পারে। মহান আল্লাহপাক পবিত্র কোরআনের সূরা আযহাবের ৫৩নং আয়াতের মাধ্যমে সর্বপ্রথম পুরুষ জাতিকে সাহাবীদেরকে (রা.) সর্তক (উদ্দেশ্য) করে পর্দার শাশ্বত বিধান অবতীর্ণ করেন। এ প্রসঙ্গে এরশাদ করেন- “আর যখন তোমরা নবী পতœীদের কাছে কোন সামগ্রী চাইবে, তখন পর্দার আড়াল থেকে চাইবে এটি তোমাদের ও তাদের অন্তরের জন্য অধিকতর পবিত্র”। পর্দা নারীর মুক্তির প্রতিবন্ধক নয় বরং তাদের আত্মরক্ষার সনদ, সুরক্ষার প্রাচীর এবং দুনিয়া এবং পরকালে তাদের মুক্তির পাথেয়। শরীয়ত কাম্য আসল পর্দা হল নারীদের গৃহের অভ্যন্তরে অনুসৃত পর্দা। নারীর আসল স্থান হল ঘর আর ঘরে অবস্থান করাই তার কর্তব্য। ইসলামের দৃষ্টিতে নারীর প্রকৃত কর্মস্থান হল তার ঘর। তাছাড়া মহান আল্লাহপাকেরও একান্ত ইচ্ছা নারীরা যেন বাড়ি (ঘর) থেকে বের না হয়। নারীদেরকে নিরাপত্তার মধ্যে রাখতেই আল্লাহপাক নারীদেকে গৃহের অভ্যন্তরে অবস্থান করার কঠোর নির্দেশ প্রদান করেছেন যা মেনে চলা প্রত্যেক নারীদের জন্য বাধ্যতামূলক এবং অপরিহার্য। নারীদের ঘর থেকে বের হওয়াকে সাধারণত হারাম বা নিষিদ্ধ হিসেবে উল্লেখ করে আল্লাহপাক পবিত্র কোরআনের সূরা আহযাবের ৩৩ নং আয়াতকে পর্দা সর্ম্পকিত পূর্ণাঙ্গ আয়াত হিসেবে অবতীর্ণ করে এরশাদ করেন- “তোমরা গৃহ অভ্যন্তরে অবস্থান করবে, মুর্খতা যুগের অনুরূপ নিজেদেরকে প্রদর্শন করবে না”। তাছাড়া নবীজি (সা.) নারীদেরকে গৃহে অবস্থান করার প্রতি উৎসাহ এবং অনুপ্রেরণা দিয়ে এরশাদ করেন- “নারীরা প্রভুর কাছে সবচেয়ে নিকটতর তখনি যখন তারা গৃহে অবস্থান করে”। তিনি আরও বলেন- “তাদের ঘরই তাদের জন্যে সুখ শান্তির ও সার্বিক কল্যাণের আকর”।
মো. আবুল খায়ের স্বপন উৎস Daily Inqilab
বিষয়: বিবিধ
১১১০ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন