এফবিআইর গুপ্তচর বলছি.... একক পরাশক্তি আমেরিকা গলা ফাটিয়ে বলে থাকে ‘আমরা বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়ছি’
লিখেছেন লিখেছেন কথার_খই ২৫ আগস্ট, ২০১৪, ১০:১৯:০৩ রাত
একক পরাশক্তি আমেরিকা গলা ফাটিয়ে বলে থাকে ‘আমরা বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়ছি’।
আমেরিকার গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআইরও একই সুর : আমরা আমেরিকাকে সম্ভাব্য সন্ত্রাসী হামলা থেকে বাঁচানোর লক্ষ্যে কাজ করছি।
কিন্তু আসলে হচ্ছে কী শোনা যাক এফবিআইর এক সংবাদদাতার (গুপ্তচর) জবানীতে
২০০৬ সালে এসে আপনি হয়ে গেলেন ফারুক আল-আজিজ, যে কিনা একজন সিরীয় বংশোদ্ভূত আমেরিকান, নিজের ইসলামি বংশধারার শেকড় (রুট্স্) খুঁজছে। বলুন তো কিভাবে এসব হলো?
২০০৩ থেকে ২০০৬ সালের গোড়ার দিক পর্যন্ত আমি টাকার বিনিময়ে কাজ করেছি বিভিন্ন অপারেশনে অংশ নিয়েছি ব্যাংক ডাকাতির তথ্য অনুসন্ধানে। ঢুকে পড়েছি শ্বেতাঙ্গ প্রাধান্যে বিশ্বাসী বিভিন্ন সংগঠনে। সংগ্রহ করেছি অনেক মূল্যবান তথ্য। মোটের ওপর আমি ছিলাম খুবই সফল।
আমরা হ্যান্ডলার (পরিচালনাকারী) ছিলেন একজন নারী। তার নাম ট্রেসি হ্যানলন। এক দিন কথায় কথায় তাকে আমি বললাম, ‘এবার আমি মসজিদে ঢুকে পড়তে চাই।’ তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ ঈশ্বর! চমৎকার হবে। তুমি তো ধনী হয়ে যাবে।’
আসলে তাদেরও দরকার ছিল এমন বিশেষ এক ধরনের লোক, যে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে মুসলমানদের মধ্যে মিশে যেতে পারবে। তাদের ভাষা শিখে ফেলবে, তাদের ধর্মের নিয়মকানুন জেনে নেবে এবং সর্বশেষে মুসলমানদের ধর্ম ও সংস্কৃতিকে মুসলমানদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করবে।
এ পর্যায়ে এফবিআই আমাকে নজরদারির উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন কিছু ডিভাইস দেয়। এগুলোকে বলা হতো কী র্ফস্। দেখতে গাড়ির রিমোট কন্ট্রোলের মতোই। আমার হাতে এ রকম পাঁচ-ছয়টি ডিভাইস ছিল। এগুলো সব সময় চার্জ দেয়া থাকত। যে মসজিদে আমি প্রায়ই নামাজ পড়তে যেতাম, তার চার পাশে ওগুলো গোপনে পেতে রেখেছিলাম। কেবল একটি সর্বক্ষণ আমার পকেটে থাকত।
ওটি সব সময় চালু থাকত। এ ছাড়া আমার কাছে আরো কিছু কী ফবস্ ছিল, যেগুলো বিশেষ স্থানে পেতে রাখতাম। ‘বিশেষ স্থান’ মানে আমাকে যেসব জায়গায় যেতে বলা হতো, সেখানে। যেমন ইমাম সাহেবের দফতরে, কোনো বোর্ড মেম্বার অফিসে, কোনো মুসল্লির গাড়ি অথবা বাড়িতে। এভাবে ডিভাইসগুলো প্রতিদিনই ব্যবহৃত হতো।
নিজের সংগ্রহ করা কোনো তথ্য কাজে লাগিয়ে আপনি কি অন্য কাউকে সংবাদদাতা (গুপ্তচর) বানাতে পেরেছেন?
হ্যাঁ। অপারেশন ফেক্সে এটা ছিল আমার অন্যতম একটা কাজ। যেমন ধরুন, কারো সাথে ব্যক্তিগত আলাপে অনেক কথা চলে আসে। ধরা যাক একজন মুসলমানের কথা। তিনি বিবাহিত; কিন্তু তার একজন গার্লফ্রেন্ড কিংবা একজন রক্ষিতা আছে। এফবিআই এ ধরনের গোপন খবরকে কাজে লাগিয়ে কাউকে ফাঁদে ফেলে এবং তাকে তাদের সংবাদদাতা হতে বাধ্য করে। আরো আছে। যেমন ধরুন, কোনো তরুণ হয়তো নেহাত মজা করার জন্য মাদক নিলো অথবা শখের বশে নির্দিষ্ট কোনো মাদক গ্রহণের ইচ্ছা প্রকাশ করল। এফবিআই এই গোপন খবরকে ব্যবহার করে ওই তরুণকে ফাঁদে ফেলবে এবং তাকে সংবাদদাতা বা গুপ্তচর বানিয়ে ছাড়বে।
আপনি যখন ওদের (এফবিআই) সাথে ছিলেন, তখন আপনার মনে হয়নি যে, আপনি যা করছেন, ভুল করছেন?
হ্যাঁ, হয়েছে। কিন্তু ওই সময় আমাকে অনেক টাকা দেয়া হতো। তা ছাড়া আমার হ্যান্ডলাররা (পরিচালনাকারী) আমাকে বলত, আমি যেসব খবর জোগাড় করছি এবং যেভাবে করছি, তার গুরুত্ব কারো ব্যক্তিগত অধিকারের চেয়ে অনেক বেশি। সুতরাং দু-চারজন লোকের অধিকার লঙ্ঘিত হলে কী যায় আসে!
আমার হ্যান্ডলার কেভিন আর্মস্ট্রং অবশ্য তথ্য সংগ্রহের জন্য আমাকে যে ধরনের কাজ দেয়া হতো, তা নিয়ে ভীষণ উদ্বিগ্ন ছিলেন। কিন্তু অপারেশনাল লিডার পল অ্যালেন তার (আর্মস্ট্রং) কথা তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিতেন। অ্যালেন আমাকে সব সময় ‘ফাঁদে ফেলা’ ধরনের কাজই দিতেন।
অনেকে মনে করেন, এই ফাঁদে ফেলা ধরনের কাজ হচ্ছে ‘প্রয়োজনীয় খারাপ’ কাজ এবং জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে যে মূল্য দিতে হয়, এটা তারই অংশ। আপনিও কি তা-ই মনে করেন?
না, করি না। এক বছরেরও বেশি সময় আমি এসব কৌশল ব্যবহার করে ওদের (এফবিআই) সাথে কাজ করেছি, সে কথা মনে করেই আমি বলছি, করি না। এই অপকৌশলটি আসলে কখনোই বন্ধ হয় না, বরং বেড়েই চলে। এর কোনো সীমা-পরিসীমা নেই। যদি আমি কাউকে দিয়ে এমন কোনো কাজ করাতে চাই, যা তিনি সাধারণত করেন না, তাহলে আমার সেই কাজটি আমেরিকানদের নাগরিক অধিকারকে আরো লঙ্ঘন, আরো গুরুতর লঙ্ঘনের দিকে ঠেলে দেবে। তা আমার মনে হয়, ‘ফাঁদে ফেলা’র এই অপকৌশলটি অবশ্যই বন্ধ করতে হবে।
আমেরিকার আইন প্রয়োগকারী সংস্থার মধ্যে এই কৌশলটি কতটা আছে?
আমি আমেরিকার বেশ কিছু ফেডারেল এজেন্সি ও স্থানীয় পুলিশ বিভাগে তথ্য দান হিসেবে কাজ করেছি। যতগুলো অপারেশন ও কেসে আমি জড়িত ছিলাম, তার প্রতিটিতেই আমি দেখেছি, ফাঁদে ফেলাটাই প্রধান কৌশল। এটা ন্যায়সঙ্গত নয়। তাই আমি মনে করি, এফবিআইর অবশ্যই উচিত তার নীতিমালা ও পদ্ধতিগুলো পুনর্মূল্যায়ন করা। আমার বিশ্বাস, ফাঁদে ফেলার কৌশলটি কেবল শত্রুই বাড়ায়।
আমেরিকা কি বিদেশেও লোকজনকে ফাঁদে ফেলে?
বিদেশে? হ্যাঁ! অপারেশন ফেক্স শুরু হয়েছিল আমেরিকায়, পরে তা আমেরিকার সীমান্ত ছাড়িয়ে যায়। আফগানিস্তান, ইরাক ও ইয়েমেনে অনেকে এই অপারেশনের ফাঁদে আটকে আছেন। ফাঁদে ফেলে তাদের তথ্যদান থেকে বাধ্য করা হয়েছে, তবে কাউকে গ্রেফতার পর্যন্ত গড়ায়নি।
এমনিতেও আমেরিকার ফেডারেল অথরিটি, ডিইএ (ড্রাগ এনফোর্সমেন্ট অ্যাডমিনিস্ট্রেশন), এটিএফ (ব্যুরো অব অ্যালকোহল, টোব্যাকো, ফায়ার আর্মস অ্যান্ড এক্সপ্লোসিভ) ও এফবিআই যদি কাউকে পেতে চায়, তাহলে তারা কোনো এক ধরনের ব্যবস্থা নেয়, যা নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে ফাঁদে পড়তে প্রলুব্ধ করে। হতে পারে ওই ব্যক্তি অপরাধটি করেনি, কিন্তু তারা এমন কায়দা করে চাপ দেবে যে ওই লোকটি দোষ স্বীকার করতে বাধ্য হবে।
আমেরিকার অন্যান্য সংখ্যালঘু কমিউনিটিও কি মুসলমানদের মতো প্রবল চাপের মধ্যে আছে?
না। আমি তো দেখছি আমেরিকায় ১৯৫০, ৬০ ও ৭০ দশকে আফ্রিকান-আমেরিকানরা (কৃষ্ণাঙ্গ) যে অবস্থায় ছিল, এখন মুসলমানদের অবস্থা সে রকম। আজকের অবস্থাটা হলো এ রকম যে, এফবিআইর একটা শত্রু দরকার এবং তারা ইসলামের মধ্যে সেটা খুঁজে পেয়েছে।
দুর্ভাগ্যজনক হলেও আমাকে বলতে হচ্ছে, এখন একটা ধর্মযুদ্ধ চলছে। কিন্তু ওরা তা কখনো বলবে না। কারণ তারা তা বলতে পারে না। এটা কারো সাংবিধানিক অধিকার লঙ্ঘন হয়, কিন্তু যা ঘটছে তা হুবহু বলতে গেলে বলতে হয়, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইর নামে আসলে চলছে ইসলামের বিরুদ্ধে লড়াই।
আবিদ শাহরিয়ার চৌধুরী
http://www.onnodiganta.com/article/detail/3265#.U_mMG6PMcwo
[আরটিডটকম থেকে]
বিষয়: বিবিধ
১১২৫ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন