১০ মাস ১০ দিন যে ‘মা’ গর্ভধারণ করেছেন তাকেই এখন সন্তানের নির্মমতা সইতে হচ্ছে। হাসপাতালে শুয়ে শুয়ে ডুকরে কাঁদছেন ওই বৃদ্ধা। চোখ বেরিয়ে গড়াচ্ছে অশ্রু। নিজের সম্পর্কে কথা বলতে গিয়ে এক পর্যায় হাসিনা বলেন, ‘আল্লাহ রুহুটা নিয়ে যাও '
লিখেছেন লিখেছেন কথার_খই ২১ জুলাই, ২০১৪, ০৯:৫০:৩৩ রাত
কি নির্মম, নিষ্ঠুর আর পাষাণ্ড। গর্ভধারিণী মাকে বস্তায় ভরে রাস্তার পাশে ফেলে পালিয়েছে নিজের পেটের সন্তান। ১০ মাস ১০ দিন যে ‘মা’ গর্ভধারণ করেছেন তাকেই এখন সন্তানের নির্মমতা সইতে হচ্ছে। হাসপাতালে শুয়ে শুয়ে ডুকরে কাঁদছেন ওই বৃদ্ধা। চোখ বেরিয়ে গড়াচ্ছে অশ্রু। নিজের সম্পর্কে কথা বলতে গিয়ে এক পর্যায় হাসিনা বলেন, ‘আল্লাহ রুহুটা নিয়ে যাও’। তার করুণ আর্তনাদ শুনে হাসপাতালে আসা লোকজন চোখের পানি ধরে রাখতে পারছেন না।
ঘটনাটি নারায়ণগঞ্জ জেলার। গত ১৪ জুলাই নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা শাসনগাঁও এলাকায় রাস্তার পাশে বস্তাভরে বৃদ্ধা হাসিনাকে ফেলে পালিয়ে যায় তার পেটে ধরা ছেলে ও ছেলের বউ। হাসিনার বয়স ৮০ বছরের বেশি।
এর পর দুই দিন দুই রাত বৃদ্ধা হাসিনা রাস্তায়ই পড়েছিল। নিজের নামটিও তখন বলতে পারেননি বৃদ্ধা হাসিনা। এমনকি কেউ তার খোঁজ নিতে আসেনি।
রাস্তায় বৃদ্ধা হাসিনার পড়ে থাকার খবর জানার পর নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা গাউছুল আজম তাকে উদ্ধার করে নিজ উদ্যোগে হাসপাতালে ভর্তি করেন।
নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের তৃতীয় তলার মেডিসিন বিভাগের ৩০৯ নাম্বার ওয়ার্ডের ১৬ নাম্বার বেডে ভর্তি রয়েছেন বৃদ্ধা হাসিনা।
হাসপাতালে গিয়ে ওই বৃদ্ধার সাথে কথা বলার চেষ্টা করতে তিনি ভেবে ছিলেন তার ছেলে হয়তো তাকে নিতে পাঠিয়েছেন। কিন্তু না সূচক উত্তর পেয়ে হতাশ হন বৃদ্ধা। দুই চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পরে। পরে তার সাথে অনেকটা সময় কথা বলার চেষ্টা করা হলেও তার কথা বোঝা যাচ্ছিল না। দীর্ঘ সময় কথা বলার পর জানা গেল তার নাম হাসিনা। তার দুই ছেলে। বড় ছেলের নাম ছোটন মিয়া আর ছোট ছেলের নাম লাল মিয়া। ছেলের স্ত্রীরা তাকে ভাত দিতে রাজি ছিল না। ছেলের স্ত্রীদের ভাষ্য তাকে বসিয়ে বসিয়ে খাওয়ানো যাবে না। অন্য বাড়ি গিয়ে খাবার চেয়ে এনে খেতে হবে। তার বড় ছেলে ছোটন ও তার স্ত্রী তাকে একটি বস্তায় ভরে নারায়ণগঞ্জে রাস্তায় ফেলে গেছে। কিন্তু কিভাবে তাকে বস্তায় ভরে আনা হয়েছে তার কিছুই বলতে পারেননি তিনি।
তিনি জানান, তার স্বামীর নাম আবদুল করিম। সে গাছ কাটার কাজ করত। গ্রামের বাড়ি বেগনাবাদ। তবে ইউনিয়ন, থানা, বা জেলা কোনোটিরই নাম বলতে পারেননি তিনি। তার বোনের নাম বেগম।
হাসপাতালে কেউ বৃদ্ধার বেডের কাছে গেলেই অস্পষ্ট কণ্ঠে জিজ্ঞাসা করেন তার ছেলে তাকে নিতে পাঠিয়েছে কি না? কারোর হাতে মোবাইল দেখলে ছেলেকে ফোন দিতে বলে। আর বেডের কাছে আসা ওই লোকটিকে বলে তার ছেলে সাথে দেখা হলে যেন বলে তার মা হাসপাতালে আছে। এসে যেন নিয়ে যায়। পরণেই আবার ফরিয়াদ করেন ‘আল্লাহ যেন তার দেহ থেকে রুহুটা বের করে নিয়ে যায়’।
মোবাইলে বৃদ্ধা হাসিনার ছবি তোলার সময় তিনি বলেন, আমি কথা বলতে পারি। ছবি তুলে কেন। আমার ছেলে সাথে কথা কমু, আমার ছেলেকে ফোন দাও। ছেলের মোবাইল নাম্বার চাইলে তিনি জানান, একটি ছোট কাগজে ছেলের মোবাইল নাম্বার লেখা ছিল সেটা হারিয়ে গেছে। তিনি বলেন, তার পোলার সাথে দেখা হইলে কইয়ো আমি হাসপাতালে আমারে নিয়া যাইতে। কাল সকালে আমি বাড়ি যামু।
গত পাঁচ দিন বৃদ্ধা হাসিনাকে হাসপাতালে দেখাশোনা করছেন রাশেদা বেগম। তিনি জানান, রাতভর বৃদ্ধা হাসিনা তার ছেলেদের নাম ধরে এবং তার বোন বেগমের নাম ধরে ডাকাডাকি করে। আর বলে বোন আমি তোর কাছে টাকা রাখছি। আমার টাকাগুলো এভাবে খরচ করিছ না। আমারে নিয়া যা।
নারায়ণগঞ্জ ২০০ শয্যা হাসপাতালের চিকিৎসক কামরুজ্জামান জানান, বৃদ্ধার কোমরের হাড় ভেঙে গেছে। যার ফলে তিনি একটি পা নড়াচড়া করতে পারছেন না।
নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা গাউছুল আজম জানান, তাকে হাসপাতালে ভর্তি করেছি। ওনার চিকিৎসা করানো হচ্ছে। সুস্থ হওয়ার পর যদি উনার সন্তানদের খুঁজে না পাওয়া যায় তবে সরকারিভাবে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে। কেউ ব্যক্তিগতভাবে তাকে সহযোগিতা করতে চাইলে হাত বাড়িয়ে দিতে পারেন
হসূত্র নয়াদিগন্ত।
বিষয়: বিবিধ
১২১৯ বার পঠিত, ১০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন